দত্তবাটি থেকে বংশবাটি-দত্তবংশের ইতিহাস
অনুপ মুখার্জি
রাঢ়ভূমি এদেশের সভ্যতা, সংস্কৃতি,সমাজ ও অর্থনীতির গুটিকতক আদিমতম পীঠস্থানের মধ্যে সর্বাপেক্ষা উজ্জ্বল গতিশীল অঞ্চল হওয়ায় যুগে যুগে দেশি-বিদেশিদের আপন আপন আগ্রহের কেন্দ্রবিন্দু হয়েছে।সময়ের ধারা বেয়ে রাজনৈতিক ও ধর্মীয় পরিবর্তনের সূত্র ধরে পরিবর্তিত হয়েছে সমাজ, সংস্কৃতি, অর্থনীতি। ঘটেছে সংঘাত ও সমন্বয়। সেই পথ বেয়ে আজ থেকে প্রায় ১৪০০ বছর আগে উত্তর রাঢ়ে আসে পশ্চিমী পঞ্চকায়স্থরা। তাঁদের অন্যতম দত্তবংশের অধিষ্ঠান হয় বরেট্টা গ্রামে (বর্তমান মুর্শিদাবাদের)। অত:পর নাম হয় দত্তবাটি বা দত্তবরুটিয়া। এই অঞ্চলটি রাঢ় ভূমির বৈশিষ্ট্য অনুযায়ী পশ্চিম থেকে পূর্বে ঢালু হওয়ায় জেলার বাগড়ি এলাকা অপেক্ষা অনেক বেশি স্বাস্থ্যকর, আবাদযোগ্য এবং প্রাচীন।
বঙ্গে পঞ্চকায়স্থ আগমন এই প্রবন্ধের মুখ্য বিষয়ের সূচক। যে সকল *পঞ্চকায়স্থ পশ্চিমী দেশ থেকে গৌড়ে এসেছে, কুলপঞ্জিকা মতে তাঁদের অন্যতম কাশ্যপ গোত্রীয় দেবদত্ত, যাঁর আদি নিবাস মায়াপুরী। এই মায়াপুরী হরিদ্বার বা তার সন্নিকটে অবস্থিত ছিল। অপর একটি সংস্কৃতে লিখিত উত্তর রাঢ়ীয় কুলপঞ্জিকা থেকে জানা যায়, দত্তবংশ প্রথমে মায়াপুর থেকে কোলাঞ্চ (মতান্তরে কনৌজ, ভিন্নমতে কটক থেকে মাদ্রাজ এই করমন্ডল উপকুল),পরে সেখান থেকে আদিত্য শূরের আমলে বাঙলার গৌড়ে স্থিত হন।পঞ্চাননের কুলকারিকা থেকে জানা যায় সময়টা ৮০৪ শকাব্দের (৮৮২ খ্রী), ফাল্গুন মাস। শ্যামাদাসী ডাক ও পঞ্চাননের কুলকারিকা থেকে আরো জানা যায়, আদিত্য শূরের রাজধানী ছিল শহর মুর্শিদাবাদের সন্নিকটে ভাগীরথীর তীরে (১-১/২ মাইলের মধ্যে) সিঙ্গায়।এই পঞ্চকায়স্থ ও লাট (রাঢ়ী) ব্রাহ্মণরা প্রথমে সেখানেই ওঠেন। মাঝে কিছুদিন অস্থায়ীভাবে থাকেন হরিহর নামক গ্রামে, সেটি আজকের হরিহরপাড়া কি না তা নির্ণয় করা যায়নি। পরে পালবংশের আমলে শূরেরা গঙ্গার অপর পিঠে সরে গিয়ে শিবির গড়লে সেটিও তাঁদের নামাঙ্কিত হয়।যেমন ভরতপুরের নিকটে শিঙারি গ্রাম। অনুরূপে কায়স্থদেরও অবস্থান বদলায় বিভিন্ন গ্রামে।তবে অন্যান্যরা গঙ্গার পূর্বপাড়ে পত্তনি পেলেও একমাত্র দেবদত্ত পশ্চিমপাড়ে বরেট্টায় পত্তনি পান। এভাবেই ঘটে মুর্শিদাবাদে দত্তদের আগমন। একইভাবে রাজন্যবর্গ ও কায়স্থদের পৌরহিত্যে আনীত লাট বা রাঢ়ী ব্রাহ্মণেরা তাঁদের অবস্থান বদল করেন। এই লাট ব্রাহ্মণদের অনেকেই ছিলেন আদিতে দাক্ষিণাত্যের নর্মদা তীরের লাট দেশের। শূর আমলে তাঁরা এদেশে এসে রাঢ়ে বসত গড়ায় লাট ও রাঢ় একাকার হয়ে যায় এবং স্থানীয় ব্রাহ্মণদের সঙ্গে কালক্রমে মিশে রাঢ়ী ব্রাহ্মণে পরিণত হয়েছেন বলে অনেকের ধারণা।
কান্দি রাজবংশের কারিকা থেকে জানা যায়,অন্যতম রাজমন্ত্রী দেবদত্ত পত্তনি পেয়ে মুর্শিদাবাদের (সালারের নিকটে) বরুটিয়া গ্রামে অবস্থান করেন ও তদসন্নিহিত অঞ্চলের অধিপতি হন। অতঃপর গ্রামের নাম হয় দত্তবরুটিয়া।কারিকায় অপরাপর কুলীন কায়স্থদের নামের পূর্বে বিশেষ আখ্যার ন্যায় তার পূর্বে ‘মহাদানী’ বলা হয়েছে। গৌড়াধিপ নারায়ণ পাল পিতৃরাজ্য উদ্ধারে সচেষ্ট হলে ভীত অনুশূর **উত্তর রাঢ় ছেড়ে দক্ষিণ রাঢ়ের গড়-মান্দারণে আশ্রয় নেন। এই সুযোগে রাঢ়ের কায়স্থ সামন্ত রাজারা পালরাজাদের নামমাত্র বশ্যতা স্বীকার করে স্ব-স্ব স্বাধীন হয়ে ওঠেন ৷ দত্তবরুটিয়ার দত্তবংশ তাঁদের মধ্যে অন্যতম।
আরেকটি তথ্যে, সালার অঞ্চলে ‘আদিশূর’ ও তাঁর বংশধরদের শাসনের কথা জানা যায়। স্থানীয় জনশ্রুতি অনুযায়ী তুর্কী আমলে সালারের সামন্ত রাজা ছিলেন ‘শনিবাহন’ বা ‘শালিবাহন’। তাঁর মন্ত্রীর আবাসস্থল ছিল দত্তবাটি বা দত্তবরুটিয়া। ইতিহাসে ‘শালিবাহন’ বা ‘শনিবাহন’ বলে কোন রাজার উল্লেখ পাওয়া যায় না। আমার মনে হয় সালারের অদূরে সিঙ্গায় যখন শূর বংশের রাজধানী গড়ে ওঠে, তখন ***দত্তবরুটিয়ার এই দত্তবংশই সেই জনশ্রুতির অধিকারি (মুর্শিদাবাদের বনেদি বাড়ি,মনিরুদ্দিন খান,পৃ,১৯৩)।
সদানন্দ ঘটকের কারিকা থেকে জানা যায় –
“খ্যাতি মাহাতা দেউদত্ত। ছিল মায়া মহাতীর্থ।।
বার বরেট্টা স্থিতি। দত্তবড়্যা হৈল খ্যাতি।।”
ইতিহাসে পায় প্রায় ১৪০০ বছর আগে বঙ্গে আগত সামন্ত শাসকদের মধ্যে শ্রেষ্ঠ দত্তবংশের মুখ্য রাজপাট ছিল দত্তবরুটিয়া, উত্তর রাঢ়ের এক সুপ্রাচীন জনপদ। এই গ্রামের উত্তর থেকে দক্ষিণ বরাবর ছিল শিরদাঁড়ার ন্যায় একমাত্র প্রবেশ-প্রস্থানের পথ।উত্তরে সেনপাড়া,শিশুয়া,দক্ষিণে প্রখ্যাত প্রবুদ্ধ ঘোষের দক্ষিণখন্ড। বহু প্রাচীন এই পথ, বঙ্গের উত্তর ও দক্ষিণের অন্যতম যোগসূত্র ও হারানো জনপদের স্মৃতি ধন্য। এই পথ ধরেই যেমন পরিব্রাজকদের গমনাগমন ঘটেছে, তেমনি গৌড়েশ্বরের অনুগত সামন্ত রাজা /ভূস্বামী ও তাঁদের অনুগামীরা রাঢ়ের উত্তর হতে দক্ষিণে ছড়িয়েছে। এই পথ ধরেই আগমন ঘটেছে দত্তদের , আবার বর্হিগমনও। তাই এই পথকে যাঁরা কেবল গাজনে খাঁড়েরার দোল আসার পথ ভাবেন তাঁদের এই পথের ঐতিহাসিক গুরুত্বের কথা ভাবতে বলব। পূর্ব ও পশ্চিমে সমদূরত্বে সালার ও শিমুলিয়ার সঙ্গে উত্তর-দক্ষিণের ন্যায় সড়ক যোগাযোগ নেই ৷ অনুমিত হয় এই গ্রাম দুটি পরবর্তীতে খ্যাত হয়। সম্ভবত গ্রামের দক্ষিণাংশের প্রবেশ মুখে ছিল দত্তদের রক্ষী বাহিনীর অবস্থান। সেখানে বহু উপকথার সাক্ষী বারিক পুকুর (বারিক অর্থ সেনা শিবির) আজো বর্তমান। আছে পথ পাশে ছায়া সুশীতল পবিত্র বউল পুকুর।
মোটামুটি গ্রামের দক্ষিণ ও পূর্ব পাড়ার মধ্যবর্তী স্থানে প্রবেশ পথের পাশে দক্ষিণামুখী রেখ দেউল (হালে নবরূপ) কালী মন্দিরের পর থেকে উত্তর মুখী রাস্তার বামদিক জুড়ে দত্তদের বাসস্থান ছিল।কেননা মাটি খুঁড়লেই অজস্র কৌলাল এই সেদিনও মানুষের বিস্ময় জাগাত।
এরই গা জুড়ে মাত্র কয়েক ঘর চক্রবর্তী, বাঁড়ুজ্জ্যে,মুখুজ্জে ,চাটুজ্জেদের বাস। তারই পাশে কয়েকঘর তাঁতি এবং দু ঘর বেনে। কালিবাড়ীর পাশেই তাঁদের দু ঘর সেবাইত-পন্ডিত ও ভট্টাচার্য। এরই সামান্য দক্ষিণে রাঘবেশ্বরের মাটির আটচালা (হালে পাকা) আয়তাকার বেদী মন্ডপ। পাশে সেবাইতের বাসস্থান। মন্ডপটি যেন স্তুপের উপর প্রতিষ্ঠিত। দুটি দেবস্থানের গঠন রীতির তারতম্য বেশ ভাবায় এবং এর আরাধকদের শ্রেণি অবস্থান চিহ্নিত করে। উল্লেখ্য যে এই গ্রামে আলাদা করে কালী ও শিবের মূর্তি পূজা নিষিদ্ধ। এবং কয়েক বছর আগেও ইটের বাড়িতে পাকা ছাদ দেওয়া প্রথা বিরুদ্ধ ছিল।
যে অঞ্চলটিকে দত্তদের বাসস্থান বলে চিহ্নিত করছি সেখানে মাটির নিচে পাকা রাস্তা, ভিটের নিদর্শন এবং বৃহদ কষ্টিপাথরের শিলার (চক্রবর্তী বাড়ীর দুর্গা মন্ডপে) দেখা মেলে।সম্ভবত বহু প্রাচীন এই দুর্গা পূজোর কাছাকাছি কোনো স্থানে ছিল দত্তদের পূজা মন্ডপ। তারপাশে গ্রামের মধ্যস্থানে মোড়লদের বসতি। দীর্ঘকাল গ্রাম দেবতার প্রধান পৃষ্ঠপোষকের ভূমিকা গ্রাম মন্ডলীর পক্ষ থেকে লাভ করায় সম্ভবত তাঁদের মোড়ল উপাধি। এরই পশ্চিমে পশ্চিম পাড়ায় কাছারিতলা হয়তো দত্তদের আমলের জাতিমালা কাছারি।এই পাড়ারই প্রান্তে আছে তাঁদের নামাঙ্কিত দত্তপুকুর। উত্তরপাড়ায় দু-এক ঘর শুঁড়ি ও হাঁড়ি। হাঁড়িরা আজো তাঁদের উপাস্যের গাজনতলা উৎসবের দিনগুলিতে পরিচর্যা করে চলেছেন। এঁদের পরিবারের রমণীরা ধাইমার ভূমিকা পালন করে আসছেন বহু যুগ ধরে ৷ আছে বামুন, নাপিত, মোড়ল, তাঁতি, বেনে, মালাকার, কায়স্থ ঘোষ ও ছুতারদের থেকে তফাৎ রেখে মুচি ও বায়েন এবং বাগদিদের নির্দিষ্ট ঘিঞ্জি বসতি। আর আছে উত্তর প্রান্তে এক ঘর হাজারি, যাঁরা মধ্যযুগীয় ব্যবস্থায় নবাব-নাজিমদের সুপারিশে জমি জিরেত পেয়ে নির্দিষ্ট সংখ্যক সেনা পুষতেন শাসকের শাসন দণ্ড ধরে রাখতে সাহায্যকারী রূপে।
গ্রামের পূর্ব প্রান্তে গোয়ালপাড়া ও তাঁদের নামাঙ্কিত মন্ডপ। এর অদূরে রামচন্দ্রের চারচালা মন্ডপ ঘিরে সেবাইত গাঙ্গুলিদের বসতি এবং গ্রামের পশ্চিম প্রান্তে শ্যামরায়ের মন্দির ঘিরে সেবাইত অধিকারীদের বসতি। যা দত্তদের অবস্থান কেন্দ্র থেকে দূরেই বলা যায়। কেন? জানতে পারি, শূর বংশের আমল বঙ্গীয় কায়স্থ সমাজের সর্বোচ্চ স্তর। মনে করা হয় আদিত্যশূরের পুত্র ধরাশূরের আমলে কায়স্থদের আগমন ঘটে। তিনি রাঢ়ী ব্রাহ্মণদের কুলাচল ও সচ্চরিত্র এই দুভাগে ভাগ করলে ব্রাহ্মণরা দলাদলি শুরু করে। এসময় উত্তর রাঢ়ে দত্তবংশ কি কুলাচল ও সচ্চরিত্র ভাগ করে সেই বর্ণ সাম্য বজায় রাখেন? শৌর্য্য, বীর্য্য, ঐশ্বর্য্য, প্রভুত্ব ও প্রতিপত্তিতে এই দত্তবংশ একসময় বঙ্গদেশে সকল কায়স্থের মধ্যে শ্রেষ্ঠ ছিল। হিমালয় থেকে সমুদ্রপৃষ্ঠ তাঁদের আয়ত্বে ছিল। হরপ্রসাদ শাস্ত্রীর মতে খ্রিস্টাব্দ ৫০০-৬০০ এর মধ্যে কায়স্থদের অনুমতি ভিন্ন কেউ গ্রামে একটুকু জমিও পেতেন না। পাশাপাশি তাঁদের গুণকীর্তন করে নগেন্দ্রনাথ বসু জানিয়েছেন, “ঐশ্বর্য ও আধিপত্যের সঙ্গে ত্যাগ ও ভক্তি শিক্ষায় দত্তবংশ সেকালে এদেশে অগ্রণী ছিলেন। দেশের বহুস্থানে তাঁদের সেই কীর্তি গৌরবের সঙ্গে আজও বিরাজমান,…ইহাদিগের প্রদত্ত দেবোত্তর, ব্রহ্মোত্তর ও মহত্তর ভূমি লাভ করিয়া এদেশের বহু শত ব্রাহ্মণ ও কায়স্থ পুরুষানুক্রমে সংসার যাত্রা নির্বাহ করিয়া আসিতেছেন এবং কেহ কেহ এখনও দিনপাত করিতেছেন,.. সে ইতিহাস লিখে শেষ করা যাবে না।” শেষে ইংরেজ আমলে বঙ্গাধিকারী ও কানুনগো পদ বিলুপ্ত হলে তাঁদের বিপর্যয় শুরু হয়।
দেবদত্তের নাতি তপন দত্ত মন্ডল উপাধি প্রাপ্ত হয়ে তিনশো গ্রামের অধিপতি হন। কিন্তু তপনের নাতি যাদবের সময়ে গৌড়েশ্বর বল্লাল সেন সমাজ সংস্কারে হাত দেন। মন্ত্রী ব্যাস সিংহ এই সংস্কার স্বীকার না করায় তাঁর শিরশ্ছেদ হয় এবং যাদবের পুত্ররাও অনুরূপ স্বীকার না করায় বল্লালি আদেশে তাঁর দশ পুত্র ও সাত নাতিকে হত্যা করা হয়। যাদবের নিহত তৃতীয় পুত্রের স্ত্রী স্বামী ও সন্তান হারিয়ে সে সময় গর্ভবতী অবস্থায় মন্তেশ্বরে জনৈক আগুরির গৃহে আত্মগোপন করেছিলেন। পরবর্তীতে উভারু/উবারু নামে তাঁর এক পুত্র সন্তান জন্মে। সদানন্দের কারিকায় উবারু দত্ত থেকে এই বংশের ধারা মেলে। কুল-কৌলিন্য রক্ষার নামে এক কুলীনের দ্বারা আরেক কুলীনের বংশ প্রায় লোপাটের ঘটনায় ইতিহাস লেখকরা নীরব ৷ কারিকায় ভিন্ন কোনো ইঙ্গিত নেই। বরং উত্তরকালের কুলপঞ্জিকায় তাঁদের অবনমন ঘটিয়ে কুলীন পঞ্চকায়স্থের শেষে ঠাঁই দিয়ে ব্রাহ্মণ্য সমাজ ঝাল মিটিয়েছে।হয়তো দত্তদের প্রভাব প্রতিপত্তি ও সাধারন্যে প্রিয়তা কায়স্থ সমাজ ও ব্রাহ্মণ্য সমাজের ঈর্ষার পাত্র করেছিল। আর এঁদের কানভারীর পরিণতিতে এই ভয়ঙ্কর রক্তখেলা,সম্ভবত যার দ্বিতীয় নজির রাঢ়ের মাটিতে বিরল।
এই বংশের কবি দত্তের নয়জন সন্তানের অন্যতম রবি দত্ত গৌড়েশ্বরের ফৌজদার ও সেনাপতির দায়িত্ব পেয়ে “দত্তখান” উপাধি প্রাপ্ত হন। রবি দত্তের তিন সন্তান বিভাকর, প্রভাকর, দিবাকর। এঁদের অন্যতম প্রভাকর যুদ্ধ বিদ্যায় পারদর্শী ছিলেন। প্রভাকরের পুত্র সোম দত্তের সন্তান শিব দত্ত। শিব পুত্র ছিলেন রাজা গণেশ। গণেশের পুত্র যদুনাথ, যিনি পরবর্তীতে ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করেন। এই বংশের আরেকটি শাখা ভাগলপুর প্রদেশের কানুনগো হয়ে উত্তরাধিকার সূত্রে সেরেস্তার দায়িত্বলাভ করে ‘থাক’ উপাধিপ্রাপ্ত হন। তাঁদের এক শাখার সন্ধান মেলে নিরোলে। ঠাকুর নরোত্তম দাসের জন্ম এই দত্ত বংশে। রবি দত্তের প্রথম পুত্র বিভাকর দত্তখাঁ একদা দত্তবরুটিয়া ছেড়ে তিন কিমি দক্ষিণে ঠ্যাঙ্গাপুর বা বিরামপুর বা ****বিরহিমপুরে আশ্রয় নেন। কারণ সে সময় দত্তবরুটিয়ায় মহামারীর কারণে ব্যাপক লোকক্ষয় হয়। তখন এই দত্তখাঁ বংশ (ঝামটপুর ও গঙ্গাটিকুরির মাঝামাঝি) এই গ্রামে গিয়ে বসবাসের ইচ্ছা প্রকাশ করে নবাবের কাছে অনুমতি প্রার্থনা করেন। নবাব তৎপর হয়ে সেনার সাহায্যে উক্ত গ্রামের অধিবাসীদের ঠেঙিয়ে গ্রাম ছাড়া করেন এবং সেই গ্রামের দখল দত্তখাঁদের হাতে তুলে দেন। তাই সাধারণ্যে গ্রামের নাম ঠেঙাপুর। ঠেঙাপুরের দত্তবংশের দৌহিত্র বিখ্যাত বৈষ্ণব গায়ক সুজন মল্লিক। কীর্তন গায়ক রসিক দাস তাঁর কাছেই কীর্তনের পাঠ নেন।
রবি দত্তের অনুজ দামোদর। দামোদরের পুত্র হরিহর। হরিহরের পুত্র ঈশ্বর। ঈশ্বরের দুই পুত্র কেশব(কৃষ্ণ) ও বিশু(বিষ্ণু)। এই কেশব দত্তই পাটুলি রাজবংশের প্রতিষ্ঠাতা। পরবর্তীতে তাঁরই বংশধরেরা বাঁশবেড়িয়া, শেওড়াফুলি, বালি ও শিবপুরে ছড়িয়ে পড়েন। অন্যদিকে বিষ্ণু দত্ত দিনাজপুরের রাজবংশের প্রতিষ্ঠাতা। নগেন্দ্রনাথ বসু মহাশয় জানিয়েছেন, বিষ্ণু দত্ত দত্তবাটিতে বসবাসকালীন অবস্থায় আপন ভাগ্য গড়তে দূরদেশে পাড়ি জমান। এসময় কোনো এক বাদশাহের সুনজরে পড়েন। সেখান থেকে কিছুদিন পর অর্থশালী হয়ে ফিরে দত্তবাটিতে না এসে অগ্রদ্বীপে ওঠেন। সেখানে কৃষ্ণ মূর্তি প্রতিষ্ঠা করে এতদাঞ্চল দেবত্র করিয়ে নেন। কিছুদিন পর আরো অধিক অর্থ উপার্জনের আশায় পূর্বতন স্থানে ফিরে গিয়ে বিপুল আয়ের মাধ্যমে প্রচুর ভূসম্পত্তি ক্রয় করেন। এসময় তিনি উত্তরবঙ্গে গিয়ে তাঁর জ্ঞাতি ও গৌড়েশ্বর যদুর কৃপায় পদ্মার উত্তর থেকে হিমালয়ের পাদদেশ পর্যন্ত ভূভাগের কানুনগো হন। আর কেশবের বংশধরদের হাতে মুর্শিদাবাদের দক্ষিণ থেকে ভাগীরথীর দুই পাড় বরাবর সমুদ্রতীর পর্যন্ত সমগ্র ভূখন্ডের আধিপত্য ছেড়ে দেন।
অর্থাৎ একথা স্পষ্ট যে,দত্তবরুটিয়াতে অবস্থান তাঁদের এতটাই সমৃদ্ধ করে যে এখান থেকেই তাঁরা উত্তর ও দক্ষিণ বঙ্গে অগ্রগমনের রসদ লাভ করেন । কেশব দত্তের পুত্র দ্বারিকানাথ। সম্ভবত তাঁর আমলেই রাজধানী দত্তবরুটিয়া থেকে পাটুলিতে স্থানান্তরিত হয়। তাঁর পুত্র শ্রীমুখ। শ্রীমুখের পুত্র সহস্রাক্ষ। সহস্রাক্ষের পুত্র উদয় একদা পাটুলিতে স্বজাতির যে সভা ডাকেন তাতে জনমন্ডলীর অনুরোধে তিনিই সভাপতি হন। মোগল আমলে সহস্রাক্ষের পুত্র উদয় সম্রাট আকবরের কাছ থেকে আরশা পরগনার অধিকার লাভ করেন। উদয়ের পুত্র জয়ানন্দ সম্রাট শাহজাহানের নিকট ‘মজুমদার’ উপাধি প্রাপ্ত হন(১৬২৮খ্রী,)। তৎসহ স্বর্ণমুষ্টি যুক্ত দুই মুখো তরবারি ও এক্তিয়ারপুরের জায়গির পান। জয়ানন্দের পাঁচ পুত্র,যথা রামনাথ,রাজীবলোচন,রাঘবেন্দ্র,মহাদেব ও গোপাল। তৃতীয় পুত্র রাঘব আওরংজেবের কাছ থেকে প্রথমে ‘চৌধুরী’ উপাধি, পরে ‘মজুমদার’ এবং একুশটি পরগনার জমিদারি লাভ করেন। অতঃপর তিনি বাঙলার চারজন মজুমদারের অন্যতম হন।
জনশ্রুতিতে মেলে এক রাঘবের নামানুসারে দত্তবরুটিয়ার গ্রাম দেবতার নাম হয় রাঘবেশ্বর। স্থানীয় জনেরা আরো বলেন আশপাশের পঞ্চ গ্রামের পঞ্চ দেবতাদের মধ্যে রাঘবেশ্বর তৃতীয় ভ্রাতা। উভয়বিধ মিল দেখে বোঝা যায় রাঘব বা তাঁর পিতা রাঘবেশ্বর এর প্রতিষ্ঠাতা। কিন্তু যে সকল পার্শ্ববর্তী গ্রামগুলির কথা লোকে বলে ও মানে তাঁদের দেবতাদের নামের সঙ্গে রাঘবের অন্য ভায়েদের নামের যেমন মিল নেই, তেমনি নেই ঐ সব গ্রামের কায়স্থ শাসকদের সঙ্গে গোত্র ও বংশগত মিল। অনুমিত হয় কোনো এক সামাজিক বা রাষ্ট্রিক সংকটকালে এসকল গ্রামের কায়স্থ শাসকেরা নিজেদের মধ্যে ঐক্যসূত্র গড়ে নিয়ে (যার উদ্যোক্তা দত্ত বংশের কেউ) সংখ্যাগরিষ্ঠ নিম্নবর্গীয়দের উপাস্যকে বর্ণশ্রেষ্ঠ ব্রাহ্মণের আওতায় রেখে নিজ নিজ অঞ্চলে কাছে টেনে নেন। গাজনের সুষ্ঠু বৈচিত্র্য দত্তবরুটিয়াতে সর্বাধিক হলেও যেখানে যেখানে পঞ্চকায়স্থের অধিষ্ঠান সেখানেই উৎসব। আমরা দেখেছি এই সব গ্রামগুলিতে গাজনের প্রধান প্রধান কর্মকান্ডের সঙ্গে জড়িত নিম্নবর্গীয়রাও সামান্য সামান্য ভূমি বন্দোবস্ত পেয়েছিল। অন্ত্যজদের কাছে টানতে উৎসাহদান।মনে রাখবেন দত্তরা ব্রাহ্মণ এবং ব্রাহ্মণ্য অনুসারী ধর্ম ও চৈতন্যদেব পরবর্তী ব্রাহ্মণ্য রীতির বৈষ্ণব ধর্মের (এ বিষয়ে অধিক জানতে রমাকান্ত চক্রবর্তীর ‘বঙ্গে বৈষ্ণব ধর্ম’ বইটি দেখতে পারেন) পৃষ্ঠপোষক ছিলেন, প্রাকৃত ধর্মের নয়। (গাজনের ন্যায় রাঢ়ের সব লোকধর্ম) প্রাকৃত ধর্মের কথা সংস্কৃত ও ব্রাহ্মণ সাহিত্যে নেই-জানিয়েছেন -সব্যসাচী ভট্টাচার্য (দেশ সহস্রাব্দ সংখ্যা, ১৯৯৯,ডিসে)। ভেবে বিস্মিত হই, সর্বত্র শিবের মাথায় জল ঢালার রীতি প্রচলিত ৷ আর এতদাঞ্চলে তিনি তাঁর দু ধরনের ভক্তদের নিয়ে চৈত্র সংক্রান্তির দু দিন আগে জাগরণের নিশি কাটিয়ে গঙ্গা নাইতে যান ! আর সেদিন সামাজিক ভেদাভেদ সর্বত্র শূন্য ৷ এখানেই উত্তর রাঢ়ের গাজনের লৌকিক মাত্রা অনুসন্ধানের বীজ নিহীত । ‘বঙ্গের জাতীয় ইতিহাস’ থেকে জানা যায়, বিজয়ার পূর্বে সামাজিক সংঘর্ষে আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনায় আতঙ্কিত হয়ে দত্তরা গ্রাম ত্যাগ করেন। সময়ের আনুমানিক হিসাবে দ্বারিকানাথ থেকে জয়ানন্দ অর্থাৎ বিজয়ায় দত্তবরুটিয়া ত্যাগের পর থেকে সম্রাট শাহজাহানের কাছ থেকে ১৬২৮ খ্রী, জয়ানন্দের মজুমদার উপাধি লাভ পাঁচ পুরুষ পূর্বে। সে হিসাবে অন্তত একশ বছর। স্বতই আমরা বলতে পারি ১৫০০-১৫২৫ খ্রী: মধ্যে এই গ্রামে (দত্তবরুটিয়া) অবশ্যই দুর্গাপূজা অনুষ্ঠিত হতো। এ ইতিহাস বঙ্গের কয়টি গ্রাম দাবি করতে পারে?
নগেন্দ্রনাথ বসু ‘জনশ্রুতি’র কথা তুলে বলেছেন, এই বংশের *****দ্বারিকানাথ দত্ত রাতারাতি পাটুলিতে তাঁর রাজধানী স্থাপন করেন দত্তবাটি ত্যাগ করে। রাজা গণেশ (এই সময়ের হিসেবও বেশ গোলমেলে) শেষদিকে গোঁড়া হিন্দু হয়ে মুসলমানদের উপর অত্যাচার শুরু করলে মুসলমান সমাজ ক্ষুব্ধ হয়। এবং তাঁদের আক্রমণের ভয়ে বিজয়া দশমীর দিন দ্বারিকানাথ নৌকাযোগে পাটুলিতে পৌঁছে রাজধানী স্থানান্তর করেন। যদি শীঘ্রই ফিরে এসে আর কালী পূজা করতে না পারেন তাই প্রতিমা বিসর্জনের পূর্বে তিনি ছাগ বলি দিয়ে যান। বিজয়ার পূর্বের সেই প্রথা আজো দত্তবরুটিয়ার কালী মন্দিরে বজায় আছে। এই দেবী নিরাবয়ব পাষাণী এবং এখানেই একটু খটকা। মুসলমান সম্প্রদায়ের দিক থেকে সেই সম্ভাবনা থাকলে আশপাশের প্রায় সকল গ্রামেই তাঁদের বসতি বিস্তার হয়েছে অথচ এই গ্রামে নেই! আক্রোশ থাকলে সেইটি ঘটত। বরং সুলতানি থেকে নবাবি আমল পর্যন্ত দত্তরা অহিন্দু শাসকের যে কৃপাদৃষ্টি পেয়েছেন তা হিন্দু শাসক সেন আমলে পাননি। মুসলমান সমাজ সেই ইজ্জত দেখিয়েছে। দুর্ভাগ্য ‘বঙ্গের জাতীয় ইতিহাস’কারের সময়ে দেশজুড়ে যে জাত-ধর্মের ভেদ-বিভেদ সেটিই জনশ্রুতিতে ছাপ ফেলে। আপন ধর্ম ও সম্প্রদায়ের দিক থেকে বল্লালি কায়দায় কোনো বিপদ এসেছিল কি না, তা তলিয়ে দেখেন নি। তাছাড়া, বঙ্গের উত্তরে উত্থানের পর থেকেই দত্তবংশের এই শাখাটি ক্রমশ দক্ষিণাভিমুখী। সঠিক সময় পাওয়া গেলে বলা যেতেই পারত সর্বোচ্চ শাসকের নতুন কেন্দ্র ঘিরে, নতুন উমেদারদের সঙ্গে পাল্লা দিতেই সম্ভবত এই স্থানান্তর। দত্তবংশের শেষ পর্বে (আলিবর্দি থেকে ইংরেজ আমলে) আমরা সেই স্বার্থ দ্বন্দ্ব প্রকট হতে দেখি।
রাঘবেশ্বর প্রতিষ্ঠাকারী রাঘবই সপ্তগ্রামের উত্তর-পূর্বে ভাগীরথীর তীরে একটি প্রাসাদ গড়েন। সেটি এই সুবিখ্যাত রাজবংশের বাটি হওয়ায় স্থানটির নাম হয় বংশবাটি। রাঘবের এক পুত্র রামেশ্বরের আমলে বাঁশবেড়িয়ার উন্নতি হয়। তিনি সেখানে বিভিন্ন বর্ণের হিন্দুদের ও সমরকুশলী পাঠানদের আনয়ন করেন।কাশী ও মিথিলার পন্ডিতদের এনে একচল্লিশটি টোলে তাঁদের নিয়োগ করেন।মনে রাখবেন ভাটপাড়া তখন অজ্ঞাত। ১৬৭৩ খ্রী আওরংজেব তাঁকে ‘রাজামহাশয়’ উপাধি দান করেন। শুরু করেন দুর্গাপূজা। প্রতিষ্ঠা করেন বাসুদেব মন্দির(১৬৭৯ খ্রী)। রামেশ্বরের তিন পুত্র- রঘুদেব,মুকুন্দদেব,রামকৃষ্ণ। রঘুদেবের পুত্র গোবিন্দদেব। গোবিন্দের পুত্র নৃসিংহদেব। ইনি সংস্কৃত ও পারসি ভাষায় পান্ডিত্যের পাশাপাশি অঙ্কন ও সংগীতে পারদর্শী ছিলেন। এই নৃসিংহদেবের সম্পত্তি আত্মসাতে তৎপর হন মানিকচন্দ্র ও কৃষ্ণচন্দ্র। পিতার মৃত্যুর তিন মাস পরে তিনি ভূমিষ্ঠ হন (পৌষ,১৭৪০)। আর বর্ধমানের জমিদারের পেশকার মানিকচন্দ্র বাঙলা-বিহারের নবাব আলিবর্দিকে জানান, যে বাঁশবেড়িয়ার রাজা নিঃসন্তান অবস্থায় দেহ রেখেছেন। যেহেতু নবাব কিছুদিন পূর্বে বর্ধমানের জমিদারের দ্বারা বিশেষ উপকারে উপকৃত হয়েছিলেন, তাই সেই কৃতজ্ঞতা স্বরূপ তিনি গোবিন্দদাসের জমিদারির অধিকাংশ বর্ধমানের জমিদারের সঙ্গে বন্দোবস্ত করে দেন। মানিকচন্দ্রের এই কৌশলী অপকর্মের সময় নৃসিংহের বয়স ছিল মাত্র পাঁচ মাস ! শুধু মানিকচন্দ্রই নয়, নৃসিংহের জবানিতে জানা যায় তাঁর সম্পত্তি গ্রাসে আরো একজন স্বনামধন্য বিদ্বান ও ধার্মিক তৎপর হয়েছিলেন।তিনি হলেন বিখ্যাত কৃষ্ণচন্দ্র! যাইহোক তিনি হেস্টিংসের প্রচেষ্টায় কিছুটা সম্পত্তি ফিরে পান। পরে অবশিষ্ট সম্পত্তি ফিরে পেতে কর্ণওয়ালিস তাঁকে বিলেতে কোর্ট অব ডিরেক্টর্স এ আবেদন করতে বলেন। এবং তদুদ্দেশ্যে উদ্যোগী হতে গেলে যে বিপুল অর্থের প্রয়োজন তা আসতে পারে ব্যয় সংকোচের পথে। সেই পথে হেঁটে তিনি কাশীধামে যান। কাশীতে যোগীদের কাছে থেকে যোগমার্গের পথ বেছে নিয়ে সাত বছরে সাত লক্ষেরও বেশি অর্থ সঞ্চয় করেন। এই সাধন মার্গ তাঁর জীবন দর্শনে পরিবর্তন আনে। তিনি ভাবেন বিলাতে বিপুল ব্যয় সাপেক্ষ আইনি আবেদনের পরিণতি অনিশ্চিত। তাই সেপথে না হেঁটে তিনি একটি স্থায়ী কীর্তি মন্দির প্রতিষ্ঠায় উদ্যোগী হন। ষটচক্রভেদ প্রণালীতে তিনি সেই মন্দির নির্মান শুরু করেন। কিন্তু শেষ করতে পারেন নি। অতঃপর তাঁর স্ত্রী রাণী শঙ্করী মন্দিরের অবশিষ্ট কাজ সম্পন্ন করেন এবং পতিদেবের উপদেশানুসারে উক্ত মন্দিরের মধ্যে পরাশক্তির বিকাশ স্বরূপা হংসেশ্বরী দেবী মূর্তি প্রতিষ্ঠা করেন (১৮১৭)। দেশি-বিদেশি নানান বইয়ে এই মন্দিরের সপ্রশংস উল্লেখ মেলে। অবশ্য যোগীদের কাছেই এই মূর্তির তাৎপর্য সমধিক।
দত্তবরুটিয়া থেকে উত্থান হয়ে বাঁশবেড়িয়া পর্যন্ত দত্তদের বিস্তারের কাহিনীর আপাতত এখানেই ইতি টানলাম। শুধু একটি কথা বলি সার্বিক সুবিধা সম্পন্ন এক উন্নত আর্থ-সামাজিক প্রেক্ষাপট পূর্ব থেকে বজায় না থাকলে দত্তরা এখানে বসতি গড়ত না, তাদের আরো উন্নতি ও বিকাশের পালে হাওয়া লাগত না। অথচ সেই দত্তবাটি আজো বিস্মৃতির অতলে তলিয়ে।
অজস্র ত্রুটি সহ এই নিবন্ধ আপনাদের আরো তথ্যের দিকে তাকিয়ে রইল।
*পঞ্চকায়স্থ বা পঞ্চকায়েস্থ:
বিশ্বামিত্র গোত্রের মিত্র বংশ,কাশ্যপ গোত্রের দত্তবংশ,কাশ্যপ গোত্রের দাসবংশ,শাণ্ডিল্য গোত্রের ঘোষ বংশ,ভরদ্বাজ গোত্রের সিংহবংশ,ভরদ্বাজগোত্রের দাস বংশ,মৌদ্গল্য গোত্রের কর বংশ — এই ৭ বংশের পরিচয় মিললেও, আদপে ৬ টি গোত্র। কেননা ভরদ্বাজ গোত্রের সিংহ বংশের ভেতর থেকে দুটি বংশ দাস উপাধি ব্যবহার করতো।
**উত্তর রাঢ়ের উত্তর সীমা “পাগলান্ত উত্তরপ্রদেশ” বলে নির্দেশিত।অর্থাৎ হিলোড়া গ্রামের উত্তরে পাগলা নদী পর্যন্ত। এর দক্ষিণ সীমা দুঘা গ্রাম “দক্ষিণ কপাট” বলে ঘটকের কারিকায় উল্লেখিত।
***[‘বটু’ (অর্থ এই স্থান) শব্দের অপভ্রংশ বড়ু বা বড়ুয়া।(পৃ,১১৯ “বঙ্গের জাতীয় ইতিহাস” রাজন্য কান্ডঃনগেন্দ্র নাথ বসু)”]।
****সেরেস্তায় লেখা বে-রহম পুর,অর্থাৎ নিষ্ঠুর পুরী
***** মতান্তরে উদয় দত্ত বা সহস্রাক্ষ দত্ত বা দ্বারিকানাথ দত্ত পাটুলিতে তাঁর রাজধানী স্থাপন করে দত্তবাটি ত্যাগ করেন।
******************************************
অনুপ মুখার্জি পরিচিতিঃ
শিক্ষক পিতার জ্যেষ্ঠপুত্র, সাতান্ন বর্ষীয় চিরতরুণ অনুপ বাবুর বিদ্যালয় শিক্ষা দক্ষিণখন্ড উচ্চ বিদ্যালয়ে। স্নাতক স্তরের পঠন পাঠন বহরমপুর শহরে কৃষ্ণনাথ কলেজে। লোকসংস্কৃতি, ইতিহাস এবং গ্রামবাংলার বিভিন্ন জনজাতির আচার, সংস্কার, জীবনযাত্রার ওপর বিস্তর পড়াশোনা রয়েছে অনুপ বাবুর। সম্পূর্ণ শৈশব ও কৈশোর কেটেছে মুর্শিদাবাদ ও বর্ধমান জেলার সীমানায় দত্তবরুটিয়া গ্রামে। লেখালেখির পাশাপাশি ভ্রমণ ও ফটোগ্রাফি তাঁর নেশা।