Shadow

নেওড়া ভ্যালি জঙ্গলের রহস্য – সুরজিত সরখেল

 

PC: Dreamstime.com

নেওড়া ভ্যালি জঙ্গলের রহস্য 

সুরজিত সরখেল

জঙ্গল আর পাহাড়ের প্রতি আমার দুর্নিবার আকর্ষণ একেবারে ছোট বেলা থেকেই । ইতিমধ্যেই অনেকগুলো জাতীয় অভয়ারণ্য আমার ঘোরা হয়ে গেছে । কোন একটা ম্যাগাজিনে নেওড়া ভ্যালির সম্পর্কে অনেক কিছু জেনে ওখানে কয়েকটা দিন একা কাটাব বলে ঠিক করে,একদিন সকালে কলকাতার যে অফিস থেকে বুকিং হয়,সেখানে যেতে রজত কান্তি দাস নামে এক ভদ্রলোকের সঙ্গে আলাপ হয়। উনিও এসেছিলেন পরিবার নিয়ে পাহাড়ের কোথাও ভ্রমণ করা যায় কিনা অনুসন্ধান করতে। ঘোর কৃষ্ণবর্ণ গায়ের রঙ! নাম জিজ্ঞাসা করতেই হেসে বললেন,’মায়ের দেওয়া নাম!’ এই জায়গাটা ওনার বছর কয়েক আগেই ঘোরা।একা যেতে বারণ করলেন।কয়েকদিনের ইাঁটা পথ।খাবার নিয়ে যেতে হবে, রান্নাও করে খেতে হবে,জঙ্গলে পথ হারাবার সম্ভাবনা আছে। উনি ওনার এক পরিচিত,লাভার বাসিন্দা পদম ছেত্রীর সঙ্গে যোগাযোগ করিয়ে দিলেন। লাভাতে পদমদের হোমস্টে আছে।অক্টোবরের ৩ তারিখে পদমের বাড়িতে যাব,ঠিক হলো।টিকিট কাটাও হয়ে গেল। পদম লাভার বন বিভাগের অফিস থেকে যাবতীয় অনুমতি পত্র জোগাড় করে নিল। রুকস্যাকের মধ্যে কিছু গরম জামা কাপড়,শুকনো খাবার, জোঁক ছাড়ানোর টোটকা,ওষুধ, ছুরি,টর্চ, ক্যামেরা, কর্ড ইত্যাদি জিনিস বোঝাই করে ” বসুধৈব কুটুম্বকম” বলে এন জে পি পৌঁছে দেখি হাতে আমার নামের প্ল্যাকার্ড নিয়ে এক কর্মঠ সুঠাম চেহারার যুবক অপেক্ষা করছে। আমি সামনে যেতেই বললেন,”কোন অসুবিধা হয়নি তো দাদা? আমি পদম ছেত্রী। চলুন একটু চা খেতে খেতে আপনার সঙ্গে কথা বলে নিই।” একেবারে ঝরঝরে বাংলা।চা খেয়ে বাইরে ওর জীপে উঠে বসলাম।গাড়িতে যেতে যেতে পদমের জনপ্রিয়তা ভালই টের পেলাম।সবাই চেনে।বেশ ভালই লাগছিল বাইরের প্রাকৃতিক দৃশ্য।দুপাশে পাহাড়,জঙ্গল,মানুষজন।অতিমারির প্রকোপে বাড়িতেই আটকে ছিলাম। এখন বাঁধন ছেঁড়া পাখির মতন বাইরে আসতেই মনটা ভাল হয়ে গেল। একটু পরেই তিস্তা কখনো ডাইনে,কখনো বাঁয়ে নৃত্য করতে করতে আমাদের সঙ্গে চললো।পথের দুপাশে পাহাড়,চা বাগান,কর্মঠ পাহাড়ি মানুষের আনাগোনা তন্ময় হয়েই দেখছিলাম। ভাল ঠান্ডা হাওয়া দিচ্ছে।চোখটা একটু তন্দ্রায় বুজে এসেছিল। পদমের ডাকে সম্বিত ফিরে পেলাম,”একটা সিগারেট দিন দাদা। কিছুক্ষণের মধ্যেই লাভায় ঢুকে যাব। একটু চা আর মোমো খেয়ে নিই আমরা।” গাড়িটা রাস্তার ধারে রেখে দুজনে খেয়ে সিগারেট ধরালাম। কতদিন পর এত ঘন নীল আকাশ দেখলাম।কলকাতার আকাশ ঘোলাটে! একই আকাশ,অথচ কত পার্থক্য!
প্রায় চারটে বেজে গেল ওর হোমস্টেতে পৌঁছতে। পদমের স্ত্রী,মা,বাবা,দাদু,ছেলে আর পুঁচকে মেয়েটা পর্যন্ত বাড়ির গেটে আমাকে যেন বরণ করে নিল। ওর এক বন্ধু পেম দোরজী,যে আমাদের জীপে করে নেওড়া ভ্যালির প্রবেশপথে ছেড়ে আসবে কাল ভোরবেলায়,সেও এসে জড়িয়ে ধরলো। আন্তরিকতা বোধ,আর মানসিকতায় এই পাহাড়ি মানুষগুলো আমাদের থেকে অনেক এগিয়ে। এদের কাছে নিজেকে ভীষণ নগণ্য মনে হল। চোখের কোনটা একটু ঝাপসা হয়ে গেল।
পদমের মা বললেন,”বেটা এখন একটু বিশ্রাম নাও,কাল সকালেই তো তোমরা বেরোবে, আমাদের এই হোমস্টেটা ঘুরে দেখ,ভাল লাগবে তোমার।” কতদিন এভাবে কেউ বলেনি আমাকে। মায়েদের জাত তো! মনটা আরও আর্দ্র হয়ে গেল।
ঘন্টাখানেক বিশ্রাম নিয়ে,চারপাশটা ঘুরে দেখলাম। কত রকমের অর্কিড,পাতাবাহার,নানা প্রজাতির ফুল,গুল্ম,পাইন,ঝাউ,আর,পাথরের তৈরি নানা রকমের আর্কিটেকচার দিয়ে হোমস্টেটাকে সাজানো হয়েছে! ভীষণ ভাল লাগল। আমি মাংস খাইনা জেনে আমার জন্য রাতে ওদের পুকুরের মাছ দিয়ে একটা অসাধারণ পদ রেঁধে দিল আর সবজি,ডাল,পনীর,আর চাপাটি খেয়ে একটা দারুণ আমেজ এসে গেল শরীরে।
পরেরদিন একেবারে ভোরেই আমরা বেরিয়ে পড়লাম। পদমের স্যাকে বোঝাই করা মাল,শুকনো খাবার,রান্না করা খাবার,খাবার জলের বোতল,বাসন পত্র,তাঁবু,স্লিপিং ব্যাগ,কোমরে ভোজালি,হাতে দুজোড়া মোটা লাঠি। পেম সব গাড়িতে নিয়ে আমাদের প্রায় আধ ঘন্টা দূরে জঙ্গলের গেটে নামিয়ে চলে গেল।
কেমন একটা রোমাঞ্চ অনুভব করতে লাগলাম! ১৯৯২ সালে মাত্র ৮৮ বর্গ কিলোমিটারের এই নেওড়া ভ্যালি ও সন্নিহিত বনাঞ্চল জাতীয় উদ্যানের স্বীকৃতি পায়। Rare Endangered species,লালপান্ডা,মেঘ চিতা,চিতা বিড়াল,গাউর,গোরাল,হায়না,বন্য শুয়োর,হিমালয়ান থর,ভাল্লুক,বিভিন্ন জাতের সাপ,প্রচুর পাখি,মনমাতানো অর্কিড,বহু প্রাচীন মহীরুহ,গুল্ম,ফার্ণের ধাত্রী ভূমি। কিছুদিন আগেও এখানে বড় বাঘ দেখা গেছে বলে খবরের কাগজে ছবিসহ বিবরণ পড়েছি। এতটাই আদিম ও ঘন জঙ্গল যে সূর্যের আলোও জায়গায় জায়গায় প্রবেশ করতে পারেনা। এইজন্যই জঙ্গলের অধিকাংশ স্থানই ছায়ায় ঢাকা,স্যাঁতসেঁতে।
আমাদের প্রথম রাত কাটানোর ঠিকানা আলুবাড়ি ক্যাম্প। ঘন্টা কয়েক হাঁটবার পরে এসে গেল চৌদ্দ ফেরী। একটা সুন্দর বনবাংলো আছে এখানে। জঙ্গলের চড়াই,উতরাই,জমাট অন্ধকারময় ঝোপ ঝাড়,বহু প্রাচীন শ্যাওলার জামা গায়ে প্রকাণ্ড,প্রাচীন মহীরুহ,তাদের শরীরের মায়াবী,সোঁদা গন্ধ যেন মাতাল করে তুলছিল আমায়! একটা অপরিসর নালা দেখিয়ে পদম বলল এটা নেওড়া নদী। গরুমারা জঙ্গলে এই নদীই আবার বিশাল আকৃতির। সারাটা পথ এই নদী আমাদের সঙ্গ দিয়ে চলেছে। কখনো ডান,কখনো বাম দিকে। একটু পরেই বাম্বু কটেজ নামে একটা সরকারি বনবাংলো পেরিয়ে এলাম। প্রায় শেষ বিকালে আলুবাড়ি ক্যাম্পে এসে পৌঁছলাম। এখানে আগে হয়তো জনবসতি ছিল। যখন এসে পৌঁছলাম,তখন গোধুলি শেষের রক্তিমাভা মাঝে মাঝে ঘন জঙ্গলের ভিতর দিয়ে ঘন বেত আর বাঁশঝাড়ের ওপর এসে আছড়ে পড়ে আমাদের সংকেত দিচ্ছিল যে আজকের যাত্রাপথের বিরতি যেন এখানেই হয়!  ভাল করে স্যানিটাইজড্ হয়ে পদমের বাড়ি থেকে আনা খাবারের সদ্ব্যবহার করলাম। সারাদিনের পরিশ্রমের ক্লান্তিতে শরীর প্রায় অবসন্ন হয়েই ছিল।কিরকম যেন একটা অনুভূতি হচ্ছিল ।এত ঘন,আদিম,একেবারে জনশূন্য অরণ্যে শুধুমাত্র আমরা দুটো মানুষ। খালি মনে হচ্ছিল,যেন অনেকগুলো চোখ আমাদের ওপর নজর রেখেছে। খালি সারাদিন ধরে ঝিঁ ঝিঁ পোকার ডাক! এখন অনেক রকমের পশুদের ডাক শুনতে পাচ্ছি। এখনও অবধি কিছু পাখি,হনুমান,বিশাল মহীরুহ,ছাড়া কিছুই চোখে পড়েনি।
পদম বলছিল,এ জঙ্গলে ঢোল মানে ভয়ংকর বুনো কুকুরও আছে,যাদের বাঘও পর্যন্ত ঘাঁটায় না। দিনের বেলাতে অর্কিড আর প্রজাপতিকে আলাদা করে চেনা যায়না। এত রঙের প্রজাপতি,যেন মনে হয় রঙের আলপনা। লাল পান্ডারা অন্ধকার না হলে বেরোয়না। খাওয়া শেষ হলে একটা সিগারেট ধরিয়ে পদম গল্প শুরু করলো। প্রথমেই আমাকে বললো,কোন অবস্থাতেই যেন ক্যাম্প থেকে বাইরে না বেরোই! গভীর রাতে হিংস্র জন্তুদের ডাক শুনতে পাচ্ছিলাম। কখন যে নিঃশব্দে ঘুমিয়ে পড়েছিলাম,জানিনা! পাখিদের ডাকে অন্ধকার থাকতেই ঘুম ভেঙে গেলেও জঙ্গলের কনকনে ঠান্ডায় স্লিপিং ব্যাগের ভিতর থেকে বেরোতেই ইচ্ছে করছিলনা। কিছুক্ষণ পরে বেরিয়ে দেখি পদম নাক ডাকিয়ে ঘুমোচ্ছে। চা তৈরি করে ওকে জাগিয়ে দিলাম। কিছুক্ষণের মধ্যেই ফ্রেশ হয়ে বেরিয়ে পড়লাম পরবর্তী গন্তব্য এই জঙ্গলের সবথেকে উচুঁ জায়গা রেচি পর্বত চূড়ার নিচে জোড়া পুখুরি। একেবারে ঘন দুর্ভেদ্য জঙ্গলের ভিতর দিয়ে হাঁটতে হাঁটতে পদম বললো,জঙ্গলের সবথেকে হিংস্র পশু হল ভালুক। কখন যে পিছন থেকে জাপটে ধরে কামড়ে,আঁচড়ে চোখ,মুখ খুবলে দেবে, টেরই পাওয়া যায়না। কেন এত আক্রোশ,কে জানে! পদমের কোমরে গোঁজা ভোজালি,দুজনেরই হাতে লাঠি। এবড়ো খেবড়ো রাস্তায় চড়াই,উতরাই ভাঙতে ভাঙতে ঘন সবুজ জঙ্গলের মধ্যে,নানা রঙের অর্কিড,প্রজাপতি,বিধাতার অপূর্ব সৃষ্টির ভান্ডার দেখতে দেখতে,জঙ্গলের ঝিম ধরা গন্ধ শরীরের রন্ধ্রে রন্ধ্রে পৌঁছে যাচ্ছে। ঘন্টা কয়েকের মধ্যে একটা নাম না জানা পাহাড়ের মাথায় এসে গেলাম। আরো খানিকটা চড়াই ভেঙে এসে অবাক হয়ে দেখলাম,বিশাল বিশাল আকারের বহু প্রাচীন রডোড্রেনডন রাস্তা জুড়ে প্রাচীরের মত দাঁড়িয়ে আছে। কত রকমের পাখির মেলা বসে গেছে! কিছুক্ষণ বিশ্রাম নিয়ে আরও খানিকটা চড়াই ভেঙে পৌঁছে গেলাম,জোড়া পুখুরি। সামনেই একটা পরিত্যক্ত বনবাংলো। আজকের রাতটা এখানেই কাটাব। জোড়া পুকুরের একটা একেবারে শুকনো,খটখটে,আর একটায় সবুজ,শ্যাওলা ভর্তি জল। এটাই আলুবাড়ি ক্যাম্প আর সামনের রুকা ক্যাম্পের মধ্যে একমাত্র জলাশয়,যার জল ছেঁকে নিয়ে বাথরুম,রান্নার কাজে ব্যবহার করা যায়।
পদম গেছে জল আনতে;আঁধার নেমে আসছে,আমি ব্যাগের মালপত্র বার করছি। এমন সময় পদম নিঃশব্দে এসে আমাকে ইশারায় শব্দ না করে বেরিয়ে আসতে বলল! পুকুরের ডানদিকের গভীর জঙ্গলের ভিতরে একটা মহুয়া গাছের ডালে একটা লালচে ধূসর রঙের গাবলু গুবলু প্রাণী! লাল পান্ডা অবশেষে সেকেন্ড খানেকের জন্য ধরা দিল। ছবি তোলার সুযোগ পেলাম না। মন ক্যামেরায় রয়ে গেল!
জঙ্গলের হিম ঠান্ডা হাওয়া হাত পা অসাড় করে 
দিচ্ছে। কুড়িয়ে আনা কাঠে আগুন জ্বেলে চাঙ্গা হবার চেষ্টা করছি। হঠাৎ মনে হল,পাশের জঙ্গল থেকে কোন বাচ্চা ছেলের কান্নার আওয়াজ ভেসে এল! পদমের দিকে তাকাতেই গম্ভীর স্বরে বললো,ও কিছুনা,হায়নার ডাক! আপনি হুট হাট করে আমাকে না জানিয়ে বাইরে রাতে বেরোবেন না। চোর ডাকাত না হলেও,এই জঙ্গলে হিংস্র জানোয়ার ছাড়াও অনেক কিছু ভয়ের ব্যাপার আছে! এই প্রথম আমার কেমন একটা খটকা লাগলো মনে। যাই হোক,পদম বাথরুমে ঢুকল! দরজার একটা পাল্লাই নেই! মাকড়সার জাল,শুকনো গাছের ডাল পালা পরিষ্কার করে একটু ব্যবহার যোগ্য করেছে পদম।একটা পুরোনো কল আছে বটে! জল পড়েনা।
আমি একটা সিগারেট ধরিয়ে বারান্দায় এসে দাঁড়ালাম। মরা চাঁদের 
আলোয় জঙ্গলকে আরও রহস্যময় লাগছে! হঠাৎ আবার সেই কান্না শুনে বাইরের দিকে তাকিয়ে দেখি,একজন মহিলা,আর তার হাত ধরা অবস্থায় একটা ৬/৭ বছর বয়সী ছেলে ফুঁপিয়ে ফুঁপিয়ে কেঁদে চলেছে! আমার প্রথমেই মনে হল,এটা অসম্ভব! এই জঙ্গলে আর কেউ আমরা ছাড়া আসেনি এখনও পর্যন্ত। তাহলে কি ভুল দেখছি! ওই তো,ওরা দাঁড়িয়ে আছে,আমার থেকে বড়জোর দশমিটার দূরে! পকেটে সবসময় কিছু চকলেট রাখি। হাঁটার সময় মুখে একটা দিয়ে নিই। তাই বের করে ওদের দিকে গুটিগুটি পায়ে এগোতে থাকলাম। আমি যতই এগোই,ওরাও যেন পিছন দিকে হাঁটতে থাকে দ্রুতলয়ে! আমিও যেন নিশিতে পাওয়া মানুষের মতন ওদের অনুসরণ করতে থাকলাম! বিচার বোধ বুদ্ধি, সবই যেন হারিয়ে গিয়েছিল আমার! কিছুক্ষণ পরেই ওদের আর দেখতে পাইনি।কিন্তু নিজের চোখে দেখেছি ওদের। খুঁজতে থাকি। হঠাৎই ঝোপের মধ্যে থেকে একটা ভুতের মতন চেহারার লোক হাতে একটা লাঠি নিয়ে আমার ওপরে ঝাঁপিয়ে পড়লো। ঘটনার আকস্মিকতায় আমি ঘাবড়ে গিয়েছিলাম।মাথায় লাঠির বাড়ি খেয়ে চিৎকার করে জ্ঞান হারিয়ে ফেলার পর চোখ মেলে দেখি পদমদের বাড়িতে শুয়ে আছি। পদমের বাড়ির সবাই আমার দিকে উদ্বিগ্ন চোখে তাকিয়ে আছে। কিছু প্রতিবেশীরাও আছে আশেপাশে।গলায় স্টেথোস্কোপ নিয়ে একজন ভদ্রলোকের সঙ্গে পদম কথা  বলছে। বুঝলাম উনি ডাক্তারবাবু। আমাকে চোখ মেলতে দেখে সবাই স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেললো।
পরের দিন একটু সুস্থ হতে পুরো ঘটনাটাই শুনতে পেলাম পদমের মুখে। আমাকে প্রথমে ডাকাডাকি করে না পেয়ে বাইরে এসে আমার চিৎকার শুনে আমাকে যখন উদ্ধার করে পদম,তখন আমি অচেতন,রক্তে ভেসে যাচ্ছে শরীর। সঙ্গে আনা বিস্তর ওষুধ আর গরম জল দিয়ে প্রাথমিক শুশ্রূষা করেই,পেমকে খবর দিয়ে পরের দিনই ওদের গ্রাম থেকে গাড়ি আর লোক নিয়ে সেই রাতের মধ্যেই ওদের বাড়িতে নিয়ে আসে।একজন ডাক্তারকে কালিম্পং থেকে নিয়ে আসে আমার চিকিৎসার জন্য।
পদমের কুণ্ঠিত মুখ দেখে কারণ জিজ্ঞাসা করায় ও বললো,আপনাকে আমার আগেই বলে দেওয়া উচিত ছিল! আমাদের গ্রামেরই ছেলে সুরজ রাই জঙ্গলের কাঠের চোরাচালান করে যারা,তাদের দলের সঙ্গে যুক্ত ছিল।টাকা পয়সার বখরা নিয়ে দলের লোকেদের সঙ্গে গোলমাল হলে ওরা ওর স্ত্রী আর একমাত্র ছেলেকে খুন করে জঙ্গলে ফেলে দেয়। দিনকয়েক খোঁজার পরে শ্বাপদে খাওয়া ওদের দেহ দেখেই সুরজ পাগল হয়ে যায়।আপনি সেদিন ওদেরই দেখেছিলেন! আপনারা শহরের মানুষ এসব বিশ্বাস করেননা। কিন্তু আমরা এইসব জঙ্গলে যে অস্বাভাবিক ঘটনা ঘটে,তার অনেক কিছুরই প্রত্যক্ষদর্শী।
পদমের স্ত্রী এসে বললেন,এখন আমরা আপনাকে সুস্থ না হওয়া পর্যন্ত যেতে দেবনা। আপনি এখানে বিশ্রাম নিন।………………
ঋণ স্বীকার  :  তথ্য সূত্র ও ছবি ” যারা পরিযায়ী ” পত্রিকার শেষ সংখ্যা ৷ লেখক : সুপ্রিয় কর ৷
*******************************************

সুরজিৎ সরখেল পরিচিতি :
১৯৫৭ সালে কলকাতায় জন্ম। ২০১৮ সালে ভারতীয় জীবন বীমা নিগম থেকে অবসর নিয়েছেন। সঙ্গীতে একটা পারিবারিক ঐতিহ্য ছিল। সেজমাসী এবং মেজমামা প্রখ্যাত সুরকার স্বর্গীয় হৃদয় রঞ্জন কুশারীর তত্ত্বাবধানে সঙ্গীত চর্চা শুরু হয়। কলেজ জীবন শুরু হবার পর সঙ্গীতে আকৃষ্ট হন। অফিসে কর্মজীবনের ফাঁকেই শুরু হয় সাহিত্য চর্চা। কিছু প্রকাশিত হয়েছে বিভিন্ন সাময়িক পত্র পত্রিকায়। এছাড়াও বাগানে বিভিন্ন রকমের গাছপালা নিয়ে সময় কাটাতে ভালোবাসেন।

error: বিষয়বস্তু সুরক্ষিত !!