জন্মদিন
প্র ত্যু ষ সে ন গু প্ত
এক।।
বন্দনা বললো,”ডান দিকের ওই সরু রাস্তাটা ধরে এগোলেই আমরা মেইন রোডে উঠব।”
শুনে রাতুল হাঁ হাঁ করে উঠলো,”ওই দিকে আবার রাস্তা কোথায় দেখলি? আমি তো দেখে এলাম। একটু এগিয়ে গেলে একটা ফাঁকা মসজিদ,রাস্তা শেষ। পিছনে পাহাড়!আর কিচ্ছুটি নেই।”
ঐশিকা বললো,”এবার কিন্তু আমার ভয় ভয় করছে। তোরা যা করবি তাড়াতাড়ি কর। দেখছিস না,অন্ধকার নেমে আসছে?”
দেবরাজ গাড়ির দরজা খুলে বেরিয়ে এলো। মুখে এক রাশ বিরক্তি। জিপিএস কাজ করছেনা। এখানে মোবাইল টাওয়ার নেই। সিগারেট ধরিয়ে প্রাণপণে ধোঁয়া টেনে রিং ছাড়তে লাগলো। উদাসীন দৃষ্টি। কাছে পাহাড়ের ঢাল ধরে পারমিতা নেমে এলো বাথরুম করে। পিছলে গিয়ে কনুইয়ের ছাল উঠে গেছে। হাঁটু আর বাঁ পায়ের উরুর মাঝে জিনসের উপর শুকনো শ্যাওলার ঘষটানোর দাগ। নরম সরম পারমিতা,”উঃ উঃ” বলে দু হাত ছড়িয়ে চিৎ হয়ে শুয়ে পড়লো। দেবলীন গাড়ি থেকে ফাস্ট এড বক্স বের করে নিয়ে এলো। স্যাভলন কনুইয়ে লাগতেই যন্ত্রণায় পারমিতার চোখ দিয়ে জল এসে গেল। রাতুল একটু দূরে ছিলো। এসব খেয়াল করেনি।পারমিতাকে দেখে বলে উঠলো,”এই! গান শোনাতো?যে কোনও গান। তোর গান শুনলে ক্লান্তি,বিরক্তি সব দূর হয়ে যায়।”
পারমিতা রেগে উঠে বললো,”আরে,আমি মরছি ব্যথায় আর উনি গান শুনবেন!চিৎকার করে কাঁদবো,শুনবি?”
দুই।।
জায়গাটা অরুণাচল প্রদেশের রাজধানী ইটানগর থেকে দূরে তাওয়াং শহরের কাছাকাছি একটা স্থান। হাজার কুড়ি ফুট উঁচু পাহাড়ি দুর্গম এলাকা। তিব্বতের অন্তর্ভুক্ত এই অঞ্চল এক সময় নেফা (নর্থ৷ ইস্ট ফ্রন্টিয়ার এজেন্সি) নামে পরিচিত ছিলো,১৯৬৭ সালে ভারতের একটি রাজ্য হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হয়। এর আগে,১৯৫০ সালে এলাকাটি ভারতের অন্তর্ভুক্ত হয়। ১৯৫৭ সালে চীন তিব্বত দখলের পর থেকেই যেন তেন প্রকারেণ এ জায়গাটা ও দখলের চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। তবে ভারতীয় সেনাবাহিনীর অতন্দ্র প্রহরা আর দেশ রক্ষার প্রশ্নাতীত প্রেম ও দক্ষতায় প্রতিবারই চীন লেজ গুটিয়েপালিয়েছে। চীনা চোরাচালানী,সন্ত্রাসীরা এখানে সক্রিয়। তিব্বতি ধর্মগুরু দলাই লামার এই পবিত্র জন্মস্থান অপবিত্র আর অশান্ত করতে চীনের চেষ্টার শেষ নেই।। এর মনোরম প্রাকৃতিক সৌন্দর্য কিন্ত মন ভরায় একদিকে খাড়া পাহাড় উঠে গেছে। আর উল্টো দিকে অনেক নীচে ক্ষীণস্রোতা চে নদী। পারমিতারা অফিসের ক‘জনে ছুটি নিয়ে ঘুরতে বেরিয়েছে। একটানা ওয়ার্ক ফ্রম হোমের বিরক্তি আর ক্লান্তি কাটাতে এরকম ছোট্ট ভ্রমণ টনিকের কাজ দেয়!
তিন।।
রাস্কিন এডিসি অফিস থেকে ইনার লাইন পারমিট বা আই এল পি ইস্যু হলো দু মিনিটে। এ জায়গাটা অসমের প্রান্তিক রেল স্টেশন মার্কঙসেলেকের কাছে।অসমে ‘স‘ এর উচ্চারণ কতকটা ‘হ‘ এবং ‘চ‘ মিলিয়ে যেমন হয়। আর ‘চ‘ এর উচ্চারণ উত্তর কলকাতার “সামবাজারের সসিবাবু..র ‘স‘ এর মতন। এখান থেকে এডিসি অফিস খুব কাছে। এডিসি অফিসের কাছেই দু‘চাকা চার চাকা ভাড়া পাওয়া যায় পারমিট আর ড্রাইভিং লাইসেন্স দেখিয়ে। ওরা একটা এসইউভি নিলো। গোটা জার্নিটাই সুন্দর ছিলো। পারমিট কর্তৃপক্ষ,সেনা অফিসার,গাড়ি ভাড়ার লোক,সক্কলে পইপই করে সন্ধ্যার আগেই ফিরতে বলেছিল। একে রাস্তা ভুল,তার উপরে গাড়ির চাকা পাঙচার হলো,পর পর দু দু‘বার। সোনার কেল্লায় যেমন হয়েছিলো! ওখানে তবুও উট ছিলো,এখানে কিছুই নেই।মানুষ জন নেই,ফাঁকা রাস্তা। এদিকে অন্ধকার নেমে আসার পাশাপাশি ঠান্ডাও যেন বাড়তে লাগলো। ওরা একটু এগিয়ে হেঁটে রাস্তার পাশে উঁচুমতন একটা পরিত্যক্ত বাড়ি দেখতে পেলো। ভিতরে ঢুকে দেখা গেলো যা ভাবা হয়েছিলো,ততটা অপরিচ্ছন্ন নয় ৷ ভিতরে একটা বাথরুমও আছে,আর ঠিক পাশে আছে একটা ছোট্ট তির তির জলের ঝরনা ৷
এই দেখে মেয়েরা হৈ হৈ করে উঠলো। “যেন ফাইভস্টার হোটেলের বাথরুম।“,বন্দনা বললো,”আমি স্নান করব।”
বিকেল থেকে বাড়তে থাকা টেনশন আর ক্লান্তি যেন এক লহমায় মিলিয়ে গেল। এদিকে দ্রুত আলো কমে আসছে। মোবাইল টর্চ জ্বালিয়ে অন্ধকার দূর করার চেষ্টার মাঝে দেবরাজ গাড়ির ড্যাশবোর্ড থেকে টর্চ বের করে আনার সময় ঘটনাটা ঘটলো। বোঁ বোঁ শব্দতুলে একটা যান্ত্রিক কিছু ওদের মাথার উপর দিয়ে উড়ে গেলো। লাল আর সবুজ আলোর বিন্দু দপদপ করে জ্বলছিলো যন্ত্রটার গায়ে! ব্যাপারটা রাতুলের চোখ এড়ালো না।এটা একটা ড্রোন! এরমধ্যে ড্রোনটা যে দিক দিয়ে এসেছিলো,সেদিকে ফিরে গেল। কিছু বিস্কিটের প্যাকেট আর জল নিয়ে ওরা খেতে বসেছে এমন সময় নিঃশব্দে চার পাঁচ জন হুড়মুড়িয়ে ওদের ঘরে ঢুকে পড়লো।প্রত্যেকের মুখ কাপড়ে ঢাকা,হাতে উদ্যত বন্দুক! দুর্বোধ্য ভাষায় হাড় হিম করা গলায় ওরা দেবরাজের মাথায় বন্দুক ঠেকিয়ে কিছু একটা বললো। একজন বন্দনার হাত ধরে টানলো। বুঝতে অসুবিধা হলোনা,ওদের বন্দী করা হয়েছে!
চার।।
চোখ বেঁধে উঁচুনিচু অনেকটা পথ হাঁটার পর একটা জায়গায় দাঁড়ালো সবাই। চোখ খুলে দেখা গেল চারদিক টিনের বেড়া দেওয়া একটা চৌকো ঘর। এককোণে একটা লন্ঠন জ্বলছে টিমটিম করে। ওর মধ্যেই এক মুখোশধারী ভাঙা ভাঙা হিন্দি ইংরেজি মিলিয়ে যা বললো,তার সারমর্ম হলো,ওদের সকলকে অপহরণ করা হয়েছে। এখন ওদের দাবি মত মুক্তিপণ না দিলে মুক্তি মিলবে না! একজন রাতুল কে নিয়ে গেল বাইরে অজানা কোথাও,যেখান থেকে ফোনে কথাবার্তা চালাতে পারবে। এখানে মোবাইল টাওয়ার নেই!খাবার দিয়ে গেল একজন। মাটির থালায় ঘ্যাঁটের মতন কিছু। দেবরাজ বুঝতে পারলো জল দেওয়া ভাত পচিয়ে ফার্মান্টেট করে তার নিঃসৃত তরল ওদের দেওয়া হয়েছে। এটা এক ধরনের পানীয়। নেশা হয়। বন্দুকের মুখে এগুলো হজম করতে হলো!
সকালে প্রথমে ঘুম ভাঙলো পারমিতার। আজকের ভোর যেন অন্যরকম।টিনের ঘরের এক চিলতে জানালা দিয়ে ভোরের আলো আসছে। ও উঁকি মেরে দেখলো দুজন বন্দুক ধারী। মুখোশ নেই। গল্প করছে। সকলকে ঘুম থেকে ডেকে তুলতেই একটা ব্যাপারে ওদের হাড় হিম হয়ে এলো। রাতুল ফিরে আসেনি!
।।পাঁচ।।
সামরিক বাহিনীর একটি গোপন ঘাঁটিজুড়ে প্রবল তৎপরতা। কাল ড্রোনে নিখোঁজ পাঁচ পর্যটকের গাড়িটার খোঁজ মিললেও ওরা যেন উবে গেছে। সাইবার সেকশন জানালো একটা দিশা মিলেছে। তাওয়াংয়ের কাছে একটি ফোনের কল ট্র্যাক করে পাওয়া গেছে কল দাতার পরিচয়। এই দুর্গম স্থান জনবসতিহীন। এখান থেকে কল খুব কম যায় ! এই স্থান থেকে নিখোঁজ পাঁচ পর্যটকের এক জনের মোবাইলে কল করা হয়েছে কলকাতায়। আধার কার্ডের লিঙ্ক থেকে পরিচয় বের করা গেছে। আইএলপি নেবার সময় সকলকে আধার কার্ডের তথ্য জানাতে হয়। লোকেশন ট্র্যাক করার সঙ্গে সঙ্গে ওখানে পিন পয়েন্ট নজরদারি শুরু হয়েছে। এই অঞ্চল সেনাবাহিনীর ভাষায় মোস্ট স্ট্র্যাটেজিকালি সেন্সেটিভ এরিয়া। সন্ত্রাসবাদী,বিভেদকামী শক্তি,বিদেশী গুপ্তচর,বিদেশী মদতপুষ্ট চোরাচালানী,চরমপন্থী শক্তির তৎপরতা এখানে প্রবল। এই ক্ষতিকর কাজকর্ম রুখতে এই রাজ্যে আফস্পা চালু করা হয়েছে ৷
সেনাবাহিনীর এই বিশেষ ক্ষমতার আইনটির পুরো নাম আর্মড ফোর্স স্পেশাল পাওয়ার অ্যাক্ট। বিশেষ প্রযুক্তির সাহায্যে উপগ্রহের মাধ্যমে এখানে প্রতিটি মানুষকে মনিটর করা হয়। ফোন কলের ব্যক্তি ও তার সহযোগী কে আড়াল থেকে ঘিরে ফেলে তাদের গতিবিধির উপর বিশেষ সেলের নিরাপত্তা কর্মী ডিটেইল করা হলো। এখন আর ওরা কোথাও পালাতে যাতে না পারে। লেঃ কর্ণেল রণধাওয়ার নেতৃত্বে তল্লাশি ও উদ্ধার কাজ মুহূর্তেই শুরু হয়ে গেলো। মনিটর স্ক্রিনে পরিস্কার দেখা গেলো দুজন মানুষ তাওয়াঙের উত্তর পশ্চিমে জঙ্গলের মধ্যে দিয়ে কোথাও যাচ্ছে।কিন্তু সোজা পথে নয়,ঘুর পথে। এমন কি রাস্তা হারিয়ে ফেলে পথিক যে ভাবে ঘুরপাক খায় তেমনই। কিন্তু এসব অপহরণকারী দুস্কৃতিরা এ জঙ্গল চেনে হাতের তালুর মতন। কর্ণেল নিশ্চিত হলেন বন্দী দের খুব কাছেই কোথাও লুকিয়ে রাখা হয়েছে। কাল সন্ধ্যায় ড্রোন থেকে ওদের পরিত্যক্ত গাড়ি দেখার পনেরো মিনিটের মধ্যে রেসকিউ টিম ওখানে পৌঁছে যায় কিন্তু ওদের মেলেনি। মনিটরে ওদের একটা ঝাঁকড়া গাছের তলায় মিলিয়ে যেতে দেখে অভিজ্ঞ সেনা অফিসার বুঝে গেলেন এটা ক্যামোফ্লেজ।উপগ্রহ চিত্রে যাকে গাছ মনে হচ্ছে তা আদতে কোনও শক্ত কিছুর উপর গাছের ডালপালা ছড়িয়ে রাখা।যুদ্ধের সময় শত্র পক্ষকে ধোঁকা দিতে বিমান হানার ভয়ে ট্যাঙ্ক,সামরিক গাড়ি,বিমানের উপর যেমন গাছের ডালপালা ছড়িয়ে রাখা হয়। চার্লি ট্যাঙ্গো জানালো ওটা একটা টিনের বাড়ি। পাঁচ পর্যটকের সঙ্গে রয়েছে সশস্ত্র চার সন্ত্রাসবাদী। ওদের ঘিরে রয়েছে।
।।ছয়।।
একটানা ফুঁপিয়ে কাঁদছিলো বন্দনা। পারমিতা আর ঐশিকা মাথা নীচু করে বসেছিলো। ওদের বিক্রি করে দেওয়া হবে।দুটো চুলদাড়ি ভর্তি মাতাল এসেছে। ক্রেতা।ওদের একজন বন্দনার শরীরে হাত দিয়েছে অসভ্যের মতন। রাতুল প্রতিবাদ করায় বন্দুকের বাঁট দিয়ে ওকে এমন ভাবে মারা হয়েছে যে রাতুল রক্তাক্ত অবস্থায় মাটিতে পড়ে আছে অজ্ঞান হয়ে। দেবরাজের হাত পিছমোড়া করে বাঁধা। এক অদ্ভুত ভাষায় ওরা কথা বলছিল। ভাবে ভঙ্গিতে ও বুঝতে পারলো,আজই ওদের অন্য কোথাও সরিয়ে নেওয়া হবে আর বন্দনাদের বিক্রি করে দেওয়া হবে। দেবরাজ চাকমা ভাষা কিছুটা জানে। কিন্তু এটা চাকমা নয়।দেবরাজ চুপচাপ অপেক্ষা করতে লাগলো সুযোগের। ও পিছনমোড়া হাতের বাঁধন খুলে ফেলেছে!পাঁচজন মুখোশধারীই মুখোশ খুলে এখন খোশ মেজাজে পানাহারে ব্যস্ত। দু‘জনের স্নাইপার (আগ্নেয়াস্ত্র) কাঁধে ঝুলছে। বাকি তিনটে গাছের সঙ্গে হেলান দেওয়া। একটু খসখস শব্দ হতেই সকলে সচকিত! দুজন বন্দুক তাক করতেই জঙ্গলের ভিতর থেকে এক ন্যুজ্ব বৃদ্ধ ও একটি কিশোর হাঁউমাঁউ করে বেরিয়ে এলো। কিশোরের হাতে দড়িবাঁধা একটি ইয়কের বাচ্চা। এই রোমশ পাহাড়ি গরু এলাকার গরীব মানুষের জীবিকার একটা বড় উপায়। বৃদ্ধের হাতে ঝুড়ি ভর্তি ডিম।বৃদ্ধের হাত থেকে একজন গোটাকুড়ি ডিম নিয়ে বন্দুক উঁচিয়ে পারমিতাকে ইঙ্গিত করলো পাশে কাঠকুটোয় জ্বালানো আগুনে সেদ্ধ করে দিতে। লোকটার নাকের উপর একটা অতিকায় তিল মুখটাকে বীভৎস করে তুলেছে। আর এক জনের ডান গালে লম্বালম্বি গভীর ক্ষত চিহ্ন। একটা গাছের গুঁড়িতে ঠেস দিয়ে যে লোকটা বসে আছে,তার গায়ে টকটকে লাল জামা। আর দুজনের মাথায় স্পোর্টস ক্যাপ।ওরা খরিদ্দারের সঙ্গে গল্পে মশগুল। গাছগাছালির ফাঁকে মাটির মধ্যে বসেছিলো ওরা। খাবার এবং পানীয় চলছিলো। বুড়োটা কয়েকপা এগিয়েছে চলে যাওয়ার জন্য,হঠাৎ সামনে মাথা ঝুঁকে লাল জামা উপুড় হয়ে মাটির শয্যা নিলো। কিছু বুঝে ওঠার আগেই বৃদ্ধ আর কিশোরটির হাতে যেন আকাশ থেকে পিস্তল চলে এলো!
নিঃশব্দ জঙ্গলে দুটি পিস্তলের আওয়াজে গাছ থেকে পাখি উড়ে গেলো আর নাকে তিল ও গালকাটা হাঁটু গেড়ে মাটিতে লুটিয়ে পড়লো। যে দাড়িওয়ালা বন্দনার গায়ে হাত দিয়েছিল,দেবরাজ শরীরটাকে শূন্যে ভাসিয়ে তার চোয়ালে এতো জোরে লাথি মারলো যে সে আঁক শব্দ করে মাটিতে ছিটকে পড়লো। সম্ভবত এক লাথিতে ওর ভবলীলা সাঙ্গ হলো। রাতুল চমকে উঠে দেখলো কখন যে জনা কুড়ি মুখে কালিঝুলি মাখা মানুষ ওদের সকলকে ঘিরে ফেলেছে। দুটো বন্দুকধারীর অস্ত্র কেড়ে ওদের হাত পা বেঁধে ফেলেছে। খুব জোরে একটা জলপাই রঙা জীপ এসে দাঁড়ালোওদের কাছে। পিছনে একটা এস ইউ ভি।তার পিছনে আর একটা এস ইউ ভি। পারমিতা আতঙ্কে চোখ বন্ধ করে রেখেছিল। বন্দনা কান্না থামিয়ে ব্যপারটা বুঝতে চেষ্টা করলো। জীপ থেকে ছিপছিপে লম্বা সামরিক উর্দি পরা এক যুবক নেমে এলেন।
“লেট মি ইনট্রোডিউস মাই সেল্ফ,আই অ্যাম ক্যাপ্টেন সুব্রত গোসওয়ামি অফ ওয়ান টু এইট ব্যাটালিয়ন হিয়ার টু রেসকিউ অল অফ ইউ।”
“–বাঙালী?”
“–একশো পার্সেন্ট,”দেবরাজের প্রশ্নের ঝটিতি উত্তর সেনা অফিসারের।
“–আপনারা জোর বেঁচে গেছেন। এখানে দুটো স্মগলিং গ্রুপ সক্রিয়। খাকলঙ আর নুইভা গ্রুপ। দুটোই শয়তান। চীনের থেকে মোটা টাকা পায় এদেশে অশান্তি পাকানোর জন্য। খুন,রাহাজানি, ডাকাতি,তোলাবাজি থেকে অপহরণ,শিশু ও নারী পাচার,ধর্ষণ, সব কিছুতে এরা মাস্টার। আপনারা নুইভাদের হাতে পড়েছিলেন। মেয়েদের ওরা মোটা টাকায় সীমানার ওপারে পাচার করে দিত। ছেলেদের বাড়ি ও দেশ,দু দিক থেকেই মুক্তিপণ আদায় করত। কিন্ত টাকা দিয়েও মুক্তি মিলবে কি না,গড নোস্!”
ন্যুজ্ব বৃদ্ধ আর কিশোর আসলে সেনাবাহিনীর স্ন্যাপ শুটার! দেবরাজ পরে এটা জেনেছিলো। ক্যাপ্টেন ওদের পিছনের এস ইউ ভি তে উঠতে বললেন। গাড়ি চলতে শুরু করলেই বন্দনার মনে হলো এ যাত্রায় প্রাণে বাঁচা গেলো।
ঐশিকা আর দেবরাজ প্রায় একসঙ্গে বলে উঠলো,”আজ কত তারিখ খেয়াল আছে? আগামীকাল পয়লা বৈশাখ। আজ বছরের শেষ দিন। চোদ্দই এপ্রিল। পারমিতার জন্মদিন!”
ভয় ভাবনা,আতঙ্ক তুড়ি মেরে উড়িয়ে দিয়ে সকলে গলা মিলিয়ে বলে উঠলো,”হ্যাপি বার্থ ডে টু পারমিতা…।
“দু ‘ধারের গাছপালা পিছনে সরিয়ে দিয়ে গাড়ি ছুটে চললো সামনে, জীবনের দিকে।।
**********************************************
প্র ত্যু ষ সে ন গু প্ত পরিচিতিঃ
সরকারী বেসরকারী মিলিয়ে নানা রকম চাকরী করে এখন বেলাশেষে কলম ধরেছেন। প্রথম চাকরী এক ওষুধ কোম্পানীতে। তারপর চা বাগানে। এরপর দু’দুটি খবরের কাগজে সাব এডিটর। শেষ পর্বে গোপনীয়তায় ভরা সরকারী চাকরী। দীর্ঘ চাকরী জীবনে কাজ করেছেন পশ্চিম বঙ্গের অধিকাংশ জেলায়! অভিজ্ঞতা হয়েছে প্রচুর। এই শেষ বেলায় ওই অভিজ্ঞতায় নির্ভর করে আবার কলম ধরেছেন।