ফেরা…
দেবযানী সান্যাল
বেশ খানিকটা দেরি ছিল তখনো ভোর হওয়ার,
বহুদূর থেকে ভেসে আসা কাঁপা কাঁপা বিসমিল্লার সানাইয়ের করুণ সুর…
প্রত্যুষের ভৈরবীতে লেগেছে কোমল – নিষাদের টান,
“বাবুল মোরা নৈহার ছুটো হী যায় “।
নিবিড়তম স্তব্ধতার মাঝে বাসা ছাড়ার আগে একটা -দুটো পাখির
ডানা ঝাপটানোর আওয়াজ। আসমানি – নীলে বিবর্ণতার কেমন ছল্ ছলে ঘষা দাগ,
জল ছুঁয়ে থাকা পদ্মপাতাতেও ” জানিনা যাও ” গোছের সীমাহীন অভিমান….
আজই তবে তোমার যাওয়া ! প্রহর তবে তো এসেই গেল!
তোমার পথ তো অনেক অনেক দূরের! সেই যেখান থেকে ফিরে আসতে লাগে গোটা একটা বছর।
আমরা সবাই তোমায় দোরগোড়া অবধি এগিয়ে দিতে গিয়ে, যাত্রা – পথের শুভকামনায় অস্ফুট কাঁপা কাঁপা গলায় বলব,
দুগ্গা, দুগ্গা….
আমাদেরও তো ফিরতে হবে বচ্ছরভর দিনগোনার সেই সীমাহীন পথটা ধরে ধরেই…
তোমার আভাস অস্তিত্বের শুধু জানান দেবে
তোমার ফেলে যাওয়া আসন ঘিরে ওই কাঁপা কাঁপা প্রদীপের স্নিগ্ধ আলোটা,
আর ওই মৃদু আলোমাখা পথটা ধরেই প্রতীক্ষায় রইব আমরা সবাই, সব্বাই
ব্যথায় মুচড়ে ওঠা কষ্টটাকে সামাল দিতে দিতে,
ভোরের শিউলি-গন্ধ আর কাশফুল দুলে ওঠার আগামীর পথ ধরে ধরে আর
বহুদূরের আকাশ পথে ভেসে চলা ওই পেঁজা তুলোর মাঝ দিয়ে তোমার ফিরে চলা রথটায়, দৃষ্টিসীমা পার করেও তাকিয়ে থেকে থেকে
কান্নায় ভেঙে পড়তে পড়তে রুদ্ধশ্বাসে সমস্বরে বলবো…..
আবার, আবার এসো মাগো..আবার,আবার,বারবার…….
*********************************************
দেবযানী সান্যাল : পেশায় স্কুল শিক্ষিকা,বই পড়তে খুব ভালোবাসেন। আধ্যাত্মিকতায় সমৃদ্ধ হন। শৈশবকাল থেকে প্রকৃতির পাঠ নিয়েই জীবনের পথচলা। বড়ো হবার সাথে সাথে রবীন্দ্রনাথ অন্তঃস্থলে চিরস্থায়ী আসন নিয়েছেন। ভালোবাসেন প্রকৃতির মাঝে ঘুরে বেড়াতে। শিশুমনস্ক,ওদের ঘিরেই যাপন।