Shadow

জীবনী – মেরী খাতুন 

PC: Free Press Journal

জীবনী

মেরী খাতুন 

“কষ্টই ফারমিনা-কে প্রতিবাদের শক্তি দিয়েছে”
একটি শিশু যখন ছোট থেকে বড় হয়ে ওঠে,তখন তার চোখে থাকে কতই না স্বপ্ন আর ডানা মেলার ইচ্ছে। কিন্তু ফারমিনা নাজের গল্পটা অন্যরকম। অভাবের সংসারে  অবহেলায় বড় হতে থাকে ফারমিনা। দুবেলা ভরপেট খাওয়ার আশায় ছোট্ট মেয়েটি দিনের পর দিন নানা কষ্ট সহ্য করে গিয়েছে মুখ বুজে। এই পরিস্থিতির মধ্যেও ফারমিনা স্কুলে ভর্তি হয়। কিন্তু লেখা পড়ার উৎসাহ থাকা সত্ত্বেও অভাবের তাড়নায় বেশিদিন পড়াশুনা চালিয়ে যেতে পারলো না। তাঁর বাবা জানালেন, মেয়ের দায়িত্ব নেওয়া তাঁর পক্ষে আর সম্ভব নয়। জোর করে কম বয়সেই ফারমিনার বিয়ে দেওয়া হয়। লেখাপড়া শেখার ইচ্ছেতে জলাঞ্জলি দিয়ে ফারমিনা নতুন সংসারে প্রবেশ করল। কিন্তু সে সংসারে সুখ তো দূরের কথা নানা তুচ্ছ ছুতোয় স্বামী তাকে প্রায়ই মারধর করত। কিছুদিনের মধ্যে সে এক শিশু পুত্রের মা’ও হয়। পুত্রের জন্মের পর থেকে শ্বশুরবাড়ির লোকজনদের নির্যাতন আরো চরমে ওঠে। জন্মের পর থেকেই শিশুটির হার্টে ফুটো ধরা পড়ে এবং মায়ের দুধ খেতে পারে না। আবার গরুর দুধ বা অন্য তোলা দুধ খাওয়ালে তা নাক দিয়ে বেরিয়ে যায়।ডাক্তারের কাছে গেলে ডাক্তার বলেন, অপারেশন করতে হবে। অপারেশনের কথা শুনে স্বামী ও শ্বশুরবাড়ির লোক সাফ জানিয়ে দেয়,তাদের কাছে টাকা নেই। বাপের বাড়ি থেকে টাকা এনে অপারেশন করাতে হবে, নাহলে বাড়ি ছাড়তে হবে। কিন্তু হত দরিদ্র ফারমিনার বাবা কোথা থেকে এতো টাকা জোগাড় করবে? তারপরই সমস্যার শুরু। শ্বশুরবাড়ির লোক ফারমিনাকে অসুস্থ সন্তানসহ বাড়ি থেকে তাড়িয়ে দেয় এবং স্বামী অন্য এক মহিলাকে বিয়ে করে। অসুস্থ ছেলেকে নিয়ে বাবার বাড়ি ফিরে আসে ফারমিনা নাজ। ফারমিনা ঠিক করে যতই কষ্ট হোক না কেন,সন্তানকে সে সুস্থ করে তুলবে। প্রথাগত শিক্ষা না থাকায় এবং অভাবের তাড়নায়,সন্তানের চিকিৎসার জন্য সেও বাবা-ভাইদের মতো দিনমজুরের কাজে যুক্ত হয়। সারাদিন অক্লান্ত পরিশ্রমের পর সন্ধায় ঘরে ফিরে আধপেটা খেয়ে ছেলের মলিন মুখের দিকে তাকিয়ে কোনক্রমে দিন পার হচ্ছিল ফারমিনা নাজের। ফারমিনা নাজের ছোটবেলা থেকেই গানের প্রতি আকর্ষণ ছিল। কাজ করতে করতে প্রায়ই গুনগুন করতো।এরপর একদিন ফারমিনা আসু বচ্চন নামে এক ব্যক্তির নজরে আসে। আসু বচ্চনই ইন্ডিয়ান আইডল (Indian Idol) এর ১২তম সিজনে গানের প্রতিযোগিতায় নিয়ে গিয়েছিলেন। এর পরেই তার জনপ্রিয়তা বৃদ্ধি পায়। কিন্তু ছেলের অপারেশনের জন্য মাঝ পথেই তাকে ইন্ডিয়ান আইডল ১২ তম সিজন ছেড়ে চলে আসতে হয়।এরপর থেকে একের পর এক ভজন ইউটিউবে আপলোড করতে থাকে,এবং প্রত্যেকটি ভজনই হিট,সুপার হিট হতে থাকে। বর্তমানে অত্যন্ত জনপ্রিয় ভজন গায়িকা ফারমিনা নাজ। সম্প্রতি ইউটিউবে তার গাওয়া একটি ভজন “হর হর শম্ভু” পোস্ট করতেই সমালোচকদের দৃষ্টি আকর্ষণ করে এবং তুমুল জনপ্রিয় হয়। গায়িকা জানালেন, ভজনটা গাওয়ার আগে কখনও ভাবিনি এত জনপ্রিয় হবে। এরপরেই মুসলিম ধর্মকে আঘাত করার অভিযোগ তোলেন অনেকেই। গান এবং নাচ নাকি ইসলামে গ্রহণযোগ্য নয়। শরিয়ত এর অনুমোদন দেয় না। তবে ধর্মকে আঘাত করার অভিযোগ উঠলেও দমে যেতে নারাজ ফারমিনা। ওর মতের,”আমি একজন শিল্পী এবং শিল্পীর কোনও ধর্ম হয় না। কোনও গান গাওয়ার সময় আমরা ধর্মের বিষয়টি মাথায় রাখি না। সৃষ্টিকর্তা কন্ঠ দিয়েছে আর সেই কন্ঠ দিয়ে দেশের প্রতিটি মানুষের মন জয় করতে চাই। আমি সব ধরনের গান যেমন,ভজন গজল, কাওয়ালীও গাই।”
ফারমিনার কথাই,”এই অভিযোগ শুধু আমার নয়,আমাদের দেশের লক্ষ লক্ষ মেয়ের জীবন কাহিনী। ভজন গেয়েই আমি সমাজের এই অন্ধকার দিকটা তুলে ধরতে চাই। প্রথমেই প্রয়োজন নিজের অধিকারের জন্য লড়াই করা। একবার সাহস করে রুখে দাঁড়ানো দরকার। মানুষ চাইলে সব পারে।”
**********************************

মেরী খাতুন

 

error: বিষয়বস্তু সুরক্ষিত !!