Shadow

পপা মাসীর প্রথম গোয়েন্দাগিরি – প্র ত্যু ষ   সে ন গু প্ত

PC Drishtibhongi

পপা মাসীর প্রথম গোয়েন্দাগিরি
   প্র ত্যু ষ   সে ন গু প্ত


।।এক।।
(এলেম নতুন দেশে)
    বাবার বদলির চাকরি। তিন মাস আগে বদলি হয়ে এসেছেন আনন্দপুরে। এটা একটা মফঃস্বল সদর শহর। বাংলা আর ঝাড়খন্ডের সীমানায়। আমি ক্লাস এইট।কলকাতায় হোস্টেলে থেকে পড়াশোনা করি,ইংরেজি মাধ্যমে। ছুটিতে নতুন বাড়ি এসেছি গত রাতে। সকালে ঘুম ভাঙার পর মনটা ভালো হয়ে গেলো পাখির ডাকে। বাংলো বাড়িটা বেশ বড়।আগে আমরা ছিলাম বক্সী গঞ্জে,এক সদর শহরে। তবে সেই পদ্মাপাড়ের বক্সীগঞ্জ নয়। শুক্রবার সেখানে হাটও বসতোনা। নামে গঞ্জ হলেও সেখানে শহরের আধুনিক সুযোগ সুবিধা কিছু কম ছিলোনা।
দোতলার খোলামেলা ছাদে উঠে দেখলাম দূরে,রাস্তা পেরিয়ে গাছগাছালির ফাঁক দিয়ে নদী দেখা যাচ্ছে। চার দিকেই গাছপালা। আমার বাঁ দিক থেকে সূর্য উঠছে। তাহলে আমার পিছন দিকটা উত্তর। ছাদের দেয়াল বরাবর ফুল গাছ। সাদা ফুল বেশী।বেলি,যুঁই, রজনীগন্ধা, গোলাপ আরও অনেক নাম না জানা ফুলগাছ। কমলা রঙের জবা।দুটো ডালিম,চার পাঁচটা লেবু গাছের ঝোপ। ছোট ছোট পাটকিলে রঙের পাখির কিচিরমিচির। বাংলো বাড়িটা অনেকটা জমি নিয়ে।বাড়ির চারদিকে নানানরকম গাছ। সবুজ লন। গার্ডেন আমব্রেলা। ঢুকতে ডানদিকে পাহারায় রয়েছে হাউস গার্ড। সিকিউরিটি রুম। আরদালি,মালি দের ঘর।।ব্যারাক।এনকোয়ারি অফিস। গেটে দুদিকে দুজন সশস্ত্র নিরাপত্তা রক্ষী। ডান দিকে গ্যারেজ। ড্রাইভারের কোয়ার্টার। উল্টোদিকে ছোট্ট একটা জলাশয়। স্বচ্ছ জলে শালুক ভর্তি। চার পাঁচটা হাঁস সাঁতার দিচ্ছে।
   এখন গ্রীষ্মের ছুটি। এক মাস স্কুল নেই। তাকিয়ে দেখি বাবা ছাদে এসেছেন। আমাকে দেখে হাসলেন। হাতে চায়ের কাপ। আমাকে বললেন -মুন,তোর জন্য ভালো খবর আছে।
-কী খবর বাবা?
– পপা আসছে। পপারও কলেজ ছুটি !
– পপা মাসী? আনন্দে আমার চোখে জল এসে গেল।পপা মাসী আমার আদর্শ।যেমন পড়াশোনা,তেমন গান।তেমন বুদ্ধি। খেলা ধুলোয় দারুণ।কলেজ ক্রিকেট টিমের ক্যাপ্টেন।সাঁতার এবং কারাটেতে রাজ্য চ্যাম্পিয়ন! আর কত বলব?মাসী কিন্ত দেখতেও খুব সুন্দর।হাইট পাঁচ ছয়।ছিপছিপে।মাথা ভরতি চুল,একটু কোঁকড়া।পান পাতা মুখে বড় বড় চোখ দুটো অসম্ভব উজ্জ্বল।

।।দুই।।
(বকুল কথা)
  নির্মলামাসী আমার দিকে চেয়ে বলে উঠলেন,ওম্মা,কি সোন্দর গো।এক্কেরে যেন ফুলটুসি। এখানেই থামলেন না।দু আঙুলে এমন ভাবে গাল টিপে দিলেন যেন আমি একটা বাচ্চা মেয়ে।আমি তো ক্লাস এইট।
  – আয় না?আয়?
 –  দিদিগো,এই আমার মেয়ে।ফাইভে পড়ে।ইংরিজি আর অঙ্কে ভারী দুর্বল!মা বললো,চিন্তা নেই মুন একমাস থাকবে।দেখিয়ে দেবে।কীরে,পারবিনা?আমি কিন্তু কথা দিয়েছি।এ আবার এমন কি কাজ।মা’র কথা শুনতে শুনতে দেখলাম প্রায় লিকলিকে একটি মেয়ে দরজায় এসে দাঁড়িয়েছে।চোখ দুটো শান্ত।  লেগে পড়লাম।
-তোর নাম কিরে?
-বকুল।
-বকুল কি?
-বকুল হালদার।বাবা আমাকে বুকু বলে।
ছোট্ট শান্ত বকুল এতো আস্তে কথা বলে যে শোনা যায়না।আর খুব জড়োসড়ো।তবে ওর হাতের লেখা দেখে চমকে গেলাম।মুক্তার মতো।মনে হয় ছাপার হরফ।পপামাসীর হাতের লেখার মত সুন্দর।বাংলা আর ইংরেজি,দুটোই। অবাক হতে আরও বুঝি আরও বাকি ছিলো।ক্লাস ফাইভ।কিন্ত পার্টস অফ স্পীচ মুখস্ত।আর্টিকেলে কখন ‘দ্য’ আর কখন ‘দি’ হবে আমাকে বলে দিলো।অঙ্কেও দেখলাম মাথা খুব পরিস্কার।শুরু হলো পড়ানো।প্রতিদিন দুপুরে।কারণ,গ্রীষ্মের ছুটি!তরতর করে এগোতে লাগলো পড়া।বুকু খুব সিরিয়াস ধরনের ছাত্রী। দেখা গেলো,অঙ্ক বা ইংরেজি শুধু নয়,প্রায় সব বিষয়েই ও বেশ ভালো।এমনকি ড্রইং য়েও।ওর আঁকা দেখে বাবাকে বলেছিলাম।বাবা একবাক্স রঙ আর তুলি কিনে এনেছেন।আজ পড়া শেষে ওকে রঙের বাক্সটা দিতেই অপ্রত্যাশিত উপহারে ওর চোখমুখ উজ্জ্বল হয়ে উঠলো।মুখে হাসি কিন্ত চোখে জল।আমি জড়িয়ে ধরতেই ঝরঝর করে কাঁদতে লাগলো।

।।তিন।।
(পুলিশ কাকুর বাংলো)
 মজুমদার কাকুর বাংলো আমাদের দুটো বাড়ি পরে।গেটের বাইরে টিনের ছাউনিতে বন্দুক হাতে সবসময় পুলিশ দাঁড়িয়ে থাকে।ভিতরেও ডানদিকেই ছোট টানা লম্বা ঘরে ভর্তি পুলিশ।ওদের পেরিয়ে সোজা গেলে গাড়ি বারান্দা। কাকুর আমন্ত্রণে আমরা ওঁর বাংলোয় গেছি।বাবার বন্ধু কাকু নাকি পুলিশের এসপি।তবে দেখে একদমই পুলিশ পুলিশ মনে হয়না।মনে হয় কলেজে পড়ান।
আজ রবিবার।বাবার ছুটি থাকলেও কাকুর থাকেনা। তবে কাজের চাপ কম থাকে।আজ সকালে আমাদের বাড়িতে ঘন্টা দুই আড্ডা মারলেন।বাবা পপামাসীর কথা বলতেই উনি দারুণ আগ্রহ দেখালেন।বললেন,আরে,আমি তো এমন একজনকেই খুঁজছি!
বাবা বললেন,পপামাসীর আইপিএস হওয়ার শখ।পাড়ায়,কলেজে ও চুরি ধরার যেন বিশেষজ্ঞ।ওকে তাই বন্ধুরা আড়ালে বলে পুলিশ পপা।কলেজে ওর নাম পুলিশ | পমমাসী কিন্ত রাগ করেনা।বরং মজা পায়।আসলে হলো কি,পপামাসীর নাম পমপম।পমপম বিশ্বাস।ডাক নাম পম্পা।মার কাছে শুনেছি,ছোট বেলায় পম্পার ‘ম’টা কিছুতেই বলতে পারতাম না।বলতাম “পপা”।সেই থেকে মাসীর নাম পম্পা থেকে হয়ে গেলো পপা মজুমদার কাকু বারবার বলে গেলেন,মাসী আসলেই যেন ওঁকে জানানো হয়।কাকীমাও তাই।মাসী এলেই ওঁরা আসবেন দেখা করতে।বাহ্।মাসী দেখছি ভিআইপি হয়ে গেছে!

।।চার।।
(মাসী এলো ওই)
  এখন সকাল ঠিক সাড়ে আটটা।আমার কিছু পড়া তৈরির দরকার ছিলো।পড়া শেষ করে উঠবো উঠবো করছি,মা লুচি আলুর দম, দুধের গ্লাস দিয়ে গেলো।সঙ্গে এই বড় বড় রসগোল্লা।মা দুজনের জন্য এনেছিলো  ট্রলিতে চাপিয়ে।আমি বললাম বুকু আজ আসেনি।মা বললো,নির্মলামাসীও আজ আসেনি।শরীরটরির হয়তো খারাপ হয়েছে কারও।খাওয়া শেষ করে বেসিনে হাত ধুচ্ছি এমন সময় গাড়ির  আওয়াজ।এটা আমাদের গাড়ির হর্ণ নয়।তার পরই ডোর বেলে পাখির কলতান।দরজা খুলতেই আনন্দে মন ভরে গেল।মনে হলো শুধু দুচোখ ভরেই দেখে যাই।
-কীরে?দরজাটা ছাড়?ঢুকতে দিবি না?
-তুমি এতো সুন্দর কেন মাসী?
-বড্ড পেকেছিস দেখছি?
-আমার বন্ধুরাও বলে।
-কী বলে?
-বলে তোর মাসী এত সুন্দর দেখতে,এত লম্বা চুল।কিন্ত একদম সাজেনা!যখনি দেখি,সাদা জামা নয়তো হাল্কা সব রঙ।শুধু একটা টিপ পরে,ব্যস।চোখ দুটো যেন পাখির নীড়!
-এখনই জীবনানন্দ আওড়াচ্ছিস?কান মুলে দেব।সরে দাঁড়া?
মাসী আমাকে একরকম ঠেলেই ঘরে ঢুকে পড়লো।হাতে একটা অ্যাটাচি।কাঁধে ঝোলা ব্যাগ।ঠোঁটের উপরে একটু ঘাম।অনেকদিন পর আমি সেই গন্ধটা যেন পেলাম।মাসীর গায়ের গন্ধ।কি মিষ্টি!
মা বললো,পপা চান করবি না?চান করে আগে কিছু খেয়ে নে।তারপর এই বকবকানি মাষ্টারের সঙ্গে যত খুশি বকে যা।পপা মাসী স্নান করতে গেল।তখনি দরজায় একটা শব্দ হলো।পর্দার ওপারে কেউ যেন  দাঁড়িয়ে রয়েছে!খুব আবছা একটা কান্নার আওয়াজ।আমি পর্দা সরাতে দেখি বুকু!কেঁদে চোখ দুটো লাল।মাথা নীচু।পাশে নির্মলা মাসী।কি হয়েছে?এ কথা জিজ্ঞেস করতেই বুকু ছুটে এসে আমাকে জড়িয়ে কাঁদতে থাকলো!নির্মলামাসী বললো,কাল স্কুলে ওর ব্যাগ থেকে রঙের বাক্সটা চুরি হয়ে গেছে।অনেকের ব্যাগ থেকেই কিছুদিন ধরে কলম,জ্যামিতি বাক্স,টিফিন বক্স উধাও হচ্ছে।

।।পাঁচ।।

(অগ্নিশর্মা )
     বড়বাবু চায়ের গেলাসটা এগিয়ে দিয়ে বললেন,
-ঠিক আছে স্যার।ব্যাপারটা পাঁচ কান হবে না।সামান্য দু এক জন বিপথগামীর জন্য ইস্কুলের নাম খারাপ হোক এটা কেউই চায়না।আপনি নিশ্চিন্ত থাকুন।আমরা তদন্ত করে দেখছি।
সজনপুর আদর্শ উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক অসিত সোরেন স্যার এই একটা সমস্যা নিয়ে খুবই বিব্রত। আগামী সপ্তাহে স্কুলের পরিচালন সমিতির সভা ডাকা হয়েছে।কী ভাবে এই জটিল সমস্যা থেকে উদ্ধার পাওয়া যাবে সে সব নিয়ে আলোচনা হবে। সজনপুর হাইস্কুল এই এলাকার এক বিখ্যাত স্কুল।ইংরেজি মাধ্যম না হলেও বহু দূরদূরান্ত থেকে এই স্কুলে  ছাত্রছাত্রীরা পড়তে আসে।এদের ছুটিছাটা গুলো একটু আলাদা।এই কো-এড স্কুলে ধনী-গরিব সব সমান।এখানে মেধাটাই হলো মূল বিষয়।মেধার ভিত্তিতে ই ভর্তি করা হয় এখানে।এ সব ঘটনা বাইরে জানাজানি হলে কতটা বদনাম হবে ভাবলেই অসিতবাবুর হাত পা কাঁপতে থাকে।এমনিতে ওঁর হাই প্রেশার। নিয়ম করে ওষুধ খান।
  মাস তিনেক আগে স্কুলে এক খারাপ ঘটনা ঘটে।তবে খুব ছোট্ট ব্যাপার।এমনটা হয়েই থাকে।নজরকাড়া কিছু নয়।এক ছাত্রের ব্যাগ থেকে নতুন কেনা জ্যামিতি বক্স উধাও।ক্লাসটিচার সকলকে সতর্ক করে বলছিলেন,কেউ নিয়ে থাকলে যেন  ফেরত দেয়।পরদিনই ক্লাসরুমের পিছনদিকের বেঞ্চে পাওয়া যায় বক্সটি।তারপর মাসখানেক কিছু ঘটেনি।সকলে ভুলেই গিয়েছিল এই কথা।কিন্ত ব্যাপারটা এখানেই থেমে থাকেনি।বরং বেড়েছে।আজ জ্যামিতি বক্স,কাল কলম পেন্সিল,স্কেল,বই,খাতা,এক এক করে চুরি যেতে লাগলো।একদিন টিচার্স রুমে অঙ্কের রুমাদি’র ড্রয়ার থেকে উধাও তাঁর সাধের হাতঘড়িটা। টনক নড়লো এবার।ছাত্রছাত্রী দের কেউ এ কাজ করতে পারে,টিচাররা কেউই এটা বিশ্বাস করতে চাইছিলেন না।এমনিতে টিচার্স রুমে ছাত্রছাত্রী বাদে দপ্তরি বুড়ো হারাধন আর জলের মাসী তারা শুধু ঢুকতে পারে।হারাধন কাগজপত্র,ফাইলটাইল আনে,তারা ঘর ঝাড়পোঁছ,টেবিল পরিস্কার, টিচার্স দের টেবিলে গ্লাসে জল  ভরা ইত্যাদি কাজ করে। মিড ডে মিলের যমুনা দি,সরস্বতীদি আর জবামাসীদের এঘরে আসার প্রশ্নই নেই।রান্নাঘর,ভাঁড়ার ঘর,খাবার ঘর সব আলাদা কমপ্লেক্সে।পপামাসীকে হেডস্যার এসব তথ্য পরে জানিয়েছিলেন।সে কথায় পরে আসছি।হেডস্যার নাকি মজুমদার কাকুর বাংলোয় গিয়ে তাঁকে এ সমস্ত কথা বলে এসেছেন।তিনি যথেষ্ট বিব্রত আর চিন্তিত।

।।ছয়।।
(তদন্ত শুরু)
  চিংড়ির মালাইকারি টা শেষ করে পপামাসী বললো
-উ:,আর পারবো না।মজুমদার কাকীমা বললেন
-আরে?তাই আবার হয় নাকি?এখনো ভেটকির পাতুড়ি,সর্ষে ইলিশ,মাটন কষা বাকী আছে।বাচ্চা মেয়ে,এটুকু তো খেতেই হবে।এর মধ্যে  আবার ট্রে ভর্তি পায়েস,রসগোল্লা,আইসক্রিম, ইয়োগার্ট,সব এসে গেছে।
আমি পাতুড়ি তে কষে কামড় লাগালাম!
 সন্ধেবেলায় মজুমদার কাকু ও কাকীমা এলেন।কাকু পপামাসীকে ডাকলেন।আলাপ হওয়ার পর থেকে কাকুর মুখে শুধুই পপামাসী।এমন ইন্টেলিজেন্ট মেয়ে তিনি নাকি কখনো দেখেন নি।আর কাকীমা তো পপামাসীর গান শুনে পাগল।তিনি বার বার বলছেন,এমন শান্ত,মিষ্টি মেয়ে,কী সুন্দর দুই চোখ,টিকালো নাক,পানপাতা মুখ,এক ঢাল চুলের এই মেয়ে কারাটের ব্ল্যাক বেল্ট এটা ভাবাই যায় না।কারাটেতে তো আত্মরক্ষা  করতে হলে আক্রমণকারী কাউকে তো আঘাত করতে হতে পারে।এই মেয়ে তো পিঁপড়ে মারার আগেও সাত পাঁচ ভাববে! ওঁরা তো জানেন না,কতটা ডানপিটে আমার এই পপামাসীটা। বছর খানেক আগে একটু হলেই হয়েছিলো আর কি।বড় মামার নতুন কেনা সাড়ে তিনশো সি সির বাইক নিয়ে চালাতে গিয়ে বাঁ চোখটা একটুর জন্য বেঁচে গেছে।এখনো ভুরুর উপর কাটা দাগটা স্পষ্ট।তবে এতে মাসী থেমে থাকেনি।মামা বলেছে,বাইক চালানো শিখতে গেলে এমন একটু আধটু তো হয়েই থাকে।মামা ওকে বাইকটাই দিয়ে দিয়েছে!মাসী এখন দারুণ বাইক চালায়।দাদুর এস ইউ ভি।টা চালায় ড্রাইভিং শিখে।কাল ভোর বেলা মাসীর সঙ্গে বাইকে এই জায়গাটা দেখতে বেরবো।এখানে বলি,আমার একটাই মামা।ছ’ফুট দু ইঞ্চি!মেদহীন, ছিপছিপে!পপামাসীর চেয়ে বছর পাঁচেক বড়।আমেরিকার স্মিথসোনিয়ান ইন্সটিটিউটে গবেষণা করতে গেছেন স্কলারশিপ পেয়ে।মামা আবার যোগব্যায়ামের খুব ভক্ত।আমি ওর থেকে কয়েকটা শিখেছি।বেশ কাজের।মামার গলাটা কিন্ত খুব ভরাট এবং দরাজ।যাকে বলে ব্যারিটোন।মামা নিখুঁত আর স্পষ্ট উচ্চারণে  আবৃত্তি করলে নড়ার উপায় থাকে না।আবৃত্তির সময় মামার চোখ দুটে বন্ধ হয়ে আসে!আর আমরা স্তব্ধ হয়ে বসে বসে শুনি ওর আবৃত্তি। কন্ঠের ওঠানামা।গুপীর গান শুনলে যেমন হয়,তেমন!আমি কিন্ত এখনো ঠিক করতে পারিনি কার মতো হবো।মামা সায়েন্টিস্ট হবে।এদিকে মাসীর লক্ষ্য আই পি এস।দু’জনেই আমার আদর্শ।বাবা বলেছে,দুজন থেকেই গুণ গুলো অর্জন করতে।তবে,এক পা এগিয়ে থাকলেও পপামাসী একটু এগিয়ে।মামা একটু গম্ভীর। কিন্ত পপামাসী?ছিপছিপে,পাঁচ ছয় হাইটের  পপামাসী আমার বন্ধুর মতন।আমার সবটা জুড়ে শুধুই পপামাসী আর পপামাসী।

।।সাত।।
(সাপও মরবে…)
   -চুরির কথা জানাজানি হলে কী স্টেপ নেওয়া হয়?ব্যাগ সার্চ করা হয়?
  অবশ্যই।সবার ব্যাগ খুঁটিয়ে পরীক্ষা করে তবেই বাইরে যেতে দেওয়া হয়।কিন্তু কোনবারই কিচ্ছুটি পাওয়া যায়নি।
— চুরি যাওয়ার পর কারও মধ্যে কোনও অস্বাভাবিকতা দেখা গেছে?পপা মাসীর প্রশ্নের জবাবে লম্বা একটা হাই তুলে খুব মৃদু ভাবে হেডস্যার মাথা নাড়লেন।গত একমাসে কি কি হারিয়েছে বা চুরি গেছে তার একটা লিস্ট পাওয়া যাবে?আর আমি একবার স্কুলের ক্লাসরুম,আশপাশটা দেখতে চাই।দেখা যাবে?তবে অবশ্যই ছুটির পর।স্টুডেন্টস রা চলে গেলে।পপামাসীর কথার জবাবে ঘাড় নাড়ালেন হেড স্যার।
সম্মতি জানালেন। বেয়ারা চা,স্ন্যাক্স,কাজুটাজু,নোনতা বিস্কিট রেখে গেলো।আমার হাতে একটা ক্যাডবেরি গুঁজে বললো মেমসাহেব আপনাকে দিতে বলেছেন!
  বাংলোর ভিতরে মজুমদারকাকুর অফিসঘরটা বেশ বড়োসড়ো আর সুন্দরকরে সাজানো।টেবিলে জোড়া জাতীয় পতাকা।দুদিকে দুটো বিশাল বিশাল কাঠের আলমারি। বইয়ে ঠাসা।একদিকের দেওয়ালে রামকৃষ্ণ, সারদা মা আর স্বামীজি র ছবি।কাকুর ঢাউস চেয়ারের পিছনে অশোকস্তম্ভ আর রাষ্ট্রপতির ছবি।মহাত্মা গান্ধী আর  অম্বেদকরের অয়েল পেইন্টিং ।উল্টোদিকের দেওয়ালে বড় একটা বোর্ডে সোনালী হরফে অনেক নাম ও তারিখ।একদম নীচে, শেষ নামটা কালিপদ মজুমদার।পাশে লেখা আই পি এস আর একটা তারিখ।সকাল বেলা কাকু পপামাসী আর আমাকে বাংলোয় ডেকেছেন।হেডস্যারও এসেছেন।মজুমদার কাকু হেডস্যারকে বললেন,এই মেয়েটিই চুরির কারণ বের করতে পারবে।আর আমি তো আছিই।হেডস্যার বললেন,এটা ভীষণ ভালো হবে।স্কুলে পুলিশ,এই ব্যাপারটা খুবই অস্বস্তিকর। এতে সাপও মরবে……!

।।আট।।
(অ্যালার্জি অ্যালার্জি)
  আজ সকাল থেকেই পপামাসীর শরীরটা খারাপ।সর্দিকাশি।সর্দি না হলেও কাশিটা খুব।কয়েকবার কাশির দমকে  চোখে জল এসে গেছে।মাসীর এই একটা সমস্যা।প্রতি বছর মাস তিনেক সর্দিকাশিতে ভোগে।প্রচুর ডাক্তার দেখানো হয়েছে।কিন্ত যে কে সেই।অ্যালার্জি টেস্ট করেও বিশেষ কিছু মেলেনি।যেসব খাবারে মানা,মাসী শুধু কলা বাদে ডিম,দই এমনিতেই খায়না।তবে চিংড়ি তে অ্যালার্জি নেই।ওষুধের পাশাপাশি ডাক্তারকাকু মাসীকে দিনে তিন চার বার স্নান করতে বলেছেন।কিন্ত মাসী,আবার খুব শীতকাতুরে!
  পরশুদিন দুপুরে মজুমদারকাকুর বাড়িতে হেভি খাওয়া দাওয়া ছিলো।গতকাল মাসীর বেশ হেকটিক কেটেছে।ভোর বেলা বাবার অ্যাক্টিভা নিয়ে অনেকটা ঘুরেছি।বেলা দশটা নাগাদ মজুমদারকাকু গাড়ি পাঠিয়েছিলেন।সোজা স্কুল।অসিত স্যার ছিলেন।ক্লাস রুম আর টিচার্স রুমের পর একটা ঘরে প্রচুর পুরনো আলমারি,চেয়ার টেবিল রাখা।ধুলোর আস্তরণ। একটা টেবিলের ড্রয়ার খুলতেই দেখা  গেল জ্যামিতি বাক্স,বই,রঙ পেন্সিল,কলম সব ডাঁই করে রাখা।হেডস্যার কে পপামাসী পইপই করে বলে দিলেন,একটা জিনিসও যাতে কেউ না ধরে।ঠিক যেমন রয়েছে,তেমনি থাকবে।দেখা গেল,রমা দিদিমণির হাতঘড়িটা কিন্ত নেই।পপামাসী বললেন,ঘড়িটা অন্য কেউ সরিয়েছে।তবে দু’দিন নজর রাখবেন।যার কাজ সে নিতে আসবে।কিন্ত হাতে নাতে ধরবেন না।বাড়ির লোককে ডাকবেন।বুঝিয়ে বলবেন।কী বলতে হবে,আমি বলে দেব।মজুমদার কাকু বললেন,চোর কি ধরতে পেরেছ?
-হ্যাঁ,আন্দাজ করছি।তবে ঘড়ি চোরটা অন্য কেউ।
স্কুল থেকে বেরিয়ে মাসী  বইয়ের দোকান থেকে একটা বই কিনলো।আজ সকাল থেকে একমনে বইটা পড়ছে।বুকুকে পড়িয়ে,নিজের পড়া শেষ করে,সকালের খাবার খেয়ে পপামাসীর ঘরে ঢুকলাম।পপামাসী আধ শোওয়া অবস্থায় বই পড়তে পড়তে আমার দিকে একটা প্রশ্ন ছুঁড়ে দিলো।
-মুন,টেবিলে তেল লঙ্কা নুন কাসুন্দি মাখা এক  প্লেট কাঁচা আম দেখলে তোর কী মনে হয়?পপামাসী জানে,যে কোনও টক, আচার আমার খুব প্রিয়।সে আমই হোক,তেঁতুল, কুল,জলপাই, চালতা, আমড়া যাইই হোক।
-তুমিতো জানোই আমি ঠিক থাকতে পারিনা।জিভে জল এসে যায় খাবার জন্য!
-তার পর?
-এক টুকরো চুপিসাড়ে তুলে নিয়ে সটান মুখে চালান।
-একদম ঠিক বলেছিস।এতেই কেসটা সলভ্ হয়ে গেলো।
প্রথম অ্যাকশনটা এখানে খাটছে।দ্বিতীয়টা নয়।পপামাসী অস্ফুট ভাবে বললো।আমি বললাম,
-কিন্ত আম মাখার সঙ্গে এই কেসের কি সম্পর্ক?
– আছে তো?

।। নয়।।
(ইচ্ছেঘুম! )
   এর পর ঠিক দু’দিন কেটেছে।এরমধ্যে কেসটা নিয়ে পপামাসী একটা কথাও বলেনি।সকালে অ্যাক্টিভা য় এদিক ওদিক ঘোরা।একটু মার্কেটিং। দুপুরে খাবার পর ওই বইটায় কিছুক্ষণ ডুবে থাকা।তারপর টানা সন্ধে পর্যন্ত ঘুম।একটা কথা বলে রাখি।পপামাসীর কিন্তু ইচ্ছে ঘুম।ইচ্ছে হলেই ঘুমিয়ে পরে!সে সকাল দুপুর বিকেল সন্ধে,যাই হোক না কেন।আর ঘুমানোর মিনিক পাঁচেকের মধ্যে ডাক্তারদাদুর কথায় একেবারে ডিপ কোমা স্টেজ।কানের পাশে ঘন্টা বাজালেও ঘুম ভাঙবে না।আমি আড়ালে বলি মেয়ে কুম্ভকর্ণ! মামা অবশ্য সামনেই বলে!মামা বলে,মহাভারতে গঙ্গাপুত্র ভীষ্ম ইচ্ছামৃত্যুর বর পেয়েছিলেন দেবতার কাছ থেকে।অর্থাৎ, ইচ্ছে হলেই তিনি মৃত্যুবরণ করবেন।কেউ তাঁকে হত্যা করতে পারবে না।আর পপামাসীকে ঈশ্বর ইচ্ছে ঘুমের বরদান করেছেন।মাসী তাই যে কোনও সময়,যেখানে খুশি ঘুমিয়ে পড়তে পারে!ইচ্ছে হলেই!
আজ সন্ধায় আমাদের বাংলো জমজমাট।মজুমদারকাকু,কাকীমা এসেছেন।এসেছেন হেড স্যার,সঙ্গে একজনকে নিয়ে।পরে জেনেছি,উনি স্কুলের পরিচালন কমিটির সেক্রেটারি।এসেছেন সাদাপোষাকে থানার আই সিও।আর ঢাউস এক গাড়িতে এক  ভদ্রলোক সঙ্গে সম্ভবত: ওঁর স্ত্রী। ফুটফুটে,পুতুল পুতুল দেখতে।এসেই বললেন,কই,আমাদের পমপম মামণি কই?পপা মাসী হকচকিয়ে গেলো।আমি অবাক,পমপম নাম উনি কীভাবে জানলেন? হেডস্যার দেখিয়ে দিতেই ভদ্রমহিলা প্রায় ছুটে এসে পপামাসীকে জড়িয়ে গালে লম্বা চুমু খেলেন।মজুমদারকাকু কাকু দেখি মুচকি মুচকি হাসছেন।ভদ্রমহিলা একটা সুন্দর বাক্স পপামাসী কে দিয়ে বললেন,এটা তোমার।তারপর ওর পাশে গিয়ে বসে থাকলেন শেষ পর্যন্ত।বাক্সে কি আছে বা ভদ্রমহিলার পরিচয় কি,তা পরে জেনেছিলাম।
একটু সামলে নিয়ে পপামাসী শুরু করলো,
-এই ছোটখাটো জিনিস হারানোয় আমি বুঝেছিলাম এটা ক্লেপটোম্যানিয়া’র ঘটনা।কিন্ত টিচার্সরুমের ঘড়ি চুরিটা ভাবাচ্ছিলো।এপর্যন্ত বলেই পপামাসীকে থামতে হলো।বাইরে গাড়িতে আওয়াজ।আবার একজন কাকু ও কাকীমা ঢুকলেন।পাগড়ি পড়া কাকু।পিছনে দুজন ষন্ডা গোছের লোক।হাতে মস্ত এক ঢাউস বাক্স।বেশ ভারী বোঝা গেল।দুটো মানুষ বাক্সটা নিয়ে গলদঘর্ম!
-হমারা পাম্পাম পুত্তর কাঁহা?হয়ার ইস শী?বেটি?
থানার আইসি উঠে দাঁড়িয়ে স্যাল্যুট ঠুকলো বিচিত্র ভাবে।দু’হাত মুঠ করে সোজা একটু পিছন করে দু’পায়ের গোড়ালী মাটিতে ঠুকে!কিছু আগে মজুমদার কাকুকেও এমন স্যালুট করেছে।

।।দশ।।
(রবীন্দ্র রচনাবলী)
– স্কুলের ঘরটির পরিত্যক্ত টেবিলের ড্রয়ারে পেন্সিল,রঙবাক্স ইত্যাদি দেখেই বুঝেছিলাম,এটা চোরের কাজ নয়।এটা নিশ্চয়ই এক ধরনের মানসিক রোগীর কাজ,যার নাম ক্লেপটোম্যানিয়া।
কিন্ত চিচার্সরুমে ঘড়ি খোওয়ার বিষয়টি আবার অন্যরকম লাগছিলো।পপামাসী থামতেই মজুমদারকাকু বললেন
-কেন?অন্যরকম কেন?
-কারন এসব ঘটনায় রোগী কোনও দামি জিনিসে হাত দেয়না। কারন এটা চুরি করা নয়।একটা বিশেষ প্রবৃত্তির বিশৃঙ্খলা জনিত সমস্যা (ইমপালসিভ্ ডিসঅর্ডার)। চুরি করার প্রবল ইচ্ছা।এখানে নিজের প্রয়োজন,আর্থিক লাভ ইত্যাদি কাজ করেনা।মন আকৃষ্ট হয় সাধারণ কোনও একটা জিনিষের দিকে।সেটা গ্লাস,পেন্সিলবক্স,বই হতে পারে।মোবাইল ফোন হতে পারে। যে নিচ্ছে,তার নিজের হয়তে ঢের দামি মোবাইল আছে। তা সত্বেও অনেক কমদামি মোবাইলের দিকে  হাত বাড়াবে!এসব জিনিসে নিজে কখনো ব্যবহার করেনা।বিক্রিও না।বরং বিলিয়ে দেয়!না নেওয়া পর্যন্ত মন বিক্ষিপ্ত থাকে।হাতে পেলে মন শান্ত হয়!
-সো,আই থিঙ্ক,সাচ অ্যাক্ট ইস নট আ কেস অব থেপ্ট? মে আই রাইট?
-ইয়েস। ইউ আর  অ্যাবসোলিউটলি কাররেক্ট। পঞ্জাবী ভদ্রলোকের কথার জবাব দিলেন মজুমদারকাকু।
-তাহলে এঘটনায় কোনও মামলা হবে না,এটা চুরি নয়,তাইতো?মজুমদারকাকুর প্রশ্নে সম্মতিসূচক মাথা নাড়লো পপামাসী।
– এর কি কোনও চিকিৎসা নেই?আমার মেয়েটা কি কোনওদিন ঠিক হবেনা?পুতুল পুতুল কাকীমা প্রশ্ন করলেন পপামাসীকে
-কেন ঠিক হবে না?তবে সময় লাগবে। শুধু ওষুধে কাজ হবে না দরকার কাউন্সেলিং।মেডিটেশন।যোগ।আপনাদের খুব শান্ত হয়ে বোঝাতে হবে।বকাঝকা একদম নয়।ওর আত্মবিশ্বাস ফেরাতে হবে,যাতে নিজের উপর নিয়ন্ত্রণ আসে।এ কথা বলে মাসী আমার দিকে চোরা চাউনি দিলেন।বুঝলাম, সেইই কাঁচামিঠে আম মাখার ব্যাপার!
-কিন্ত এটা হয় কেন? পুতুল কাকীমার হাজব্যান্ডের এবার প্রশ্ন।
-এটা একধরণের মানসিক চাপ। এক ধরণের প্রবৃত্তি,অযৌক্তিক কাজ করার তাড়না।ছেলেদের তুলনায় প্রায় তিনগুণ মেয়েরা এতে আক্রান্ত হয়।আমাদের মন মেজাজ,আবেগকে নিয়ন্ত্রণ করে সেরেটনিন নামে এক রাসায়নিক পদার্থ।মস্তিষ্কে এর ক্ষরণের অনুভূমিকত্ব হ্রাস এর একটা কারণ।পারিবারিক ইতিহাসও কিছুটা দায়ী।একাজের পর রোগী কিন্ত ভয়ে ভয়ে থাকে।ধরা পড়ার ভয়!আরও কিছু কারণ আছে।এখনও গবেষণা চলছে।মাসী বললো,
-একটা বিশেষ অনুরোধ।মেয়েটির ভবিষ্যৎ, পরিবারের সামাজিক মর্যাদার কথা চিন্তা করে ওদের কারও নাম যেন কোনওভাবেই প্রকাশ করা  না হয়।পপামাসীর মুখে একথা শুনে পুতুলকাকীমা ও কাকু কেঁদে ফেললেন।মাসীকে জড়িয়ে ধরে কাকীমা ফুঁপিয়ে উঠলেন।বললেন,
– এইটুকু মেয়ে।কত দায়িত্ববোধ।
  স্কুলের পক্ষ থেকে মাসীকে একটা ফুট দুয়েকের সাদা পাথরের সরস্বতীর মূর্তি উপহার দেওয়া হলো।সঙ্গে একটা মানপত্র।স্কুলের সম্মান অক্ষুন্ন রাখার পুরস্কার।
বাবা এতক্ষণ পরে বলে উঠলেন:
-দুজন এস পি,হেড মাস্টার মশাইয়ের সামনে এত সহজে কেস সলভ্ করলো।আজ থেকে তাহলে পপা কে পপা ম্যাডাম বলতে হবে। একথায় সকলেই একসঙ্গে হেসে উঠলাম।
  এর পরের ঘটনা সংক্ষিপ্ত।বুকুর রঙবাক্স পাওয়া গেছে।পপামাসী কে পুতুল কাকীমার দেওয়া বাক্সটি থেকে দুর্দান্ত  একটা হাতঘড়ি বেরলো।গাঢ় নীল ডায়াল,সোনালী কেস।কালো চামড়ার বেল্ট।টিচার্স রুম থেকে রমাদির হারানো ঘড়িটা রিহার্সাল ঘরের টেবিলে পাওয়া গেছে!রিহার্সালে র পর রমাদি ওখানেই ভুল করে ফেলে এসেছিলেন।
   পাগড়ী পরা ভদ্রলোক ঝাড়খন্ডের ওই জেলার এস পি।মজুমদার কাকুর বন্ধু।ওই ভারী বাক্সটা য় ছিলো রবীন্দ্র রচনাবলী র পুরো সেট।পাঞ্জাবী কাকুকে সম্প্রতি কেউ গিফ্ট করেছিলো।পাঞ্জাবী টানে ইংরেজি,হিন্দি আর বাঙলা মিলিয়ে তিনি যা বললেন,তার অর্থ দাঁড়ায়:
-আমার নাম রাভিন্দর(রবীন্দ্র)সিং  হলেও রবীন্দ্রনাথ অতটা পড়া হয়নি।পাম্পাম পুত্তরের এটা কাজে লাগবে।পুত্তর আমাদের জেলার,আমাদের স্কুলের মান রেখেছে।এটা ওরই প্রাপ্য।
  সকালবেলা আমি উঠে হাত মুখ ধুয়ে সবে ব্রেকফাস্টের প্লেটের দিকে হাত বাড়িয়েছি,ডোর বেল বেজে উঠলো।দরজা খলে দেখি দুটি ছেলে একটা নতুন গীয়ারওয়ালা সাইকেল নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে।গোলাপী সাইকেলের প্রায় সারা শরীরটা কাগজে মোড়া।এক জন আমাকে দেখেই বলে উঠলো
–সাহেব এই সাইকেল টা পমপম ম্যাডামের হাতে তুলে দিতে আদেশ করেছেন।
।।শেষ।।
**********************************
প্র ত্যু ষ সে ন গু প্ত পরিচিতিঃ
সরকারী বেসরকারী মিলিয়ে নানা রকম চাকরী করে এখন বেলাশেষে কলম ধরেছেন। প্রথম চাকরী এক ওষুধ কোম্পানীতে। তারপর চা বাগানে। এরপর দু’দুটি খবরের কাগজে সাব এডিটর। শেষ পর্বে গোপনীয়তায় ভরা সরকারী চাকরী। দীর্ঘ চাকরী জীবনে কাজ করেছেন পশ্চিম বঙ্গের অধিকাংশ জেলায়! অভিজ্ঞতা হয়েছে প্রচুর। এই শেষ বেলায় ওই অভিজ্ঞতায় নির্ভর করে আবার কলম ধরেছেন।

 

 

error: বিষয়বস্তু সুরক্ষিত !!