মিশর
ইতিহাসের ছায়ায় ভূগোলের আশ্রয়ে
মধুমিতা মিত্র
“মোমের পুতুল মমির দেশের মেয়ে নেচে যায়-বিহ্বল চঞ্চল পায়”- ছোটবেলা থেকেই নাচের ছন্দে গাঁথা এই নজরুল গীতি খানি মনের মধ্যে মমির দেশের এক অদ্ভুত আবেশ রচনা করে রেখেছিল। সেই আবেশ আরও ঘন হল ভূগোলের পাতায়, আন্ডারগ্র্যাজুয়েটে আলাদা করে একটা গোটা পেপারে আফ্রিকার সঙ্গে ইজিপ্টকে পড়ানো হতো আমাদের সময় আশির দশকে। সেই তখন থেকেই মনের মধ্যে বাসনা রচিত হল, যদি কখনও বিদেশ ভ্রমণে যাই তবে অবশ্যই ইজিপ্টে যেতেই হবে এবং নীলনদ কিভাবে মরুভূমির মধ্যে সবুজের মায়াজাল তৈরি করেছে তা অবশ্যই স্বচক্ষে দেখতে হবে। ইতিহাস আমার বিষয় নয়। মাধ্যমিক পর্যন্ত পড়া ইতিহাসের পাঠক্রমে যেহেতু ভারতবর্ষের বিস্তারিত ইতিহাস ছাড়া আর কিছুই জানার সুযোগ হয় নি সেহেতু মিশরের ঐতিহাসিক তাৎপর্যের প্রতি মন অতটা নিবদ্ধ ছিল না, যদিও পৃথিবীর সপ্তমাশ্চর্যের অন্যতম পিরামিড দেখার কৌতূহল মনের কোন এক কোন্দরে অবশ্যই লালিত ছিল অতি সযত্নে। তাই যেদিন আমাদের প্রিয় এক বন্ধু তিলোত্তমাদি তাঁদের আশু ইজিপ্ট ভ্রমণে আমাদের তাঁদের সফর সঙ্গী হওয়ার প্রস্তাব দিলেন আমি এক কথায় নেচে উঠলাম তাঁর সেই প্রস্তাবে।
২০২৩ এর ১৭ই নভেম্বর মধ্যরাত পেরিয়ে আঠারোই ভোর দুটো চল্লিশে হায়দ্রাবাদ থেকে জনা বত্রিশ-পঁয়তিরিশের এক দল, আমরা হৈ হৈ করতে করতে উড়ান দিলাম সৌদি আরবের জেড্ডা শহরের দিকে,সেই সময়ে দলের পঁচানব্বই শতাংশ মানুষই কিন্তু আমাদের দুজনের কাছেই অচেনা ছিলেন। গোটা রাতই জাগা,তা-ও স্বপ্ন উড়ানের উত্তেজনায় দু-এক বার নিদ্রাদেবীর কোলে ঢুলে পড়া ছাড়া আমি হেন ঘুম কাতুরে মানুষটিও কিন্তু নিদ্রাহীন রাতই কাটিয়েছি। তাই তো মদিনার ওপর দিয়ে পার হবার সময় সৌদিয়া এয়ারলাইন্সের এর বিমান সেবিকা যখন ঘোষণা করলেন যে আমরা পবিত্র স্হান মদিনার ওপর দিয়ে উড়ছি এবং সব যাত্রীরাই যেন খোদার কাছে তাঁর আশীর্বাদ ভিক্ষা করেন। ধর্ম ভীরু আমি ও সমস্ত অন্তঃকরণ দিয়ে আল্লাহতালার কাছে দোয়া ভিক্ষা করলাম কারণ আমার কাছে -“ঈশ্বর আল্লাহ তেরে নাম/সবকো সন্মতি দে ভগবান”। বলতে ভুলেই গেছি যে মক্কা বা মদিনায় যাওয়া হয় জেড্ডা বিমান বন্দরে অবতরণ করেই। তাই শুভ্র বসনের হজযাত্রী বোঝাই ছিল আমাদের প্লেনটি।
জেড্ডায় নামতে না নামতেই এক বিপত্তি! হায়দ্রাবাদ থেকে জেড্ডার উড়ান ক্ষণ প্রায় ঘন্টা ছয়েক। হায়দ্রাবাদ থেকে আমাদের রওনা সময় ছিল ভারতীয় সময় ভোর পৌনে তিনটে প্রায়। সৌদি আরবের জেড্ডা আমাদের থেকে আড়াইঘন্টা মতো পিছিয়ে, জেড্ডায় তখনও সৌদি আরবের মাটি ছুঁই নি। প্লেনের দরজার সামনে এসেই কোণাকুণি দেখলাম পুরবের উন্মুক্ত আকাশ-খোলা দিগন্ত। সোনালী রথে সাতরঙা ঘোড়ার ছটায় সূর্যদেবের আবির্ভাব হচ্ছে ঠিক তখনই। এমন দৃশ্য ক্যামেরা বন্দী না করে কি পারা যায়?- সূর্যোদয়ের দৃশ্যে মোহিত আমি আনমনা হয়ে ক্যামেরায় ক্লিক করতে করতেই বিমান তল আর এ্যারোব্রীজের তলের অসমতায় পা ফসকে ধপাস। প্রায় সব বিমান কর্মী এবং সহযাত্রীরা আওয়াজের প্রাবল্যে দৌড়ে এসে আমাকে তুললেন। হতে পারতো অনেক কিছুই, কিন্তু সামান্য ব্যথ্যা পাওয়া ছাড়া আর কিছুই হয় নি-হয়তো বা কিছুক্ষণ আগের সেই ঐকান্তিক প্রার্থনাতেই রক্ষা পেলাম আমি।
জেড্ডার কিং আব্দুল্লাহ ইন্টারন্যাশনাল এয়ারপোর্টে কিছু ক্ষণের বিরতির পর কায়রোর উড়ান-উড়ানক্ষণ দু ঘন্টা কুড়ি মিনিট। মিশরের মাটি স্পর্শ করার আগে এখন ইজিপ্টের ইতিহাসের পাতা ওল্টানোর সময় এসে গেল…
মিশরীয় সভ্যতা পৃথিবীর পাঁচটি পুরোনো সভ্যতার অন্যতম। খ্রীষ্টের জন্মের তিন হাজার বছর আগে রাজা মেনেস প্রথম আশেপাশের ছোট ছোট রাজ্য গুলিকে জয় করে মিশর রাজ্যের প্রবর্তন করেন,তাঁর রাজধানী হয় মেমফিস। এখানে রাজতন্ত্র এমন সুদৃঢ়ভাবে প্রতিষ্ঠিত যে রাজাই ছিলেন ঈশ্বর-সম। মিশরে এই রাজতন্ত্র চলে প্রায় দুহাজার বছর ধরে। যীশু খ্রীষ্টের জন্মের ৩৩২ বছর আগে আলেকজান্ডার এসে মিশর দেশটি জয় করে এই রাজতন্ত্রের অবসান ঘটান। তাঁর নামেই দেশের উত্তরে ভূমধ্যসাগরের গা ঘেঁষে তৈরি হয় শহর আলেকজান্দ্রিয়া। আলেকজান্ডারের পর তাঁরই এক সেনাপ্রধান টলেমি মিশরের অধীশ্বর হন।প্রায় তিনশো বছর এই টলেমি বংশের রাজত্ব চলে। বিশ্বখ্যাত সুন্দরী এবং প্রখর ব্যক্তিত্ব সম্পন্না ক্লিওপেট্রা ইজিপ্টের অন্যতম এক শাসিকা ছিলেন এবং তাঁর সহযোগী ছিলেন জুলিয়াস সিজার। ক্লিওপেট্রার মৃত্যুর পর পরবর্তী ছ’শো বছর মিশর রোমান সাম্রাজ্যের অধীনস্থ হয়, তারপরের প্রায় বারোশো বছর চলে ইসলামিক রাজত্বকাল,যার ফলে মিশর ক্রমশঃ হয়ে ওঠে এক ইসলামিক রাষ্ট্র। ১৭৯৮-১৮০১ এই তিন বছর মিশরে নেপোলিয়ন রাজত্ব করেন। এরপর মিশর ইংরেজদের অধীনস্হ হয়। আধুনিক ইজিপ্টের জন্ম ১৯৫৩ সালে-এর পোশাকি নাম “মডার্ণ রিপাবলিক অফ ইজিপ্ট”-আবারও “আরব রিপাবলিক অফ ইজিপ্ট “নামেও এর অন্য আর এক নামাঙ্করণ আছে।
পুরনো ইজিপ্ট ফারাওদের দেশ। সবিস্তারে বলতে গেলে রাজা মেনেস যে রাজত্বের গোড়াপত্তন করেন, সেই রাজত্বে রাজাদের ফারাও বলা হতো। ফারাও কথাটি অবশ্য রাজা বা রাণী অর্থাৎ স্ত্রী-পুরুষ নির্বিশেষে ব্যবহার করা হত। রাজতন্ত্রে ক্ষমতাসীন যে কোন রাজা বা রাণীকেই ফারাও বলা হতো। ফারাও বলতে যে নামটি আমাদের কাছে সর্বাধিক পরিচিত সেটি হল তুতেনখামেন। ফারাওরা বিশ্বের ইতিহাসে নিজেদের নাম স্বর্ণাক্ষরে যে লিখতে পেরেছেন তার প্রধান দুটি কারণ হল পিরামিড এবং মমি। আমার মতো অনেকেরই মনে নিশ্চয়ই আবছায়া ধারণা আছে পিরামিড এবং মমি সম্পর্কে। চর্মচক্ষে এবার এই পিরামিড আর মমি দেখে সেই পিরামিড আর মমি স্পষ্ট রূপছায়া এখন আমার মনের আয়নায় গাঁথা হয়ে গিয়েছে। এ-ও তো সবারই জানা পৃথিবীর সপ্তমাশ্চর্যের মধ্যে অন্যতম পিরামিড, সেই পিরামিডে সযত্নে রক্ষিত থাকত ফারাওদের মমি। সেই মমির দেশের মমি-বিশেষ উপায়ে সংরক্ষিত ফারাওদের মৃতদেহ, যা তৈরি করতে প্রচুর অর্থ এবং অনেকটা সময়ে প্রয়োজন। এই অদ্ভুত কার্যবিধির পেছনে ছিল অন্য এক জীবন দর্শন, যেখানে ফারাওরা মনে করতেন মৃত্যুর পর জীবন যাপনই আসল জীবন -রহস্য। সেই যাপন সুন্দর করার জন্য এঁরা ঐহিক যাবতীয় কিছু নিজের মৃত শরীরের সঙ্গে রাখার চেষ্টা করতেন এবং সেই কারণেই নিজের মৃতদেহ সংরক্ষণের সেই বিলাস বহুল প্রয়াস। এই সংরক্ষিত মৃতদেহ অথবা মমিগুলিই রাখা হতো পৃথিবীর সপ্তম আশ্চর্য পিরামিডে। এঁরা নিজেদের মৃত্যু উত্তর জীবন যাপনের জন্যই নিজেদের মমি গুলিকে পিরামিডে রাখতেন এ-ও আমাদের কারো অজানা নয়।
এবার ইতিহাস পরিক্রমা সেরে আসি বাস্তবে,সফর প্রসঙ্গে। অধুনা মিশরের রাজধানী কায়রোতে এয়ারপোর্ট থেকে হোটেল যাবার পথে কিছুটা দূর পর্যন্ত কায়রো শহরটি বেশ আধুনিক,মনোরম মনে হলেও কিছুক্ষণ পরেই দেখা গেল এই শহরের বিচিত্র রূপ। বড়ো বিবর্ণ এই শহরটিতে ঘন ঘন চার-পাঁচ-ছয় তলা একই ছাঁদের পলেস্তরা হীন বাড়িগুলি পরষ্পর সংলগ্ন ঘন ভাবে দাঁড়িয়ে আছে। কোন বাড়ি অন্য বাড়ির থেকে আলাদা নয়। প্লাস্টার এবং রংবিহীন বাড়িগুলি মোটেই দৃষ্টি নন্দন নয়। রাস্তা কিন্তু অসম্ভব চওড়া এবং পরিচ্ছন্ন। রাস্তার দুপাশে সামান্য সামান্য সবুজের বাহার থাকলেও এই বিবর্ণ, ঘন সন্নিবিষ্ট বাড়ি গুলি কায়রোকে দিয়েছে একেবারে এক অন্য চরিত্র।
এয়ারপোর্ট থেকে হোটেলের পথে আমরা আরও এক অদ্ভুত জায়গার মধ্যে দিয়ে পার হলাম,তা হলো ‘সিটি অফ ডেডস্’ কবর স্হানের মধ্যে মধ্যেই ঘন জনবসতি। সে এলাকায় সবুজের কিন্তু একান্ত অভাব, কবরের উত্থিত ফলক এবং পলেস্তরাহীন বাড়িগুলি মিলে মরুভূমির রিক্ত স্বাভাবিক সৌন্দর্য কে ব্যহত করে, কেমন জগাখিচুড়ী দৃশ্যদূষণ তৈরি করেছে। বেলে রঙের সেই সিটি অফ ডেডস্ দেখলে মনটা কেমন অদ্ভুত বিষন্ন হয়ে পড়ে। এ-ও এক আশ্চর্য ব্যাপার। যাই হোক রাস্তায় অতি উত্তম হোটেলে অতি উত্তম লাঞ্চ সেরে আমরা ঢুকলাম বিলাসবহুল হোটেলে।
সেদিন সন্ধ্যাবেলায় ছিল পিরামিডে লাইট এ্যান্ড শ্যাডোর খেলা। সেখানে গিয়ে পিরামিড চত্বরের বাইরে কায়রোর রাস্তাঘাট এবং বাজার সম্পর্কে একটা ধারণা তৈরি হল। জমজমাট কিন্তু পরিচ্ছন্ন রাস্তাঘাট এবং বাজার-একটা গুরুত্বপূর্ণ কথা বলতেই ভুলে গেছি, সকাল বেলা এয়ারপোর্ট থেকে হোটেলে আসার পথেই নীল নদের সঙ্গে সাক্ষাৎ হয়েছে। নীলনদকে পেরিয়ে আমরা এলাম নীলনদের পশ্চিম পাড়ে- এখানে গীজা শহরটি। আমাদের কলকাতা -হাওড়ার মতো আর কি। গঙ্গার পূর্ব পাড়ে যেমন কলকাতা আর পশ্চিম তীরে হাওড়া,তেমনই নীলনদের পূর্ব দিকে কায়রো আর পশ্চিম কূলে গীজা। তবে নীলনদের প্রস্থ কিন্তু আমাদের গঙ্গার অর্ধেকের সামান্য বেশী। আর জলের রঙ?- সার্থকনামা নীলনদ; সে নীল নদের আরও সবিস্তার বর্ণনায় আরও পরে আসছি। আমাদের সুন্দর হোটেলটি কিন্তু কায়রোতে নয়,গীজাতেই আর মূলতঃ যে পিরামিড তিনটি দেখতে ভ্রমণার্থীরা মিশরে আসেন সেগুলিও কিন্তু গীজাতেই। পিরামিডের সঙ্গে প্রথম সাক্ষাৎও ঐ বাসের জানালা দিয়েই হল। হঠাৎ আনমনে বেলে রঙা পিরামিড টি যখন চোখে পড়েছিল অবচেতন মনে প্রশ্ন জেগেছিল মরুভূমি তে এমন বেলে রঙা পাহাড়! চেতন মন সাথে সাথেই উত্তর জুগিয়েছিল- এ সেই পিরামিড নয় তো!! তার পরেই যখন বাসের পাশে পাশেই দূরের বড়ো মেজ ছোট পিরামিড দৌড়তে লাগলো, তখন বাস শুদ্ধ সবার মনে প্রথম পিরামিড দেখার সে কি উত্তেজনা!
এবার বলি সেই সন্ধ্যেবেলায় পিরামিড চত্ত্বরে লাইট এ্যান্ড শ্যাডোর শো এর গল্প! পিরামিডের পশ্চাৎপটে ঘন নীল আকাশের পশ্চিমে এক ফালি চাঁদ আর গোটা আকাশ জুড়ে তারারা সামিয়ানা টাঙিয়েছে,আলো খেলার ছায়া চলেছে বড়ো,মেজ আর সেজ পিরামিডের ওপর। মন্দ্র মধুর গলার ধারাভাষ্যে বর্ণিত হচ্ছে পিরামিডের ইতিহাস-রোমাঞ্চকর সন্ধ্যার সেই স্মৃতি আজও গায়ে কাঁটা দেয়।
পরের দিন সকালে ছিল পিরামিডের সঙ্গে আমাদের সাক্ষাৎ-ক্ষণ। বাসে করে এসে পৌঁছলাম সেই গতকালেরই পিরামিড চত্ত্বরে তবে এবার তার অন্যদিকে। আগের দিন সন্ধেবেলায় পিরামিডের অন্য দিকে বসে আলো ছায়ার খেলা দেখেছিলাম। সেদিন দিনের বেলায় বিশালাকার পিরামিডের বিশালত্ব সামনাসামনি দেখে সেই প্রায় আদি যুগের মানবের সৃষ্টির প্রতি মাথা আপনিই নত হয়ে এল। যে সময়ে উন্নত প্রযুক্তির কোনও ঠিকানা পাওয়া যায় না,কোন্ জ্ঞান এবং বুদ্ধি বলে যে এই বিশাল পিরামিড স্হাপন সম্ভব হলো তা ভাবতে বসলে অপার বিস্ময়ে হতবাক হয়ে থাকতে হয়। মূলতঃ তিনটি বড়ো,মেজ আর ছোট এবং আরও কতগুলি অনু পিরামিডের সমন্বয়ে গীজার বিখ্যাত পিরামিড চত্ত্বরটি সুবিস্তৃত। কোন্ আমলের,কোন্ ফারাও দ্বারা নির্মিত এসব বলতে বসলে পাতা ফুরিয়ে যাবে আর নামগুলিও এত অজানা তা মনে রেখে সঠিক বর্ণনা দেবার সাধ্য আমার এই সামান্য মেধায় নেই। শুধু মোটা কথায় বলতে পারি সবচেয়ে বড়ো পিরামিডটির নাম খুফু,মেজো জন খাফ্রে আর ছোটর নাম মেনকাউরে। আরও ছোট গুলি কে ঘুরে দেখার শক্তি চড়া রোদে আমাদের ছিল না। তবে পাঠকগন এমনটা আবার ভাববেন না যে গীজায় ঐ তিনটি পিরামিড ই আছে। আমাদের গাইড বসম বলছিলেন যে কায়রো-গীজা যমজ শহরে প্রায় ১৪৮টি পিরামিড ছিল। ইসলামিক আক্রমণে বেশীরভাগই ধ্বংস প্রাপ্ত হয়েছে, কেমন করে এই তিনটি পিরামিড রক্ষা পেয়েছে!
পিরামিড দর্শনের পর আমাদের পালা এলো স্ফিংস দর্শনের। স্ফিংস কিন্তু গ্ৰীক পুরাণের আদলে মিশর সভ্যতায় বিবর্তিত মিশরীয় এক পৌরাণিক চরিত্র। মূল বড়ো পিরামিডের সামনে বসানো বিশালাকার স্ফিংস অনেকটা আমাদের নৃসিংহ অবতারের মতো। তবে নৃসিংহ অবতারের যেমন পুরুষের শরীরে সিংহের মাথা,এখানে স্ফিংস কিন্তু নারীর মুখাবয়বে সিংহের শরীর বসানো।রমণীর সুন্দর মুখের মধ্যে নাকটি কেমন ভেঙে যাওয়া-গাইডের ভাষণে জানলাম বহিরাগতের আক্রমণে স্ফিংসের নাক অমন ভাবে ভেঙে গেছে। ফারাওদের বিশ্বাস ছিল মৃত্যু পরবর্তী কালে তাদের দেহ গুলি যখন পিরামিডে থাকবে এবং শুরু হবে মৃত্যু উত্তর জীবন -ধারা,এই স্ফিংস গুলিই তাদের কে লৌকিক অলৌকিক শক্তি থেকে রক্ষা করবে। এরাই পিরামিডের প্রহরায় নিযুক্ত।
স্ফিংস দেখার পর অনতিদূরে আমাদের নিয়ে যাওয়া হল উটের পিঠে চড়ার জন্য। লালমোহনবাবুকে স্মরণ করতে করতে উট বাবাজীর পিঠে তো চড়লাম,তবে সোনার কেল্লায় লালমোহনবাবুকে উটের পিঠে চড়তে আর নামতে যত কসরৎ করতে হয়েছিল বাস্তবিক ক্ষেত্রে কিন্তু ব্যাপারটা মোটেও অত জটিল নয়। দর্শকদের আনন্দ দেবার জন্যই সত্যজিৎ রায় হয়তো অমনটা দেখিয়েছিলেন। তা যাই হোক উটের পিঠে কিছুটা গিয়েই বিস্তৃত মরুভূমি। ছোট থেকেই পাহাড় সমুদ্রের সঙ্গে পরিচয় ঘটলেও মরুভূমির সঙ্গে পরিচয় এই বৃদ্ধ বয়সেই হল। প্রকৃতির রিক্ততার এই অনন্য শোভাটি আমায় একাধারে মুগ্ধ এবং ভীত করলো। যতদূর চোখ যায় শুধু বালুকারাশি-চোখ মেললে একটি ছায়া পর্যন্ত নেই,কেমন এক অপার বিস্তৃত সোনালী রিক্ততা। মনের মধ্যে ভয়ের শিহরণ জাগলো। এই ধূ ধূ বালুচরে শুধু আমি আর অল্পবয়েসী এই উট পালকটি- স্বরূপ মিত্র কোন্ দূরে একটি কড়ে আঙুল সদৃশ দাঁড়িয়ে আছেন,তারও অনেক পিছনে ঐ গুড়ি গুড়ি উট আর জনতার মেলা। চারিদিকে শুধু বালুকা রাশি, পিছন না ফিরলে বাঁদিক থেকে ডানদিকে মাথা ১৮০ ডিগ্ৰীতে ঘোরালে শুধুই বালুচর,এখানে যদি হারিয়ে যাই! উট ওয়ালার অবোধ্য ভাষায় যখন জানলাম এ সেই সাহারা মরুভূমি তখন ভয়ের মাত্রা আরও বাড়লো। উটওয়ালাকে বকা ঝকা করে উটের মুখ ঘোরালাম। এবার ফিরে এসে পিরামিডকে ব্যাকগ্ৰাউন্ডে রেখে অনেক ছবি তোলা হল।
মূল পিরামিড থেকে এবার আমাদের শাকারা পিরামিডে যাবার কথা। গীজা থেকে শহরের অন্য প্রান্তে শাকারা পিরামিড। এই শাকারা পিরামিড মূল পিরামিডের মতো অত উঁচু নয়- সিঁড়ির মতো ধাপে ধাপে অনতিউচ্চে শাকারা পিরামিডের চূড়া। ঠিক শাকারা পিরামিডের চত্বরের বাইরেই একটা নীচু জায়গা দেখিয়ে আমাদের গাইড বললেন যে এখানে নাকি ফারাওরা তাঁদের পোষ্য (মূলতঃ বেড়াল)মমি করে রাখতেন। এঁদের বিশ্বাস অনুযায়ী পোষ্যরাও তো মরণোত্তর জীবনে তাঁদের সাথী হবেন! এবার শাকারা পিরামিডের প্রবেশদ্বারের পরেই স্তম্ভ সারির অলিন্দর মধ্যে দিয়ে পড়তে হয় শাকারা পিরামিডের বিস্তীর্ণ প্রাঙ্গণে,প্রাঙ্গণের একেবারে অন্য প্রান্তে শাকারা পিরামিড। কিন্তু সেই অঙ্গন পেরোনোর সময়তেই উঠলো বালির ঝড়। মরুভূমির সেই বালির ঝড় যে বালির ঝড়ে ফুৎকারে উড়ে যায় পাহাড় প্রতিম বালিয়াড়ি গুলি। শাকারা পিরামিড সীমানার বাইরে দাঁড়ানো বাসে উঠতে আমরা নাজেহাল হলাম। মরুভূমির সঙ্গে মরুভূমির ঝড় দেখেও মরুভূমি দেখার আশ পুরোপুরি মিটলো।
গীজা-কায়রো শহরে নীলনদের সঙ্গে কেবলমাত্র মৌখিক পরিচয় সেরে আমাদের এবার যাবার পালা আসোয়ানে। কায়রো শহরটি ইজিপ্টের একেবারে উত্তর ভাগে অবস্হিত-আসোয়ান দক্ষিণ প্রান্তে সুদান সীমানার কাছ ঘেঁষে। গীজা থেকে এক্সপ্রেস ট্রেনে আমরা যাব আসোয়ান। এক রাতের যাত্রা,আমাদের উত্তর বঙ্গ থেকে দক্ষিণ বঙ্গে আসা আর কি! এই ট্রেন যাত্রার বর্ণনা দিয়ে অতুলনীয় এক পর্ব লেখা যায়-অন্য পরিসরে সে গল্প হবে। রাত ভর যাত্রা,সেদিন কায়রোর মিউজিয়াম গুলি ঘুরে গীজা স্টেশনের প্ল্যাটফর্মে বসলো আমাদের দলের ট্রেনের জন্য অপেক্ষা সভা। ঘন্টা দুয়েক অপেক্ষার পর ট্রেন যখন হুইসেল বাজিয়ে প্ল্যাটফর্মে ঢুকলো, অল্প সময়ের মধ্যে এই বিয়াল্লিশ জনের পরিবার আর তাদের মালপত্র তোলার হুড়োহুড়িতে জমে উঠল প্ল্যাটফর্মের পরিবেশ। রাত-ভর মনোরম যাত্রা শেষে এসে পৌঁছলাম দক্ষিণ ইজিপ্টের আসোয়ান শহরটিতে।
আসোয়ান নীলনদের তীরে অবস্থিত ইজিপ্টের একটি আকর্ষণীয় শহর। এই আসোয়ানে আসার মূল আকর্ষণ আমরা এবার আসোয়ানে নীল নদের বুকের ওপর তিন-দিন,তিনটি-রাত অতি মনোরম জাহাজে কাটাবো। দিন ভর অবশ্য আমরা নীলনদ তীরবর্তী শহরগুলির নানা দর্শনীয় স্হান দেখে বেড়াবো-আর রাতে এসে জাহাজে নানা বিনোদন, আমোদ প্রমোদে রাত্রি যাপন চলবে। জাহাজ রাত্রি বেলায় ধীরে ধীরে চলতে থাকবে-ভোর ভোর আমরাও পৌঁছুবো স্হান থেকে স্হানান্তরে। আগ্ৰহে আনন্দে আমাদের পুরো দল আত্মহারা। আসোয়ান স্টেশনে নেমে আবার ও একটি অন্য বাস ভর্তি হয়ে ওখানকার কিছু দর্শনীয় স্হান দেখে আমরা পৌঁছলাম নীল নদের ধারে, নীলনদকে এখানে আরও নিবিড় করে পাওয়া গেল।জাহাজগুলি নোঙর করে তীরের থেকে একটা আরও একটার পাশে দাঁড়িয়ে আছে – আমরা এক একটি জাহাজ পার করে পরবর্তী জাহাজে চলেছি। প্রত্যেকটি জাহাজই এত সুসজ্জিত যে অবাক হয়ে তাকিয়ে থাকতে হয়। আমাদের ক্যাপটেন ইন্দ্রনীল আগে থেকেই সব দম্পতি এবং যিনি বা যাঁরা একলা এসেছেন তাঁদের ঘর গুলি নির্দিষ্ট করে দিয়েছিলেন। সেই অনুযায়ী যে যার স্যুটে গিয়ে মুগ্ধ! একেবারে পাঁচতারা ব্যবস্হা। ছোট্ট যে বসার ঘরখানি তার নদীর দিকের দেওয়াল জুড়ে কাঁচ এবং সেখান থেকেই চোখ মেললে নীলনদের টলটলে জল পেরিয়ে দৃষ্টি ভেসে যায় ওপারের বালিয়াড়িতে। নদীর তীরে বালির টিলা,সেই টিলা পেরিয়ে আলস্য ভরে ছড়িয়ে রয়েছে বালুচর! বালির মাঝখান দিয়ে টলটলে নীল নদের গাঢ় নীল জলধারা! এই অপূর্ব বিপরীত অনন্য সৌন্দর্য দেখার জন্যই তো সারা পৃথিবীর মানুষেরা আকুল! ইজিপ্টে পিরামিড এবং মমির সঙ্গে নীলনদ এবং তার অববাহিকাও যে মস্ত বড়ো আকর্ষণ!-সেদিন জাহাজে এসে আমাদের ব্যাগ পত্র রেখে আমরা কিছু জনা গেলাম নীলনদের ওপারে একটি আদিবাসী গ্ৰাম এবং তার জীবন ধারা দেখতে।
এই অবসরে বলি যতক্ষণ উত্তর ইজিপ্টে ছিলাম ততক্ষণ পর্যন্ত কিন্তু আফ্রিকার যে সমস্ত অধিবাসীদের আমরা দেখে থাকি অর্থাৎ নিগ্ৰোরা তাদের একজনের ও দেখা মেলে নি। সেখানে মূলতঃ টিকালো নাক,দীর্ঘ ছিপছিপে দেহ,সাদা চামড়া নয় কিন্তু উজ্জ্বল গৌরবর্ণ অথবা তামাটে রঙের মানুষই দেখা গেছে। চেহারার ধরনে মনে হয়েছে এরা ইউরোপীয় (গ্ৰীকদের আদলেই- সাদা চামড়াখানি বাদ দিয়ে) ধাঁচেই অথবা মধ্য প্রাচ্যের চেহারার আদলে গঠিত। কিন্তু এখন যখন দক্ষিণ ইজিপ্টে এলাম ধীরে ধীরে আসল আফ্রিকার অধিবাসীদের চেহারা যেন ক্রমশঃ প্রকট হতে লাগলো। নীলনদের বুক চিরে,স্থানীয় লঞ্চে করে ওপারে আমরা পৌঁছলাম আদিবাসী গ্ৰামে- সে ও এক অতি চমৎকার অভিজ্ঞতা। নীলনদের জল টলটলে গভীর নীল,একেবারে স্বচ্ছ-দূষণ মুক্ত। জানতাম নীলনদ ভর্তি কুমীর কিন্তু এখন শুনলাম কুমীর গুলি নাকি আসোয়ান ড্যামে গিয়ে আশ্রয় নিয়েছে। নীলনদে কুমীরের সংখ্যা কমে গিয়েছে। শেষ দুপুরের সোনালী আলোয় খোলা লঞ্চে নীলনদের ওপর দিয়ে চারিপাশ দেখতে দেখতে যাওয়া! আহ্-সে কি অপূর্ব সুখ-স্পর্শ! কি দুর্দান্ত রোমাঞ্চকর অভিজ্ঞতা! নদীর দুপাশে বালিয়াড়ি,বালির চর,কোথাও বা অল্প ঘন জঙ্গল-সেখানে রকমারী জানা,অজানা পাখি,নদীর তীর ঘেঁষে সরু রাস্তা বেয়ে উটেদের সারি বেয়ে যাত্রী নিয়ে চলা,কোথাও আবার সেখানকার ট্রাডিশনাল অন্য ধাঁচের বাড়ি–সব মিলিয়ে সে যেন স্বপ্ন যাত্রা,অমর্ত্য আনন্দ! লঞ্চ এসে তীরে ভীড়লো,ঘাটের সিঁড়ি বেয়ে উঠলাম নদী কূলে। নদীর ধারে জমজমাট জিনিসেপত্রে,রঙচঙে পোশাকে আশাকে আকর্ষণীয় নিগ্ৰো অধ্যুষিত এক গ্ৰাম্য বাজার,সেই বাজারের মধ্যে দিয়ে আমরা গিয়ে ঢুকলাম স্হানীয় এক অধিবাসীর বাড়িতে। সেখানকার ট্রাডিশনাল ঢঙে সাজানো ঝকঝকে তকতকে এক গ্ৰাম্য বাড়ী,আসলে এই বাড়ীটিকেই ট্যুরিস্ট আকর্ষণ করার জন্য,তাদের গ্ৰাম্য জীবনধারা বোঝানোর জন্য সুন্দর করে পেশ করেছে। সেখানে আমরা চা বিস্কুট খেয়ে,তার সঙ্গে আরও কি একটা স্থানীয় ড্রিঙ্ক(নামটা মনে পড়ছে না ঠিক) খেয়ে ছাদে গেলাম। ছাদ থেকে আবার নীল নদের শোভা দেখে এদের পোষা একটা কুমীর বাচ্চা দেখে যখন লঞ্চে পৌঁছলাম সন্ধ্যা তখন বেশ ঘন হয়েছে। আলো ঝলমলে রঙচঙে গ্ৰাম্য বাজারটিও তখন তার সৌন্দর্যের অন্য এক ডালা খুলেছে। অন্ধকারে মাঝ নদীতে গেল লঞ্চ খারাপ। হাল্কা জোৎস্নায় মাঝ নদীতে শুরু হল গান আজ জ্যোৎস্না রাতে সবাই গেছে বনে
ওহ্ বলতে গিয়ে গুলিয়ে ফেলেছি,আসোয়ান থেকে জাহাজ যখন প্রথম নড়ে উঠেছিল আমরা তখন ডাইনিং রুমে। ছুট্টে পৌঁছলাম আমাদের স্যুটে,জাহাজের গতি বাড়ছে আস্তে আস্তে। অস্তগামী সূর্য তখন আমাদের আনন্দে তাঁর রশ্মি ছটা ছড়িয়ে চলেছেন আমার মনের প্রতিটি কোনে। নদীর তীরের বালিয়ারি,তার পাশে কোথাও সামান্য কৃষি জমি,কোথাও বা গরু চড়ছে, আবার বালিয়াড়ি পেরিয়ে জঙ্গলে ছড়িয়ে পড়ছে শেষ বেলার সূর্যের আনন্দ ছটা। দৌড়ে গেলাম জাহাজের ডেকে ওপরের ছাদে, বিলাস বহুল সেই ছাদে সবার মুখে তখন আনন্দ ধ্বনি। ডেক থেকে চারিপাশের সৌন্দর্যে সবাই বিমুগ্ধ। নদীর একপাশে বালিয়াড়ি,জঙ্গল-অন্যপাড়ে নদীর তীর ঘেঁষে বালিয়াড়ির কোলে চলেছে বর্ণময় ট্রেনগাড়ি ঝিকঝিকিয়ে। এই ট্রেনেই হয়তো আমরা উত্তর ইজিপ্ট থেকে দক্ষিণে এসেছি। সূর্যের সেই শেষবেলার উজ্জ্বল সোনালী আলো যেন সমস্ত চরাচরে ছড়িয়ে দিচ্ছে,মাখিয়ে দিচ্ছে আমাদের মনের সবটুকু ভালোলাগা,আনন্দ। শেষ বিকেলের পড়ন্ত আলোয় মাঝনদী থেকে এমনভাবে নীলনদ সহ সমস্ত চরাচরকে উপভোগ করার আনন্দই আমার কাছে ঈশ্বরের আশীর্বাদ স্বরূপ আমাদের মধ্যে বর্ষিত হচ্ছিল যেন। মোট তিনদিন – তিনরাত ছিলাম সেই স্বপ্ন তরীতে। দিনমান কাটত নদীতীরে নানান ভ্রমণের স্থান ঘুরে,সন্ধেবেলায় নীড়ের মতো তরীটিতে ফিরে শুরু হতো নানা রকমের উপভোগ,বিনোদনের অনুষ্ঠান। লুক্সার থেকে চতুর্থ দিন ভোরে যখন চেক আউট করছি সূর্যদেব তখন উদীয়মান,পুব আকাশে উড়ে বেড়াচ্ছে গ্যাস বেলুন–তিনদিন তিনরাতের মধুর স্মৃতি বিজড়িত বিষ্নন মন তখন গাইছে” পূর্বাচলের পানে তাকাই অস্তাচলের ধারে আসি”–
এই গানের রেশ নিয়েই লুক্সার এয়ারপোর্ট থেকে এলাম কায়রো,কায়রো থেকে উড়লাম জেড্ডার দিকে–অনেক নীচে বালিয়াড়ি র মধ্যে বহমান গাঢ় নীল রঙের ফিতের মতো নীল নদ….
পরিশেষে বলি ইজিপশিয়ান রান্নার সুস্বাদ এবং ইজিপশিয়ানদের আন্তরিক উষ্ণ ভদ্র ব্যবহার ও মিশর ভ্রমণের এক আনন্দ দায়ক সুখ স্মৃতি হয়ে মনের মণিকোঠায় চিরস্থায়ী থাকবে।।
****************************************
মধুমিতা মিত্র: পেশা–স্বপ্ন দর্শন,স্বপ্ন গুলো ই বাঁচিয়ে রাখে,
নেশা–আনন্দ চয়ন,জীবন পথের সমস্ত জঞ্জাল,বোঝা,দুঃখ সব দূর করে ফেলে দিয়ে আনন্দ কুড়িয়ে বেড়ানো,
প্রেম-রবীন্দ্রনাথ,উদয়শঙ্কর,উত্তমকুমার। সাম্প্রতিকতম প্রেম শ্রীকৃষ্ণ..