তাথৈ & অথৈ
দেবযানী ঘোষ
ডাঃ কেয়া মুখার্জী চোখে মুখে মিটিমিটি হাসি নিয়ে গালে হাত দিয়ে বসে আছেন চেয়ারে,তাঁর নিজস্ব চেম্বারে। দৃষ্টি অদিতি আর তমালের দিকে।
গলায় একরাশ উৎকণ্ঠা নিয়ে অদিতি বলে,
‘—ম্যাম প্লিজ হেল্প আস। আমরা খুব অসহায় বোধ করছি।’
তমালও সমর্থনসূচক মাথা নাড়লো।
ওরা দুজনই এই মুহূর্তে মানসিক টানাপোড়েনে বিপর্যস্ত। যেন সর্বস্ব হারাতে বসেছে এমন উদ্ভ্রান্ত চোখমুখ।
ডাঃ কেয়া মুখার্জী একাধারে কোলকাতার একটি নামকরা বেসরকারি ইংরেজি মাধ্যম স্কুলের অধ্যক্ষা এবং একজন মনস্তত্ববিদ। তাঁর পারসোনাল চেম্বারে তিনি শুধুমাত্র চাইল্ড সাইকোলজি নিয়েই কাজ করে থাকেন। অদিতি আর তমালের দুই মেয়ে কেয়ার স্কুলেই পড়ে। তাই তারা বিপদে পড়েই ছুটে এসেছে কেয়ার কাছে।
(১)
সমস্যার সূত্রপাত বেশ কয়েক বছর আগে।
অদিতি আর তমালের দুই যমজ মেয়ে তাথৈ আর অথৈ। দশ মিনিট এর বড় অথৈ। তাথৈ আর অথৈ যখন থেকে কথা বলা শিখেছে তখন থেকেই ওরা নিজেদের মধ্যে অদ্ভুত কায়দায় ভাষা বা ভাবের আদানপ্রদান করে। যা অন্য সকলের পক্ষে একেবারেই বোঝা সম্ভব নয়। ওরা বলে একরকম কথা। যেটা সবাই শুনতে পায়।
কিন্তু প্রত্যেকটি কথার অন্তর্নিহিত যে অর্থ আছে সেগুলোই আসলে ওদের কথোপকথনের বিষয়। খুব খেয়াল করে না শুনলে বা সেই বিষয়ে সম্যক ধারণা না থাকলে এগুলো বোঝা যায় না। খানিকটা কোড ল্যাঙ্গুয়েজ এর মতো।
ওদের ছোটবেলায় এইসব খেলা দেখে অদিতি আর তমাল খুব উৎফুল্ল হয়ে ওদের আরো উৎসাহিত করতো। সবার কাছে সেই গল্প করা,ভিডিও করে রাখা এসব অহরহ চলতো।
ফলতঃ খুব স্বাভাবিক ভাবেই তাথৈ আর অথৈ বহুগুণ উৎসাহে নিজেদের মগজে আরও শান দিতে শুরু করে।
যেমন খুব ছোট্টবেলায় আধো আধো স্বরে যখন তাথৈ বলতো,
‘ —- দাদ্দা …. দাদ্দা….. !
অথৈ গুটি গুটি পায়ে হেঁটে এসে তাথৈ এর হাত ধরে টেনে নিয়ে,
বলতো — হুশশশ…. হুশশশশ….. ফু……!! ’
অর্থাৎ তমালের বাবা কমলেশকে ওরা দাদা বলতো। তমালের বাবার ছিল একটাই ধ্যানজ্ঞান। তাঁর বাগান । সেখানে দু বোনকে নিয়ে যত রকমের পাখি আর ফুল আছে তাই নিয়ে বৈঠক বসিয়ে ফেলতেন। ওরা বুঝুক আর নাই বুঝুক বক্তা ছাড়ার পাত্র নন।
তাই অনেক নতুন কিছু জানার সাথে সাথে, হুশশ আর ফুল এই দুটো শব্দ যেন দাদা শব্দের ইন্ডিকেটর।
বা,অনেক সময় তমাল ও অদিতির ছোট খাটো ঝগড়া থামানোর জন্য ওরা নিজেদের মধ্যে বিভিন্ন ছোট ছোট ছড়া বা রূপকথার গল্প থেকে টুকরো টুকরো অংশ তুলে কথা শুরু করতো। কখনও ছন্দে, কখনও গদ্যে। তা থেকে বেশ একটা শিক্ষণীয় অর্থ দাঁড়িয়ে যেত।
মাঝে মাঝে ধমক দিয়ে চুপ করিয়ে দিত অদিতি,
‘—-শুধু শুধু আবোল তাবোল বকছিস দুজন! দেখছিস না বড়োরা কথা বলছে? ’
তাথৈ অমনি প্রথমে গম্ভীর মুখ করে অথৈ এর দিকে তাকিয়ে শুরু করে দিল,—‘আয়রে ভোলা খেয়াল খোলা
স্বপনদোলা নাচিয়ে আয়!
অমনি অথৈ যোগ দিল—আয়রে পাগল আবোল তাবোল
মত্ত মাদল বাজিয়ে আয় !’
এবার দুজনে হাত ধরে নেচে নেচে ঘুরে ঘুরে বলেই চলতো “আবোল তাবোল” ছড়া।
এসব দেখে প্রথমে রেগে গেলেও পরে নিজেরাই হেসে ফেলতো তমাল আর অদিতি।
এমন করেই দুই ছোট্ট পরী ওদের ছোট্ট পৃথিবীর যাবতীয় জিনিসকে দু বোনের কথোপকথনের মাধ্যম তৈরি করে ফেলতো অনায়াসে। অদিতি,তমাল,কমলেশ নিজেদের ধন্য মনে করতে শুরু করলো এমন দুই মেয়ে পেয়ে ।
( ২ )
ছড়া,রূপকথা,কার্টুন জগতের গণ্ডি পেরিয়ে ওরা এখন স্কুলের প্রাইমারী সেকশনে।স্বাভাবিক পড়াশোনা,খেলাধুলার পাশাপাশি দুই বোনের পছন্দ কিন্তু আলাদা। অথৈ এর পছন্দ দাবা খেলা,সাঁতার,যোগব্যায়াম।
তাথৈ পছন্দ করে মিউজিক, ক্লাসিক সিনেমা। গঠনপ্রকৃতি মিললেও ওদের দুজনকে দেখতে কিন্তু একেবারে আলাদা।
কিন্তু যত দিন যেতে থাকলো একটু একটু করে বদলাতে থাকলো দৃশ্যপট।
এখন ওদের কথোপকথনের ধরণ বেশ খানিকটা পরিণত।
দেখা গেল কোনো কারণে তমাল খুব রেগে আছে। বাড়িতে কমলেশ আর অদিতি বেশ তটস্থ।
অথৈ হঠাৎ বলে উঠলো,—’বুঝছস নি বইন,বাঘেও রাষ্ট্রভাষা কয়,হাম-হাম…’
অমনি তাথৈ হি হি করে হেসে উঠে জোর গলায় বলে,
“খামোশ “!
—– খা,মোষ! আমি কেন মোষ খেতে যাবো?
অর্থাৎ টেনিদা হয়ে উঠলো সেই মুহূর্তের মহৌষধ। তার নির্যাস ওদের কথাবার্তার মধ্যে মিলে তমালের রাগ গলে জল।
এরকম ধরনের কমিউনিকেশন। ওদের রোজকার জীবনযাত্রায় জানতে থাকা ছোট ছোট জিনিস গুলোর তাৎপর্য, কথোপকথনের মাধ্যমে ব্যক্ত করতে শুরু করলো দু বোন।
অদিতি ও তমাল দুজনেই ভীষণ রকম আপ্লুত ছিল ওদের এই সেন্স অফ হিউমর নিয়ে। এমনকি কমলেশ ও।
ওরা যাতে আরও দক্ষ হয়ে ওঠে তাই ছোট থেকেই বিভিন্ন ধরণের বই, খেলাধুলার সরঞ্জাম, মিউজিক সংক্রান্ত যা যা দরকার সবটুকু জোগান দেওয়ার চেষ্টা করতো এই দম্পতি। আর নিজেরা মুহূর্ত গুলিকে আকণ্ঠ উপভোগ করতো।
এ পর্যন্ত সবকিছু ছিল একদম পারফেক্ট। কিন্তু এরপরই সমস্যা তৈরি হতে থাকলো। অথৈ আর তাথৈ নিজেদের যে জগৎ তৈরি করেছে তার বাইরে ওরা কারও সাথে মিশতে চায় না বিশেষ। ওদের কোনো বন্ধুও নেই সেরকম। নিজেদের মধ্যেই ডুবে থাকে সবসময়।
এমনকি বাড়ির মধ্যেও যেন আলাদা একটা জগৎ ওদের।
দুজনেই তুখোড়,পড়াশোনা বা অন্যান্য কারিকুলাম এ।
তাই যে কোন বিষয়কেই অন্য একটা দৃষ্টিকোণ থেকে দেখার চেষ্টা ওদের মধ্যে। রোজকার কথার ভাষা হতো হয় অঙ্কের,নয় বিজ্ঞানের নয়তো বা ইতিহাস,ভূগোল,সাহিত্য।
তার মানে এই নয় যে পাঠ্য বিষয় নিয়ে আলোচনা বা প্রশ্নোত্তর,এমনটা নয়। বরং প্রত্যেকটি আলাদা আলাদা বিষয়ের যে দর্শন তা একটু একটু করে বেড়ে উঠছে ওদের মধ্যে।
তাথৈ হয়তো জানালার দিকে উদাস হয়ে তাকিয়ে বলছে ,—- ‘ দ্য কম্বিনেশন অফ রেড এন্ড ব্লু ব্রিঙ্গস মাই ওউন হ্যাপিনেস। অথৈ তখন বলে,-‘আই নো তাথৈ,দ্য সানসেট স্কাই…. তোর ইমন রাগের অনুরাগ!’
এভাবেই যেন জটিল থেকে জটিলতর হতে থাকলো পাঁচ জনের পরিবারে পারিবারিক সম্পর্ক।
খাবার টেবিলে বসে তাথৈ হয়তো বললো,
‘ — অথৈ সুমিত স্যার একদম পাই ক্যারেক্টার বল? ’
‘— ওহ্ রিয়্যালি। আমি এরকম ক্যারেক্টার একদমই সহ্য করতে পারি না রে। ’
‘—- হ্যাভ ইউ সিন দ্যাট হি বিহেভস লাইক অ্যান এ্যমফোটেরিক অক্সাইড? ’
‘—– জাস্ট বি কুল। ট্রাই টু বি দ্য প্যারাবোলা তাথৈ। ’
কথা চলতে থাকে।
অর্থাৎ সুমিত স্যার এর ডিপ্লোমেটিক ক্যারেক্টার কে ওরা অঙ্ক আর কেমিস্ট্রির ভাষায় ব্যক্ত করলো।
কিন্তু ওদের এইসমস্ত কথার অর্থ অদিতিরা বুঝতে পারে না। বা পারলেও ভীষণ অস্বস্তি কাজ করতে থাকে। তাই মাঝে মাঝেই রিএ্যাক্ট করে ফেলে অদিতি। বকাবকি, গায়ে হাত । তারপর কান্নাকাটি। এসবই চলতে থাকে।
তমাল বিপন্ন বোধ করে। কমলেশ কিছুটা অসুস্থ তাই খুব একটা কিছু বলেন না। তমালের মা গত হয়েছেন অনেক আগেই।
আর যত অশান্তি বাড়তে থাকে দু বোন নিজেদের গণ্ডি আরও ছোটো করে ফেলে। ওদের ছোট্ট পরিধির মধ্যে শুধু কর্ষণ করা হয় জ্ঞানের জমি। বীজ বপন করে, তা থেকে নিত্যনতুন ফসল উৎপন্ন করে । তাই বিভিন্ন ধরণের এক্সপেরিমেন্টাল পরীক্ষায় একের পর এক চমকে দেওয়া সাফল্য ঘরে আসতে থাকে।
কিন্তু আত্মীয় স্বজন, পাড়া প্রতিবেশী সকলেই কম বেশি কথা শুনিয়ে দেয়,বিশেষ করে অদিতি কে যে “মেয়েদের তো অহংকার এ মাটিতে পা পড়ে না। পড়াশোনায় অনেকেই ভালো বাপু,কিন্তু এরকম তো কেউ না।”
অদিতির ভয় হয় ওদের কোনও রকম সাইকোলজিক্যাল ডিসঅর্ডার যদি থেকে থাকে।
তাই আপাততঃ ডাঃ কেয়া মুখার্জীর শরণাপন্ন।
( ৩ )
খুব মনোযোগ দিয়ে সবটুকু শোনার পর কেয়া বললেন,
‘– দেখুন,আপনারা যেভাবে ভাবছেন সেরকম কোনও রকম মানসিক বৈকল্য ওদের নেই। কারণ আমি নিজে পর্যবেক্ষণ করে দেখেছি ওদের। কিন্তু সত্যিই ওরা জিনিয়াস এবং রেয়ার ট্যালেন্ট। তাই একটু আধটু অন্যরকম ওরা হবেই।’
তমাল বলে,— ‘ ম্যাম! এর কি কোনও সলিউশন নেই? ’
‘—আমার কাছেও এমন কেস একেবারে নতুন। তাই আমাকে একটু ভাবতে সময় দিন আর আপনারা ওদের দুজনকে আলাদা আলাদা করে আমার কাছে পাঠান। যেভাবেই হোক। আমি ওদের সাথে একটু একা কথা বলতে চাই,নিভৃতে। আবার একসাথেও কথা বলবো অবশ্যই।’
অথৈ আর তাথৈ দুজনে পৃথকভাবে এসে দেখা করে কেয়ার সাথে। কেয়া বহুক্ষণ ধরে নিরীক্ষণ করে যা বুঝতে পারেন তাতে তিনি নিজেও বেশ অবাক হন।
জানা যায় অথৈ আর তাথৈ নিজেরাও ভীষণভাবে ফ্রাস্ট্রেটেড। বন্ধুরা কেউই ওদের সাথে কমিউনিকেট করতে চায় না। কারণ হয় তারা উপেক্ষা করে নয়তো এমন আঘাতজনিত কথাবার্তা বলে সেই কারণেই দু বোন নিজেদের মতো থাকে সবসময়। এমনকি বাড়িতেও ধীরে ধীরে সেই একই পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে। ওদের কেউ কখনো বোঝার চেষ্টা করেনি। তাই নিজেদের যথাসম্ভব কাজে ডুবিয়ে রেখে দুজনের মধ্যেই সীমাবদ্ধ করে ফেলেছে পুরো জগৎকে।
অথৈ ও তাথৈ এর সমস্যা নিয়ে এবার একটা সিদ্ধান্তে পৌঁছতে পেরেছেন কেয়া।
সেই সম্পর্কে অদিতি আর তমালকে বলার আগে, দু বোন কে একসাথে ডেকে বসিয়ে একরকম আলোচনা করলেন কেয়া বা বলা যায় একটি নতুন পথের সন্ধান দিলেন।
‘—– আচ্ছা তোমরা তো এখন ক্লাস টেন। নিশ্চয়ই ভবিষ্যৎ সম্পর্কে কিছু ঠিক করেছো। কি ধরণের ক্যারিয়ার তোমাদের পছন্দ বা কোন বিষয় নিয়ে এগোতে চাও কিছু ঠিক করেছো? ’
তাথৈ উত্তর দেয় ও মাসকম নিয়ে পড়তে চায়,অথৈ সফটওয়্যার ইঞ্জিনিয়ার হতে চায়। কোডিং নিয়ে কাজ করতে চায়।
দুজনের কথা শুনে কেয়া ভীষণ উৎসাহিত হয়ে বললেন,-‘বাহ্ বাহ্ বেশ তো! কিন্তু তোমরা তো নতুন কিছু সৃষ্টি করতে পারো তোমাদের এই ট্যালেন্ট কে কাজে লাগিয়ে।’
দুজনেই অবাক,—’বুঝলাম না ম্যাম। কী এমন করতে পারি আমরা? ’
‘—- তোমরা তোমাদের পছন্দের বিষয়ে পড়াশোনা শেষ করে এমন একটা ক্যারিয়ার বেছে নাও যেখানে তোমাদের দুজনের পাঠ্য বিষয় আর এই যে একটা থার্ড ভিশন তৈরি হয়েছে তোমাদের সেই রেয়ার ট্যালেন্টকেও কাজে লাগাতে পারো।’
দু বোন খুব মনযোগ দিয়ে শুনলো। নিজেদের মধ্যে অবশ্যই আলোচনা করে দেখবে।
এর ঠিক পরের দিন কেয়া বসলেন অদিতি আর তমালের সাথে। দুজনকে পুরো বিষয়টি বুঝিয়ে বললেন,
‘—-দেখুন একই ভ্রূণ থেকে জাত ওরা দুজন। তাই ওদের মধ্যে জিনগত সমতা থাকবেই। কিন্তু এক্ষেত্রে ওদের বাইরের চেহারা, বা ব্যক্তিগত চরিত্রের মিল না থাকলেও অথৈ আর তাথৈ এর প্রধান সংযোগ ওদের মস্তিষ্কের তরঙ্গদৈর্ঘ্যে। তাই এই তরঙ্গদৈর্ঘ্যের প্রত্যেকটি কম্পাঙ্ক একে অপরকে কানেক্ট করতে পারে। ওরা বিরল সম্পদ। একসাথে কোনও কাজ করলে তা একদিন নিশ্চিত অনেক বড় সফলতা নিয়ে আসবে। ওদের স্পেস দিন। আপনারা বাবা,মা হয়ে বাড়তি মানসিক চাপ দিয়ে ফেলবেন না। ওদের পাশে থাকুন। আপনাদের স্নেহ, সহযোগিতা আর আশীর্বাদ এটাই তো ওদের পাথেয়।’
( ৪)
বছর ছয়েক কেটে গেছে। আজ এক বিশেষ দিন। গ্যালারি ফেটে পড়ছে হাততালি আর উচ্ছাসে। অদিতি আর তমালের চোখে জল। কমলেশ ইতিমধ্যে চলে গিয়েছেন না ফেরার দেশে। সামনের সীটে বসে আছেন ডাঃ কেয়া মুখার্জী। গর্বে তার কণ্ঠ অবরূদ্ধ। স্টেজে উঠলো অথৈ আর তাথৈ।
তাদের বিষ্ময়কর আবিষ্কার,সোশ্যাল মিডিয়া তোলপাড় করে দেওয়া একটি সফটওয়্যার STUDYMATE. com ….
এর জন্য তাথৈ ও অথৈ কে ‘ন্যাশনাল এওয়ার্ড অফ টেকনোলজি’ পুরস্কারে ভূষিত করা হচ্ছে।
অথৈ এর কোডিং ও AI বিদ্যা এবং তাথৈ এর কমিউনিকেশন স্কিল মিলে বিপ্লব ঘটিয়ে ফেলেছে।
কোটি কোটি ছেলে মেয়ে এখন তাদের পছন্দের বিষয়কে বেছে নিতে পারবে ভাষা বা ভাব প্রকাশের মাধ্যম হিসেবে। শুধুমাত্র বই পড়েই নয় বরং নির্দিষ্ট সাবজেক্ট কে আত্মীকরণ করার জন্য দরকার কমিউনিকেশন। অংকের ভাষায় বা বিজ্ঞান বা যে কোনো পাঠ্য বিষয়ের ভাষায় নিজেকে কানেক্ট করার জন্য এই সফটওয়্যার। একেবারে বন্ধুর মতন।
অর্থাৎ,ধরা যাক কোনো ছাত্র লগারিদম বুঝতে চাইছে সে তখন এই সফটওয়্যার এর আওতায় এসে পড়লেই তাদের সাথে লগারিদম এর ভাষায় কথা বলা হবে। রোজকার জীবনের সাথে তখন লগারিদমকে এমন ভাবে কানেক্ট করিয়ে দেওয়া হবে যেন আর কখনও সেই ছাত্রের লগারিদম বুঝতে বা করতে কোনও সমস্যা না থাকে। তেমনই পাঠ্যক্রম এর প্রত্যেকটি বিষয়ের জন্য আলাদা আলাদা উইন্ডো খোলা যাবে এবং সেখানে প্রতিটি কন্টেন্ট তৈরি থাকবে এভাবেই। এই আবিষ্কার তুমুল সাড়া ফেলেছে ইতিমধ্যেই। সোশ্যাল নেটওয়ার্কের ইতিহাসে তাথৈ আর অথৈ এর নামও হয়তো একদিন অক্ষয় হয়ে থাকবে।
আজ অদিতি আর তমাল আবারও নিজেদের ধন্য মনে করে এমন মেয়েদের জন্ম দিতে পেরে। ওদিকে পুরস্কার নেওয়ার সময় তাথৈ আর অথৈ একে অন্যের হাত ধরে একটা গোটা স্পিচ দেয় ওদের নিজস্ব ভাষায় কথোপকথনের মাধ্যমেই। এই প্রথম ওদের কথা নিশ্চুপ শুনতে থাকে গ্যালারির লক্ষাধিক মানুষ এবং অত্যন্ত মনযোগ সহকারে,শুনতেই থাকে।
সমাপ্ত
***************************************
দেবযানী ঘোষ ঃ
মধ্যমগ্রাম,দেবীগড়
পেশা – শিক্ষকতা (অংক,রসায়ন),সঙ্গীত শিল্পী & শিক্ষক,লেখক।
বই পড়তে (বিভিন্ন ধরনের বিষয়) এবং শাস্ত্রীয় সঙ্গীত সহ রুচিসম্মত সব ধরনের গান শুনতে ভালোবাসেন।
“এবং আমরা” পত্রিকার সদস্যা।
২০২৩ বইমেলায় প্রকাশিত গল্পগ্রন্থ – রোদ জনাকির গল্প