Shadow

নাম গোত্রহীন ফুলগুলো – সুলগ্না চক্রবর্তী

PC: Make MyTrip Vlog

নাম গোত্রহীন ফুলগুলো

সুলগ্না চক্রবর্তী

ভারতের স্বাধীনতা সংগ্রামের ইতিহাস পরস্পর বিরোধিতায় ভরা। টাকা ও ক্ষমতার লোভে অনেকে বিপ্লবীদের পুলিশের হাতে তুলে দিতে সাহায্য করেছে। আবার কিছু কিছু ঘটনায় বোঝা যায় সাধারণ লোকেরা কেমন ফেরারী বিপ্লবীদের সাহায্য করেছে,স্বাধীনতা সংগ্রামীদের লোকবলঅর্থবল দিয়েছে,মাইলের পর মাইল হেঁটে রিভলভারচিঠি চালান করেছে এবং আমজনতার মধ্যে স্বাধীনতার প্রয়োজনীয়তা নিয়ে সচেতন করেছে।
চন্দননগর শহরের এই ব্যাপারটা আবার অন্য মাত্রা আছে। এখানে ফরাসীরাও কিছু কিছু ক্ষেত্রে স্বাধীনতা সংগ্রামীদের পাশে এসে দাঁড়িয়েছে। আর একটা জিনিস না বললেই নয় সেটা হলো মহিলাদের এবং নাট্যকর্মীদের সাথে স্বাধীনতা সংগ্রামীদের সমান্তরালভাবে চলা। চলে গেছে তারা স্মৃতির অন্তরালে। অথচ জীবনের সবটুকু বাজি রেখে অপমান-রাগ-বিদ্বেষ ভুলে তারা বিপদের দিনে সঙ্গ দিয়েছে স্বাধীনতার সূর্যকে পূর্বকাশে তুলে ধরতে।
দক্ষিণ চন্দননগরের গোঁদলপাড়াতে ১৮৭৯ অবধি একটা নাট্য সমাজ ছিলো। ১৮৮০ সালে পল্লীবাসী সেই নাটক সমাজ তুলে দেয় ও “গোঁদলপাড়া পাঠসমাজ” প্রতিষ্ঠা করে। এরপর আসে ১৯০৫ ও বঙ্গভঙ্গকে ঘিরে স্বদেশী আন্দোলনের সূত্রপাত। এই সময় চন্দননগরের বিপ্লবীরা স্বদেশী চেতনা জাগাতে গোটা চন্দননগর জুড়ে সভা,মিছিল,রাখি বন্ধনের পরিকল্পনা নেয়। তুলে দেওয়া সেই নাট্য সমাজের (ছোট্ট পার্টি) যথেষ্ট সহযোগিতা তারা পায়। দূর্গা পুজোর মহাষ্টমীর দিন দেশাত্মবোধক গান গাইবার ব্যবস্থা হলে নাটকের লোকেরাই প্রথম এগিয়ে এসেছে। প্রবর্তক সংঘের সংঘ গুরু মতিলাল রায়ের নিজস্ব যাত্রাদল ও নাট্য দল ছিলো। মতিলাল রায়ের সাথে শহীদ কানাইলাল দত্ত কলকাতা অবধি গিয়েছিলেন নাটক দেখার জন্য। চন্দননগর কলেজের অধ্যাপক ও চন্দননগরের বিপ্লবীদের আচার্য শ্রী চারুচন্দ্র রায়ের বাড়িতে নাটকের গ্রুপ “গেইটি” ছিলো। এই সব নাটকের সাথে যুক্ত হওয়া লোকেরা সমাজের মধ্যে সচেতনতা আনতে যেমন কাজ করেছে তেমন বিপদের সময় ভবিষ্যতের কথা না ভেবে “স্বদেশী করা যুবকদের” হাত ধরেছে। ১৯০৮ সালে চন্দননগরের হাটখোলাতে এক সভা হয়। কলকাতা থেকে শ্যামসুন্দর চক্রবর্তীকে নিয়ে আসা হয় সভা করার জন্য। সভা শুরু হয় নাটক দিয়ে এবং নাটক চলাকালীন চন্দননগরের মেয়র নাটক বন্ধ করে দেয়। এই সময় নাটকের লোকেরা শ্যামসুন্দর চক্রবর্তীকে পুলিশের হাত থেকে বাঁচিয়ে নিরাপদে কলকাতা দিয়ে আসে। চন্দননগরে যেহেতু ব্রিটিশ নিয়ম কানুন চলত না অনেক বিপ্লবী চন্দননগরে আশ্রয় নিতেন। চন্দননগরে অনেক মুক্তিকামী ম্যাগাজিন ও সংবাদপত্র বেরোত। ব্রিটিশ সরকারের বন্ধ করা নাটক চন্দননগরে হয়েছে। নৃত্য গোপাল স্মৃতি মন্দিরের মঞ্চে এমন কিছু নাটক কলকাতার এবং শহরের নাট্য প্রেমীরা করেছে যা সাধারণ লোকেদের কাছে ঔপনিবেশিক শক্তির আসল রূপ খুব সহজে তুলে ধরেছে। মহড়ার নাম করে স্বদেশীদের আনাগোনা সহজ করাও চন্দননগর গোঁদলপাড়া ও বাগবাজার নাটকের গ্রুপদের একটা কাজ ছিলো।
এবার আসি এমন এক নেটওয়ার্কের কথায় যারা নাটকের লোকেদের মত সাধারণ লোকের সাথে সম্পর্ক দেশের স্বাধীনতার বিষয়ে কোনো সচেতনতা না জাগিয়েও নীরবে কাজ করে গেছেন। এর মধ্যে একজন হলেন চন্দননগর কোর্টের আইনজীবী বনমালী পাল। বনমালী বাবু পন্ডিচেরি জেনারেল কাউন্সিলের সদস্য ছিলেন। ১৮৯১ এ ফরাসী শাসিত পন্ডিচেরীর গভর্নর চন্দননগরের এলে তিনি গভর্নরকে অনুরোধ করেন কোন চাপে যেন তারা ব্রিটিশ শক্তির কাছে মাথা নত না করে এবং ফ্রান্স থেকে পাঠানো পার্সেল যেন কোনোভাবেই ব্রিটিশদের হাতে না যায়। তিনি এও জানান আগ্নেয়াস্ত্র,বারুদ,গুলি ইত্যাদি যা যা ফ্রান্স থেকে আসে তা যেন কোনভাবেই ব্রিটিশ এক্তিয়ারে না যায়। পোস্ট অফিসের পোস্টমাস্টার গোবর্ধন দাস ছিলো কোকেইন স্মাগলার, তার এই দুর্বলতা ফরাসী পোস্টমাস্টার সাতকড়ি নন্দী জানতো।
তাই চন্দননগরের বিপ্লবীরা সাতকড়ি নন্দীকে দিয়ে ব্রিটিশ পোস্টমাস্টার গোবর্ধন দাসকে বেশ কিছু ক্ষেত্রে নাড়াচাড়া করতে পারতো। কোতোয়াল ধ্রুব দাসের হাতে ছিলো অস্ত্র ও আইন বিভাগ। ব্রিটিশ সরকার তাকে অর্থের প্রলোভন দেখালেও চতুরতার সাথে তিনি বেরিয়ে এসেছেন বিপ্লবীদের ব্যাপারে তেমন কিছু না বলে। গোঁদলপাড়াতে অমর মিত্রের বাড়িতে অনেক স্বদেশীদের আসা যাওয়া ছিলো। পুলিশের সাব-ইন্সপেক্টর ভূপেন্দ্রনাথ বন্দ্যোপাধ্যায়ের সাথে বন্ধুত্ব এই বাড়িটাকে সন্দেহের ঊর্ধ্বে রেখেছিলো।
ব্রিটিশ পুলিশকে নানাভাবে দূরে রাখার প্রচেষ্টার আরো অনেক উদাহরণ আছে। যেমন ডাক্তার সাগরকালি ঘোষ। বাড়ির বাচ্চাদের নৌকায় চড়িয়ে এসরাজ বাজাতে বাজাতে নৌকা ভ্রমণ করতেন। নৌকার খোলের ভেতরে বোমা তৈরির অ্যাসিড,ফসফরাস ইত্যাদি রাখা থাকতো।
ডাক্তার সাগরকলি ঘোষ চন্দননগরে বিপ্লবীদের প্রচুর অর্থ সাহায্য করতেন। চন্দননগরের আর এক বিপ্লবী নরেন্দ্রনাথ বন্দ্যোপাধ্যায়কে যে পুলিশের চর চোখে চোখে রাখত তাকেই তিনি বাড়ি ভাড়ার ব্যবস্থা করে দেন। সেও অন্যরকম ভাবে নরেন্দ্রনাথ বন্দ্যোপাধ্যায়কে দেখতে শুরু করেন এবং এক অলিখিত চুক্তি দুজনের মধ্যে হয়ে যায়। আবার চন্দননগরের মাড়োয়ারী পরিচালিত দোকানে বংশীধর নামে এক ব্যক্তি পাকা খাতার হিসাবপত্র করতো। এক সাধারণ মাড়োয়ারী দম্পতিকে পুলিশ কখনোই সন্দেহ করেনি কোন ভাবে,অথচ প্রবর্তক সংঘের সংঘগুরু শ্রী মতিলাল রায় এই দম্পতির কাছে প্রয়োজনে অস্ত্রশস্ত্র রেখে দিতেন। আশুতোষ নিয়োগীর কথাও এই প্রসঙ্গে উল্লেখযোগ্য। কারণ তিনিও পুলিশের সন্দেহের তালিকায় ছিলেন না ও বিপ্লবীদের অনেক সাহায্য করেছেন।
বোমা তৈরী করার জন্য তিনি অর্থবল দিয়ে পাশে থেকেছেন। এক সোনার দোকানের মালিক সত্যচরণ সোনা গলানোর নাম করে কলকাতা থেকে পুলিশের চোখের সামনে দিয়ে সালফিউরিক ও নাইট্রিক অ্যাসিড আনতেন। আশুতোষ নিয়োগীও স্বর্ণকার ছিলেন। উনিও খুব বুদ্ধি করে প্রচুর অ্যাসিড কলকাতা থেকে আনতেন। এই প্রসঙ্গে ভূতো তাঁতির কথা বলা যায়। উনি দোকান চালাতেন আর পাখি শিকার করতেন। পাখি মারার বন্দুকের নাম করে অস্ত্র লেনদেন হতো বিশেষ কোড মেনে।
স্বাধীনতা সংগ্রামের এইসব পরম আত্মীয়দের মধ্যে কিছু বিদেশীও ছিল।  ব্রিটিশ ও ফরাসীদের তিক্ত সম্পর্কের কথা সকলেরই জানা। ব্রিটিশদের বিপক্ষে চন্দননগরে চলতে থাকা নানা ঘটনা ফরাসী পুলিশরা জানলেও চুপ করে থাকতো। মা বোড়াই চন্ডীর শ্মশান ঘাটের কাছে বনের ভেতর এক খোলা জায়গায় গুলি ছোঁড়া  বিভিন্ন কায়দা কানুন শেখানো হতো। এটা ফরাসি পুলিশরাও জানতো এবং তারা এটাকে তীর চালানোর জায়গা বলে উল্লেখ করতো।
চন্দননগরবাসী কিশোরী মোহন সাঁপুই ৩৮ টি পার্সেলে সরাসরি ফ্রান্স থেকে রিভলবার এনেছিলেন। পরে এটা ধরা পড়ে যায় ও ব্রিটিশদের চাপে ফরাসীরা নতুন অস্ত্র আইন প্রণয়ন করে। তবুও ফরাসী পুলিশ তেমন কিছু কড়া করে বিপ্লবীদের কাজকর্ম বন্ধের প্রয়াস করেনি। চন্দননগরের বোমা বাঁধার প্রধান কারিগর ছিলেন মনীন্দ্রনাথ নায়েক। ব্রিটিশ পুলিশ বহুবার খবর পেলেও ইন্সপেক্টর রাম গোপাল মুখোপাধ্যায়ের জন্য ধরেনি। চন্দননগরের বোমা বার্মা থেকে লাহোর অবধি যেতো। চন্দননগরের হাসপাতালের ফরাসী ডাক্তাররা রোগীর নাম পাল্টে বিপ্লবীদের চিকিৎসা করতেন। রূপলাল নন্দীর গালাকুঠীতেও অনেক বিপ্লবীর শারীরিক অসুস্থতার সময়ে চিকিৎসার হাত বাড়িয়ে দিয়েছিলেন ফরাসী চিকিৎসকরা। চন্দননগরের আর এক ডাক্তার  হীরেন্দ্রনাথ চট্টোপাধ্যায় ছিলেন কলকাতা মেডিকেল কলেজের ডাক্তার। তিনি সাহেবদের সাথে খুব ভালো সম্পর্ক রাখতেন। এই জন্য ব্রিটিশ পুলিশের সন্দেহ তার ওপর পড়েনি। অথচ শহীদ দীনেশ মজুমদার পলাতক অবস্থায় চন্দননগরের তার গৃহে বেশ কিছুদিন লুকিয়ে ছিলেন। বিপ্লবীদের চিঠি,অস্ত্রশস্ত্র,স্বদেশীদের সভা সবই হতো চিকিৎসা করতে এসেছে বা গল্প করতে এসেছে এর ছলে।
আর মঁসিয়ে গোমেজের কথা এই পটভূমিকায় সোনার অক্ষরে লেখা থাকবে। ১৯১৬ সালে চন্দননগরের প্রায় সব বিপ্লবীদের ঘাঁটিতে তল্লাশি হয়। এমনকি অরুণচন্দ্র সোম ও মণীন্দ্র নাথ নায়েকের বাড়িতেও ঢুকে পড়ে ব্রিটিশ পুলিশ। চন্দননগরের ফরাসী কর্তৃপক্ষ ব্রিটিশদের থেকে বিশাল চাপে পড়ে কুখ্যাত পুলিশ অফিসার টেগার্টকে সঙ্গীসাথী নিয়ে ঢুকতে দিতে বাধ্য হয়। কিন্তু ফরাসী কর্তৃপক্ষ আগে থেকে খবর পাঠিয়ে দেওয়াতে বিপ্লবীরা জিনিসপত্র সরিয়ে ফেলে। টেগার্ট প্রবর্তক সংঘের দেওয়ালে পিকরিক অ্যাসিডের দাগ দেখেন ও স্যাম্পেল নেন। টেগার্ট সাহেব এক্সট্রাট্রাডিশন ওয়ারেন্ট আনলেও রুখে দেয় ফরাসী আধিকারিক মঁসিয়ে গোমেজ। বহুক্ষণ কথা কাটাকাটি চলে। মঁসিয়ে গোমেজ বলেন জিনিসপত্র না পাওয়া গেলে গ্রেপ্তার করা যাবে না এবং পন্ডিচেরির গভর্নর মঁসিয়ে মাতিন ও এ নিয়ে নির্দেশ পাঠিয়েছেন শেষ অবধি শূন্য হাতে ফেরত যায়। টেগাৰ্ড বসের সাথে যার নাম একসাথে করা যাবে তিনি হলেন চন্দননগর হাসপাতালে চিকিৎসক মঁসিয়ে গোবিন। অনেক আহত বিপ্লবীদের নাম পাল্টে ফূর্তি করতেন এবং জানাজানি হবার আগেই নিরাপদ জায়গায় ব্যবস্থা করতেন নিঃস্বার্থ এই কাজকে কি বলা যাবে?  ?
কে যোগীনবাবুর শ্বশুর যার বাড়িতে ফেরারি বিপ্লবী অমরেন্দ্র চট্টোপাধ্যায় থাকতেন? বাঘাযতীন খবর পাঠানোর আগেই চন্দননগরের যোগীনবাবু খবর আনেন কলকাতা থেকে বিরাট পুলিশ ফোর্স আসছে। আটজন ফেরারী বিপ্লবী তখন নটবর দাসের বাড়ীর সামনে। একটা নামহীন অচেনা মুখের ছেলে সাইকেল চালাতে চালাতে গান গাইতে লাগলো- 

“মাগো তারা এসেছে হেথায়- 

পরপাড়ে যাবে চলে যে আছে সেথায়- 

ওরে আয়-ওরে আয়-”

বিপ্লবীরা বুঝতে পেরেই সামনের বাড়ীতে ঢুকে পড়লো। কে ছিলো এই নটবর দাস? কে ছিলো সেই গান গাওয়া যুবকটি? এমন অনেক ঘটনা আছে যা শুনলে শিহরিত হতে হয়। ১৯৩৩ সালের ৯ই মার্চ চন্দননগরে আশ্রয় নেয় বিপ্লবী দীনেশ মজুমদার। তাঁর গুলির আঘাতে চন্দননগরের পুলিশ আধিকারিক মঁসিয়ে ক্যাঁ মারা যায়। দীনেশ মজুমদারকে আশ্রয় দেবার জন্য ললিত মোহন চন্দ্রের উপর এত অত্যাচার চলেছিল যে তিনি উন্মাদ হয়ে যান। কে সেই “মেজো বৌ” যে ৩০ টাকা দিয়েছিল খুব বিপদের সময় সোনা বন্ধক রেখে? কে ছিলো সেই চন্দননগরের ব্যারিস্টার যে ১৯৩০ এর চট্টগ্রাম বিপ্লবীদের মধ্যে ফেরারী মাখনলাল ঘোষালের মৃত্যু নিয়ে জেনিভার কোড অফ জাস্টিসে চিঠি পাঠিয়েছিলেন ব্রিটিশ পুলিশের নামে?
কে ছিলো সেই রসিক দাস যে চট্টগ্রামের বিপ্লবীদের চন্দননগরে আনার দায়িত্ব নিয়েছিল? কে ছিল তিনকড়ি মুখোপাধ্যায় যার বাড়ীতে চট্টগ্রামের বিপ্লবীরা প্রথম উঠেছিল? কে ছিল সেই ব্যক্তি যার বাড়ীতে রাসবিহারী বসু জাপান যাবার আগে কিছুদিনের জন্য আশ্রয় নিয়েছিলেন? পুলিশের চোখ এড়াতে কি করতেন বিশ্বনাথ সরকার,বিশ্বনাথ সিংহ,নগেন্দ্রনাথ ঘোষ যারা চন্দননগরের বিপ্লব আচার্য চারুচন্দ্র রায়ের বাড়িতে নিয়মিত যেতেন নাটক ও সাহিত্য নিয়ে আলোচনা করতে?
ব্রিটিশ পুলিশের খাতায় চন্দননগরের এমন অনেকের নাম আছে যাদের আদৌ সেই নাম আসলে ছিলো কিনা তাই নিয়ে সন্দেহ থেকে যায়। কারা হাটখোলার বিনোদ-গঞ্জের ননী-বলাই,সিনহা,ভূতোতাঁতি,ঝালু,নিরু,বুলবুল,মনোহর,অমর? মণীন্দ্রনাথের তৈরি বোমা গোটা ভারতে যেত। কিন্তু তার বোমা যার কাছে জমা থাকতো সে কি অমৃত লাল হাজরা না শশাঙ্ক হাজরা না নৃপতি হাজরা? রাসবিহারী বসুর মাথার দাম তখন ঘোষণা হয়ে গেছে। তাকে চন্দননগরে এনেছিল পশু ও বাঙাল তাদের কথা কে মনে রেখেছে? কে সেই ছাত্রনেতা সুরেন ছিল যে ফরাসী প্রশাসকের অট্টালিকার সামনে রক্তাক্ত অবস্থায় বন্দেমাতরম্ ধ্বনি বন্ধ করেনি?
কে সেই লোক যিনি অরবিন্দ ঘোষ পন্ডিচেরি উদ্দেশ্যে যাওয়ার আগে “নেবু জল খাবেন” বলে টাকা দিয়েছিল? মানিক রক্ষিত এবং কোচিং দত্তকে নিয়ে কোন কিছু জানা যায় না কেন? এমন অনেক মহিলা চরিত্র আছে যারা গভীর রাতের অতিথিদের জন্য চিড়ে-মুড়ি মজুদ রাখত ঘরে। শেঠদের দূর্গাপুজোর প্রসাদ রাতে রাখা থাকতো,দূর্গা দালানে-কারা যেন খাবে বলে। এইসব পর্দার পেছনে থাকা চরিত্ররা না থাকলে স্বাধীনতার আগুনে ঘি পড়া বন্ধ হয়ে যেত। নামহীন এইসব চরিত্রদের প্রণাম জানাই।।
**************************

সুলগ্না চক্রবর্তী পরিচিতিঃ সুলগ্না চক্রবর্তী বর্ধমান বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ভূগোলে মাষ্টার করলেও ভালোবাসার জায়গা হলো সাহিত্য ও ইতিহাস।বিভিন্ন পত্রপত্রিকা,রেডিওতে সুলগ্না চক্রবর্তীর প্রবন্ধ,গল্প,কবিতা এসেছে। ফ্রান্স ও ইংল্যান্ডের প্রজেক্টেও কাজের অভিজ্ঞতা আছে।

 

error: বিষয়বস্তু সুরক্ষিত !!