ভালোবাসার রং
রেশমি দত্ত
আজ ২৫ বছর পর মিত্র বাড়িতে সানাই বাজছে,পাড়া–প্রতিবেশী,আত্মীয়–স্বজন,বন্ধুবান্ধব সবাই নিমন্ত্রিত। অরিন্দম ও শর্মিলা দুজনে মিলে সবার বাড়িতে গিয়ে নিমন্ত্রণ করে এসেছে। প্রথমে সবাই দুজনের একত্রে এসে নিমন্ত্রণ পত্র বার করাতে ভেবেছিল বোধ হয় ওদের একমাত্র মেয়ে তিন্নির বিয়ে,কিন্তু পরে বুঝতে পারা গেল যে এটা অরিন্দম ও শর্মিলার বিবাহ বার্ষিকীর নিমন্ত্রণ। হ্যাঁ,এবার ওদের পঁচিশ বছর পূর্ণ হল,সব আয়োজন করা হয়েছে একেবারে পঁচিশ বছর আগের মতন,শুধু পুরোহিতের মন্ত্রপাঠটাই হবে না,বাকি সব রেডি। বিয়ে বাড়ির গেট,ক্যাটারিং,ফুলের মালা,বেনারসি,বিউটিশিয়ান,ফটোগ্রাফার,বরের পাঞ্জাবি,টোপর,মুকুট,জুতো,নতুন খাট তা ও ফুল দিয়ে সাজানো,নতুন ড্রেসিং টেবিল অর্থাৎ পঁচিশ বছর আগের সবকিছুই পাল্টে ফেলতে চেয়েছে শর্মিলা। অরিন্দমের জন্য বানিয়েছে সোনার চেন,আংটি,ঘড়ি। এত খরচা করার পক্ষে অরিন্দমের বিশেষ সায় ছিল না বললেই চলে,কিন্তু শর্মিলা নাছোড়বান্দা। অরিন্দম ওদের বিয়েটা যেহেতু খুব একটা ধুমধাম করে হয়নি তাই এতে খুব একটা অমত করলো না। অরিন্দম কে বিয়ে করতে হঠাৎই একদিন ঘর ছাড়তে হয়েছিল শর্মিলাকে। অরিন্দমদের বাড়ি থেকে একটা অনুষ্ঠান করে শর্মিলাকে ঘরের বউ করে নিয়েছিল তারা । তখন পুরনো খাটেই হয়েছিল তাদের ফুলশয্যা। পুরনো ড্রেসিং টেবিলের সামনে দাঁড়িয়ে শর্মিলা প্রসাধন সেরেছে এতদিন । নতুন ড্রেসিং টেবিল বানিয়ে দেওয়ার কথা বললে অরিন্দম রসিকতা করে বলতো,”তুমি তো এমনিই সুন্দর তোমার আয়না দরকার নেই। উত্তরে শর্মিলা বলতো,”সুন্দরী না ছাই,আসলে তুমি একটা কিপটে” আর তখনই অরিন্দম গাইতো “তুমি সুন্দর যদি নাহি হও,তাতে বলো কিবা যায় আসে….”
আজ ভোরবেলাটা শর্মিলার কাছে একটু অন্যরকম। চোখ খুলে দেখে পাশে অরিন্দম অকাতরে ঘুমোচ্ছে। মাথার অনেকগুলো চুল পেকে গেছে কিন্তু মুখটা সেই মায়াবী রয়েছে। একটু আদর করতে ইচ্ছে হলো শর্মিলার,কিছুটা আবেগে জড়িয়ে ধরল অরিন্দমকে। অরিন্দম ঘুমের মধ্যে বোধহয় একটু যেন অস্বস্তি বোধ করে। শর্মিলার মনে পড়ল ২৫ বছর আগের সেই ভোরবেলার কথা, কালরাত শেষে যে ভোর হয়,সেই ভোরবেলা চুপি চুপি আধো অন্ধকারে অরিন্দম ঢুকে এসেছিল তার ঘরে,আর সারারাত জেগে থাকা শর্মিলার অরিন্দমকে ঘরে ঢুকতে দেখে হাত পা ঠান্ডা হয়ে গিয়েছিল,ভালোবাসায় আবেগে গলা শুকিয়ে আসছিল,তলপেটে একটা কিনকিনে ব্যথা অনুভব করছিল যেটা অরিন্দমকে সামনে দেখলেই তার হত। সেই সব স্মৃতি শর্মিলার কাছে এখনও জীবন্ত । কিন্তু পঁচিশটা বছর কেটে গেছে এক নিমিষে। আজও সেই ভোরবেলা আবার ফিরে এসেছে অথচ শর্মিলা অরিন্দমকে জড়িয়ে ধরলেও সেই উষ্ণতা অনুভব করতে পারে না, যে আবেগকে এত চেষ্টা করে ও নিজের মধ্যে ফেরাতে চেয়েছিল তা কিন্তু ফিরে আসে না। নিজের মনকে প্রশ্ন করে সে,’কেন এমন হলো ?’ এর উত্তর ও খুঁজেছে বহুবার আর তার জন্যই সে এই আয়োজন করতে পীড়াপীড়ি করেছে অরিন্দমকে। ফিরে পেতে চেয়েছে সেই মুহূর্তগুলো,সেই আবেগগুলো। না,এত ভেবে এখন সময় নষ্ট করলে আর চলবে না। বাড়িতে আজ একটা অনুষ্ঠান,অনেক কাজ শর্মিলার। সকালবেলা থেকেই আজ বেল বাজতে শুরু করেছে বাড়িতে,ডেকোরেটর্সের লোকেরা এসে গেছে। নতুন খাট,ড্রেসিং টেবিল ডেলিভারি দিতে লোকেরা এসেছে ,শর্মিলা একা সামলাতে না পেরে টেনে তুললো অরিন্দমকে। অরিন্দমের যেন কোন তাগিদ নেই। ঘুম থেকে ছুটির দিন এই ভাবে উঠতে হলো বলে মুখটা বিরক্তিতে ভরে আছে । এই নিয়ে বেঁধে গেল দুজনের ঝগড়া। যদিও শর্মিলা ভেবে রেখেছিল আজ সে ঝগড়া করবে না। কিন্তু অরিন্দমের ওই বিরক্তিকর মুখের ভাবটা দেখে আর চুপ করে থাকতে পারল না। এখন আর ঝগড়ার পর জল পড়ে না চোখ থেকে। মনে পড়লো পঁচিশ বছর আগের কথা,ঝগড়ার পরে শর্মিলা কি রকম কেঁদে ফেলত আর অরিন্দম সঙ্গে সঙ্গে গলে গিয়ে তাকে বুকে টেনে নিত ! এখনো শর্মিলা এমনটাই চায় কিন্তু তেমন আর হয় কোথায় ? যেন সব আবেগগুলো হারিয়ে ফেলেছে শর্মিলাও। তারপর নিজের মনকে সে বোঝায় তেইশ বছরের মেয়ের মা সে,এখন কি তাকে আর অমন করে কাঁদা মানায়! কিন্তু তার মন তো উল্টো পথে হাঁটে,সেটা কেন পড়ে আছে সেই পঁচিশ বছর আগের রাস্তার বাঁকে যেখানে প্রতি রবিবার দেখা হতো অরিন্দমের সাথে! মনে পড়ে গেল এমনই এক রবিবারের কথা ! এখনো পরিষ্কার মনে আছে শর্মিলার! সেদিন ছিল বাইশে শ্রাবণ। রবি ঠাকুরের মৃত্যু দিন! পাড়ার অনুষ্ঠান শেষে অরিন্দমের সঙ্গে দেখা আর নামলো হঠাৎ করে মুষলধারায় বৃষ্টি,শর্মিলার পরনে লাল পাড় সাদা শাড়ি। সেদিন একটু যেন বেশি সুন্দর লাগছিলো শর্মিলাকে,হাত ধরে অরিন্দম টেনে নিয়ে দাঁড়ালো একটা ফ্ল্যাট বাড়ির নিচে ! এত বৃষ্টিতে রাস্তায় কাউকে দেখা যাচ্ছে না,যে জায়গাটাতে তারা দুটিতে আশ্রয় নিয়েছিল সেখানে দুজনে কোন রকমে দাঁড়িয়েছিল | এত কাছে অরিন্দম থাকায় শর্মিলার যেন শরীর মন সব অশান্ত হয়ে পড়ছিল। মনে হচ্ছিল এত ভালো তার আগে কখনো লাগেনি। কি জানি ভালোবাসায় বোধ হয় টেলিপ্যাথি থাকে;অরিন্দমকে সে কিছু প্রকাশ না করতেও তাকে দুই বাহুতে আবদ্ধ করে অরিন্দমের ঠোঁট দুটো এমন ভাবে শর্মিলার ঠোঁটকে স্পর্শ করল যেন বলল,”তোমাকে আমি সারা জীবন এই ভাবেই ভালোবাসবো,খুব ভালো রাখবো আমি তোমাকে“। শর্মিলা নিজেকে সামলে নিয়ে আবার ব্যস্ত হয়ে পড়ল সব তদারকিতে। অরিন্দমের সঙ্গে বাকি কি কি কাজ আছে সব নিয়ে আলোচনা করলো,এখন আর ঝগড়ার পরে কথা বন্ধ হয় না,এমন ভাব থাকে দুজনের যেন কিছুই হয়নি,রোজকার রুটিন মাফিক কাজের মধ্যে ঝগড়াটাও একটা কাজ। কিন্তু আগে তো তা হতো নয় মাসে ছয় মাসে,একবার যদিও বা মনোমালিন্য হতো শর্মিলার অত সহজে গোঁসা ভাঙতো না। এই রাগ ভাঙ্গাতে অরিন্দমকে কত খেসারতই না দিতে হতো। এখন চেষ্টা করলেও এরকম হয় না। হঠাৎ শর্মিলার কানে এলো,”বৌদি ও বৌদি বলছি ফুলের মালা গুলো দিয়ে গেলাম“। “ও হ্যাঁ,রেখে যাও মালা গুলো,” শর্মিলা বলল। কি কাজে যেন শর্মিলার কাছে এলো অরিন্দম,শর্মিলা ভাবলো হয়তো সে বিশেষ কিছু বলবে যেমন বলেছিল সেই দিন কোনার ঘরে টেনে নিয়ে গিয়ে,ভাত কাপড়ের অনুষ্ঠানের ঠিক আগে,”তোমাকে সিঁদুর পরে,ঘোমটা দিয়ে খুব সুন্দর লাগছে শর্মিলা,তুমি সারাজীবন আমার চোখে এইরকম থেকো“। কিন্তু অরিন্দম কাছে এসে শর্মিলাকে জিজ্ঞেস করল তার সেভিং সেটটা কোথায়? আর কখন থেকে সে রেডি হবে,তার ধুতি পাঞ্জাবি গুলো যেন বার করে রাখে। যাই হোক তাড়াতাড়ি করে দুপুরের খাওয়া সারলো তারা। তিনটে বাজলেই সাজাতে চলে আসবে শর্মিলাকে,আবার সেই কনে রূপে সাজতে তৈরি শর্মিলা,আর একবার সে নিজেকে কনের সাজে দেখতে চায়,বৌভাতের শাড়িটা তার ছিল রাণী কালারের,এবারও তার ইচ্ছা ছিল অবিকল সেই রকম একটা শাড়ি কিনবে। মনে আছে গড়িয়াহাটের একটা নামকরা দোকান থেকে কেনা হয়েছিল তার বৌভাতের শাড়িটা এবারও সেই দোকানে গিয়ে কিনলো বেনারসি,রাণী কালারের একটা পছন্দ হতেই গায়ের উপর তুলে নিল সে, দোকানের আয়নার সামনে দাঁড়াতে তার মন বলে,না,এ রংটা যেন তাকে ঠিক মানাচ্ছে না কিন্তু কেন? ঠিক এই রং এর শাড়িতেই তো তাকে অপ্সরা লেগেছিল। হুম! গায়ের রংটা আর আগের মত উজ্জ্বল নেই | উজ্জ্বলতার উপর যেন একটা আচ্ছাদন পড়ে গেছে। দোকানদার বললেন,“আপনি এই হালকা গোলাপিটা নিন বয়স হচ্ছে তো অনেকদিন পরতে পারবেন |” রাগ হলো শর্মিলার | “এই বয়স হচ্ছে কথাটা” শুনে মনে মনে বললে,” আমার বয়স হচ্ছে তো আপনার কি ? যা ইচ্ছা পরতে পারি আমি।” ওদিকে অরিন্দমের যেন কোন ভ্রুক্ষেপ নেই। যাই জিজ্ঞেস করছে,বলছে “ভালো, নাও নাও হয়েছে এবার ? শর্মিলা ভাবে কিরকম যেন বদলে গেছে অরিন্দম। তবে শর্মিলাও কি বদলায় নি? এই অরিন্দমের জন্য যেদিন গড়িয়াহাটের মোড়ে অপেক্ষা করছিল বিবাহ বার্ষিকীর কেনাকাটার জন্য,দূর থেকে অরিন্দমকে দেখতে পেয়েও তো কই তার হাত পা ঠান্ডা হচ্ছিল না,গলা শুকিয়ে আসছিল না,তলপেটে ব্যথা অনুভব করল না তো,যা তার হতো পঁচিশ বছর আগে। এত কথা ভাবতে ভাবতে কখন যে তার অর্ধেক সাজ শেষ হয়ে গেছে খেয়ালও ছিল না। বিউটিশিয়ান মেয়েটা যখন বলল,”আন্টি,ও আন্টি,কখন থেকে ডাকছি তোমাকে,কি এত ভাবছো? রিলাক্স করো,রিলাক্স।” হ্যাঁ রিলাক্স করতে হবে,কিসব যে আবোল তাবোল ভাবছে সে। পুরো সাজ হতেই দৌড়ে গেল সে তার নতুন আয়নার সামনে। আপাদ মস্তক দাঁড়িয়ে দেখল নিজেকে। কপালে সরু সরু ভাজ গুলো তো মেকআপে ঢাকা পড়েনি,চোখের তলার কালি টাও পুরো মিলিয়ে যায় নি। আর মুখে ঢল ঢলে ভাবটাও যেন কমে গেছে। তাহলে এই জন্যই বোধহয় আর আগের মতন ভালোবাসে না অরিন্দম তাকে। আর দেরি করলে চলবে না বাইরে লোকজন আসতে শুরু করেছে। তবুও অরিন্দমের সামনে গিয়ে একবার দাঁড়ালো সে | ভাবল নিজে থেকে অরিন্দম কিছু বলে কিনা? অরিন্দমের কোন সাড়া না পেয়ে নিজেই জিজ্ঞাসা করল অরিন্দমকে,”আমাকে কেমন লাগছে?” অরিন্দম ইম্পরট্যান্ট মেসেজ টাইপ করতে করতে না তাকিয়েই বলে দিল,”খুব সুন্দর“। শর্মিলা শুধু উত্তরে বলল,”অদ্ভুত“। দুজনেই যথাসাধ্য চেষ্টা করল অতিথি আপ্যায়নের। শেষ হলো সেদিনের অনুষ্ঠান। শেষ বলে কি করে? নতুন বিছানায় ফুলশয্যার অনুভূতি নিতে চায় শর্মিলা। ফুল সাজানো বিছানায় অপেক্ষারত শর্মিলা আরও একবার এই প্রেমহীন সময়ে প্রেমের শিহরণ পেতে চায় তাই জন্য এত কিছু,এত আয়োজন। অরিন্দম ঘরে ঢুকতে শর্মিলা ভেবেছিল তার হাত পা ঠান্ডা হবে,গলা শুকিয়ে আসবে,তলপেটে ব্যথা করবে কিন্তু না কোন কিছুই অনুভব করল না সে। আর অরিন্দম আবেগহীন দায়িত্ববান পুরুষের মতন প্রশ্ন করল আজ সব ঠিকঠাক ছিল তো? অতিথি আপ্যায়নের কোন ত্রুটি হয়নি তো? হজমের ওষুধ খেয়েছো তো? আর রাতে প্রেসারের ওষুধটা? বলে নিজেও চারটি ওষুধ খেল। শর্মিলা এবার প্রণাম করল অরিন্দমকে,আর অরিন্দম হাত ধরে তুলে নিল শর্মিলাকে বুকের মধ্যে,ধরল মাথাটা চেপে,ছড়া কেটে বলল,
“আমরা হয়েছি বুড়ো বুড়ি,আর নেই ছোড়াছুড়ি,
যতই করি ঝগড়া যতই করি আড়ি,আমাদের হবে না ছাড়াছাড়ি,
চলো এবার ঘুমিয়ে পড়ি,কালকে অফিস আছে উঠতে হবে তাড়াতাড়ি“।
কিন্তু শর্মিলা আরও একটু আদর আশা করেছিল ওর থেকে ! শুয়ে পড়তে বাধ্য হলো,ঘুম আসছিল না,ভালো লাগছিল না তার। কোথায় যেন মনে হচ্ছিল,না না অরিন্দমকে সে হারিয়ে ফেলেছে। তার ভালোবাসাকেও সে হারিয়ে ফেলেছে! অরিন্দমের মনে তার জন্য কোন আকর্ষণ নেই। ওকি আর আগের মতন ভালোবাসে? ভালবাসলে আজকের রাতটা কেউ এইভাবে ঘুমিয়ে পড়ে? তাহলে কি অরিন্দম অন্য কারোর প্রেমে পড়ল? পরকীয়া করছে অরিন্দম? যদি সে জানতে পারে কি করবে সে? অরিন্দমকে ছেড়ে দেবে? ডাইভোর্স চাইবে? না এভাবেই চলবে,কতসব কথা মাথায় ঘুরপাক খাচ্ছে।
তিন দিন বাদে ওদের উটি ঘুরতে যাওয়ার কথা। তাও জোর করে টিকিট কেটেছিল শর্মিলা। যদিও অরিন্দম এখন ঘুরতে যেতে একেবারেই নারাজ। ও এখন অফিসের একটা দায়িত্বপূর্ণ পদে রয়েছে। এভাবে যখন তখন ছুটি সে পায় না কিন্তু অগত্যা চার দিনের ছুটি তাকে ম্যানেজ করতেই হলো। অনুষ্ঠানের পরদিন থেকে শর্মিলার কোমরে একটা ব্যথা আরম্ভ হল আর তার সঙ্গে জ্বর | শর্মিলা ভাবল সেদিন এত ধকল গেছে কখন কোমরে লেগেছে হয়তো কিন্তু ব্যথাটা এত বাড়তে লাগলো যে পেইন কিলার খেয়েও কিছু হচ্ছে না দেখে অগত্যা ডাক্তারের কাছে জোর করে নিয়ে গেল অরিন্দম। ডাক্তার লক্ষণ ভালো না দেখে কতগুলো টেস্ট লিখে দিলো আর ঘুরতে যাওয়া ক্যানসেল করতে বলল। হ্যাঁ! টেস্টে ধরা পড়লো শর্মিলার দুটো কিডনি এফেক্টেড । হসপিটালাইজড করা হলো শর্মিলাকে,ডাক্তার ইমিডিয়েট কিডনি রিপ্লেসমেন্ট এর কথা বলল। অরিন্দম বিজ্ঞাপন দিল,জানাশোনা সবাইকে বলল,এদিকে ডাক্তার একটু তাড়াতাড়ি করতে বলায় সে ডাক্তার কে বলল যে সে তার নিজের একটা কিডনি দিতে পারবে কিনা? ডাক্তার বললেন,”তাহলে আপনাকে কিছু টেস্ট করতে হবে,আপনি দেবো বললেই তো দিতে পারবেন না,আপনার সঙ্গে যদি ম্যাচ করে তবে……..। অরিন্দম এক মুহূর্ত দেরি না করে সব টেস্ট করালো। দৈবক্রমে মিলে গেল সবকিছু। ঠিক হয়ে গেল অরিন্দম দেবে শর্মিলাকে তার একটা কিডনি। সেই মতো ব্যবস্থা হল এবং হয়ে গেল কিডনি ট্রান্সপ্লান্ট। অপারেশন শেষে বাড়ি ফিরল দুজনেই। শর্মিলা অরিন্দমকে জড়িয়ে ধরে অঝোরে কাঁদতে লাগলো,বুকের কাছে মাথাটা যেতেই যেন অরিন্দমের হৃদস্পন্দন অনুভব করল,শুনতে পেল ভালবাসার কম্পন! শর্মিলা বলল,”যদি মরে যেতাম?” অরিন্দম বলল,”তোকে মরতে দিচ্ছে কে? নিজের জীবন দিয়ে তোকে বাঁচিয়ে আনব। তোকে যে আজও বড় ভালোবাসি রে পাগলি“। শর্মিলা বুঝলো সময়ের সঙ্গে সঙ্গে ভালোবাসার রং ও বদলায়,জীবনের বিভিন্ন বাঁকে এক এক রূপে দাঁড়িয়ে থাকে ভালোবাসা। শুধু তাকে অন্তরের চোখ দিয়ে চিনে নিতে হবে।
******************************
লেখিকা-রেশমি দত্তঃ
জন্ম ও পড়াশোনা কোলকাতায়৷ বর্ধমান বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্নাতকোত্তর-পেশায় শিক্ষিকা রেশমির অবসরের বিনোদন হলো বইপড়া ৷ শৈশব থেকে বাবার অনুপ্রেরণায় গল্প ও কবিতা লেখার শুরু৷ শিশুদের সঙ্গে সময় কাটানো এবং ভ্রমণ ওর প্রিয় বিষয় ৷