
পুতুলখেলা
দেবাশিস দণ্ড
আমার তখন পুতুলখেলা
চিলেকোঠার ছাতে
কত যে কাজ একা হাতে
পারি না সামলাতে।
কমলারানী হলদেবেণী
চোখ নাচানি মাথা দুলানি
যত রকম বকবকানি
সবই ওদের সাথে।
আমার তখন পুতুলখেলা
চিলেকোঠার ছাতে।
দিদা তখন ঠাকুরঘরে
গোপাল ঠাকুর নিয়ে।
একদিন সব দেখেছিলাম
পা টিপটিপ গিয়ে।
সোনাগোপাল নাড়ুগোপাল
দিদা কেমন উথাল পাথাল
ফুলের সাজি নীল সাদা লাল
সাজায় সে ফুল দিয়ে।
দিদা তখন ঠাকুরঘরে
গোপাল ঠাকুর নিয়ে।
সহজ কি আর পুতুলখেলা
কাজের পরে কাজ
একেকটা দিন হাঁপিয়ে যেতাম
পড়তো মাথায় বাজ।
মেয়ে দুটোকে তেল মাখিয়ে
চান করিয়ে গা মুছিয়ে
চুল আঁচড়ে কাজল দিয়ে
একটুখানি সাজ।
সহজ কি আর পুতুলখেলা
কাজের পরে কাজ।
ঠিক তখুনি ঠাকুরঘরে
একই চানের ছল
দিদা মাথায় দিচ্ছে ঢেলে
ঘটির গঙ্গাজল।
চান করিয়ে নাড়ুগোপাল
মোছায় মাথা মোছায় কপাল
কত যে মিল সকাল সকাল
পাই না খুঁজে তল।
ঠিক তখুনি ঠাকুরঘরে
একই চানের ছল।
আমি ছুটে রান্না বসাই
ছোট্ট হাঁড়িকুড়ি
খুন্তি নাড়ার সাথে সাথে
বাজতো হাতে চুড়ি।
কমলি হলুদ বাছা আমার
না রাঁধলে কী খাবে আর
পাতার লুচি ফুলের আচার
ভাতের থালায় নুড়ি।
আমি ছুটে রান্না বসাই
ছোট্ট হাঁড়িকুড়ি।
দিদা তখন আপনমনে
সাজায় নকুল দানা
এসব নিয়েই কেটে যেত
ঘন্টাখানেক টানা।
ছোট্ট গেলাস ছোট্ট থালা
ছোট্ট ঠাকুর ছোট্ট মালা
তারই পাশে গন্ধ ঢালা
ধূপকাঠি কয়খানা।
দিদা তখন আপনমনে
সাজায় নকুল দানা।
দিদা বিভোর ঠাকুরগানে
মন্ত্র বলে কত
তখন মজার পদ্য বলি
আমি আমার মতো।
এমনি করে সকাল কাটে
যায় গড়িয়ে বেলা
সাঙ্গ হল দিদার পুজো
আমার পুতুল খেলা।
***********************
দেবাশিস দণ্ড পরিচিতি:
জন্ম ২০ আগস্ট ১৯৬৭,পেশা শিক্ষকতা। ১৩ বছর বয়সে বাবার দেখাদেখি কলম ধরা। এপারওপার দুই বাংলার বহু বাণিজ্যিক ও অবাণিজ্যিক পত্রিকায় কবিতা প্রকাশিত। আঞ্চলিক উপভাষায় লেখা অসংখ্য কবিতা রয়েছে,যেগুলি বাচিকশিল্পীমহলে সমাদৃত। শালবেলা,আমরা দুজন একটি গাঁয়ে থাকি,শনি ঠাকুর রবি ঠাকুর,ব্যইললে হবেক?,মিঠে কথা মেঠো সুর ইত্যাদি কবিতার অ্যালবামগুলি দারুণ জনপ্রিয়। জি বাংলা,ইটিভি বাংলা,ডিডি বাংলা ইত্যাদি বেশ কয়েকটি প্রথম শ্রেণীর টিভি চ্যানেলে কবিকন্ঠে কবিতা পরিবেশিত হয়েছে। প্রকাশিত কবিতার বই:ঠোঁটকাটার নোটবুক,ঝাড়ের বাঁশ,শব্দ শতাব্দ,বনফুল ইত্যাদি।