সেন্টিনেলীদের আশ্চর্য কাহিনী
ডঃ স্বয়ংদীপ্ত বাগ
আন্দামানের উত্তর সেন্টিনেল দ্বীপে বাস করে সেন্টিনেলীরা। তথাকথিত সভ্য জগত থেকে সম্পূর্ণ বিচ্ছিন্ন, এরা পৃথিবীর এক প্রাচীন জনগোষ্ঠী।অদ্ভুত এদের আচার–আচরণ। দীর্ঘ ৬০০০০ বছরেরও বেশি সময় ধরে ওরা এই দ্বীপে বসবাস করছে। ওদের পূর্বপুরুষেরা নাকি এসেছিল আফ্রিকা থেকে। কিন্তু এই দীর্ঘ সময়কালে ওরা বিচ্ছিন্ন রয়েছে বহিঃপৃথিবী থেকে। মাত্র ৭২ বর্গ কিলোমিটার আয়তনের দ্বীপ ভূমিটি নিয়েই ওদের জগত।এর বাইরে ওরা কোথাও যেতে চায় না। চায়না কেউ ওদের ভূখণ্ডে পা রাখুক। তাতে রক্তপাতেও পিছপা নয়। দূর থেকে প্রয়োজনীয় নজরদারি ছাড়া প্রশাসনও ওদের কোন বিষয়ে কোন হস্তক্ষেপ করে না।নিজেদেরকে বিচ্ছিন্ন রাখবার জন্য লাগাতার প্রয়াস গোটা পৃথিবী কে সেন্টিনেলীদের প্রতি আগ্রহী করে তুলেছে। কিন্তু সংযোগ এবং তথ্যের অভাবে আধুনিক পৃথিবী ওদের বিষয়ে খুব কমই জানতে পেরেছে। তাই এখনও অনেকটাই রহস্যে মোড়া সেন্টিনেলীদের জীবনযাত্রা।
শুধু সেন্টিনেল নয়, অনেক মিথ, অনেক কাহিনী ছড়িয়ে আন্দামানের বিভিন্ন উপজাতিদের নিয়ে। পুরনো কিছু আরবী ও পারসিক নথিপত্র এবং বিখ্যাত ভূপর্যটক মার্কো পোলোর বিবরণেও এদের উল্লেখ পাওয়া যায়। ‘ জার্নাল অফ হিউম্যান জেনেটিক্স’ – এর তথ্য অনুযায়ী, আন্দামান দ্বীপপুঞ্জে বাস করে ‘নেগ্রিটো’ জনগোষ্ঠীর অন্তর্গত গ্রেট আন্দামানিজ, ওঙ্গি, জারোয়া ও সেন্টিনেলী উপজাতিরা। আর নিকোবর দ্বীপপুঞ্জে বাস করে মঙ্গোলয়েড গোষ্টীর অন্তর্গত শোম্পেন ও নিকোবরিজ উপজাতিরা। সেন্টিনেলী ছাড়া বাকিদের সম্পর্কে অনেক তথ্য গবেষকরা ইতিমধ্যেই জানতে পেরেছেন। কিন্তু সেন্টিনেলীই হল পৃথিবীর একমাত্র ‘শিকারী ও খাদ্য সংগ্রহকারী’ প্রাচীন জনগোষ্ঠী, যারা এখনো পর্যন্ত বাইরের জগত থেকে সম্পূর্ণ বিচ্ছিন্নতা বজায় রেখে চলেছে। বিখ্যাত স্মিথসোনিয়ান ম্যাগাজিন বলছে, “The island’s population, unique genetically, linguistically and culturally, isolated for millennia, is notably unfriendly to outsiders…
অবশ্য আন্দামান নিকোবর দ্বীপপুঞ্জের ভৌগলিক চরিত্রেই একটু বিচ্ছিন্নতা যেন রয়ে গেছে। এখানকার মোট ৫৭২ টি দ্বীপের মধ্যে মাত্র ৩৭ টিতে মানুষ বাস করে। দুর্গম দ্বীপগুলির বেশিরভাগই জনশূন্য। আন্দামানের রাজধানী পোর্টব্লেয়ার থেকে প্রায় ৫০ কিলোমিটার পশ্চিমে ঘন সবুজ বনে ঢাকা সেন্টিনেলীদের প্রায় বর্গাকার দ্বীপটি। চমৎকার দেখতে। অনেকটা যেন সেই, ‘ নীলের কোলে শ্যামল সে দ্বীপ প্রবাল দিয়ে ঘেরা’… । চারপাশে দিগন্ত বিস্তৃত সবুজাভ নীল সাগরের স্ফটিক স্বচ্ছ জল ও সাদা প্রবাল প্রাচীর পেরিয়ে দ্বীপের সংকীর্ণ সৈকত ভূমি। সাদা বালির স্তর ধীরে ধীরে পাড়ের দিকে উঠে গেছে। কোথাও কোথাও প্রায় ৬৬ ফুট উঁচু পর্যন্ত। এখান থেকে শুরু ঘন বন। এই সবুজ বন ধীরে ধীরে আরো গভীর হয়ে পৌঁছেছে দ্বীপের কেন্দ্রীয় অংশটিতে, প্রায় ৪০০ ফুট উচ্চতায়…। আলো–আধাঁরি ঘেরা, গা ছমছমে এই দুর্গম দ্বীপটিকেই হাজার হাজার বছর ধরে বুকে করে আগলে রেখেছে এখানকার ভূমিপুত্র সেন্টিনেলীরা। বহিরাগত কেউ এখানে কখনো প্রবেশের চেষ্টা করলে বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই হিংস্রভাবে আক্রমণ করা হয়েছে। ঝাঁকে ঝাঁকে ছুটে এসেছে বিষ মাখানো তীর, বর্ষা…।
একেবারে নিজেদের মধ্যে গুটিয়ে থাকা এই সেন্টিনেলীদের অস্তিত্ব সম্পর্কে প্রথম স্পষ্টভাবে জানা যায় ১৭৭১ সালে। তখনকার ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির একটি জলযান একদিন নির্জন এই দ্বীপটির পাশ দিয়ে যাওয়ার সময় কিছু অজানা মানুষকে সৈকত ভূমির উপর দেখতে পায়। এরপর শুরু হয় ওদের সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা…… বন্ধুত্বের চেষ্টা। একের পর এক অভিযান চলে। উপহারস্বরূপ এগিয়ে দেওয়া হয় কলার কাঁদি, নারকে্ল, হাঁড়িকুড়ি পা বাঁধা জ্যান্ত শুয়োর ইত্যাদি। কিন্তু এইসব উপহারের কিছু কিছু কখনো গ্রহণ করলেও সার্বিকভাবে ওরা অভিযানকারীদের সঙ্গে অ-মিত্র সুলভ, মারমুখী আচরণই করে। একে একে ব্যর্থ হয় ভারতীয় নৃতত্ত্ববিদ, ন্যাশনাল জিওগ্রাফিক ইত্যাদিদের পরিচালনায় যাবতীয় সব অভিযান।
তবে বিখ্যাত ভারতীয় নৃতত্ত্ববিদ টি এস পন্ডিত এবং মধুমালা চট্টোপাধ্যায় যথাক্রমে ১৯৬৭ এবং ১৯৯১ সালে ওদের সঙ্গে যোগাযোগের ক্ষেত্রে কিছুটা সফল হয়েছিলেন…। কিন্তু এরপর শুধুই হিংস্র আক্রমণ।
যেমন ২০০৪ সালে প্রলয়ংকর সেই সুনামির পর, খোঁজ খবর করতে দ্বীপে আসা সরকারি পর্যবেক্ষক দলের হেলিকপ্টারের দিকে তীর বর্ষণ, ২০০৬ সালে দ্বীপে ঢুকে পড়া দুই মৎস্যজীবীকে নিষ্ঠুর ভাবে হত্যা এবং সর্বশেষ ২০১৮ সালে সৈকত ভূমিতে পা রাখা এক আমেরিকান পর্যটককে নির্দয়ভাবে মেরে ফেলা। অনেকে বলেন, বাইরের মানুষদের প্রতি এই আক্রমনাত্মক মনোভাবের কারণ নাকি আলাদা। ১৮৮০ সালে ব্রিটিশরা এক সেন্টিনেল দম্পতি ও চার শিশুকে ধরে নিয়ে আসে তাদের দ্বীপ থেকে। কিন্তু তথাকথিত সভ্য জগতের সঙ্গে মানিয়ে নিতে না পেরে দুই প্রাপ্তবয়স্ক সেন্টিনেলী কিছুদিনের মধ্যেই মারা যায়। এরপর চারটি শিশুকে আবার তাদের দ্বীপে ছেড়ে দিয়ে আসা হয়। কিন্তু এই মর্মান্তিক ঘটনার প্রতিক্রিয়ায় বাইরের জগতের প্রতি সেন্টিনেলীদের ভয়, অবিশ্বাস আর বিতৃষ্ণা ক্রমশই নাকি তীব্র হয়েছে।
কিন্তু এত রাগী ও আক্রমণাত্মক যে সেন্টিনেলীরা, তারা দেখতে ঠিক কেমন? কেমন তাদের সাজসজ্জা ও জীবন যাত্রা? যতটুকু জানা গেছে, ওরা লম্বায় সাড়ে পাঁচ ফুটের মতো হয়। মাথায় ছোট ছোট চুল আর কাল কুচকুচে গায়ের রং। কিন্তু বেশ পেটানো, পেশীবহুল,স্বাস্থ্যোজ্জ্বল সুন্দর চেহারা। গোটা গায়ে কখনো লাল রং মাখানো। কোমর, গলা ও মাথায় গাছের তন্তু ও লতা পাতার সংক্ষিপ্ত সজ্জা আর মুখে হলুদ পেস্ট…। সব সময় যেন এক গর্বিত ভাব। পুরুষদের হাতে বেশিরভাগ সময় ছুরি, গাঁইতির মতো এক ধরনের অস্ত্র বা তীর ধনুক। কখনো কখনো দ্বীপের এখানে ওখানে একসঙ্গে ঘুরে বেড়ায় কিছু প্রাপ্তবয়স্ক সেন্টিনেলী ও বাচ্চার দল। বিচ্ছিন্ন দ্বীপটিতে এরা মূলত শিকার এবং ঘুরে ঘুরে নানারকম খাদ্য সংগ্রহের মাধ্যমে জীবন ধারণ করে। যে কারণে, ন্যাশনাল জিওগ্রাফিক এদেরকে, ‘One of the planet’s most isolated hunter – gatherer societies’ বলে উল্লেখ করেছে। দ্বীপের গভীর বনভূমি থেকে বুনো শুয়োর ও বিভিন্ন পাখি এবং উপকূলের অগভীর সমুদ্র থেকে তীর ধনুক দিয়ে মাছ শিকার করে। বন থেকে সংগ্রহ করে বিভিন্ন ফল, মূল, মধু এবং সৈকত ভূমি থেকে সংগ্রহ করে সিগাল পাখি ও কচ্ছপের ডিম। দ্বীপের মধ্যে ও দ্বীপ সংলগ্ন জলাভূমিতে এরা শালতির মত এক ধরনের জলযানে চেপে শিকারের সন্ধানে বের হয়। তুখোড় ধনুর্ধর হয় এরা। যাই হোক, এদের থাকার জায়গাগুলি কিন্তু বেশ অদ্ভুত। নানারকম উপকরণ দিয়ে তৈরী হয় কুঁড়ে ঘরের মত টানা লম্বা থাকার জায়গা…। অনেক ক্ষেত্রে সেগুলির মধ্যে আবার দেওয়াল নেই, কিন্তু ছাউনি আছে। দেওয়াল বিহীন অস্থায়ী এই ঘরগুলি সাধারণভাবে সৈকত ভূমির উপর বা সংলগ্ন জায়গায় তৈরি করা হয়। এদের পারিবারিক বা সামাজিক জীবন সম্বন্ধে অবশ্য বিস্তারিত প্রায় কিছুই জানা যায়নি। অন্যদিকে, অনেকে অনুমান করে্ এরা এখনো আগুনের ব্যবহার জানে না। যদিও অনেকে আবার বলেন যে এরা আগুনের ব্যবহার জানে। মানে কখনো বজ্রবিদ্যুতের আগুন থেকে কোন ভাবে জ্বলন্ত অঙ্গার পেলে এরা নাকি সেটাকে কাজে লাগায় …। যাই হোক এরা জানেনা চাষবাস করতেও। এমনকি ভালোভাবে জানেনা ধাতুর ব্যবহারও। তবে দ্বীপের কাছে ভেসে আসা পরিত্যক্ত জলযান থেকে এরা লোহার ব্যবহার কিছুটা শিখেছে। আদতে সেন্টিনেলীরা সেই প্রস্তর যুগের বলে মনে করা হলেও সব মিলিয়ে ওদের জীবন যাত্রা সেই আদিম যুগেই পড়ে আছে,এমনটা কিন্তু নয়। আসলে সময়ের সঙ্গে তাল মিলিয়ে ওরাও এগিয়েছে… তবে ওদের মতো করে। প্রসঙ্গত, আন্দামানের আরেক উপজাতি ওঙ্গীদের সঙ্গে এদের কিছুটা সাদৃশ্য দেখা গেলেও সেন্টিনেলীদের ভাষা ওঙ্গীরাও আজ বুঝতে পারে না। তাই মনে করা হয়, একই ‘নেগ্রিটো’ গোত্রের জনগোষ্ঠী হলেও সেন্টিনেলী ও ওঙ্গীদের মধ্যে বিচ্ছিন্নকরণ বহু আগেই হয়ে গেছে। তাই এখন সেন্টিনেলীদের সঙ্গে সংযোগ স্থাপনের ক্ষেত্রে বা ওদের বিষয়ে জানার ক্ষেত্রে প্রতিবেশী ওঙ্গীদের সহযোগিতা পাওয়াও আর সম্ভব নয়।
তবে বিজ্ঞানীরা বলছেন, তার প্রয়োজনও নেই। কারণ, বহির্জগত থেকে সম্পূর্ণ বিচ্ছিন্ন হয়ে, হাজার হাজার বছর ধরে বিশুদ্ধ প্রকৃতির মধ্যে থাকতে থাকতে ওরা একেবারে অভ্যস্ত হয়ে গেছে। শিখে গেছে মুক্ত প্রকৃতির মাঝে কিভাবে একা একা লড়াই করে বাঁচতে হয়। কারোর কোন সাহায্য ছাড়াই। এমনকি অতি ভয়ংকর সুনামিও হয়তো প্রকৃতির এই সন্তানদের আগাম কোন সতর্কবার্তা দিয়ে থাকবে। ২০০৪ সালের সেই মহাপ্রলয়ের পরেও তারা দিব্যি টিঁকে আছে। টিঁকে আছে যুগ যুগ ধরে, কোনো অ্যান্টিবায়োটিক, টিকা ইত্যাদি ছাড়াই। কিন্তু বিপদের আশঙ্কাও বোধহয় এখানেই। একবার কোনোক্রমে বহির্জগতের কোন জীবাণু বা ভাইরাসের সংস্পর্শে আসলে, ওরা কিন্তু ওই অজানা শত্রুর বিরুদ্ধে কোনো লড়াই দিতে পারবে না। আবার অন্য দিকে, খুব ছোট একটা গোষ্ঠীর মধ্যে ওদের সামাজিক জীবন সীমাবদ্ধ বলে এমনিতেই কিন্তু ওরা জিন ঘটিত নানা রোগ বহন করতে পারে। তবে ঘটনা যাই হোক, পর্যবেক্ষণ বলছে সংখ্যায় কিন্তু ক্রমশ কমে যাচ্ছে সেন্টিনেলীরা।২০১১ সালের জনগণনায়, ওদের সংখ্যাটা এসে ঠেকেছে মাত্র ৫০ বা তার আশপাশে। কিন্তু কেন? শুধু রোগের আশঙ্কা নয়, ২০০৪ সালের সেই বিধ্বংসী সুনামির ভয়ঙ্কর ধ্বংসলীলা ও ওলটপালোটের পর, দ্বীপভূমিতে খাদ্যের জোগানে ক্রমশ টান পড়ছে কিনা সেটাও একটা বড় প্রশ্ন হয়ে দেখা দিচ্ছে। যাই হোক, সেন্টিনেলীদের অস্তিত্ব কিন্তু আজ বেশ সংকটের মুখে। বর্তমানে এরা লুপ্তপ্রায় এক বিরল জনজাতি।অথচ, পৃথিবীতে আদিকাল থেকে এখনো পর্যন্ত মানব ইতিহাসের একমাত্র বিশুদ্ধ যোগসূত্রটি হয়তো এই বিচ্ছিন্ন, ক্রমহ্রাসমান সেন্টিনেলীরাই বহন করছে! তাই ওদের একমাত্র আস্তানা উত্তর সেন্টিনেল দ্বীপের চারপাশে পাঁচ কিলোমিটারের মধ্যে কারোর প্রবেশ নিষিদ্ধ করেছে ভারত সরকার। বিজ্ঞানীরাও চাইছেন, বিচ্ছিন্ন হয়েই টিঁকে থাকুক ওরা—’the only uncontacted tribe in the world inhabiting in their own island…’। রহস্যে মোড়াই থাকুক না হয় ওদের জীবনযাত্রা। সবুজ দ্বীপের গর্বিত সেনানীরা এমন আনন্দেই থাকুক না হয় সবার চোখের আড়ালে… নির্বিবাদে… আরো অনেক যুগ ধরে।।
সেন্টিনেলীদের সঙ্গে সাক্ষাতের ঘটনাক্রম – একনজরে
সাল | কি ঘটেছিল |
১৭৭১ | ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানীর একটি জাহাজ একদিন নির্জন এই দ্বীপটির পাশ দিয়ে যাওয়ার সময় কিছু অজানা মানুষকে সৈকত ভূমির উপর দেখতে পায়…। এভাবেই সেন্টিনেলীদের অস্তিত্ব সম্পর্কে প্রথম জানতে পারে পৃথিবীর মানুষ। |
১৮৬৭ | একটি ভারতীয় বাণিজ্য জাহাজ দ্বীপের পাশ দিয়ে যাচ্ছিল। দ্বীপের কাছাকাছি পৌঁছতেই সেন্টিনেলীরা আক্রমণ চালায়। |
১৮৮০ | ব্রিটিশ নৃতত্ত্ববিদ এম ভি পোর্টম্যানের নেতৃত্বে একটি সম্পর্ক অভিযান পরিচালিত হয়। ব্রিটিশরা এক সেন্টিনেল দম্পতি ও চার শিশুকে ধরে নিয়ে আসে তাদের দ্বীপ থেকে। কিন্তু তথাকথিত সভ্য জগতের সঙ্গে মানিয়ে নিতে না পেরে দুই প্রাপ্তবয়স্ক সেন্টিনেলী কিছুদিনের মধ্যেই মারা যায়। এরপর চারটি শিশুকে আবার তাদের দ্বীপে ছেড়ে দিয়ে আসা হয়। |
১৯৬৭ | ভারতীয় নৃতত্ত্ববিদদের পরিচালনায় একটি সম্পর্ক অভিযান চলে। সেন্টিনেলীদের সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা কিছুটা সফল হয়। |
১৯৭৫ | মূলত তথ্যচিত্র তৈরীর জন্য ন্যাশনাল জিওগ্রাফিকের একটি অভিযান হয়। কিন্তু সেন্টিনেলীদের ছোঁড়া বর্ষার ঘায়ে এক চিত্র সাংবাদিক গুরুতর জখম হলে অভিযানও পরিত্যক্ত হয়। |
১৯৮১ | হংকং এর একটি জাহাজ যাচ্ছিল দ্বীপের পাশ দিয়ে। দ্বীপের কাছাকাছি আসতেই জাহাজের ওপর হামলা চালানো হয়। |
১৯৯১ | ভারতীয় নৃতত্ত্ববিদদের পরিচালনায় আবারও একটি সম্পর্ক অভিযান হয়। এবারে যোগাযোগের চেষ্টা কিন্তু বেশ কিছুটা সফল হয়। |
২০০৪ | বিধ্বংসী সুনামির পর, ভারত সরকার প্রেরিত ত্রাণ ও উদ্ধারকারী দলের একটি অভিযান হয় দ্বীপভূমিতে।কিন্তু হেলিকপ্টার দেখেই সেদিকে তীর বর্ষণ শুরু হয়। পর্যবেক্ষণ অসম্পূর্ন রেখে ফিরে আসতে বাধ্য হয় দলটি। |
২০০৬ | মাছ, কচ্ছপ ও লবস্টার সংগ্রহের জন্য দুই মৎস্যজীবী দ্বীপে যান। কিন্তু সেন্টিনেলীদের ছোঁড়া তীরে দুই মৎস্যজীবীরই মৃত্যু হয়। |
২০১৮ | জন অ্যালেন চাও নামে এক মার্কিন পর্যটক বেপরোয়া ভাবে প্রবেশ করেন দ্বীপভুমিতে। কিন্তু সেন্টিনেলীদের আক্রমণে নিহত হন। |
এছাড়াও সাম্প্রতিক অতীতে কিছু অত্যুৎসাহী মানুষ সরকারি নিষেধাজ্ঞা অমান্য করে, গোপনে দ্বীপে যেতে চেষ্টা চালায় অন্তত ৪৪ বার! কিছুদিন হলো এইসব বেআইনি প্রচেষ্টা অবশ্য সম্পূর্ণ বন্ধ করা হয়েছে ।। |
ডঃ স্বয়ংদীপ্ত বাগ:
ভূগোল নিয়ে গবেষণা, পেশায় শিক্ষক। কিন্তু প্যাশন ভ্রমণ ,সাহিত্য ও সংগীত চর্চায় ( সেতার)। বিভিন্ন সংবাদপত্র ও পত্রিকায় নিয়মিত লেখক ।লেখালেখির প্রয়াস সীমাবদ্ধ মূলতঃ প্রবন্ধ ও কবিতায় প্রকাশিত বইয়ের সংখ্যা দুই। এছাড়া বিভিন্ন সময়ে আকাশবাণী, দূরদর্শন সহ বিভিন্ন ইলেকট্রনিক মিডিয়ার অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণ ।।
চমৎকার একটি গবেষণাধর্মী প্রবন্ধ ! পড়তে পড়তে ভাবছিলাম কোন নৃতত্ববিদের লেখা। পরে দেখলাম, এটি এক ভূগোল গবেষকের লেখা ! ভাবাই যায় না !! আমার দাদা নৃতত্বের অধ্যাপক ছিলেন বলে তাঁর সংস্পর্শে আমারও নৃতত্ত্বের প্রতি ভালবাসা আছে। তার ওপর, অনেক অনেকবছর পোর্ট ব্লেয়ারে কাটানোর সূত্রে ওখানকার ওঙ্গে, জারোয়া, সেন্টিনেল দের সম্পর্কেও কিছু কিছু তথ্য জানা ছিল। তাই, লেখকের এই বহু যত্নে, বহু আকর গ্রন্থ ও রচনার থেকে চয়ন করা তথ্যবহুল এই লেখাটি পড়ে মুগ্ধ হ’লাম। লেখক কে আন্তরিক অভিনন্দন !!!
No word to express my gratitude Mr Asis Kumar Sarkar. Thank you so much. Regards, Swayamdipta Bag
খুব খুব সুন্দর তথ্য সমৃদ্ধ একটা লেখা। প্রবন্ধটা পড়ে সেন্টিনেলীদের সম্মন্ধে অনেক কিছু জানলাম। আমার অনেকদিন থেকেই ভারত মাতার এই অদ্ভুত রহস্যময় সন্তানদের সম্মন্ধে জানার ইচ্ছা ছিলো। আপনার এই বহুমূল্য প্রবন্ধ সেই আকাঙ্খা অনেকাংশে নিবারণ হয়েছে। এমন সুন্দর একটা লেখা উপহার দেওয়ার জন্য আপনাকে অনেক অনেক ধন্যবাদ।
Really overwhelmed…Thank you so much.