স্বাধীন রাজা প্রতাপাদিত্য
প্রসেনজিৎ বন্দ্যোপাধ্যায়
প্রতাপাদিত্য সম্পর্কে একটু আলাদাভাবে না বললে যশোরের ইতিহাসের একটা গৌরবময় অংশই না বলা থেকে যাবে। কারণ মোঘল আমলে যশোরে ইনিই প্রধান ব্যক্তি। অনেকে বলে থাকেন প্রাচীন গৌড় রাজ্যের যশ হরণ করে ‘যশোহর’ হয়েছিল। তৎকালীন সময় যশোরের ইতিহাস তাই প্রতাপাদিত্যের ইতিহাস। প্রতাপাদিত্যের রাজত্বকাল মাত্র ২৫ বছরের হলেও আজ পর্যন্ত তার গৌরবগাঁথা যশোর খুলনা অঞ্চলে বিদ্যমান।
বিক্রমাদিত্য পুত্র প্রতাপাদিত্যের রাজধানী কোথায় ছিলো, তা নিয়ে প্রচলিত ৫ টি মত রয়েছে।
১) সতীশচন্দ্র মিত্রের মতে, প্রতাপাদিত্যের রাজধানী ধুমঘাটের উত্তরাংশ ছিল; কিন্তু বিক্রমাদিত্যের রাজধানী কোথায় ছিল, তা ঠিক নাই। বেভারিজসহ পাশ্চাত্য লেখকরা এই মতাবলম্বী।
২) বিক্রমাদিত্যের রাজধানী ধুমঘাটের উত্তরাংশে ছিল এবং প্রতাপের রাজধানী আধুনিক ধুমঘাটের দক্ষিণভাগে অবস্থিত, কিন্তু সে স্থান তখনও ঘোর জঙ্গলাকীর্ণ ছিল। সাধারণ শিক্ষিত সম্প্রদায় এই মতাবলম্বী।
৩) বিক্রামাদিত্যের রাজধানী উক্ত উত্তরাংশে বা ঈশ্বরীপুর অঞ্চলে ছিল; কিন্তু প্রতাপাদিত্যের রাজধানী ছিল গঙ্গার মোহনায় সাগরদ্বীপ। এই দ্বীপের অন্য নাম চ্যান্ডিকান দ্বীপ। নিখিল নাথ রায় মহোদয় এই মতের প্রবর্তক।
৪) বিক্রমাদিত্যের রাজধানী তেরকাটিতে বা ১৬৯ নং লটে ছিল; যা তখনও ঘোর অরণ্য মধ্যে অবস্থিত ছিল। প্রতাপের নতুন রাজধানী ঈশ্বরীপুরের কাছে ছিল। কেউ বা বলেন, পুরাতন রাজধানী ঈশ্বরীপুরে এবং নতুন রাজধানী তেরকাটিতে ছিল। তেরকাটির বাসিন্দারা অনেকেই একথা বিশ্বাস করেন।
৫) প্রাচীন রাজধানী মুকুন্দপুর অঞ্চলে এবং নতুন বা ধুমঘাট দূর্গ ঈশ্বরীপুরের সন্নিকটে অবস্থিত।
এই ৫টি মতের মধ্যে শেষোক্ত মতটি সতীশচন্দ্র মিত্র সঠিক বলে ধারণা করেন। ধুমঘাটে বা ঈশ্বরীপুর অঞ্চলে প্রতাপাদিত্যের রাজধানী ছিল। এখন যে স্থানকে মুকুন্দপুর বলে, সেখানেই প্রথম বিক্রমাদিত্যের রাজধানী প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল। তার নাম ছিল– যশোহর। পরে প্রতাপের ধুমঘাট রাজধানী সমৃদ্ধিশালিনী হলে, তারও নাম হয়–যশোহর। ক্রমে কীর্তিমন্ডিত এই উভয় রাজধানী পরস্পর মিশে গিয়েছিল এবং আট দশ মাইল নিয়ে সমস্ত স্থানটাই ‘যশোহর’-এই সাধারণ নামে পরিচিত হল। নতুবা যশোহর নামে কোন চিহ্নিত গ্রাম নাই।
১৫৮৭ সালে প্রতাপাদিত্য ঈশ্বরীপুরের কাছে তার নতুন রাজধানী প্রতিষ্ঠা করলেন ও যশোরেশ্বরী দেবীর মন্দির পুনঃপ্রতিষ্ঠা করলেন। সেখানেই তিনি ধুমঘাট দূর্গ ও রাজপ্রাসাদ নির্মাণ করেন। বিক্রমাদিত্যের বন্ধু বসন্তরায়ের উদ্যোগে মহাসমরোহে নতুন রাজধানীতে প্রতাপাদিত্যকে অভিষেক প্রদান করা হয়। রাজ্যাভিষেকের সময় বার ভূঁইয়াদের অনেকে যশোরে এসেছিলেন এবং প্রতাপাদিত্যর কাছে বঙ্গের স্বাধীনতা অক্ষুন্ন রাখার জন্য একত্রে কাজ করার প্রতিশ্রুতি করেছিলেন। প্রতাপাদিত্য দেখছিলেন যে, সম্রাট আকবর আগ্রার রাজদরবার, রাজনীতি ও রাজপরিবারের আত্মকলহ এসব বিষয়ে ব্যস্ত রয়েছেন এবং এর ফলে সমগ্র ভারতবর্ষে বিদ্রোহ দানা বেঁধে উঠেছে। এই সুযোগে প্রতাপাদিত্যও সৈন্যগঠন ও সীমান্ত রক্ষার জন্য সৈন্যবাহিনীকে প্রস্তুত করতে শুরু করলেন। প্রধানতঃ যেসকল কারনে (সতীশচন্দ্র মিত্রের মতে) তিনি যুদ্ধ প্রস্ত্ততি নিয়েছিলেন, তা হলো–
১।আত্মরক্ষা ও আত্মপ্রাধান্য স্থাপন করা।
২।পাঠানদের পক্ষ সমর্থন করা, যারা মোঘলদের নিকট পরাজিত হয়েছিলেন।
৩।বঙ্গদেশে হিন্দু শক্তির পুনঃপ্রতিষ্ঠা।
৪।শুধু মোঘলদের নয়, মগ ও ফিরিঙ্গি দস্যুদের পাশবিক নির্যাতন থেকে তাঁর রাজ্যের মানুষকে রক্ষা করা।
প্রতাপ ধীরে ধীরে তার নতুন রাজধানী গুছিয়ে নিতে লাগলেন এবং তৎকালীন বঙ্গের অন্যান্য ভূঁইয়াদের সাথে আলাপ করতে লাগলেন যে কিভাবে তারা একত্রিত হয়ে মোঘলদের দেশ থেকে বিতাড়িত করতে পারেন। ভূঁইয়াদের মধ্যে কেউ কেউ প্রতাপের এই বিদ্রোহী চেতনার প্রতি একাত্মতা প্রকাশ করলেও অনেকেই দূরত্ব বজায় রাখলেন। এমনকি প্রতাপের একান্ত সহকর্মী হিসেবে পরিচিত বিক্রমাদিত্যের বন্ধু বসন্ত রায়ও এই বিদ্রোহে যোগদান করলেন না। তিনি জানতেন, প্রতাপ ও তার দু’একজন মিত্রের মনে যে স্বাধীনতার চেতনার বিকাশ ঘটেছে, তা সমগ্র দেশ না জাগলে বিফলে যাবে। তিনি প্রতাপকে এ বিষয়টি বোঝাতে ব্যর্থ হলেন। প্রতাপ তার উপর মনঃক্ষুন্নও হয়েছিলেন। বসন্ত রায় গঙ্গাতীরের রায়গড় দূর্গে স্থানান্তরিত হন এবং যশোরের ৬ আনা অংশের শাসনকার্য করতে থাকেন। এদিকে প্রতাপ ১৫৯৯ সালে মোঘলদের বশ্যতা অস্বীকার করে যশোরের স্বাধীনতা ঘোষণা করেন এবং এই স্বাধীনতা ঘোষণার কিছু বৎসর আগে প্রতাপাদিত্য তার পিতৃতুল্য বসন্ত রায়কে আনুমানিক ১৫৯৪–৯৫ সালের দিকে হত্যা করে তার নিজ চরিত্রে অমোচনীয় কলঙ্ক লেপন করেন।
কথিত আছে প্রতাপাদিত্য সেসময় নিজ নামে মুদ্রার প্রচলন করেছিলেন। স্বাধীনতা ঘোষণার পর প্রতাপাদিত্যের নিজ শাসিত রাজ্যেও বহু বিস্তৃত হয়ে পড়েছিলো। ১৬০০ খ্রিঃ প্রতাপের ক্ষমতা ও খ্যাতি পুরো ভারতবর্ষেই ছড়িয়ে পড়েছিল। কবিবর রায়গুণাকর ভারতচন্দ্র তাই লিখেছিলেন–
‘যশোর নগর ধাম প্রতাপ আদিত্য নাম
মহারাজা বঙ্গজ কায়স্থ
নাহি মানে পাতশায়, কেহ নাহি আটে তায়
ভয়ে যত ভূপতি দ্বারস্থ।
বরপুত্র ভবানীর প্রিয়তম পৃথিবীর
বায়ান্ন হাজার যার পল্লী,
ষোড়শ হলকা হাতি অযুত তুরঙ্গ সাতি
যুদ্ধকালে সেনাপতি কালী।।’
সে সময় সকলে বিশ্বাস করতো যে দৈববল ছাড়া কেউ এমন বলশালী হতে পারে না। ১৬০০ খ্রিস্টাব্দে মানসিংহ কাশী থেকে রাজমহলে এলেন এবং বঙ্গদেশকে প্রকৃতভাবে মোঘলদের করতলে নিয়ে আনার জন্য সর্বরকম আয়োজন শুরু করেন। প্রায় ২৫ বছর পাঠানরা বঙ্গে পরাজিত হলেও প্রতাপাদিত্য ও অন্যান্য ভূঁইয়াগণের কারণে সেই পরাজয়ে মোঘলদের কোন লাভ হয়নি। তাই আকবর তার সর্বপ্রধান সেনাপতিকে সবরকম সহযোগিতা দিয়ে পুনরায় বঙ্গে প্রেরণ করেন। ১৬০৩ খ্রিস্টাব্দে তিনি বিশাল সৈন্যবহর নিয়ে যশোর অভিমুখে যাত্রা করেন। মানসিংহের এ যাত্রা সম্পর্কে রায়গুণাকর ভারতচন্দ্র বলেন
‘আগে পাছে দুই পাশে দু’সারি লস্কর।
চললেন মানসিংহ যশোহর নগর।।
মজুন্দারে সঙ্গে নিলা ঘোড়া চড়াইয়া।
কাছে কাছে অশেষ বিশেষ জিজ্ঞাসিয়া।’
মানসিংহ কালিন্দী নদী পার হয়ে বসন্তপুরে ছাউনি করলেন এবং দেখলেন যে প্রতাপাদিত্য তার চারিদিকে সৈন্য সাজিয়ে যুদ্ধের সমস্ত আয়োজন করে রেখেছেন। বসন্তপুর ও শীতলপুরের পূর্বভাগে এ যুদ্ধ সংঘটিত হয়েছিলো। অগনিত দিন ধরে এ যুদ্ধ সংঘটিত হলো এবং মানসিংহ বিজয়ী হয়ে প্রতাপাদিত্যকে বন্দি করেছিলেন। মানসিংহ প্রতাপকে চিনতেন এবং অত্যন্ত ভালোবাসতেন। উড়িষ্যাভিযানে প্রতাপের বীরত্বের কথা তার মনে ছিলো। তিনি যশোর যুদ্ধে বঙ্গীয় বীরের অসাধারণ সমর কৌশলে মুগ্ধ হয়েছিলেন। তিনি নিজে মহাবীর, তাই বীরত্বের মর্যাদা বুঝতেন। যুদ্ধ শেষে জয়লাভ করলেও তিনি প্রতাপাদিত্যর সঙ্গে সন্ধি করেছিলেন। প্রতাপাদিত্য যশোর রাজ্যের ১০ আনা অংশে (বাকী ৬ আনা বসন্তরায়ের ছেলে কচু রায়) মোঘলদের সামন্ত রাজা হিসেবে স্বীকৃতি পেলেন।
মানসিংহ স্বাধীনতার চিহ্ন ,পতাকা ও মুদ্রা বিলুপ্ত করবার আদেশ দিয়েছিলেন। মানসিংহের এই অভিযানের কিছু বছর পর ১৬০৯ খ্রিঃ আকবরের পুত্র সম্রাট জাহাঙ্গীর ইসলাম খাঁর নেতৃত্বে পুনরায় বঙ্গে সৈন্য প্রেরণ করেন। সুদীর্ঘ আঁকাবাঁকা নদীপথ পাড়ি দিয়ে মোঘল সৈন্যরা যশোর রাজ্যের সীমান্তে এসে পৌঁছলো। যমুনা ও ইছামতির সঙ্গমে প্রতাপ বাহিনীর সঙ্গে মোঘলদের পুনরায় সংঘর্ষ হয়। তাই প্রতাপের শেষ পতন ইসলাম খাঁর সময় মানসিংহের সময় নয়। প্রতাপাদিত্য মোঘলদের সমন্বিত আক্রমণ প্রতিহত না করতে পেরে আত্মসমর্পণ করেন। ইসলাম খাঁ প্রতাপকে শৃঙ্খলাবদ্ধ করে রাখলেন এবং যশোর প্রদেশকে মোঘল সম্রাজ্যের অন্তর্গত করে নিলেন। এবং যশোর রাজ্যের পতন হলো। শুরু হলো বাংলায় মোঘল যুগ।
তেজস্বিতা, ধর্মনিষ্ঠা ও স্বাধীনতা স্থাপনের চেষ্টা প্রতাপকে এ অঞ্চলের লোকদের নিকটই শুধু নয়, সমগ্র ভারতবর্ষের মানুষের কাছে অমর করে রাখলো। গুরুদেব রামদাস স্বামী তাই লিখেছেন-
“বলিলে যে বঙ্গদেশী প্রতাপের কথা, শুন গুরুত্ব তার। তেজোবীর্য্যগুণে প্রতাপ প্রস্ত্তত ছিলো স্বাধীনতা লাভে, কিন্তু তা’র জাতি, দেশ না ছিল প্রস্তুত; জ্ঞাতিবন্ধু বহু তা’র ছিল প্রতিকূল, তাই হল ব্যর্থ চেষ্টা। মূঢ় সেই নর, দেশ, কাল , পাত্র মনে না করি’ বিচার, একা যে ছুটিতে চায়; চরণস্খলনে নাহি রহে কেহ ধরি’ উঠাইতে তারে।।”
এছাড়াও আমরা স্যার জেমস ওয়েস্টল্যান্ডের প্রতিবেদন থেকে জানতে পারি যে, বিক্রমাদিত্যের এক ছেলে ছিল। যার নাম ছিল প্রতাপাদিত্য। তার সম্পর্কে বলা হতো তিনি ছিলেন পৃথিবীর সকল সুন্দর গুণের অধিকারী। প্রতাপাদিত্য তার পিতার মৃত্যুর পরে যশোরের সকল সম্পদের একমাত্র উত্তরসূরী হয়েছিলেন। তিনি ধুমঘাটে একটি শহরও প্রতিষ্ঠা করেছিলেন। তিনি তার প্রতিপত্তি বৃদ্ধি করেছিলেন সুন্দরবনের সীমানার পবনভূমি পর্যন্ত এবং ২৪ পরগনা জেলার নিকটবর্তী ইছামতি নদীর পূর্ব সীমা পর্যন্ত। ঐ সময় বাংলা ও বাংলার নীচু অংশ ১২ জন ভূপতিদের মাঝে ভাগ করা ছিল। এই ভূপতিদের বলা হতো বারভূঁইয়া। প্রতাপাদিত্য এই বার ভূঁইয়াদের মধ্যে সর্বাপেক্ষা সম্পদশালী ও প্রভাবশালী ছিলেন। এই বার ভূঁইয়াদের সকলেই খাজনা দিত এবং দিল্লীর সম্রাটের বশ্যতা স্বীকার করত। এই ১২ জন ভূপতিদের মধ্যে রাজা প্রতাপাদিত্য অগ্রাধিকার পে্তেন, তার প্রভাব ও প্রতিপত্তির কারণে। দিনে দিনে প্রতাপাদিত্য আরো ক্ষমতাশীল হয়ে উঠলে তিনি দিল্লীর সম্রাটকে খাজনা প্রদান করতে অস্বীকার করেন। আর সে সময়টাতে গোটা বাংলায় এক ধরণের বিশৃঙ্খলা ও বিবাদমান পরিস্থিতি বিদ্যমান ছিল।
দিল্লির সম্রাট আকবর অনেকবার সেনাবাহিনী পাঠিয়েছেন এই সকল বিদ্রোহ দমনের জন্য ,কিন্তু সুন্দরবন প্রতাপাদিত্যকে একটি ভালো অবস্থান দিয়েছিলো ,যার ফলে তিনি সহজেই সম্রাটের বিরোধিতা করতে পারতেন। তার এই বিদ্রোহ দীর্ঘ সময় পর্যন্ত চলেছিলো। তবে এই বিদ্রোহ কোন সাধারণ যুদ্ধের মত ছিল না। এই বিষয়ে মুসলিম ঐতিহাসিকগণের নীরবতা এটা প্রমাণ করে যে স্থানীয় বিরোধ মিটানোর জন্য আসলে সম্রাট খুব ছোট একটা সৈন্য দল পাঠিয়েছিলেন। চাঁচড়ার রাজপরিবারের নথি থেকে জানা যায়, খান আজিম নামে আকবরের একজন সেনাপতি প্রতাপাদিত্যের কিছু পরগনা দখলে নিতে পেরেছিলেন। যদিও প্রতাপাদিত্য সেই রাজশক্তিকে অনেকবার হারিয়েছিলেন কিন্তু এতে করে তার ক্ষমতা ও প্রভাবও অনেক কমে গিয়েছিলো। আকবর তার মহান সেনাপতি মানসিংহকে পাঠিয়েছিলেন এই অভিযানে। অনেক বাধাবিপত্তি উপেক্ষা করে, অনেক বনাঞ্চল ধ্বংস করে তিনি প্রতাপাদিত্যকে ধরতে সক্ষম হন। এরপর তিনি প্রতাপাদিত্যের সাথে একটি সন্ধিচুক্তি সম্পন্ন করেন। প্রতাপাদিত্য বাংলার সুবেদার ইসলাম খাঁ কর্তৃক ১৬০৯ সালে পরাজিত ও ধৃত হন। বন্দী অবস্থায় (কথিত আছে খঞ্জরাবদ্ধ অবস্থায়) দিল্লী প্রেরণকালে সম্ভবতঃ বারাণসীর সন্নিকটে প্রতাপাদিত্যের মৃত্যু হয়।।
তথ্যসূত্রঃ বাংলাদেশ জাতীয় তথ্য বাতায়ন
ফরিদপুর কাউলিপাড়ার শেষ জমিদার নন্দমোহন বন্দ্যোপাধ্যায়ের বংশের বর্তমান প্রজন্মের প্রতিনিধি প্রসেনজিৎ বন্দ্যোপাধ্যায়ের জন্ম ও নিবাস ইতিহাস প্রসিদ্ধ মুর্শিদাবাদ জেলার বহরমপুর শহরে। ১৯৬৫–তে তাঁর জন্ম হয় ভারতীয় উচ্চাঙ্গ সঙ্গীতের পরিবেশে এমন এক পরিবারে, যেখানে ভারতবিখ্যাত সঙ্গীতজ্ঞদের যাতায়াত ছিলো অবারিত। কৈশোরে কবিতা লেখা দিয়ে সাহিত্যানুরাগের হাতেখড়ি। পরবর্তীতে জেলার ইতিহাস নিয়ে গবেষণামূলক কাজে নিজেকে জড়িয়েছেন। বাড়িতে সঙ্গীতাবহে বড় হয়ে ওঠায় সঙ্গীতের প্রতি প্রসেনজিৎ যথেষ্ট অনুরক্ত। ব্যাঙ্ক কর্মচারীর গুরুদায়িত্ব সামলিয়েও তিনি ইতিহাস, সাহিত্য ও সঙ্গীতের প্রতি তাঁর অনুরাগ যে এতোটুকুও নষ্ট হতে দেননি, তার প্রমাণ তাঁর এই প্রবন্ধ।
খুবই সুন্দর গবেষণামূলক রচনা। তবে “যশোহর-গৌরব” প্রতাপাদিত্য সম্পর্কে রবীন্দ্রনাথের অভিমত ছিল সম্পূর্ণ বিপরীত। তাঁর ” বৌ-ঠাকুরানীর হাট” উপন্যাসের সূচনা তথা ভূমিকায় এবং উপন্যাসটিতে তিনি প্রতাপাদিত্যের চরিত্র কে বর্ননা করেছিলেন ” অন্যায়কারী, অত্যাচার, নিষ্ঠুর,… উদ্ধত, হঠকারী, একরোখা ” মানুষ হিসেবে। লিখেছিলেন, ” এই উপলক্ষ্যে একটা কথা বলা আবশ্য। স্বদেশী উদ্দীপনার আবেগে প্রতাপাদিত্যকে এক সময়ে বাংলাদেশের আদর্শ বীরচরিত্ররূপে খাড়া করবার চেষ্টা চলেছিল। এখনো তার নিবৃত্তি হয় নি। ….. ( তিনি যে সময়ে তাঁর তথ্য সংগ্রহ করেছিলেন) সে সময়কার ইতিহাস-লেখকদের উপরে পরবর্তীকালের দেশাভিমানের প্রভাব ছিল না। আমি যে সময়ে এই বই অসংকোচে লিখেছিলুম তখনো তাঁর পূজা প্রচলিত হয় নি “।
সমস্যা হ’ল, ঐতিহাসিকরা প্রায় সব সময়ে, সব দেশেই “একদেশদর্শীতায়” ভুগেছেন। নিরপেক্ষ সাংবাদিকের মতই নিরপেক্ষ ঐতিহাসিকও খুব বিরল !! তার একটা প্রধান কারণ, সম্ভবত, তাঁরা প্রায় সকলেই কোন না কোন রাজন্যবর্গের বা দেশ শাসকদের পৃষ্ঠপোষকতায় ইতিহাস লিখেছেন !