Shadow

দুর্গা পূজা বৃত্তান্ত – দুর্গার যত রূপ – বিজিত কুমার রায়

PC: Pinterest

দুর্গা পূজা বৃত্তান্তদুর্গার যত রূপ

বিজিত কুমার রায়

শাস্ত্রে আছে বিভিন্ন রকমের দুর্গাদেবীর কথা।

 সাধারণত সনাতনধর্মী বাঙালিরা দুর্গার যে মূর্তিটি শারদীয়া উৎসবে পূজা করে থাকেন, সেই মূর্তিটির শাস্ত্রসম্মত নাম মহিষাসুরমর্দিনীদুর্গা।

বিষ্ণুধর্মোত্তর পুরাণে মহিষাসুরমর্দিনীর একটু আলাদা রকমের বর্ণনা আমরা পাই। চণ্ডিকা নামে উল্লিখিত এই দুর্গার দশের জায়গায় কুড়িটি হাত।

 শ্রীশ্রীচণ্ডীতে অষ্টাদশভুজা মহালক্ষ্মীর কথা আছে, এর হাত তার থেকেও দুটি বেশি। ডান দিকের দশ হাতে থাকে শূল, খক্ষ, শঙ্খ, চক্র, বাণ, শক্তি, বজ্র, অভয়, ডমরু, ছাতা; আর বাঁদিকের দশ হাতে থাকে নাগপাশ, খেটক, পরশু, অঙ্কুশ, ধনুক, ঘণ্টা, পতাকা, গদা, আয়না মুগুর। দেবী কাত্যায়নীদুর্গার মূর্তিটিও দশভুজাদুর্গার অনুরূপ।

মিল অমিল

তবে বর্তমানে পরিচিত মহিষাসুরমর্দিনী তন্ত্রকথিত মহিষমর্দিনীর রূপে সামান্য পার্থক্য আছে। দেবী মহিষমর্দিনী অষ্টভুজা। এর ধ্যানে সিংহের উল্লেখ পাওয়া যায় না। দেবীকে মহিষের মাথার উপর বসে থাকতে দেখা যায়। হাতে থাকে শঙ্খ, চক্র, খক্ষ, খেটক, ধনুক, বাণ, শূল তর্জনীমুদ্রা। এর পূজার বিশেষ বৈশিষ্ট্য হলশঙ্খপাত্রে অর্ঘ্যস্থাপনের উপর নিষেধাজ্ঞা; মৃৎপাত্রে এই কাজটি করতে হয়। কুলাচারে পূজিতা দেবী জয়দুর্গার মূর্তিটি কিছুটা জগদ্ধাত্রী মূর্তির মতো। শুধু দেবীর চার হাতে থাকে শঙ্খ, চক্র, খক্ষ ত্রিশূল এবং দেবীর গায়ের রং কালীর মতো কালো। কপালে থাকে অর্ধচন্দ্র। সিংহের পদতলে হাতি অনুপস্থিত। কেউ কেউ মনে করেন, জয়দুর্গা কালী দুর্গার সম্মিলিত মূর্তি।

আরও যত দুর্গা

তন্ত্রে, পুরাণে আরও কয়েকজন দুর্গানামধারিণী দেবীর সন্ধান পাওয়া যায়। যেমনপঞ্চদুর্গা, নবদুর্গা, বনদুর্গা, অগ্নিদুর্গা, বিন্ধ্যবাসিনীদুর্গা, রিপুমারিদুর্গা, অপরাজিতাদুর্গা। শাস্ত্রে দুর্গার নয়টি নির্দিষ্ট মূর্তিকেনবদুর্গাবলে। এঁরা হলেনব্রহ্মাণী, কৌমারী, বৈষ্ণবী, নারসিংহী, বারাহী, ইন্দ্রাণী, চামুণ্ডা, কাত্যায়নী চণ্ডিকা। দুর্গাপূজার সময় দেবীদুর্গার আবরণদেবতা হিসেবে এঁদের পূজা করা হয়।

বনদুর্গার আট হাত। অস্ত্রশস্ত্র মহিষমর্দিনীর অনুরূপ। বিশেষ বৈশিষ্ট্য দেবীর গায়ের রঙে তিনি ঘাসের মতো সবুজ।

অগ্নিদুর্গাও অষ্টভুজা। তার আট হাতে থাকে খক্ষ, চক্র, খেটক, বাণ, পাশ, অঙ্কুশ, বরদা মুদ্রা তর্জনী মুদ্রা। দেবী সিংহবাহিনী, ভীষণা এবং কপালে অর্ধচন্দ্রধারিণী। দুই পাশে ঢালতলোয়ার ধরে থাকেন দেবীর দুই সহচরী।

বিন্ধ্যবাসিনীদুর্গা পদ্মাসনা, ত্রিনয়না চতুর্ভুজা। তার চার হাতে থাকে শঙ্খ, চক্র, বর অভয় মুদ্রা। তারও কপালে অর্ধচন্দ্র। সালঙ্কারা এই দেবীকে ঘিরে স্তব করেন ইন্দ্রাদি দেবতারা। দেবীর বাহন সিংহ পাশে দাঁড়িয়ে থাকে।

রিপুমারিদুর্গা আবার দ্বিভুজা। তার দুই হাতে থাকে ত্রিশূল তর্জনী মুদ্রা।

এছাড়া, অপরাজিতাদুর্গার পূজা বিজয়াদশমীর দিন বিসর্জনান্তে কুলাচার অনুসারে হয়ে থাকে। এই দেবী সিংহবাহিনী ত্রিনয়না। তার চার হাতে থাকে পিনাক, বাণ, খক্ষ খেটক। তার মাথায় জটাজুট অর্ধচন্দ্র; কোমরে বাসুকি নাগের বেল্ট। 

তন্ত্রে দুর্গার যে দুটি রূপ বর্ণিত সে দুটি দেবী জগদ্ধাত্রীর রূপ। তার একটিতে অবশ্য সিংহের পায়ের তলায় হাতি থাকে না। অপর রূপটির মন্ত্র অনুসারে জগদ্ধাত্রী পূজা হয়।
********************************

বিজিত কুমার রায়:

জন্ম স্কুল কলেজ সবই কলকাতা। কর্মক্ষেত্র অবশ্য সারা দেশ জুড়ে। ভেল কোম্পানীর তিরুচিরাপল্লী,কলকাতা,দিল্লী,ভূপাল ও ভারতবর্ষের সমস্ত প্রদেশের পাওয়ার প্ল্যান্ট।
রথ দেখা ও কলা বেচা হিসাবে দেশে ও বিদেশের বহু স্থানে একলা ও সস্ত্রীক ভ্রমণের সৌভাগ্য আছে।
শখ পারলে সারাদিন বই ও বিভিন্ন পত্রিকা পড়া । এছাড়া বয়সের সাথে কিছুটা ধর্মের দিকে ঝোঁক। রামকৃষ্ণ মিশন থেকে দীক্ষাপ্রাপ্ত ও রামকৃষ্ণ সারদা বিবেকানন্দ দর্শনের দিকে উৎসাহ । আর এই বাবদে মিশনের নানা জনকল্যানকারী কর্মকান্ডের সাথে যুক্ত।

 

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

error: বিষয়বস্তু সুরক্ষিত !!