Shadow

পঙ্কজবাবু জিন্দাবাদ – সোনালী গুহ

PC Braun Ambulances

 পঙ্কজবাবু জিন্দাবাদ

 সোনালী গুহ

   হইহই করে ঘরে ঢুকে এলো একদল ছেলে রবিবারে সকালে আয়েশ করে দ্বিতীয়বার চায়ের কাপে চুমুক দিয়ে সবে খবরের কাগজে মন দিয়েছিলেন পঙ্কজবাবুএকটু অবাক হয়ে তাকিয়ে প্রশ্ন করলেন,” কি ব্যাপার? তোমরা কাকে খুঁজছো? “… ছেলের দল একটু থমকালো

আমরা দুর্গাপূজার চাঁদা নিতে এসেছিলাম কাকু“…. বললো একজন

,চাঁদা!… তা কোথাকার পূজা?”…

কাকু,আমরা সবাই ক্লাবের পূজার চাঁদা “…কথা শেষ করতে না দিয়ে প্রশ্ন করলেন পঙ্কজবাবু

সেটা আবার কোথায়? রোজ ব্যাঙের ছাতার মতো গজিয়ে উঠছে ক্লাব…” 

না,না,কাকু !আমাদের ক্লাবের বয়স প্রায় দশ বছর আপনার পাশের গলিতেই আমাদের ক্লাবদুর্গাপূজা থেকে সব পূজা,রক্ত দান শিবির,কাঙালি ভোজন সব হয় আমাদের ক্লাবের

হুমমম!! আচ্ছারবিবারটা মাটি করে দিও নাএখন এসো তোমরা পরে ভেবে দেখছি“….. এই বলে ষাটোর্ধ্ব পঙ্কজবাবু ছেলেগুলোকে ভাগিয়ে দেনমনে মনে খুব বিরক্ত হন

   পঙ্কজবাবু বড় আত্মকেন্দ্রিক মানুষএই পাইকপাড়ায় প্রায় এক দশক বাসকিন্তু কারো সঙ্গে মেশেন নাঅফিস আর বাড়ি এই ছিল ওঁর জগৎঅবসরের পর নিজেকে নিয়েই কেটে যায়একটি ছেলে বিদেশে চাকরি করেস্ত্রী এবং তিনি থাকেন এই বাড়িতেওঁর স্ত্রী মলিনাদেবী স্বামীর ভয়ে পাড়ায় কারো সঙ্গে মেশেন নানিজের মত সংসারের কাজ নিয়েই ব্যস্ত থাকেনস্বামীটি বড় কড়া শাসনে রাখেন তাকে আজওপঙ্কজ বাবুর বাজার করতে  অনীহা কিন্তু খেতে  সিদ্ধহস্তরকমারি খাবার। অবশ্যই সুস্বাদু হতে হবে,দুইবেলাতেই ভালোমন্দ খাবার তাঁর চাইমলিনাদেবীর মুশকিল হয়বাজার করেন যৎকিঞ্চিৎ, কীভাবে উনি রকমারি রান্না করবেন ? তবুও অন্নপূর্ণার মত তিনি সবজির খোসা ভেজে, বেটে,ভর্তা করে একেকদিন একেকরকম রান্না করে দেন এদিকে কৃপণ আত্মসুখী পঙ্কজবাবু নিজেকে নিয়েই ব্যস্ত

  আজও ছেলেদের দলটি বিদায় নিতে তিনি আয়েশ করে গিন্নিকে আরেক কাপ চা অর্ডার করলেনমনে মনে চাঁদা চাইতে আসা ছেলেদের গুষ্টির তুষ্টি করলেন

নাও চা …. সকাল থেকে তিন কাপ হল,কখন রান্না বসাবো?…..” গজগজ করতে করতে গিন্নি চা দিয়ে গেলেন

    দুটো দিন পর পঙ্কজ বাবু সন্ধ্যায় বেরিয়েছেন একটু ফেরার সময় গেল লোডশেডিং হয়েমোবাইলের আলোয় ধীরে ধীরে পথ চলছেনহঠাৎ একটা কিছুতে পা লেগে হোঁচট খেয়ে পড়ে গেলেনমাথাটা লাগলো রাস্তায় পড়ে থাকা ইঁটের টুকরায়গলগল করে রক্ত বের হতেই জ্ঞান হারালেন পঙ্কজবাবুসেইসময় ওই পথে বাড়ি ফিরছিল রাজু ওই পাড়ারই ছেলেবেকার,বি পাশ করেও চাকরি না পেয়ে ক্লাব নিয়ে থাকেরাস্তায় পড়ে থাকা পঙ্কজবাবুকে  দেখে ক্লাবের ছেলেদের ডেকে ,ওরাই নিয়ে চলে গেল হাসপাতালেবাড়িতেও দিল খবরডাক্তারের সঙ্গে কথা বলা,ওষুধ জোগাড় করা,… সব ওরাই ছুটোছুটি করে সামাল দিল,রক্ত দিতে হলওরাই হইহই করে রক্তও দিল মলিনাদেবীকে রাতে বাড়ি পৌঁছে দিয়ে ,ওরাই রাত জাগলো সেদিন পরেরদিন জ্ঞান ফিরতে পঙ্কজবাবু সব শুনলেনএই ছেলের দলের সঙ্গেই তো খারাপ ব্যবহার করেছিলেন তিনি,অনুশোচনায় মনটা ভরে গেল

   সেই যাত্রায় সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরেই তিনি ক্লাবে গেলেন নিজেই একদিনদুর্গা পূজার সিংহভাগ দায়িত্ব নিজেই তুলে নিলেনছেলের দল আনন্দে নেচে উঠলোউনিও যেন ওদেরই মতো হয়ে উঠেছেনকৃপণতা ভুলে মেতে উঠলেন দুর্গা পূজার আয়োজনে

    নির্বিঘ্নে পূজা সেরে পঙ্কজ বাবু একদিন রাজুকে ডেকে পাঠালেনততদিনে পাড়ার ছেলেদের সঙ্গে বেশ সখ্যতা গড়ে উঠেছে পঙ্কজবাবুর রাজু আসতে একটা চেক দিলেন ওর হাতে রাজু অবাক পূজা সবে হল,আবার কিসের চাঁদা? কিন্তু অবাক হয়ে দেখে এতো বেশ বড় অঙ্কের চেক !! অবাক বিস্ময়ে তাকিয়ে দেখে পঙ্কজ বাবুর চোখ চিকচিক করছে কুড়ি লক্ষ টাকা তিনি ক্লাবে দিয়েছেন একটা এম্বুলেন্স কেনার জন্য এবং প্রয়োজনীয় কাজে চেক হাতে তখন রাজুর চোখও হয়ে উঠেছে সজল
**************************

সোনালী গুহ পরিচিতিঃ
পেশায় শিক্ষিকামাতৃভাষায় কিছুটা মনের আনন্দে লেখালিখি করেন। অত্যন্ত অমায়িক, সবার সাথে মিলেমিশে, সবাইকে নিয়ে চলতে স্বস্তি অনুভব করেন। 

1 Comment

  • Suparna Chowdhury

    গল্পটি পড়ে খুব আনন্দ পেলাম। আর ও এরকম গল্প পড়তে চাই। ❤️❤️❤️

Leave a Reply to Suparna Chowdhury Cancel reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

error: বিষয়বস্তু সুরক্ষিত !!