দিকশূন্যপুরের পথে
ব্রতী ঘোষ
আজ দুদিন ধরে ঝড় আসছে~ঝড় আসছে~এই খবরে আমাদের তটস্থ করে রেখেছে টিভি আর সোশ্যাল মিডিয়া৷ পর্ণাও একটু চিন্তায় আছে৷ দুপুরে জলের ফিল্টার থেকে বোতলগুলো একের পর এক ভরতে ভরতে নানান চিন্তা ওর মাথায় ঘুরপাক খাচ্ছে৷ দুমাস হতে চললো ও বাড়িতে বসা৷ লকডাউন চলছে। সময় যেন আর কাটে না৷ সারাদিনের হুড়োহুড়ি যেন এক ধাক্কায় থমকে গেছে৷ এমনিতে দুদিনের বেশি অফিস ছুটি থাকলেই পর্ণা বাড়িতে হাঁফিয়ে ওঠে৷ যবে থেকে রিনি (পর্ণার একমাত্র মেয়ে) বাইরে চলে গেছে তবে থেকে ও পারতপক্ষে একদিনও অফিস কামাই করে না৷ বাড়ি ফিরে রিনিকে পড়ানো, ওর সাথে গল্প করা খুনসুটি~এই তো ছিল ওর জীবনে৷ প্রসূনের হঠাৎ চলে যাবার পর মেয়েকে একাহাতে মানুষ করতে করতে ও যে জীবনের অর্ধেকটাই কাটিয়ে দিল৷ আর রিনিটাও যে কখন ওর বন্ধু হয়ে গেল টেরই পাইনি পর্ণা৷ রিনি যতোটা না ওর মেয়ে তার বেশি বন্ধু৷ যখন দুজনে কথা বলে তখন বাইরের কেউ দেখলে ভাববে দুই বোন কথা বলছে৷ এই সময়ে মেয়েটা যে একা একা কি করছে~রোজ কথা বলেও চিন্তা যেন যেতে চায় না৷ মায়ের মন তো?
এই রে~ঝড় টা তাহলে উঠলো৷ দৌড়ে গিয়ে ফ্ল্যাটের সমস্ত জানলা গুলো তাড়াতাড়ি বন্ধ করে দিলো পর্ণা৷ হাতের কাছে দেশলাইটাও রেখেছে~যদি কারেন্ট চলে যায়! যেমন ভাবা ঠিক তাই হলো৷ কারেন্ট চলে গেলো৷ পরের পর দমকা বাতাস আর শো শো আওয়াজে বুকের ভেতর যেন কাঁপুনি ধরিয়ে দিতে লাগলো৷ ফ্ল্যাটের সব জানলার কাঁচগুলো চাইছে যেন একসাথে ঝন্ ঝন্ করে ভেঙ্গে পড়তে৷ এক অদ্ভূত ভয় যেন তাড়া করে আসছে৷ মাঝে মাঝে মোমবাতির শিখাটাও যেন কেঁপে কেঁপে উঠছে৷ সারা ঘরের অন্ধকার আর ছোট্ট একটি মোমবাতির আলো যেন এক মায়াময় পরিবেশের সৃষ্টি করেছে৷ আজ কতো বছর হয়ে গেল কোলকাতায় লোডশেডিং শব্দটা মানুষ ভুলতে বসেছে৷ অথচ একসময় এই লোডশেডিং এর আলোয় পড়াশোনা করে ছেলেবেলা কেটেছে৷ একেকটা সন্ধে পুরো লোডশেডিং৷ আর বাড়িশুদ্ধ লোক ছাদে বসে গল্প করছে৷ তখনকার ছাদের কথা মনে পড়লেই কতো কি যে মনে পড়ে যায়৷ এক লহমায় যেন চোখের ওপর ভেসে আসে ওদের পুরনো কোলকাতার বিরাট বড় ছাদ। পরের পর ছাদ সব লাগোয়া৷ এক ছাদ থেকে আর এক ছাদে যাওয়া যায় অক্লেশে। তিন চারটে ছাদ জুড়ে যেন বিশাল বড় এক খেলার মাঠ৷ একটা করে শতরঞ্চি নিয়ে ছাদে চলে যেতো ওরা৷ আর পড়াশোনার থেকে বেশি চলতো আড্ডা, গান আর অন্তাক্ষরি৷ কি যে আনন্দ ছিলো দিনগুলোতে৷ এরকমই এক লোডশেডিং এর সন্ধেবেলায় পাশাপাশি পড়তে বসে ওর হাতের ওপর হাত রেখেছিল সমীরণ। পর্ণার থেকে বছর দুয়েকের ছোট ছিল সমীরণ। মাঝে মাঝে সন্ধেবেলায় অঙ্ক করতে আসতো পর্ণার কাছে৷ ওদের দুজনের ছাদ একই৷ ছোট থেকে একসাথে বড়ো হয়ে ওঠা৷ সমীরনের মাকে পর্ণা কাকিমা বলে ডাকতো৷ ওরা থাকতো ঠিক ওদের পাশের বাড়ির একতলায়৷ ভাবতে বসলে এখন ওর স্বপ্নের মতো লাগে৷ এক দৌড়ে কাকিমার কাছে চলে যাওয়া, আব্দার করে কৎবেল মাখা খাওয়া, বিকেলে ফুচকা খাওয়া~কি যে ছিলো সেই দিনগুলো৷ কাকিমার কথাতেই পর্ণা সমীরণকে অঙ্কটা দেখিয়ে দিতো৷ একদিন তখন~পর্ণা বারো ক্লাসে আর সমীরণ দশ ক্লাসে পড়ে। গরমের ছুটিতে সন্ধেবেলা লোডশেডিং।| ছাদে ও আর সমীরণ অঙ্ক করছে৷ হঠাৎই অঙ্কের বইটা বন্ধ করে ওর হাতে হাত রেখেছিল সমীরণ। খানিকটা অবাক হয়ে আর খানিকটা চমকে গিয়ে সমীরণকে বকা দিতে গিয়েই পর্ণা খেয়াল করে যে কথা ও কোনদিন কারুর চোখে পড়েনি~সেরকম কতো কথাই যেন সমীরণ বলে চলেছে ওর চোখে৷ সেই প্রথম সারা শরীরে এক আনন্দের শিহরণ খেলে গিয়েছিল ওর৷ ছুঁয়ে থাকা আঙুলের স্পর্শ যেন কতো কথাই বলে যাচ্ছিল। হঠাৎ করে আলো এসে গেছিল৷ যে যার বই নিযে ছাদ থেকে নেমে এসেছিল৷ সারারাত পর্ণা শুধু সমীরণের কথাই ভেবেছিল৷ এতো আনন্দ তো ওর আগে কোনদিন হয় নি৷ সারারাত পাশবালিশে মুখ গুঁজে শুয়েছিল। ঘুম আসেনি এতোটুকু৷ সকাল হতেই এক দৌড়ে আবার ছাদে৷ ও জানতো সমীরণ ও ছাদে এসে দাঁড়িয়েছে৷ সে এক মজার খেলা৷ দুজনে দুজনের দৃষ্টিতে যেন না বলা সব কথা বলা হয়ে যেতো৷ দুজনেই স্কুল থেকে ফিরে বিকেলে আবার ছাদে৷ সন্ধ্যে পর্যন্ত দজনের কতো গল্প~সে আর ফুরোয় না৷ পর্ণা যে ওর থেকে দুবছরের বড়ো সেকথা ভুলেই গিয়েছিল৷ আর সমীরণ ও কোনদিন ওকে দিদি বলে ডাকেনি৷
তখনকার দিনে কয়েক মাসের বড়ো হলেও দিদি বলে ডাকাটাই চল্ ছিল৷ কেন জানিনা সমীরণ কোনদিনই ওকে দিদি বলে না ডেকে নাম ধরে ডাকতো৷
কখন যেন একটা বছর ঘুরে গেলো৷ সমীরণ দশ ক্লাস আর পর্ণা বারো ক্লাস। সমীরণের বাবা পরিমল কাকুও হঠাৎ করে বদলি হয়ে গেলেন আসানসোল৷ এখনো সেদিনটার কথা চোখে ভাসে৷ যেদিন ওরা কোলকাতার পাঠ তুলে চলে গেলো৷ ছাদের এক কোনায় বসে সারাদিন কেঁদেছিল পর্ণা৷ যাবার আগে সমীরণ একটা চিঠি দিয়ে গিয়েছিল ওকে। চিঠিটা দিয়েছিল একটা বইয়ের ভেতর৷ ওই বইটা ছিল সমীরণের ওকে দেওয়া একমাত্র বই। নীললোহিতের “নিরুদ্দেশের দেশে”~বইয়ের একদম শেষ পাতায় সমীরণের হাতে লেখা একটা লাইন ছিল~”তুই আমার বন্দনাদি হবি? “কথাগুলো পর্ণা কোনদিনই ভুলতে পারেনি৷ আসানসোল চলে গেল সমীরণরা৷ প্রথম প্রথম চিঠি লিখলেও কিছুদিন পরে সবকিছুই কেমন থিতিয়ে আসে৷ তারপর কোথা দিয়ে যে বছরগুলো গড়িয়ে যায়। মনটা হঠাৎ করে যেন হু হু করে ওঠে৷ না~শুধু সমীরণের জন্য নয়~ফেলে আসা ঐ দিনগুলোর জন্য~যখন কোন চিন্তা ছিল না, ভাবনা ছিল না~টেনশন ছিলা না~শুধুই আনন্দ ছিলো। লোডশেডিং ছিল~অন্ধকার ছিল~মানুষে মানুষে ভালোবাসা ছিল~প্রেম ছিল৷
নাহ!! ঝড়ের দাপট আজ আর কমবে না। কোনরকমে রাতের খাবার খেয়ে পর্ণা ঘুমিয়ে পড়ার চেষ্টা করে৷ যদিও জানে আজ ঘুমের ওষুধ না খেলে আর ঘুম আসবে না৷
কোলকাতায় আম্ফানের এই ঘটনার পরে দুমাস গড়িয়ে গেছে৷ দুমাস লকডাউনের পর আবার অফিস খুলেছে৷ অল্প অল্প করে দোকানপাট খুলছে। কোলকাতার রাস্তাকে চেনা যায় না৷ বাস, ট্যাক্সি চলছে হাতে গোনা৷ বিধ্বংসী আম্ফানের চিহ্ন সারা শহরে এখনো ছড়ানো৷ এতো গাছ শহরের বুকে আছড়ে পড়েছে মনে হচ্ছে যেন কেউ বুলডোজার দিয়ে শহরটাকে পিষে দিয়ে গেছে৷ আনন্দ শহর যেন ধ্বংসের শহরে পরিণত৷ অফিস যাওয়া ও আসা এক কষ্টকর ব্যাপার হয়ে গেছে৷ মেট্রো বন্ধ৷ ময়দানের বাসস্ট্যান্ডে পর্ণা অনেকক্ষণ চেষ্টা করেও একটাও ট্যাক্সি বা উবের ট্যাক্সি পায় না৷ এদিকে সন্ধে হয়ে আসছে৷ বাড়ি ফেরার চিন্তাতে মনের ভিতরটা আস্তে আস্তে অস্থির হয়ে উঠছে৷ হঠাৎই একটা গ্র্যান্ড আই টেন এসে দাঁড়ায় ওর সামনে৷ আস্তে আস্তে জানলার কাঁচগুলো নেমে যায়৷ গাড়ির চালকের আসনে মাস্ক পরিহিত এক ব্যক্তি-শান্ত, সৌম্য, মাথার চুলগুলো বেশ ফাঁকা হয়ে গেছে~না পর্ণা তো একে চেনে না৷ অথচ কি আশ্চর্য্য!! ভদ্রলোক ওকেই তো গাড়ির ভেতর থেকে ডাকছেন৷ কিন্তু চোখদুটো চশমার আড়ালে থেকেও অসম্ভব চেনা৷ মাস্কটা মুখ থেকে নামিয়ে ভদ্রলোক ডাকলেন,”পর্ণা~চলে আয়৷” বিস্মিত পর্ণা ভদ্রলোককে কিছুতেই চিনতে পারে না৷
“আরে!! কি হলো? আসবি তো?”
গলার স্বরে কিছু একটা ছিলো৷ যেন অনেক দিনের চেনা কোন মনের মানুষ ওর নাম ধরে ডাকলো৷ মনের ভিতর একশোটা হাতুড়ি যেন একসাথে ঘা মারতে থাকে৷ এবার পর্ণা বোঝে~এতো সমীরণ!!
“তুই? কি চেহারা করেছিস? “আরো কিছু বলতে যাচ্ছিল পর্ণা৷
“আগে ওঠ তো গাড়িতে৷”
পর্ণা গাড়িতে উঠে এসে সিটবেল্ট বাঁধতে বাঁধতে বলে,”সব চুল তো পড়ে গেছে!!”
“আর বলিস না~মামার বাড়ির ধারা পেয়েছি৷
“কিন্তু তুই আমাকে চিনলি কি করে?” বলে পর্ণা৷
“তোকে চিনবো না? তুই তো একই রকম আছিস৷ সুন্দরী~তন্বী~”
“বাজে বকিস না~তুই কি ফাজিল হয়েছিস রে?”
কথায় গল্পে কখন যে নিউ আলিপুর চলে এসেছে পর্ণা টেরও পায় না।
সেদিন রাতে দুচোখের পাতা এক করতে পারে না পর্ণা৷ ঘুরেফিরে সেই দুটো চোখই ভাসতে থাকে৷ অন্ধকারের আবছায়া আলোতে চোখ দুটো শুধুই টানতে থাকে ওকে৷ এক নিদারুণ ভালো লাগা সারা শরীর জুড়ে ছড়িয়ে পড়তে থাকে৷ ভোরের দিকে ঘুম ভেঙে ছাদে এসে দাঁড়ায় ও৷ ভোরবেলার একরাশ স্নিগ্ধ হাওয়া ওর খোলা চুলের ভিতর খেলা করতে থাকে৷ নাহ্!! আজ আর অফিস যেতে একটুও ইচ্ছে করছে না৷ ভাবতে ভাবতে ঘরে আসতেই মোরাইলে মেসেজের শব্দ জানান দেয় তার উপস্থিতি৷ পর্ণা দেখে সমীরণ আজ ওর অফিসে আসছে দেখা করতে৷ আর অফিস কামাইয়ের প্রশ্নই ওঠে না৷ আলমারি খুলে শাড়ি পরতে গিয়ে কোন শাড়িই খুঁজে পায় না ও৷ শেষে একটা নীল রঙা তাঁতের শাড়ি বেছে নিয়ে চটপট অফিসের জন্য তৈরি হতে থাকে।
অফিসে এসে থেকে কোন কাজেই মন বসাতে পারছে না ও৷ কখন তিনটে বাজবে? কখন সমীরণ আসবে? অফিস ও আজ ফাঁকা৷ যাক্! কাউকে কিছু বলার দরকার নেই৷ সাড়ে তিনটে নাগাদ ফোনটা এলো৷ সমীরণ নিচে আফিসের কার পার্কিং এ দাঁড়িয়ে আছে৷ পর্নার মনে হোলো~সব ফেলে দৌড়ে চলে যায়৷ শেষে ধীর পায়ে সিঁড়ি দিয়ে নেমে সমীরণের সামনে এসে দাঁড়ায়৷
“কি ব্যাপার? আজ আবার এলি?”
“এলাম৷ চল্! একটা জায়গায় যাবো৷”
“এখন?”
“হ্যাঁ~চল্ না”
গাড়িতে উঠে দুজনের কেউ কথা বলে না৷ অথচ দুজনের চোখ ই দুজনকে খুঁজে চলেছে৷ দুজনের মন সমস্ত না বলা কথা বলে চলেছে৷ গাড়িটা ভিক্টোরিয়া মেমোরিয়ালের পাশ দিয়ে গিয়ে দ্বিতীয় হুগলি সেতুর উপর গিয়ে ওঠে৷ আস্তে আস্তে সমীরণ গাড়িটাকে দ্বিতীয় হুগলি সেতুর একপাশে দাঁড় করায়৷ পর্ণা তখনো বুঝতে পারে না কি করতে চায় সমীরণ। পর্নার দরজাটা খুলে সমীরণ ওর হাতটা বাড়িয়ে দেয় পর্ণার দিকে৷ “নেমে আয়”৷ দুজনের মুখেই কথা নেই৷ গোধূলির সূর্য তার সমস্ত আলো ছড়িয়ে গঙ্গার বুকে আছড়ে পড়েছে।
“জানিস! শুভ্রা যখন বছর পাঁচেক আগে আমায় ছেড়ে চলে গেলো অভিষেকের সাথে~সেদিন আমার শুধু তোর কথাই মনে হয়েছিল৷ এটাই বোধ হয় আমার উচিৎ শাস্তি হয়েছে৷” এই প্রথম সমীরণ কিছু কথা বলে৷
“কেন? তুই কি করেছিলি?”
“আমি যে কিছুই করতে পারিনি রে পর্ণা৷ ওকে কোনদিন ভালোবাসতে পারিনি৷ কিন্তু বিশ্বাস কর আমি আপ্রাণ চেষ্টা করেছিলাম৷ ভেবেছিলাম ইঞ্জিনিয়ারিং পাশ করে তোর সামনে এসে দাঁড়াবো৷ যেদিন আমার রেজাল্ট বেরোলো বাড়ি এসে দেখি সুবীর জেঠু আমাদের বাড়ি এসেছেন তোর বিয়ের কার্ড নিয়ে৷ অভিমানে, দুঃখে আমি সেদিন কিছু খেতে পারিনি৷ তুই আমার জন্য একটুও অপেক্ষা করতে পারলি না? তুই তো চাকরি করতিস৷ তাহলে দুটো বছর বাদে বিয়ে করলে তোর কি এমন মহাভারত অশুদ্ধ হয়ে যেতো? বল্?”
পর্ণার মুখে কথা আসে না৷ গলা বুজে আসে কান্নাতে৷ ওকে কি করে বোঝায়~ও যে কাকিমাকে কথা দিয়েছিল যে সমীরণের সাথে কোন যোগাযোগ রাখবে না!! তাই তো জোর করে ও সমীরণকে ভুলতে চেয়েছিল৷ আর তাই বাবার পছন্দে প্রসূনকে না দেখেই বিয়ে করেছিল৷ আজ সমীরণের জিজ্ঞাসায় ওর বুকের ভেতরটা হু হু করে ওঠে৷ যে কথা ও কাউকে কোনদিন বলতে পারেনি আজ সমীরণকে বলে ফেলে৷ কাকিমা ওদের এই অসমবয়সী ভালোবাসার কথাটা জানতে পেরেই তড়িঘড়ি ঐ বাড়ি থেকে আসানসোল চলে গেছিলেন৷ আর যাওয়ার আগে পর্ণাকে দিয়ে প্রতিজ্ঞা করিয়েছিলেন যে ও যেন সমীরণের সাথে যোগাযোগ না করে৷ এতে ওর পড়াশোনার ক্ষতি হবে৷
“তবে জানিস”~বলে পর্ণা,”আমি কিন্তু প্রসূনকে ভালোবেসেছিলাম৷ কিন্তু প্রসূন ভালোবাসতো ওর কাজকে। তাই কোনদিন ভালোবাসাটা যে ঠিক কি~আর বোঝা হয়ে উঠলো না৷ যাক্! আর কি? জীবনটা তো শেষ হয়েই এলো।” বলে হাসলো পর্ণা সমীরণের দিকে ফিরে৷ সমীরণ ও পর্ণার দিকে ফিরে ধীরে ধীরে ওর সামনে এসে দাঁড়ায়৷ পর্ণার মুখ থেকে মাস্কটা নামিয়ে মুখের উপর উড়ে আসা ছোট ছোট চুলগুলোকে পরমযত্নে এক হাত দিয়ে সরিয়ে দিতে দিতে বলে,”তুই আমার বন্দনাদি হবি? চল্ না-আমরা দুজনে চলে যাবো সেই দিকশূন্যপুরে৷ যেখানে পাহাড়ঘেরা গ্রামের মাঠে আমরা নিজের হাতে ফসল ফলাবো। দুজনে একসাথে আমাদের ছোট্ট বাড়িটার সামনে ফুলগাছ বসাবো৷ রাত হলে পাহাড়ের কোলে ঝর্ণার ধারে বসে গান শোনাবো গাছেদের~তোর কোলে মাথা রেখে~যাবি?” পর্ণার দুচোখ বেয়ে জল পড়ছে৷ সে আনন্দে না গভীর প্রাপ্তিতে তা বুঝে উঠতে পারে না৷ ধীরে ধীরে পর্ণা ওর ডানহাতটা দিয়ে সমীরণের মুখটা চাপা দিয়ে বলে~”চল্! যাবো!”
দুজনের দু হাতের দশটা আঙুল যেন বহু দিনের কাঙ্খিত প্রাপ্তিতে একে অপরকে জড়িয়ে ধরেছে~ধীরে ধীরে সন্ধ্যা নামছে৷ ওদের কোন হুঁশ নেই৷ ওরা যে তখন পৌঁছে গেছে নিরুদ্দেশের দেশে৷
******************************************
ব্রতী ঘোষ পরিচিতি
জন্ম, পড়াশোনা সবই কলকাতায়। প্রথমে প্রাণিবিদ্যা নিয়ে এবং পরে ইতিহাস নিয়ে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের স্নাতক। তিরিশ বছর ধরে ভারতীয় জীবন বিমা নিগমে কর্মরতা। রবীন্দ্রনাথ তার মননে, ভালবাসেন যে কোনো বিষয় নিয়ে পড়তে। ছোট থেকে বড় হয়েছেন পরিবারের সাংস্কৃতিক পরিমন্ডলে। প্রিয় সাহিত্যিক সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়, শরদিন্দু বন্দ্যোপাধ্যায়, সুচিত্রা ভট্টাচার্য প্রমুখ! অসম্ভব সঙ্গীত অনুরাগী প্রথমে বাণী চক্রে, পরবর্তীকালে এলাহাবাদ থেকে সঙ্গীত প্রভাকর পাশ। ভালবাসেন সাধারণ মানুষের পাশে দাঁড়াতে। একাধিক স্বেচ্ছাসেবী সংস্হার সঙ্গে যুক্ত৷ ভ্রমণ পিপাসু মানুষটি স্বপ্ন দেখেন সারা পৃথিবী ঘুরে বেড়ানোর৷ এখন মন
দিয়েছেন লেখাতে৷
বাহ্ ❤️ কী চমৎকার ❤️ মধ্যবয়সীর রূপকথা❤️
বাঃ,দারুন লাগল।বিকেলে ভোরের ফুল! আরো লেখ।
অনেক ধন্যবাদ সুরজিৎদা ~
জেনে ভালো লাগলো মধুমিতা ~
সাহসী, মিষ্টি গল্প — অসম্ভব ভাল লাগলো ! …. সব ছেড়েছুঁড়ে “দিকশূন্যপুরের মাঠে” হারিয়ে যাবার একটা সুপ্ত বাসনা বোধহয় আমাদের প্রায় সবার মনেই থাকে। কোন এক উদাস মূহুর্তে — ছাদের আলশের পাশে দাঁড়িয়ে, বা, চলমান ট্রেনের জানালার ধারে বসে — সুদূর দিগন্তের দিকে শূন্য দৃষ্টিতে তাকিয়ে আমাদের মনটাও কি সেই “,নিরুদ্দেশের দেশে” উধাও হয় না ! হয়তো মনে পড়ে যায় কোন এক ফেলে আসা সময়ের কথা, বা, হারিয়ে যাওয়া “তার” কথা ! পরক্ষনেই একটা অতিদীর্ঘ শ্বাসের সাথে সম্বিত ফিরে পাই, ফিরে আসি বর্তমানে, ফিরে আসি বাস্তবে ! সবার ক্ষেত্রে তো আর ….. !!!!
খুব ভালো লাগলো – আপনার ভালো লেগেছে জেনে ৷ আপনি যে সময় করে পড়েছেন এতেই আমি যারপর নাই আনন্দিত ৷