Author: Kulayefera
প্লে ব্যাক – সিঙ্গার – রবীন্দ্রনাথ – অগ্নিমিত্র ভট্টাচার্য্য
প্লে ব্যাক – সিঙ্গার – রবীন্দ্রনাথ
অগ্নিমিত্র ভট্টাচার্য্য
পাঠকেরা সকলেই হয়ত শিরোনামটি পড়েই যুগপৎ বিস্মিত ও ব্যথিত। স্বয়ং রবীন্দ্রনাথ কে নিয়ে এ আবার কি বাতুলতা! কিন্তু পাঠক, এ আমার রচিত বা কল্পিত কোন কাহিনী নয়, সম্পূর্ণ সত্য ঘটনা।
এই সত্য ঘটনার স্থান শান্তিনিকেতন, কাল–১৯০৮ সালের শরৎকাল আর পাত্রেরা সহজেই অনুমেয়–শান্তিনিকেতনের ছাত্রদল, শিক্ষকবৃন্দ ও স্বয়ং রবীন্দ্রনাথ।
এই ঘটনার বিবরণ দিয়েছেন রবীন্দ্রসুহৃদ ও সহযোগী শ্রী ক্ষিতিমোহন সেন, নোবেল পদক প্রাপ্ত শ্রী অমর্ত্য সেনের মাতামহ। ক্ষিতিমোহন সেন রচিত ‘রবীন্দ্রনাথ ও শান্তিনিকেতন’ গ্রন্থে তাঁর বিভিন্ন রচনায় তিনি তাঁর জীবনের এই স্মরণীয় ঘটনার বিবরণ বারবার প্রকাশ করেছেন তাঁর জীবনের এক অমূল্য স্মৃতিচারণ হিসাবে। আসুন আমরা আজ সেই অভূতপূর্ব ঘটনার স্বাদ গ্রহণ করি এই লেখার মাধ্যমে।
এই প্রসঙ্গে, আচার্য্য ক্ষিতিমোহন সেন সম্পর্কে সামান্য পরিচয় করিয়ে দে...
তেইশ নম্বর প্ল্যাটফর্ম – প্র ত্যু ষ সে ন গু প্ত
তেইশ নম্বর প্ল্যাটফর্ম
প্র ত্যু ষ সে ন গু প্ত
।। ফ্ল্যাশব্যাক।।
I have lost my sight,smell,hearing,
taste,touch ;
How should I use therefor your -
closercontact?
(T.S.Eliot - Four Quarters' ..)
তেইশ নম্বর প্ল্যাটফর্ম ভীড়ে ভীড়াক্কার। বসার কোনও চেয়ার খালি নেই।কয়েকজন আবার নিজের ট্রলিব্যাগ, ব্যাগব্যাগাদি দিব্বি পাশের চেয়ারে তুলে নির্বিকার চিত্ত। চেয়ার না পেয়ে তাই অনেকে প্লাটফর্মে কাগজ বিছিয়ে বসে।এর মধ্যে কয়েকজন আবার সটান শুয়ে ঘুমিয়ে নিচ্ছেন।ঘটোৎকচের নব্য সংস্করণ!মনে হয়, সারা শহরের মানুষ বোধহয় আজ ট্রেন ধরতে এসেছেন!
শুধু মাথা।দুদ্দাড়িয়ে অনেকে ছুটছে নির্দিষ্ট প্লাটফর্মের দিকে।টেনে নেওয়া ট্রলিব্যাগ কাকে ধাক্কা দিচ্ছে দেখার সময় নেই।পাঁচ ছটা বিভিন্ন বয়েসের বাচ্চাকাচ্চা নিয়ে মা চলেছেন সম্ভবত বাচ্চাদের বাবার...
ইটাচুনা রাজবাড়ী – মধুমিতা মিত্র
ইটাচুনা রাজবাড়ী
মধুমিতা মিত্র
কর্মব্যস্ততার চাপে জীবন যখন জেরবার,মুক্তির আনন্দ পেতে সপ্তাহ অন্তে যাওয়া যাক্ তবে ইটাচুনা রাজবাড়ী। কলকাতা থেকে সামান্য দূরে, মহানগরীর ধুলো ধোঁয়ার ,ইট কাঠের বাইরে- শ্যামলিমার সজল ছায়ায় একদিনের দায়িত্ব বিহীন রাজসুখের আস্বাদ পাবেন এই রাজবাড়ীতে। রাজবাড়ী যাবার আগে ইতিহাসের পাতাগুলি আসুন আমরা একটু উল্টে পাল্টে দেখি।
ছোট্টবেলার সেই ঘুম পাড়ানি গান “ছেলে ঘুমালো পাড়া জুড়োলো বর্গী এলো দেশে”—এই কলিটির মধ্যেই নিহিত রয়েছে এই রাজবাড়ীর ইতিহাস।আঠেরোশো শতাব্দীতে বাংলায় আলীবর্দী খানের সময়ে মারাঠা দস্যু বর্গীরা আক্রমণ করে বঙ্গদেশ,১৭৪২ থেকে ১৭৫১ পর্যন্ত পর পর পাঁচ বার বঙ্গদেশে এই বর্গীরা হানা দেয়।নবাব আলীবর্দী খান এদের বারংবার দমন করলেও বাংলার অর্থনীতি এবং জনসাধারণের প্রভূত ক্ষতি হচ্ছিলো বলেই পরিশেষে আলীবর্দী খান বর্গীদের সঙ্গে এক শান্তি চুক্তি স্হাপন করেন।এতে...
তুমি – মানবেন্দ্র নাথ সান্যাল
তুমি
মানবেন্দ্র নাথ সান্যাল
যতই উপরে উঠি দেখি
তার উপরে আছে আরো—
তবু যতটুকু পারি,তোমাকে দেখি
আর যতটুকু দেখি,তাতেই
তোমার অন্ত নেই।
রূপ থেকে কেবল রূপান্তরের শোভাযাত্রা
সে শুধু তৃপ্তিহীন স্পৃহা থেকে
অনন্ত অসীমের দিকে যাত্রা
কেননা আমার স্পৃহাও তুমি
তৃপ্তিও তুমিই।
যা আছে,তাও তুমি
যা চলছে,তাও;
যা পেয়েছি তোমাকেই পেয়েছি শুধু
আর,যা আমার না পাওয়া
তা,না পাওয়া তোমাকেই।
**************************************
আনন্দ আর দুঃখ
মানবেন্দ্র নাথ সান্যাল
সব কিছুরই দুটো দিক আছে
যেমন নাতনি বড় হতে থাকলে আনন্দ হয়
সেই সাথে সমান্তরাল বেড়ে চলে একরকম দুঃখ
সেটা কি রকম এক কথায় বলা চলে না
বেবি থেকে বিবি যখন বড় হচ্ছে
তখন প্রতিনিয়ত মনে হচ্ছে
এই পর্যন্ত সব ঠিক আছে
কিন্তু আরো বড় হয়ে গেলে
আমি গালটা টিপে আদর করতে পারব না কুচকুচে লম্বা চুলের বেণীটা শুঁকে
বলতে পারব না
তোমার চ...
পদক্ষেপ – ব্রতী ঘোষ
পদক্ষেপ
ব্রতী ঘোষ
সকাল সাতটা বেজে গেল - এখনো সরস্বতী এলো না !! এই মেয়েটাকে নিয়ে আর পারা গেল না ৷ আজ সোমবার-এখনো যদি না আসে, সকালের রান্না, বাড়ির কাজ সব সেরে তপতী যে কি করে অফিস যাবে ? ভাবতে ভাবতে ওর মাথাটা বেশ গরম হতে শুরু করে ৷ ঠিক সেই মুহূর্তে 'টিংটং' বেজে ওঠে ৷ যাক বাবা !!
"আজ বড্ড দেরি হয়ে গেল গো বৌদি !!" - শাড়ির আঁচলটা কোমরে গুঁজতে গুঁজতে বলে সরস্বতী।
"বলো কি রান্না হবে ? দাদাবাবু , তুমি টিফিনে কি নেবে ? কি হলো বলো ?" তপতী বেশ গম্ভীর গলায় বলে, "দেরি করলি কেন ? তোকে কতদিন বলেছি একটা মোবাইলটা কেন্ ৷ শুনলি কথা ? সকালবেলা এত দেরি করলে চলে ? এক্ষুণি তোর দাদা বাবু খেতে বসবে । স্নান করতে চলে গেছে ৷"
"আচ্ছা আচ্ছা ! তুমি দেখো না ! সব হয়ে যাবে ৷ তুমি রান্নাটা বলে নিজের কাজে যাও দেখি ৷"
তপতীর এটা যোগা করার সময় ৷ সকাল সাতটা থেকে আটটা যোগা করে ও বাথরুমে ঢোকে। ঠিক নটা বাজতে দশে ও আর স...
দেবব্রত বিশ্বাস, গীতা ঘটক – দীপন মিত্র
দেবব্রত বিশ্বাস
দীপন মিত্র
হারমোনিয়ম জানত তাঁর ছিল এক গর্বিত পাহাড়
পাথরের বুকে রুদ্ধ শুদ্ধ স্বচ্ছ রবি-গীতিধারা
মোটরবাইক গন্ধ পেত পেট্রোলের বসন্ত বাহার
সিগন্যালহীন রাতে বেজে উঠত দরবারি কানাড়া
সেদিন কলকাতা ছিল আকাশভরা সূর্য, তারা
শরীর সোনালি বিন্দু ভরা তাঁর বেলোয়ারি ঝাড়
বৃষ্টির ফোঁটায় ভর্তি বৃক্ষের পল্লবঘন বুক
পাথরে খোদিত স্বর আমাদের কাঁধে রাখত তাঁর
প্রগাঢ় গহন হাত – অভিমানী দুঃখহারা ভুখ
আলিঙ্গনে মুছে যেত; - তাঁর ছিল প্রেমের অসুখ
হিমালয়কে কি ঈর্ষা করা যায়? ছোটো করা যায়?
সাগরের কণ্ঠ আদৌ কখনো কি রুদ্ধ করা যায়?
****************************************************
গীতা ঘটক
দীপন মিত্র
গীতা ঘটকের মত ছোট এক মেয়ে চিরকাল
বাংলার আকাশে নৃত্য করবে, গাইবে রবীন্দ্রগীতি
বুড়ো চোখে মাখবেন গাদা গাদা কাজল, সুরমা
মুখভঙ্গি তীব্র, মগ্ন অথৈ জীবন কারো কাছে!
সেই ছোট মেয়ে যেই করে ...
আগমনী – নীতা সরকার
আগমনী
কলমে -- নীতা সরকার
আশ্বিনের আকাশে দিগন্ত বিস্তৃত
পেঁজা তুলোর মেলা।
মাঠ ভরা সোনালী শস্য
ইতঃস্তত বিস্তৃত কাশফুলের সমারোহ।
বাতাসে দোদুল্যমান কাশফুল, সোনালী শস্য।
প্রকৃতি যেন নতুন সাজে সেজে উঠেছে।
যেন মনে হয় আগমনীর সুর বাজে।
মা আসছেন মর্ত্যধামে সঙ্গে আছে
লক্ষী- গণেশ, কার্তিক - সরস্বতী।
মার আগমনে আনন্দে মেতে উঠেছে মর্ত্যলোক
মর্ত্যবাসী দুঃখ- বেদনা ভুলে
মার পুজোয় নিজেকে উৎসর্গ করে।
এই আনন্দে জাতি- ধর্ম ভেদাভেদ নেই।
হিন্দু - মুসলিম,বৌদ্ধ - খৃষ্টান
সবাই এই উৎসবে সামিল হয়।
বিদায় বেলায় বিষাদের সুর বাজে।
মন ভারাক্রান্ত, চোখের জলে
মাকে বিদায় জানায় মর্ত্যবাসী
বলে -- আসছে বছর আবার এসো "মা"।
***********************************
নীতা সরকার পরিচিতিঃ চন্দননগর হুগলির নিবাসী। বিজ্ঞানে স্নাতক,বর্ধমান বিশ্ববিদ্যালয় থেকে। একজন বাচিক ও বাটিক শিল্প...
স্বাধীনতা সংগ্রামে হুগলী জেলা – সুলগ্না চক্রবর্তী
স্বাধীনতা সংগ্রামে হুগলী জেলা
সুলগ্না চক্রবর্তী
পরাধীনতার শৃঙ্খল থেকে মুক্ত হওয়া সব দেশেরই নিজস্ব স্বাধীনতা সংগ্রামের ইতিহাস আছে। কখনো তা সহিংস কখনো অহিংস। কখনো আবার তার নিজের শিকড় চেনানোর জন্য আদর্শের লড়াই। কিন্তু আমাদের দেশের হুগলী জেলাতে এই লড়াই ছিলো ভিন্ন প্রকৃতির। এখানে সহিংস,অহিংস,আধ্যাত্মিক,প্রতিরোধ কৌশলযুক্ত,আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রে কূটনৈতিক লড়াই ইত্যাদির মতো বিভিন্ন ধারার সংগ্রাম একসাথে মিলিত হয়েছে। শুনলে অবাক লাগবে যে স্বাধীনতা যুদ্ধের এই ইতিহাস হুগলী জেলাতে শুরু হয়েছিল সিপাহী বিদ্রোহের সময় মানে ১৮৫৭ থেকে। কানপুর থেকে লড়াই করা নানা সাহেব চন্দননগরে আশ্রয় চেয়েছিলেন এবং ব্রিটিশ ভারতের শাসনের বিরুদ্ধে "নেপোলিয়ন বাহাদুর"কে চিঠি লিখেছিলেন যা চন্দননগর থেকে ফ্রান্সে যায়। ফ্রান্সের উত্তর কী ছিলো তা সময়ের স্রোতে বিলীন। শ্রীরামপুরের ইউরোপিয়ানরা রথের সময় বাজে ঘটনার আশঙ্কা...
সিন্দ্রির দুর্গোৎসব – পল্লব চট্টোপাধ্যায়
সিন্দ্রির দুর্গোৎসব
পল্লব চট্টোপাধ্যায়
সিন্দ্রি - নগরজীবন
নামেই বিহার! অবশ্য এখন ঝাড়খণ্ড। কয়লা-খনি শোভিত ধানবাদ জেলার একপ্রান্তে দামোদরের তীরে একটি নিরিবিলি শহর সিন্দ্রি। যেমন সেখানে বিহারির তুলনায় বঙ্গভাষী আর কুর্মি-আদিবাসী বেশি, তেমনি সিন্দ্রি নামে শহর হলেও গাছগাছড়া, নদী, পুকুর, পার্ক, প্রচুর খেলার মাঠ- এসব নিয়ে সেখানে গ্রামের ছোঁয়াই স্পষ্ট। অন্যদিকে এশিয়ার বৃহত্তম সার কারখানা FCI, PDIL (আগে নাম ছিল P & D) নামে গবেষণা সংস্থা, ACC সিমেন্ট কারখানা আর রাজ্যের সবচেয়ে বড় আর নামী ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজ BIT- তা সত্ত্বেও বসবাসের চমৎকার শান্তিপূর্ণ পরিবেশ। নদীর ওপারে বাংলার পুরুলিয়া জেলা, কলকাতা থেকে মাত্র ঘণ্টা পাঁচেকের রাস্তা। এমন একটা জায়গায় ধূমধাম করে দুর্গাপূজা হবে না- এটা ভাবা যায়?
যুবশক্তি আর প্রাণপ্রাচুর্যে ভরপুর ছিল এই শহর, অভাব ছিল না মাঠ-ঘাটের। তাই ছেলেমেয়েদের সঙ্ঘবদ্ধ হয়ে বিভিন্ন ক...