Shadow

Author: Kulayefera

রহস্যময় সেই রাতে – সুতপা বন্দ্যোপাধ্যায়

রহস্যময় সেই রাতে – সুতপা বন্দ্যোপাধ্যায়

উত্তরণ, বিহানবেলায়
রহস্যময় সেই রাতে               সুতপা বন্দ্যোপাধ্যায়                                         ‘বাজনা শুনতে পাচ্ছিস?’ – আমার মুখের ওপর ঝুঁকে পড়ে ফিসফিসিয়ে জিজ্ঞেস করল অনুরাধা। একে ঘুম চোখ। তায় ঘরে নিশ্ছিদ্র অন্ধকার। ওর মুখ ঠাহর করতে পারলাম না। কন্ঠস্বরে আতঙ্কের ছাপ অনুভব করায় উঠে বসলাম। ও আমাকে জড়িয়ে ধরল। ওর সিঁটিয়ে যাওয়া শরীর, ঘর্মাক্ত হাতের তালুর স্পর্শে আঁতকে উঠলাম। ঘরের এক কোণে রাখা তেলের কুপি কিছুক্ষণ আগেও জ্বলছিল। খোলা জানলাগুলো দিয়ে একটা মৃদু আলো আসছিল। তবু তো আসছিল। অচেনা-অজানা জায়গায় বৃষ্টিমুখর লোডশেডিংয়ের রাতে ওই সামান্য আলোটুকুই ছিল ভরসা। কুপিটা কোনো কারণে নিভেছে। জানলাগুলো আমরা বন্ধ করেছি। একটা জানলার বাইরে অদূরে ঝাউবন ও সমুদ্র। ঝোড়ো হাওয়ায় সেই জানলার ভাঙা পাল্লার ধাক্কা লেগে বহু পুরোনো কাঠের আলমারিতে শব্দ হচ্ছিল – খট খট খট। শব্দের চোটে এর আগে একবার আমাদের ঘুম ভেঙেছে। প্রথমে শ...
প্রিন্স – সুস্মিতা কর্মকার

প্রিন্স – সুস্মিতা কর্মকার

উত্তরণ, বিহানবেলায়
প্রিন্স সুস্মিতা কর্মকার চারিদিকে সাদা। একহাত দূরেও পরিস্কার কিছু  দেখা যাচ্ছেনা। তুষার ঝড়ের মধ্যে বীথিমা দিগবিদিক জ্ঞানশূন্য হয়ে ছুটছে। হাতে ধরা সেই পোর্সিলেনের পুরুষ পুতুলটা। আমি চিৎকার করে বলছি বীথিমা কোথায় যাচ্ছো? বীথিমাআআ...কিন্তু আমার গলার আওয়াজ কেউ শুনতে পাচ্ছেনা। বীথিমা কে আর খুঁজে পাচ্ছিনা! শুধু বরফের উপর পড়ে আছে পুতুলটা। হঠাৎ বিপবিপ আওয়াজে ধড়মড় করে উঠে বসলাম। এলার্মটা অফ করে পর্দা সরিয়ে দেখলাম আজকেও বরফ পড়েছে। একেই সকালে অফিস যাওয়ার তাড়া। তার মধ্যে আবার বরফ পরিস্কার করো! একরাশ ব্যস্ততার মধ্যে একহাতে কফি আরেকহাতে বাবলিনের স্কুলের ব্যাগটা নিয়ে বেরোবার সময় একবার হাচের কাচের দরজার পিছনে পুতুলটার দিকে তাকালাম। হ্যা আজকেও পুরুষ পুতুলটা ডানদিকে ঘুরে গেছে। হাতে ভায়োলিন, হাসিমুখে তাকিয়ে আছে নৃত্যরতা নারী পুতুলটির দিকে। *** গাড়ি চালাতে চালাতে শুধু বীথিমা আর সেনদাজেঠুর কথা মনে পড়ছিল। নি...
হোয়াইট হাউসে রক্তের দাগ – দেবপ্রিয়া সরকার

হোয়াইট হাউসে রক্তের দাগ – দেবপ্রিয়া সরকার

উত্তরণ, বিহানবেলায়
হোয়াইট হাউসে রক্তের দাগ দেবপ্রিয়া সরকার কুয়াশা ঢাকা আকাশের গায়ে লেপ্টে আছে কমলা রঙের চাঁদ। বিকেলের পর থেকেই শিরশিরে উত্তুরে হাওয়া কাঁপন ধরাচ্ছে। আজ ডিসেম্বরের চব্বিশ। রাত পোহালেই বড়দিন। চারদিকে উৎসবের আবহ। আলোর মালায় সেজেছে চার্চ,দোকানপাট;হোয়াইট হাউসও। অ্যালবার্ট ডিসুজা নামজাদা মানুষ। বংশপরম্পরায় ধনী। তাঁর পূর্বপুরুষরা ইংরেজ আমলে কাঠের ব্যবসা করতে এসেছিলেন ডুয়ার্সে। তারপর এখানেই রয়ে গেলেন পাকাপাকিভাবে। ব্যবসার পাশাপাশি রাজনীতিতেও অ্যালবার্ট হাত পাকিয়েছেন ভালরকম। খুব বড়সড় গণ্ডগোল না হলে এবছর তাঁর বিধানসভায় টিকিট পাওয়া কেউ আটকাতে পারবে না। ডিসুজাদের  বাড়িটা ছিল অনেক পুরনো। অ্যালবার্ট তাকে ভেঙে তৈরি করেছেন হাল ফ্যাশানের দালান। দামী মার্বেল পাথর বসানো বাড়ির বাইরের রঙ ধবধবে সাদা। স্থানীয় মানুষরা বলে হোয়াইট হাউস।  হোয়াইট হাউসে আজ চলছে খ্রিস্টমাস ইভ সেলিব্রেশন। আত্মীয়-বন্ধু,পার্টির নেতা-কর্ম...
আমি তো তোমারে চাহিনি জীবনে… সুকন্যা দাশগুপ্ত

আমি তো তোমারে চাহিনি জীবনে… সুকন্যা দাশগুপ্ত

গান ও বাদ্য, বিহানবেলায়
আমি তো তোমারে চাহিনি জীবনে... সুকন্যা দাশগুপ্ত https://youtu.be/FMAIS01NUL4 সুকন্যা দাসগুপ্ত পরিচিতিঃ বর্ধমান বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ইংরাজি সাহিত্যে স্নাতকোত্তর। সাহিত্যকে সঙ্গী করে বিদ্যালয়ে শিক্ষকতা শুরু। সে পথচলা আজও অব্যাহত। এর পাশাপাশি রয়েছে দ্বিতীয় প্রেম--সঙ্গীত। সুরের মূর্ছনা কে হৃদয়ে নিয়ে বিভিন্ন অনুষ্ঠানে যোগদান ও পরিচালনায় তাঁর আগ্রহ ও দক্ষতার সাক্ষর তিনি রেখেছেন। কবিতার টান তাঁকে বেঁধে রেখেছে সাহিত্যের পথে।  ...
দিন বদলের গল্প – ব্রতী ঘোষ

দিন বদলের গল্প – ব্রতী ঘোষ

গল্প, বিহানবেলায়
দিন বদলের গল্প ব্রতী ঘোষ অপর্ণা সাতে পাঁচে থাকতে ভালোবাসেন না৷ সংসারটা গুছিয়ে করেছেন বরাবর। তিরিশ বছরের বিবাহিত জীবনে সৌম্যদেব সেন গুপ্তকে সুখী করতে কোন ফাঁক রাখেন নি৷ছেলেকে মানুষ করতে নিজের চাকরি ছেড়েছেন৷যতোদিন শ্বশুর শাশুড়ি ছিলেন তাদের যত্ন করেছেন৷এখনও সকাল থেকে রাত পর্যন্ত স্বামীর খেয়াল রাখেন৷ঠিক সময়ে প্রেশার,সুগারের ওষুধ তার হাতে তুলে দিতে ভোলেন না৷অপর্ণার এতো সব গুণের মধ্যে ও একটি ভারি দোষ।তিনি মুখে কথা বলেন খুব কম৷যা করার কাজের মধ্যে দিয়েই প্রকাশ করেন৷সকাল থেকে রাত পর্যন্ত কাজের মধ্যে দুপুর বেলাটা ওর নিজের জন্য বরাদ্দ।এই সময়টুকু উনি যত্ন করে তুলে রাখেন একান্ত নিজের করে৷এই সময় মনের জানালাটি উনি হাট করে খুলে দেন৷দক্ষিণের বারান্দায় বসে মনের সব গ্লানি ডায়েরীর পাতায় লিখে রাখেন কখনো কবিতায়,কখনো তা গদ্যে৷ সৌম্যদেব একটি রাষ্ট্রায়ত্ত সংস্থার উচ্চ পদস্থ কর্মচারী ছিলেন। বত্রিশ বছর চাকরি ক...
চরৈবেতি – কঙ্কণা সেন

চরৈবেতি – কঙ্কণা সেন

কবিতা, বিহানবেলায়
চরৈবেতি কঙ্কণা সেন বিষণ্ণতার বিল-জলে ডুব দিয়ে উঠেছি। আর তাকাবো না ফিরে অতীত,তুমি কবরেই থাকো। প্রতিদিনের চলমান মুহূর্তগুলোকে দু'মুঠিতে আঁকড়ে পা বাড়াব অনাগতের দিকে সে পথ হোক না পিচ্ছিল, ধূলিধূসর,রুক্ষ মরু---কাঁটা বিছানো বা ফুলের।। ********************************************************** কঙ্কনা সেন পরিচিতিঃ রবীন্দ্র ভারতী বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বাংলা সাহিত্যে এম এ। ছোট থেকেই কবিতার প্রতি ভালোবাসা। বিশ্বাস মানবতায়। পেশা-শিক্ষকতা।    ...
ধ্বনিল আহ্বান মধুর গম্ভীর প্রভাত অম্বর মাঝে …… বেহালায় শ্রী এস রঙ্গনাথন

ধ্বনিল আহ্বান মধুর গম্ভীর প্রভাত অম্বর মাঝে …… বেহালায় শ্রী এস রঙ্গনাথন

গান ও বাদ্য, বিহানবেলায়
  ধ্বনিল আহ্বান মধুর গম্ভীর প্রভাত অম্বর মাঝে ...... বেহালায় শ্রী এস রঙ্গনাথন   https://youtu.be/7OjsjJ4hnFI *************************************************** এস রঙ্গনাথনের পরিচিতিঃ তামিল ব্রাহ্মণ পরিবারের সন্তান এস রঙ্গনাথনের জন্ম কোলকাতায় ৷ কস্ট অ্যাকাউনটেন্ট রঙ্গনাথন ভারতীয় জীবন বীমা নিগমে ১৯৯১ সাল থেকে কর্মরত৷ তাঁর পারিবারিক ইতিহাস সঙ্গীতময়৷ প্রপিতামহ এ অনন্তকৃষ্ণণের প্রতিষ্ঠিত শ্রী গুরু গুহ গানা বিদ্যালয় ১৯৪৩ সাল থেকে কোলকাতায় এখনও পর্যন্ত সঙ্গীত শিক্ষা বিতরণ করে চলেছে পূর্ণমাত্রায়৷ ছেলেবেলায় মার কাছ থেকে গান শেখার শুরু রঙ্গনাথনের৷ এরপর নব্বই এর দশক থেকে বেহালাতে কর্নাটকী রাগসঙ্গীত শিখতে শুরু করেন৷ বর্তমানে ভারতের বিভিন্ন শহরে এবং কোলকাতায় বিভিন্ন শিল্পীর সঙ্গে এবং এককভাবে তার বেহালার সুরমূর্ছনায় মানুষকে মুগ্ধ করে চলেছেন৷...
বিস্মৃতির অতল থেকে – প্রসেনজিৎ বন্দ্যোপাধ্যায়

বিস্মৃতির অতল থেকে – প্রসেনজিৎ বন্দ্যোপাধ্যায়

আলোকপাত, বিহানবেলায়
PC: Wikimedia Commons বিস্মৃতির অতল থেকে প্রসেনজিৎ বন্দ্যোপাধ্যায় সে অনেকদিন আগের কথা। গোয়া-র একটি ছোট্ট গ্রাম কুর্দি। বর্ধিষ্ণু এই গ্রাম ছিল কৃষিসম্পদে সম্পন্ন। প্রায় সাড়ে চারশ পরিবারে আনুমানিক তিন হাজার জনবসতির এই গ্রামে এক কৃষক পরিবারে জয়শ্রীবাঈ-এর গর্ভে জন্ম নেয় এক কন্যা সন্তান। তখন বৃটিশ শাসন। সময়কাল ১৯০৩ খ্রীষ্টাব্দ। জয়শ্রী তাঁর আদরের মেয়ের নাম রাখলেন মোগু। জয়শ্রী নিজে ছিলেন সুমিষ্ট ও সুরেলা কণ্ঠের অধিকারিণী। ছোট্ট মোগুর সুরের প্রতি প্রগাঢ় প্রেম দেখে জয়শ্রী মোগুকে উচ্চাঙ্গ সংগীত শিক্ষায় শিক্ষিত করবেন মনস্থ করেন। তাছাড়া, অমন প্রত্যন্ত গ্রামে সেসময় সেভাবে পৌঁছয়নি শিক্ষার আলো। নিজের অপ্রাপ্তি তিনি কন্যার মাধ্যমে মিটিয়ে নেওয়ার দৃঢ় সংকল্পে মাত্র দশ বছর বয়সের মোগু কে পার্শ্ববর্তী জাম্বোলিম গ্রামের মন্দিরে রেখে আসেন, যাতে সেখানে মোগু সংগীত শিক্ষার প্রাথমিক পাঠ প্রাপ্ত হয়। জাম্বোলিমে এক ভ...
ভাবনার পরিসর – প্রতিভা পাল সেন

ভাবনার পরিসর – প্রতিভা পাল সেন

কবিতা, বিহানবেলায়
  ভাবনার পরিসর প্রতিভা পাল সেন ঝুরঝুরে ভাবনার শরীরে ঘুণপোকার দৌরাত্ম্য,ক্লান্ত অবসরে; স্মৃতির রেলিং ধরে উদাস হওয়া মনের-বাঁক! পরিবর্তনের খেলায় সামিল,অভিযোজিত আগামীর অলি-গলি; স্পর্শক বরাবর হেঁটে চলা জীবন হঠাৎ থমকে দাঁড়িয়ে বলে,- 'স্বপ্ন'রা আজীবন মনেই বেঁচে থাক!' বন্ধ চোখের কোণ-জমা আর্দ্রতা,নীল-শূন্যতায় বাষ্পীভূত হতে চায়; ভোরের আলোর-স্নিগ্ধতায় আশার কিরণ লেখে,নতুন-সুরের স্বরলিপি! ব্যস্ততার ভীষণ-ভিড়ে তপ্ত রোদের দুপুর-ছোঁয়া অনুরাগ- গোধূলির আলোকবর্তিকায় আঁকে,আঁধার রাতের প্রতিচ্ছবি! কথা ছিল আবেগের মিছিলে সামিল হবে না পিচ্ছিল কোনও অনুভব; হিসেবের পাকদণ্ডী বেয়ে,সাজানো হবে কল্পনার পরিবৃত্ত! গুটিগুটি পায়ে যখন তারা'রা জ্বলে ওঠে আকাশের বুকে- এলোমেলো শহর তখন ভাঙা-চাঁদের জ্যোৎস্না মেখে সম্পৃক্ত! বাস্তবে,জীবন-পরিসর ভাবনার রঙে আবৃত!! *************************************************...
শান্তিনাথবাবুর বোধোদয় – চন্দ্রকান্তি দত্ত

শান্তিনাথবাবুর বোধোদয় – চন্দ্রকান্তি দত্ত

গল্প, বিহানবেলায়
শান্তিনাথবাবুর বোধোদয় চন্দ্রকান্তি দত্ত শান্তিনাথবাবু ও আদিনাথবাবু। এঁরা পাশাপাশি দুটি ঘরে বাস করেন। তবে এঁরা দুজন একে অপরের আত্মীয় নন। শান্তিনাথবাবুর আদি বাড়ি ঢাকা জেলার বারদি গ্রামে। আদিনাথবাবুর বাড়ি বহরমপুরে। দুজনেই কর্মসূত্রে কলকাতায় থাকেন এবং যদুনাথ পুততুন্ড সেকেন্ড বাই লেনের বিখ্যাত সমাজসেবী শ্রীবনোয়ারীলাল তম্বাকুওয়ালার বাড়ির চারতলায় পাশাপাশি ভাড়ায় থাকেন। এঁদের বাসাদুটি আলাদা,কিন্তু সামনে বেশ বড় একটা খোলা ছাদ আছে যেটা দুভাগে ভাগ করা নেই। ছাদের এই খোলা অংশটা শুধু এঁরাই ব্যবহার করেন। অন্য বাসিন্দারা এই ছাদে আসতে পারেন না। কারণ,ছাদে আসতে হয় এঁদের কারও বাসার মধ্য দিয়ে। অন্য কোন পথ নেই। শান্তিনাথবাবু বন্দরে ঠিকাদারী করেন। অগাধ পয়সা করেছেন। তবে বয়স পঞ্চাশের কাছাকাছি হয়ে গেলেও দার পরিগ্রহ করেন নি। কারণটা দ্বিবিধ-অল্প বয়সে পয়সা রোজগারের যুদ্ধে সময় হয়ে ওঠে নি। পরে যখন সময় হল, তখন মা-...
error: বিষয়বস্তু সুরক্ষিত !!