Shadow

Author: Kulayefera

সারসের প্রতি – অনিরুদ্ধ ভট্টাচার্য্য

সারসের প্রতি – অনিরুদ্ধ ভট্টাচার্য্য

কবিতা
সারসের প্রতি অনিরুদ্ধ ভট্টাচার্য্য বেদনার গ্লানি তোমার ডানায় মুছে যেতে দেখেছি, পাত্র ভরা কানায় কানায়, যেন একসাথে থেকেছি, আরও নেশা করব বলে। আমার উৎসাহের অতলে কেউ যেন মুখ ফিরিয়ে আছে, বোঝা না বোঝার উর্ধে যেন, যদি পড়ে ধরা কারুর কাছে! নদীর তীরটি ধরে- পায়ে চলা পথের থেকে সরে সরে- যে বালির চরে একটা পরিমিত সাদা অঙ্গন গড়েছ তোমরা- আমাদের নিগূঢ় শীতে, তোমাদের প্রাণভোমরা অবহেলে করেছে গ্রহণ একটা কবোষ্ণ উত্তাপ। দূরাগত শোকসন্তাপ, যেখানে মলিন সূর্য্যের, সাথী হয়েও- শুভ্র হিমশৌর্য্যের মানে পরাভব- সে গণরাজ্যের পাকদন্ডী বেয়ে মহাচীন হিমালয় ছেয়ে যখন থেকে জীব জীবের পেয়েছে সাড়া- তখন থেকে আমরা একাকীত্বের দূত- এই জেনে এই দেখে- উড়েছো এক পরিযায়ী চেতনার আশ্রয়ে। আবেগের সাশ্রয়ে, তোমাদের উড্ডীন পাখার ব্যপ্তি যখন, দূরের গাঢ় নীলে, ছায়া ফেলে থাকার স্বপ্ন মেলে, প্রচ্ছন্ন উদ্বেগে- আমা...
পিছুটান – রিমিতা কর

পিছুটান – রিমিতা কর

গল্প
পিছুটান রিমিতা কর প্রায় ষোলো বছর পর পায়রাডাঙা স্টেশনে পা রাখল পৃথা। ট্রেন থেকে নেমে চারদিকটা ভালো করে  দেখল। অনেক পাল্টে গেছে সবকিছু। প্ল্যাটফর্মে বড়  একটা স্ন্যাক্সের দোকান  হয়েছে। টিকিট কাউন্টারের দিকটাও বেশ ঝকঝকে হয়েছে। আগে কেমন একটা মফস্বলের ছাপ ছিল।এখন আর নেই। প্ল্যাটফর্ম ধরে হাঁটতে হাঁটতে পৃথার চোখে পড়ল  কৃষ্ণচূড়া গাছটা। লাল ফুল আজও  বিছিয়ে পড়ে আছে মাটিতে। পৃথার জীবনের দীর্ঘ  দশ বছরের অনেক উত্থান পতনের সাক্ষী এই কৃষ্ণচূড়া গাছ, এই স্টেশন। স্টেশন থেকে বেরিয়ে রিক্সাস্ট্যান্ডে এসে পৃথা অবাক হল। স্টেশন রোডের দুপাশে সারি সারি কত নতুন দোকান আর মানুষের ভিড়। রিক্সা টোটো বাইকের জটলা রাস্তার মোড়ে। সেদিনের গ্রাম্য নির্জন পায়রাডাঙার গায়ে রীতিমতো  আধুনিকতার হাওয়া লেগেছে। সময়টাও তো নেহাত কম নয়। পৃথার জীবনেও তো কত অজানা অধ্যায় উন্মোচিত হয়েছে। পৃথা মনে মনে ভাবল ভাগ্যিস দেবরূপের কথায় বাড়ির গাড়িতে ...
সবুজ প্রজাপতি – সুরজিৎ সরখেল

সবুজ প্রজাপতি – সুরজিৎ সরখেল

গল্প
  সবুজ প্রজাপতি সুরজিৎ সরখেল "কি হল রে,! মোবাইলটা বন্ধ করে শুয়ে আছিস! আর সকাল থেকেই যতবার ফোন করছি, সুইচ অফ। ঘড়িতে এখন তোর বারোটা বাজতে বারো মিনিট বাকি!"একতলা থেকে সিঁড়ি দিয়ে উঠতে উঠতে গম্ গম্ করে কথাগুলো বলতে বলতে সৌমীর ঘরের দরজাটা আস্তে ঠেলে রাজা সৌমীর মাথার কাছে বিছানায় নিঃশব্দে বসে পড়ল। এখনও নিঃসাড়ে ঘুমিয়ে আছে। একদৃষ্টে চেয়ে থাকে রাজা। নিঃশ্বাস প্রশ্বাসের ওঠানামার সঙ্গে বুকের মধ্যে একটা ঘড়ঘড় আওয়াজ ভেসে আসছে। কে বলবে ওখানেই মারণ রোগ বাসা বেঁধেছে পাকাপাকি ভাবে! গত বছর কাকু মারা যাবার পরেই রোগটা ধরা পড়ে। এখন সেকেন্ড স্টেজ চলছে। "কার্সিনোমা" খুব তাড়াতাড়ি ছড়িয়ে পড়ে সারা শরীর জুড়ে। ঠিক সময়ে ঠিক চিকিৎসা না হলে....! একটা আশঙ্কা ঘিরে ধরতেই রাজার চোখটা ছলছল করে উঠল। এ বাড়িতে মাত্র তিনটে মানুষ। সৌমী, সৌমীর মা সুনন্দা,আর ঠাকুমা। ঘুষুড়ি স্টেশনের পশ্চিমদিকে এই চক্রবর্ত...

ভবিষ্যৎ – সঞ্জীব নারায়ণ দত্ত

কবিতা
ভবিষ্যৎ সঞ্জীব নারায়ণ দত্ত আসন্ন সময় পঞ্জিকায় জোয়ার ভাঁটা নিয়ে কোনো পূর্বাভাস নেই, নেই কোনো সময়ের নির্ঘন্ট ৷ তাই নিস্তরঙ্গ ভেসে চলার কথা হালকা চিন্তাগুলোই শুধু রেখে দাও৷ ভারী স্বপ্নগুলোকে নিয়ে এখন আর একটুও এগোনো যাবে না৷ আসন্ন সময় পঞ্জিকায় কোন মাহেন্দ্রক্ষণ বলে কিছু নেই৷ যে কোন মূহুর্তেই শুরু হতে পারে বিপদ। শুরু হতে পারে বৃষ্টি আর তাই প্রতি মূহুর্তে চূড়ান্ত সতর্কতা৷ আগুনে পুড়তেও পারি এমনকি বৃষ্টিতেও ভিজতে পারি৷ আসন্ন সময় পঞ্জিকার প্রথম ও শেষ পাতাটাই নেই তাই শুরু আর শেষ দুটোই জিজ্ঞাসায় মোড়া৷ ******************************************** কবি পরিচিতি ~ জন্ম ও পড়াশোনা কোলকাতায়৷ মূলতঃ ভাস্কর ও চিত্রশিল্পী৷ বিজ্ঞানের ছাত্র সঞ্জীব কোলকাতার ইন্ডিয়ান আর্ট কলেজ থেকে চিত্রকলা ও ভাষ্কর শ্রী মাধব ভট্টাচার্যের কাছে ভাস্কর্যের শিক্ষা লাভ করেন৷ সারা দেশে ও বিদেশে তাঁর শিল্প ...
সন্ধ্যার মিলনমেলা – প্রণব  আচার্য্য

সন্ধ্যার মিলনমেলা – প্রণব আচার্য্য

কবিতা
সন্ধ্যার মিলনমেলা প্রণব আচার্য্য সন্ধ্যা যখন নামে, মন এই আশাতেই থাকে। যে তারারা লুকিয়েছিলো দিনের আলোতে, মিটিমিটি হয়ে জ্বলবে এবার নীল আকাশেতে। জ্বলবে প্রদীপ তুলসী তলায় শঙ্খ ধ্বনি দিয়ে, আনন্দে মোরা মেতে উঠবো সবাইকে নিয়ে। সন্ধ্যার তমসা ছায় যখন চারিদিকে, গৃহগুলি হয় রোশনাই কৃত্রিম আলোকে। খুশির জোয়ার বয় প্রতি ঘরে ঘরে, ফিরবে ঘরে তারা, যারা গিয়েছে বাইরে। সন্তানেরা চেয়ে থাকে বাবার প্রাতিক্ষায়, বধূরা থাকে চেয়ে তাদের স্বামীর অপেক্ষায়। এমন শ্রেষ্ঠ সময় আছে নাকি আর  ? পরিবারকে মিলিত করে একই ছাদের তলায়, ফিরিয়ে আনে ঘরে ঘরে খুশির জোয়ার, সন্ধ্যাই হয়ে ওঠে শুভক্ষণ সবার মিলনমেলার। *****************************************   প্রণব আচার্য্য পরিচিতি :  বি. কম (অনার্স), কাব্য ও সাহিত্য চর্চায় অনুরাগী। সম্প্রতি কিছুদিন আগে থেকে কলম কে সাথী করে পথ চলা।...
কই ফিস ডুডল – সব্যসাচী  দাশগুপ্ত

কই ফিস ডুডল – সব্যসাচী দাশগুপ্ত

আঁকিবুকি
মান্ডালা আর্টের অনুপ্রেরণায় "কই ফিস ডুডল" koi fish doodle। সাধারণতঃ জাপানি কৈ ফিশ কার্প ইলাস্ট্রেশনে এই মুভমেন্ট গুলো পাওয়া যায়, আর তাতে মিশে আছে মান্ডালা আর্টের ডুডল মোটিভ! সাকুরা সিগমা মাইক্রন পেনে ৩০০ জি এস এম কোল্ড কম্প্রেস পেপারে আঁকা হয়েছে। ******************************************   সব্যসাচী  দাশগুপ্ত পরিচিতি: শিল্পী, যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয় থেকে শিক্ষা সমাপ্ত করার পর, দীর্ঘ সময় ধরে একটি বহুজাতিক সংস্থায় সাফল্যের সঙ্গে কর্মজীবন কাটিয়ে বর্তমানে সদ্য অবসরপ্রাপ্ত।  লেখালেখি ও ছবি আঁকা বরাবরই তার মন টানে। তাই এই অবসর জীবনে আবার নতুন করে  সৃষ্টির উন্মাদনায় নিজেকে ব্যাপ্ত করেছেন।...
জ্যোতিরলিঙ্গ ভীমাশঙ্কর – বিজিত কুমার রায়

জ্যোতিরলিঙ্গ ভীমাশঙ্কর – বিজিত কুমার রায়

দেখবো এবার জগৎটাকে
জ্যোতিরলিঙ্গ ভীমাশঙ্কর বিজিত কুমার রায় জ্যোতিরলিঙ্গ ভীমাশঙ্কর মন্দির পুনে থেকে ১২৭ কিমি দূরে সহ্যাদ্রী পাহাড়ের ওপরে অবস্থিত, যা ভীমা নদীর উৎসস্থল। এই ভীমা নদী দক্ষিণপূর্ব দিকে গিয়ে রাইচুরের কাছে কৃষ্ণা নদীতে মিলেছে। ২০০৯ অথবা ২০১০ সালে পুনেতে আমার মেয়ের বাড়ীতে থাকার সময় আমরা ভীমাশঙ্কর দর্শনে যাই। সকাল বেলা ৫টার সময়ে রওয়ানা হয়ে যাওয়া হয় গাড়ীতে। সহ্যাদ্রি পাহাড়ের অপূর্ব সুন্দর রাস্তা। বর্ষাকাল বলে চারিদিক সবুজ। পুনে থেকে প্রায় ১২৭ কিমি দূরে সমুদ্রতল থেকে ৩৫০০ ফুট উঁচুতে, চারিদিকে পাহাড় আর জঙ্গলের মধ্যে বহু প্রাচীন গ্রানাইট পাথরের মন্দির। ওপর থেকে কিছুটা সিঁড়ি দিয়ে নেমে মন্দির প্রাঙ্গন। গর্ভমন্দিরে প্রবেশের আগে নন্দিশ্বরের মূর্তিকে প্রণাম জানিয়ে ভেতরে প্রবেশ করলাম। ভেতরটা আলো আঁধারী। প্রদীপের আলোতে বিগ্রহ দর্শন। সামনে বেশ বড় গৌরীপট্টর মধ্যে মূল ভীমাশঙ্কর লিঙ্গ। এক হাতেরও কম উঁচু। লিঙ্গের ম...

জ্যোতিরলিঙ্গ ত্র্যম্বকেশ্বর – বিজিত কুমার রায়

দেখবো এবার জগৎটাকে
জ্যোতিরলিঙ্গ ত্র্যম্বকেশ্বর বিজিত কুমার রায় কোম্পানির কাজের সুবাদে ২০০৬ সালে থাকতে হয়েছিল নাসিকে ৫ দিন। সেই সময়ে সস্ত্রীক ভ্রমণ করি নাসিক, ত্র্যম্বকেশ্বর, শিরডি সাই ও শনি সিংনাপুর। একদিন বৈকাল বেলা বেরিয়ে আমরা নাসিক শহর ঘুরে দেখলাম। বনবাসকালে শ্রী রামচন্দ্র, সীতা ও লক্ষণ এই নাসিকের পঞ্চবটিতে কিছুদিন অবস্থান করেছিলেন। তখন এই জায়গার নাম ছিল "জনস্থান"। এই স্থানেই রামায়ণে আছে শুর্পনখার নাক কেটে দেন লক্ষণ তাই প্রচলিত আছে এই জায়গার নাম নাসিক বলে। চারিদিকে দূরে দূরে সবুজ পাহাড় ঘেরা সুন্দর শহর নাসিক। প্রথমে আমরা মা গোদাবরীর মন্দিরে দেবীমূর্তি দর্শন ও প্রণাম করে রামঘাটে এসে নদীর জল স্পর্শ করলাম। এই বিখ্যাত রামঘাট। এখানেই প্রতি বারো বছর অন্তর মাঘ মাসের শুক্লা দশমী তিথিতে বৃহস্পতি গ্রহ সিংহ রাশিস্থ হলে বৃহস্পতিবারের মধ্যাহ্নে কুম্ভ যোগ হয়। এরপর দর্শন করলাম কপালেশ্বর মহাদেব। তারপরে 'কালারামের' মন্...
শ্রীহরি – সোনালী গুহ

শ্রীহরি – সোনালী গুহ

গল্প, শ্লোক থেকে ব্লগ
শ্রীহরি সোনালী গুহ বৈকুন্ঠপুরের দক্ষিণারঞ্জন মিত্র ব্যবসায়ী মানুষ|পরম বৈষ্ণব|গলায় তুলসীর মালা, দুই বেলা ইষ্ট নাম জপ না করে মুখে কিছুই দেননা| বাড়িতে মাংস দূরের কথা, মাছ ও ঢোকে না| অসম্ভব নিয়ম নিষ্ঠায় জীবন কাটান| বয়েস হয়েছে, চার ছেলেই এখন কারবার দেখা শোনা করে| মিত্রমশাই বাকিজীবন ধর্ম কর্মেই কাটাবেন স্থির করেছেন| স্ত্রী মনোরমা গত হবার পর থেকে আরো যেন পুজো পাঠ বেড়েছে| বাড়িতে চার ছেলে, চার বৌমা, দুই নাতি, একটি নাতনি| ছোট ছেলের এখনো সন্তানাদি হয়নি| এই নিয়ে মিত্রমশাই একটু আক্ষেপ করেন মনে মনে, কিন্তু মুখে কিছু বলেননা| ভাবেন, মনোরমা থাকলে নিশ্চয় যাগযজ্ঞ, তাবিজ কবজ করতেন কিছু| এটা ছাড়া সংসারে আপাত দৃষ্টিতে কোনো সমস্যা নেই| স্বচ্ছল পরিবারের চাকর বাকরের ও অভাব নেই| সংসারের রথ নির্বিঘ্নেই চলছে বলা চলে| রাশভারী মিত্র মশাই একবার গঙ্গা স্নানে গেলেন কলকাতায়| বড় বৌমাকে ডেকে বলে গেলেন, "বৌমা, তুমি বড়, এ...
বেলুড় মঠে দুর্গাপূজা – বিজিত কুমার রায়

বেলুড় মঠে দুর্গাপূজা – বিজিত কুমার রায়

পাকা চুলের কলমে
বেলুড় মঠে দুর্গাপূজা বিজিত কুমার রায় স্মৃতির পাতা থেকে............... অনেক দিন ধরেই স্বামী বিবেকানন্দের মনে এই ইচ্ছেটা ছিল যে তিনি বেলুড়মঠে দুর্গাপূজো করবেন। কিন্তু নানা কারণে তা আর হয়ে ওঠেনি। ১৮৯৭ খ্রিস্টাব্দে বেলুড়মঠ প্রতিষ্ঠার পর স্বামীজি প্রায়ই তাঁর প্রিয় বেলগাছতলায় বসে সম্মুখে প্রবাহিতা গঙ্গার দিকে তাকিয়ে আপন মনে গাইতেন ‘‘…বিল্ববৃক্ষমুলে পাতিয়া বোধন/গণেশের কল্যাণে গৌরীর আগমন।/ঘরে আনব চণ্ডী, কর্ণে শুনব চণ্ডী,/আসবে কত দণ্ডী, জটাজুটধারী"। এরপর একদিন ১৯০১ খ্রিস্টাব্দের মে-জুন মাস নাগাদ স্বামীজির অন্যতম গৃহী শিষ্য শরৎচন্দ্র চক্রবর্তী বেলুড়মঠে এলে বিবেকানন্দ তাঁকে ডেকে রঘুনন্দনের ‘অষ্টবিংশতি তত্ত্ব’ বইটি কিনে আনার জন্য বললেন। শরৎচন্দ্র চক্রবর্তী কৌতূহলী হয়ে প্রশ্ন করলেন, ‘আপনি রঘুনন্দনের বইটি নিয়ে কি করবেন?’ স্বামীজি বললেন, ‘এবার মঠে দুর্গোৎসব করবার ইচ্ছে হচ্ছে। যদি খরচ সঙ্কুলান হয় ত মহ...
error: বিষয়বস্তু সুরক্ষিত !!