কুলায়ফেরা – পঞ্চম বর্ষপূর্তি
কুলায়ফেরা – পঞ্চম বর্ষপূর্তি

বাংলা তথা ভারতপ্রেমী ফরাসি দোভাষী অগুস্ট্যা ওসাঁ – অনির্বাণ সাহা
বাংলা তথা ভারতপ্রেমী ফরাসি দোভাষী অগুস্ট্যা ওসাঁ
অনির্বাণ সাহা
তৎকালীন ফরাসি চন্দননগরে অষ্টাদশ শতকের দ্বিতীয় দশক থেকেই শুরু হয় নগর সৌন্দর্যায়ন। ফরাসি তত্ত্বাবধানে এখানে বাণিজ্যের মূল কেন্দ্র গড়ে ওঠে। শহর ধীরে ধীরে সেজে উঠতে শুরু করে। জনসংখ্যা বাড়ে, পাকা বাড়ি তৈরি হয়,রাস্তা তৈরি হয়,ফরাসি স্থাপত্য-ভাস্কর্যে সেজে উঠতে থাকে চন্দননগর শহরের বিভিন্ন প্রান্ত। সাহিত্য-সংস্কৃতির দিক থেকেও দ্রুত গতিতে এগিয়ে যেতে থাকে চন্দননগরের স্থান। আর সাহিত্য-সংস্কৃতি ও ভাস্কর্যের কথা বলতে গেলে এই শহরের তৎকালীন ফরাসি দোভাষী অগুস্ট্যা ওসাঁর নাম অবশ্যই উল্লেখ করতে হয়।
অধ্যাপক বিশ্বনাথ বন্দ্যোপাধ্যায়ের মতে অগুস্ট্যা ওসাঁ আনুমানিক ১৭৭৮ সাল পর্যন্ত ছিলেন তৎকালীন চন্দননগরের ফরাসি সরকারের দোভাষী । তিনি ফরাসি,উর্দু,ফার্সি এবং বাংলা ভাষায় পারদর্শী ছিলেন বলে জানা যায়। বাংলা তথা ভারতীয় সংস্কৃতিতে অগুস্ট্যা ও...

আবেগের আর এক নাম গুলজার – অজন্তা প্রবাহিতা
আবেগের আরেক নাম-গুলজার
অজন্তা প্রবাহিতা
সারা পৃথিবী যখন অমাবস্যার অন্ধকারে আছন্ন,তখন,একমাত্র বান্দ্রার আকাশে জ্বলজ্বল করে দুধীয়া চাঁদ । আমাদের সবার প্রিয় গুলজার সাহেব । যাঁর অনুমতি না পেলে রাত অপেক্ষা করে,চাঁদ অস্ত যায় না।
“তুম জো কেহ দো তো আজ কি রাত চাঁদ ডুবেগা নেহি । রাত কো রোক লো ।"
শান্ত,মৃদুভাষী,ধবধবে সাদা পাজামা-পাঞ্জাবি পরা এই মানুষটাকে দূর থেকে দেখলেই চেনা যায় । পরিচয় করিয়ে দিতে হয় না । সাহিত্য ও চলচ্চিত্রে আগ্রহী গুলজার সাহেবের আসল নাম,'সম্পূরণ সিং কালরা'। তাঁর ওস্তাদ কবিতার প্রতি ভালোবাসা দেখে তাঁকে কলম-নাম 'গুলজার' দিয়েছিলেন,যার অর্থ গোলাপের বিছানা ।
তিনি শিখ-পরিবারে জন্মেছেন ১৯৩৬,মতান্তরে ১৯৩৪ সালের ১৮ আগস্ট দিনায় (ব্রিটিশ ভারতের ঝিলম জেলা,বর্তমানে যেটা পাকিস্তানে অবস্থিত)।বাবা মাখন সিং কালরা এবং মা সুজান কাউর ।
দেশত্যাগ নামক প্রলয়ের আঘাতে তাসের ঘরের মতো তছনছ হয়...

স্বাধীনোত্তর ভারত – মেরী খাতুন
"স্বাধীনোত্তর ভারত"
মেরী খাতুন
মানুষের জীবনে স্বাধীনতার থেকে বড় কিছু নেই। দেশ স্বাধীন হলেই মানুষের সর্বাধিক উন্নতির পথ প্রশস্ত হয়ে যায়। কবি রঙ্গলাল বন্দ্যোপাধ্যায় তাই বলেছেন----- স্বাধীনতা হীনতায় কে বাঁচিতে চায়। দাসত্ব শৃংখল বল কে পরিবে পায় হে, কে পরিবে পায়?"
পুরাতনের বিদায়ের মধ্যে দিয়েই ঘটে নবীনের আগমন। পুরনো শতকের সুখ-দুঃখ, জয়-পরাজয়, হাসি-কান্না ভুলে স্বাগত জানাতে হবে নতুন শতককে। নতুন শতক নতুন আশা-উদ্দীপনায়, প্রাণ-প্রাচুর্যে মানুষের হৃদয় ভরে তুলবে, নাকি বিংশ শতাব্দীর চেয়েও হতাশার অন্ধকারে ভারতবাসীকে নিক্ষিপ্ত করবে?-- এটাই জিজ্ঞাসা।
ভারতবর্ষের ইতিহাসে বিংশ শতাব্দীর প্রথমার্ধ খুবই গুরুত্বপূর্ণ। ভারতবাসীর যা-কিছু আশা-আকাঙ্ক্ষা,সংশয় সবই এই প্রথমার্ধ জুড়ে। বিভিন্ন ঘটনায় পূর্ণ এই ভারতবাসীর মনে গভীর দাগ কাটতে সক্ষম হয়েছে। এই শতকের সূচনাতেই লর্ড কার্জনের "বঙ্গভঙ্গ আইন" ...

রাত্রির ইতিহাস – সুরভী চট্টোপাধ্যায়
রাত্রির ইতিহাস
সুরভী চট্টোপাধ্যায়
আমি মাথা নিচু করে পড়ছিলাম রাত্রির ইতিহাস
বিজ্ঞাপনের মতো উঠে আসছিল ধ্বংসের ছায়াগুলো
আমি নিরীক্ষণ করছিলাম
আর ঢেউ হারিয়ে ফেলছিল নিজেকে
দামাল সাগরের বুকে বিকলাঙ্গ শিশুর মতো।
যুদ্ধের পালক পুড়িয়ে তুমি কয়েকটি বর্ণ লিখেছিলে
আর আমরা তলানিতেও খড় যুগিয়েছিলাম
পর্যবেক্ষক দল ফিরে গেছে
ঘষা কাঁচে ব্যস্ত প্রত্নতাত্ত্বিকেরা..
নিয়ম মেনে আমরা করছি এসব হাওয়ার রাস্তা ধরে
কতগুলো আঙ্গুল ছিঁড়ে পড়ে আছে সুবর্ণরেখার ধার ঘেঁষে
পশ্চিমে সরে যাচ্ছে মাথাগুলো
এবং সুবর্ণরেখাও হাত ধুয়ে নিয়েছে এত রক্ত মেখে
কয়েকটি হাঁস শুধু ভেসে যাচ্ছে মুগ্ধ রূপ নিয়ে…
*******************************************
কবি পরিচিতি - সুরভী লেখালেখির চেষ্টা করতে ভালোবাসে। এর মধ্যে বেশ কিছু পত্রপত্রিকায় তাঁর লেখা বেরিয়েছে,নিজের লেখাকে সকল পাঠকের মধ্যে পৌঁছে দেওয়াই তাঁর স্বপ্ন।...

বদ্ধ ঘরে কেবল বাঁচা – অর্চনা মহান্তি
বদ্ধ ঘরে কেবল বাঁচা
অর্চনা মহান্তি
বদ্ধ ঘরে কেবল বাঁচা,একেই নাকি জীবন বলে!
মন ময়ূরী নাচছে নাতো ঘড়ির কাঁটা কেবল চলে
উদাস সকাল,উদাস দুপুর
ঘুমিয়ে আছে পায়ের নুপূর
মন যমুনায় জোয়ার কোথায়? বালির চড়া বুকের তলে।
সূর্য ওঠে নিয়ম মতো,
তবু কোথায় আলোর আশা?
অষ্টপ্রহর চোখের পাতায় কালো ঝালর সর্বনাশা
বিরাম বিহীন অন্ধকার
নেইতো খুশির উপচার
গরমিলেতে হাপুসনয়ন,নেইতো কোন সুখের ভাসা।
পদ্মপাতায় প্রাণের ফোঁটা অস্থিরতায় কেবল টলে
পাপড়ি মেলে সকালগুলো একটি উঠোন চোখের জলে
আকাশ ডাকে আ চই চই
পাখির এখন পাখনাটা কই
ঢাকছে গোপন কষ্টগুলো মিথ্যে-মেকি হাসির ছলে
বদ্ধ ঘরে কেবল বাঁচা,একেই নাকি জীবন বলে!
********************************
অর্চনা মহান্তি পরিচিতি: বাঁকুড়া জেলার হিড়বাঁধ গ্রামে জন্ম। বাবা শ্রী ফণীভূষণ মহান্তি,মা শ্রীমতী সরোজিনী মহান্তি। পারিবারিক ভাবে সাহিত্য পাঠের সুন্দর পরিবেশে বড় হওয়ায় খুব ...

সূর্যাস্তের পর – শাঁওলি দে
সূর্যাস্তের পর
শাঁওলি দে
(এক)
বাইরে ঘুটঘুটে অন্ধকার। দেওয়ালে হেলান দিয়ে জানালার বাইরে তাকিয়ে আছে অভীক অনেকক্ষণ। কিছুই দেখা যাচ্ছে না। সন্ধে থেকে লোডশেডিং । রাস্তার বাতিগুলোও জ্বলছে না তাই। বাড়িতে ইনভার্টার আছে ,অথচ আজ কেউই কোনো ঘরে বাতি জ্বালায়নি। রাত অনেক হয়েছে তাই আশেপাশের সবাইও আলো নিভিয়ে নিশ্চিন্তে ঘুমিয়ে পড়েছে। শুধু এ বাড়িতে কারো চোখে ঘুম নেই।
এক ভাবে দাঁড়িয়ে থাকতে থাকতেই অভীক ওর পিঠে একটা স্পর্শ অনুভব করল। মাম এসে দাঁড়িয়েছে কাছে। শুকনো মুখে হাসির চেষ্টা করল অভীক। মাম অন্ধকারে টের পেল না কিছুই। ফিসফিস করে বলে উঠল,’শোবে না,অনেক রাত তো হল !’
-‘মা শুয়ে পড়েছে ?’ শান্ত গলায় জানতে চাইল অভীক।
-‘হ্যাঁ। আমি এইমাত্র ও ঘর থেকে এলাম। কিছুতেই ঘুম আসছিল না। একটা ঘুমের ওষুধ দিয়েছি।’ কেমন কৈফিয়ৎ দেওয়ার গলায় বলে উঠল মাম।
-‘উফ্ ! আবার ঘুমের ওষুধ দিতে গেলে কেন ? ডাক্তারকাকু না করেছেন তো ?’ অধৈর্...

সাধুসঙ্গ – দেব মুখার্জি
সাধুসঙ্গ
দেব মুখার্জি
শহরে ঢোকার মুখে, কয়েক ঘর মানুষের বসতি,আশেপাশে নানান গাছগাছালি,পাখির ডাকাডাকি। তার পাশ দিয়েই সরু পাহাড়ি পথটা,এর পোষাকি নাম হিল রোড,বেশ খানিকটা চড়াই পেরিয়ে রাস্তাটা শহরে এসে মিশেছে। কদাচিৎ গাড়িঘোড়া চলে এই পথে। নির্জন এই বনপথ আমার বড়োই পছন্দের,একটু ঘুরপথ হলেও এইপথেই যেতে আমি ভালোবাসি। নিদা ফাজলিকে মনে রেখে বলি,“ রাহগুজর-The favorite pathway."
এখানেই পরিচয় আমার সাধুর সঙ্গে,প্রায় সমবয়সী মানুষটা হাত বাড়িয়ে লিফ্ট চেয়েছিল একদিন। পরনে আধময়লা পোষাক, সিকিউরিটি গার্ডের,পায়ে তোবড়ানো ফুটোফাটা একটা জুতো। হাতে একটা থলি,অন্যহাতে চট দিয়ে মোড়া জলের বোতলটা। এ হেন লোকটাকে লিফ্ট ? কি মনে হয় দাঁড়াই। "বাবুজী একটু এগিয়ে দেবে চড়াইটা,হাঁফ লাগে বড্ড,চড়তে তাই",হাতদুটো জড়ো করে সে।
হাবিবগঞ্জে পদ্মশ্রী অশোক চক্রধরকে শুনেছিলাম বলতে একটা কবিতা,মসলারাম। জঙ্গলের মজুর এই মসলারাম,একবার লরিতে সওয়ার হয়...

আমাদের আন্তরিক মন – কবিতা – সুবীর গুহ
আমাদের আন্তরিক মন
সুবীর গুহ
কোথাও যাব না আমি
যাব না কোথাও --
সব মন ভিজে গেছে
জলভরা মেঘে--
কোন কিছু শুকনো নেই
আর কোনোখানে,
রূপ, রস, গন্ধ আর মানবিক বোধ
সবটুকু রাখা আছে
তোমার মুঠিতে।
তোমার চোখের কোণে
অশ্রু বিন্দু মুক্তো হলে--
হাত ধরে হেঁটে যাব
সাগর পারের সেই
আদিগন্ত নীলিমার নীলে
ছুঁয়ে যাব প্রতিটি আঙুলে
স্বপ্নে দেখা নন্দনের বন
আমাদের বিস্তৃত হৃদয়
আর আন্তরিক মন।
*********************************
সুবীর গুহ পরিচিতি
জন্ম ১৯৫২ সালে৷ মামাবাড়ির সাংস্কৃতিক পরিমণ্ডলে বড়ো হওয়া সুবীর বাবু কোলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের স্নাতক৷ ছোট থেকেই সাংস্কৃতিক পরিমন্ডলের ছাপ তাঁকে ক্রমশঃ আকৃষ্ট করে গানবাজনা,খেলাধূলা,সাহিত্য সবকিছুতেই৷ পরিণত বয়সে তার প্রকাশ ঘটে বিভিন্ন লিটল্ ম্যাগাজিনে যেমন-কর্ণ,পথে-প্রান্তরে,চর্যাপদ,আঞ্চলিক দর্পণ ও আরো নানা পত্রপত্রিকায় যা সমাদৃত হয়৷ তাঁর প্রথম কাব্যগ্রন্থ '...

তরুণ প্রজন্মের পছন্দের পর্যটন স্পট কক্সবাজার – অরুণ শীল
তরুণ প্রজন্মের পছন্দের পর্যটন স্পট কক্সবাজার
অরুণ শীল
কলকাতার তরুণ প্রজন্ম বর্তমান বাংলাদেশ সম্পর্কে জানতে চায়, বাংলাদেশকে চিনতে চায়। তাদের আগ্রহ আমাকে অনুপ্রাণিত করেছে। কলকাতা, হুগলি,শন্তিনিকেতন যেখানে গেছি, তরুণরা জানতে চেয়েছে বাংলাদেশে কক্সবাজার যেতে হলে ঢাকা থেকে কোন ট্রেন ধরতে হবে? অনলাইনে পাওয়া ঝিনুকের আদলে গড়া কক্সবাজার রেলওয়ে স্টেশনের ছবি দেখিয়ে বলেছে, অসাধারণ সুন্দর রেলওয়ে স্টেশন। ট্রেনের তথ্য অনলাইনে না পেয়ে অনেকে হতাশা ব্যক্ত করেছে। সংক্ষেপে বলতে হয়েছে, শীঘ্রই ট্রেন সার্ভিস চালু হবে, মাত্র রেললাইন বসেছে। ভারতের মতো আমাদের রেল যোগাযোগ ব্যবস্থা অত শক্তিশালী নয়। আমাদের বাস সার্ভিস উন্নতমানের। আমার জবাবে, তরুণের সন্তুষ্ট হয়েছে কি না জানি না। তবে তাদের আগ্রহ আর আলাপে একটা আলাদা উচ্ছ্বাস লক্ষ করেছি। বাংলাদেশের পর্যটন নগরী কক্সবাজারের নাম হয়ত কলকাতায় সবাই জানেন। কিন্তু জানেন না যে, এ...