Shadow

চতুর্থ বর্ষপূর্তি

চতুর্থ বর্ষপূর্তি

অনন্তবাবুর সমস্যা – চন্দ্র কান্তি দত্ত

অনন্তবাবুর সমস্যা – চন্দ্র কান্তি দত্ত

চতুর্থ বর্ষপূর্তি
অনন্তবাবুর সমস্যা চন্দ্র কান্তি দত্ত আমার কাছে 'মানুষ চেনা' কথাটার দুটো অর্থ হয়। একটা অর্থ হল মানুষটা কে,কি নাম,সেটা মনে রাখা,আর একটা অর্থ হল কোন একজনের স্বভাব-চরিত্র সম্পর্কে জ্ঞাত হওয়া। অনন্তবাবুর ক্ষেত্রে এ নিয়ে একটা সমস্যা দেখা দিয়েছে। কারণ, দ্বিতীয় কাজটা তো দূর,তিনি প্রথম কাজটাই ইদানীং ঠিকমতো করে উঠতে পারছেন না। কি যে হয়েছে বা হচ্ছে কে জানে। হঠাৎ দেখা হলে অনন্তবাবু পরিচিত মানুষকেও চিনতে পারছেন না। সেদিন যেমন হল। পাশের বাড়ির বিশু কোথাও যাচ্ছিল। অনন্তবাবুও কোন কাজে বাইরে ছিলেন। বিশুকে দেখে ডাক দিলেন,"আরে,সুবল যে? সকাল সকাল কোথায় চললে?" বেচারা বিশু। ডাক শুনে কিছুক্ষণ এদিক ওদিক চাইল। তারপর তৃতীয় কাউকে দেখতে না পেয়ে বলল,"কাকা,আপনি কি আমাকে ডাকলেন?" অনন্তবাবু যেন আকাশ থেকে পড়লেন। বললেন,"হ্যাঁ! এখানে তুমি আর আমি ছাড়া আর কাউকে তো দেখছি না।" বিশু তখন আরও বিহ্বল। বলল,"কাকা! আমি তো ...
জয় পরাজয় – রেশমি দত্ত

জয় পরাজয় – রেশমি দত্ত

চতুর্থ বর্ষপূর্তি
জয় পরাজয়                 রেশমি দত্ত                    জীতেনবাবুর ভাগ্যকে অনেকেই ঈর্ষা করেন। জীতেন্দ্রনাথ মুখোপাধ্যায় যা চান তাই পান। অফিসের দাবা কম্পিটিশনে ব’লে ব’লে হারিয়ে দেন সকলকে। বংশের একমাত্র ছেলে,শ্বশুর বাড়িতে একমাত্র জামাই,কপাল যেন সোনায় বাঁধানো। সরকারি চাকরিটাও করে দিয়েছিলেন আপন মেসোমশাই। এহেন পুরুষকে নির্দ্বিধায় ভাগ্যবান বলা যায়। তিনি নিজেও এর জন্য বেশ গর্ব অনুভব করতেন। এবার তিনি বাবা হতে চলেছেন,দারুণ আনন্দের খবর,বাড়িতে বংশধর আসতে চলেছে,জীতেনবাবু তো তাঁর মা'কে গিয়ে বললেন 'মা নাতির নাম ঠিক করো |' অর্থাৎ তিনি ধরেই নিয়েছেন তাঁর একটি পুত্র সন্তানই হবে। কিন্তু এবার উল্টে গেল পাশা। হল একটা ফুটফুটে সুন্দর মেয়ে। এই খবর পাওয়া মাত্র তিনি বিছানায় ধরাশায়ী হলেন। এই প্রথম বার তিনি হারলেন,না পাওয়ার জ্বালা বুঝলেন। ভাবলেন মুখ দেখাবেন কি করে সকলকে? কন্যা সন্তান জন্ম হওয়ায় তার পৌর...
আবেগের আরেক নামঃ গুলজার – অজন্তা প্রবাহিতা

আবেগের আরেক নামঃ গুলজার – অজন্তা প্রবাহিতা

চতুর্থ বর্ষপূর্তি
আবেগের আরেক নাম-গুলজার অজন্তা প্রবাহিতা সারা পৃথিবী যখন অমাবস্যার অন্ধকারে আছন্ন,তখন,একমাত্র বান্দ্রার আকাশে জ্বলজ্বল করে দুধীয়া চাঁদ । আমাদের সবার প্রিয় গুলজার সাহেব । যাঁর অনুমতি না পেলে রাত অপেক্ষা করে,চাঁদ অস্ত যায় না। “তুম জো কেহ দো তো আজ কি রাত চাঁদ ডুবেগা নেহি । রাত কো রোক লো ।"  শান্ত,মৃদুভাষী,ধবধবে সাদা পাজামা-পাঞ্জাবি  পরা এই মানুষটাকে দূর থেকে দেখলেই চেনা যায় । পরিচয় করিয়ে দিতে হয় না । সাহিত্য ও চলচ্চিত্রে আগ্রহী  গুলজার সাহেবের আসল নাম,'সম্পূরণ সিং কালরা'। তাঁর ওস্তাদ কবিতার প্রতি  ভালোবাসা দেখে  তাঁকে কলম-নাম 'গুলজার' দিয়েছিলেন,যার অর্থ গোলাপের বিছানা ।  তিনি শিখ-পরিবারে জন্মেছেন ১৯৩৬,মতান্তরে  ১৯৩৪ সালের ১৮ আগস্ট দিনায় (ব্রিটিশ ভারতের ঝিলম জেলা,বর্তমানে যেটা পাকিস্তানে অবস্থিত)।বাবা মাখন সিং কালরা এবং  মা সুজান কাউর । দেশত্যাগ নামক প্রলয়ের আঘাতে তাসের ঘরের মতো তছনছ হয়...
সমস্যা – সুজয় দত্ত

সমস্যা – সুজয় দত্ত

চতুর্থ বর্ষপূর্তি
সমস্যা  সুজয় দত্ত নাঃ,থালায় ভাত ফেলে উঠে যাওয়ার জো নেই। একজনের শ্যেনদৃষ্টি আমার পাতের ওপর। পেটে জায়গা থাক আর না থাক,বাকি ডালমাখা ভাত আর তরকারিগুলো শেষ করে তবে নিষ্কৃতি। নাহলেই বকুনি। ওদিকে খাবার ঘরের জানলা দিয়ে দেখতে পাচ্ছি পাশের ফ্ল্যাট থেকে চিঁড়ে আর দই ডাকছে হাত নেড়ে। এখুনি ফ্ল্যাটবাড়ির সামনের একচিলতে মাঠটায় দুপুরের বল খেলা শুরু হবে আমাদের,চলবে যতক্ষণ না বিকেলে বড়রা ইস্কুল থেকে ফিরে মাঠের দখল নেয় ততক্ষণ। চিঁড়ে আর দই হল আমার দুই প্রাণের বন্ধু,মুখার্জিবাড়ীর সেজো আর ছোট ছেলে। আসল নাম চিরন্তন আর দ্বৈপায়ন,আমরা পাড়ার ছেলেরা ঐ বলে ডাকি। দুজনেই দারুণ তুখোড় খেলাধুলোয়। আর আমি? দিনের পর দিন পেট ঠেসে ভাত গিলে গিলে নাদুসনুদুস চেহারা হচ্ছে,বন্ধুরা আড়ালে মোটা বলে,মাঠে গোলকীপার হয়ে স্রেফ দাঁড়িয়ে থাকতেই রীতিমতো হাঁসফাঁস অবস্থা। এই সব কিছুর জন্য দায়ী ওই একজনই। শুরুতে যার কথা বলছিলাম। সেই একই ব্যক্তি ...
রাজপথে – চিন্ময় চক্রবর্তী

রাজপথে – চিন্ময় চক্রবর্তী

চতুর্থ বর্ষপূর্তি
রাজপথে চিন্ময় চক্রবর্তী এক পা দু পা করে এগিয়ে চলেছি। কাঁধে আমার ঝোলা। ফিরি করার ঝোলা। ঝোলায় বিক্রির সামগ্রীগুলো পাল্টে পাল্টে গেছে। পাল্টে গেছে ক্রেতার দল। এখন যা বেচি তা কেনার লোক বড় কম। তবে যারা কেনে,তারাও সাধারণ নয়। তারা আলাদা। আর আমিও কি পাল্টে যাচ্ছি? একদম নয়। আমি যা ছিলাম তাই আছি। আসলে বাজারের প্রয়োজনে বেচার সামগ্রী পাল্টে পাল্টে যায়। আর আমি নতুন নতুন রসদ সংগ্রহ করে চলি। সামনের অসংখ্য আঁকিবুকি কাটা রাস্তা এতদিন আমায় গুলিয়ে দিয়েছে। কোন রাস্তা ধরবো বুঝতে পারতাম না। শুধু খুঁজতাম আর খুঁজতাম। ঝোলায় ছিল বিচিত্র সামগ্রী। ক্রেতাও প্রচুর। কত ঠকেছি আর জিতেছি আর ঠকেছি। বেশী ঠকেছি না বেশী জিতেছি হিসেব করিনি কক্ষণো। তবে ঠকাইনি যে,সে ব্যাপারে নিশ্চিত। তবে এবার রাস্তার গুলিয়ে যাবার ব্যাপারটা কমে আসছে। গলিপথগুলো ধীরে ধীরে মিশে যাচ্ছে একটা রাজপথে। রাজপথ একটাই। গন্তব্য একটাই। আগে ছিলো শুধু গুলিয়...
শিকড়ের খোঁজে – সাথী সেনগুপ্ত

শিকড়ের খোঁজে – সাথী সেনগুপ্ত

চতুর্থ বর্ষপূর্তি
শিকড়ের খোঁজে সাথী সেনগুপ্ত 'কোথায় যাইবেন?'- ড্রাইভার জিজ্ঞাসা করে। 'কিশোর গঞ্জ।' 'কিশোর গঞ্জের কোথায়?' 'একটা গ্রামে। গ্রামটার নাম চারপাড়া।' ড্রাইভার জিভ দিয়ে একটা চিড়িক করে শব্দ করে,'কতই তো গ্রাম আছে।' হ্যাঁ,তাইতো। স্মৃতির পাতা হাতড়ে বেড়াই। ঠাকুমার মুখে শোনা অজস্র নাম। জেলা ময়মনসিংহ,মহকুমা কিশোর গঞ্জ। আর, আর হ্যাঁ থানা কইট্যাদি (কটিহাদি),গ্রাম-চারপাড়া। আর হ্যাঁ,আরো মনে পড়ে,আশে পাশের গ্রামের নাম 'আচমিতা' আর 'মসুয়া'। মসুয়া হল সত্যজিৎ রায়ের দেশের বাড়ি। এবার ড্রাইভার বলে 'বেশ,চলেন। কিশোর গঞ্জের দিকে যাই। তারপর জিগাইয়া লমু।' চলতে শুরু করি। মাথার মধ্যে বিজ বিজ করে অসংখ্য ছেঁড়া ছেঁড়া কথা। ঠাকুমার মুখে শোনা কত ঘটনা, কত মানুষের নাম,কত স্থানের নাম। ইস্ তিনি যদি আজ বেঁচে থাকতেন। অথচ গত হয়েছেন তাও বাইশ বছর হয়ে গেল। আমারই তো কত বয়স হয়ে গেল। যেসব কথাগুলো এই  বয়সে পড়ি পড়ি করেও মনে পড়ছেনা সেগুলো...
সন্ধ্যা – জলি চক্রবর্তী শীল

সন্ধ্যা – জলি চক্রবর্তী শীল

চতুর্থ বর্ষপূর্তি
সন্ধ্যা জলি চক্রবর্তী শীল ঠিক এই বয়সেই সন্ধ্যার বিয়েটা হয়ে গিয়েছিল | এখন যে বয়স তার মেয়েটার | চোরা চোখে চেয়ে চেয়ে দেখে সে | বাপের মত মুখখানি পেয়েছে‚রঙখানিও| মাস আটেকের ছেলেটার শরীরে তেল ডলতে ডলতে মুগ্ধচোখে তাকিয়ে থাকে সন্ধ্যা | মাথার চুলখানি একদম তার মত | মোটা‚কালো‚ একঢাল চুল‚খোঁপা করে রাখলে যেন মুখখানির পিছনে একখানা গোল কালো চালচিত্ত মনে হয়| স্বভাবটিও মধুর | এতগুলি ছেলেমেয়ের মধ্যে এই মাইয়াটার মনে বড় মায়া | ভাইবোনগুলোকে বড় ভালোবাসে | কাঁথাকানি পালটে দেওয়া‚তেল মাখানো‚খাইয়ে দেওয়া | সন্ধ্যার পাশে পাশে সারাক্ষণ ঘুরঘুর করে |  'কি কাম করতে হবে কও না মা‚আমি কইরে দি' | এ মেয়ের সংসারে মন | এমন সংসারে মন তারও ছিল | পিছোতে থাকে সন্ধ্যা | সাল‚ তারিখ ওসব মনে রাখার চল তাদের নেই | সেই যে যেবার মায়ের খুব অসুখ হল‚সংসারে মানুষ বলে তো সন্ধ্যা আর তার মা বৃন্দা | সেবার সেই অসুখের সময়ই হল ভারী বন্যা | ঘর-দ...
রাঙা ঘোড়ার খোঁজে রাঙা মাটির দেশে – সুতপা বন্দ্যোপাধ্যায়

রাঙা ঘোড়ার খোঁজে রাঙা মাটির দেশে – সুতপা বন্দ্যোপাধ্যায়

চতুর্থ বর্ষপূর্তি
রাঙা ঘোড়ার খোঁজে রাঙা মাটির দেশে                    সুতপা বন্দ্যোপাধ্যায় শৈশবে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের 'বীরপুরুষ' কবিতাটি ছিল আমার ভারি পছন্দের। মা 'সঞ্চয়িতা' থেকে প্রায়ই পাঠ করে শোনাতেন বলে পুরো কবিতাটিই আমার ঠোঁটস্থ ছিল। আধো আধো উচ্চারণে আবৃত্তি করতাম-                                               'মনে করো যেন বিদেশ ঘুরে                                               মাকে নিয়ে যাচ্ছি অনেক দূরে।                                               তুমি যাচ্ছ পালকিতে মা চড়ে                                               দরজা দুটো একটুকু ফাঁক করে,                                               আমি যাচ্ছি রাঙা ঘোড়ার 'পরে                                               টগ্‌বগিয়ে তোমার পাশে পাশে।' এটুকু বলেই খানিক থামতাম। মনে প্রশ্ন জাগত যে! রাঙা ঘোড়া কেমন দেখতে? কোথায় দেখা মেলে সেই ঘোড়ার? বাস্তবে তখ...
মুহূর্তে বাঁচে প্রেম,মুহূর্তরাই বাঁচে – আশিস দাস

মুহূর্তে বাঁচে প্রেম,মুহূর্তরাই বাঁচে – আশিস দাস

চতুর্থ বর্ষপূর্তি
*"মুহূর্তে বাঁচে প্রেম,মুহূর্তরাই বাঁচে"*   আশিস দাস "প্রতীক্ষা তাই প্রহরবিহীন আজীবন ও সর্বজনীন, সরোবর তো সবার বুকেই পদ্ম কেবল পর্দানশীন"... কলেজ ফাংশানে পূর্ণেন্দু পত্রীর এই কবিতা আবৃত্তি করে যেই স্টেজ থেকে নেমে এলাম তখন নুপূর বলেছিল,"ওরে অনি, তোকে আমার ওখানেই জড়িয়ে ধরতে ইচ্ছে করছিল রে...মাইকে তোর কি রোম্যান্টিক ভয়েস..ওহ !!" সেই নুপূরকে একদিন বলেছিলাম "সিনেমা দেখতে যাবি?" ও কিছুক্ষণ আমার দিকে তাকিয়ে থেকে,আমাকে মোহিনী মায়ায় আচ্ছন্ন করে বলেছিল,"জানিস অনি,তোর সাথে আমি জাহান্নামে যেতেও রাজী |” সেদিন আমরা সিনেমা দেখতে গিয়েছিলাম ঠিকই,কিন্তু ওর কথা মতো জাহান্নামে যাওয়া আমাদের হয়নি | অনেক কিছুই স্মৃতি থেকে মুছে গেছে,নুপূরও আজ নেই,কিন্তু ওর সেদিনের সেই কথাটা একটুও ঝাপসা হয়নি,অমলিন থেকে গেছে | কয়েকটা মুহূর্ত:সেইসব মুহূর্তের মধ্যেই বেঁচে আছে প্রেম;আসলে প্রেম হয়তো মুহূর্তের মধ্যেই ...
পেতে চাই তোমাকে – রথীন পার্থ মণ্ডল

পেতে চাই তোমাকে – রথীন পার্থ মণ্ডল

চতুর্থ বর্ষপূর্তি
পেতে চাই তোমাকে রথীন পার্থ মণ্ডল গড ঈশ্বর আল্লাহ সব তো একই সমুদ্র পাহাড় পৃথিবী এসবের সৃষ্টিকর্তা তো তিনিই আমিও বাদ যাই না এসবের থেকে এভাবে জন্মাতে জন্মাতে জন্মান্তরবাদ হয়ে প্রতিটি জন্মেই পিতারূপে তোমাকে পেতে চাই, বাবা।। *********************************** দীর্ঘ ছায়ার মায়াভরা আঁচল রথীন পার্থ মণ্ডল আজও আজানের শব্দে ঘুম ভাঙে আমার ঘুম ভাঙতেই খুঁজতে থাকি তোমার দীর্ঘ ছায়াটাকে যে ছায়ার হাত ধরে পথ চলা শুরু পথের মাঝে হারিয়ে যাওয়াও শুরু এমনকি পথকে চিনতে শেখাও শুরু চিনতে শেখা শুরু নিজেকেও আসলে গাছ,আলো,ছায়া, অন্ধকার,ঘাম,দাঁত এসব কিছুর গুরুত্ব যেমন সহজে বুঝতে পারি না আমরা তেমনই বুঝতে পারিনি তোমার গুরুত্বও এই গুরুত্ব বোঝা না বোঝার খেলায় মাঝে মাঝে হারিয়ে ফেলি নিজেকে,নিজের অস্তিত্বকে আসলে তোমার দীর্ঘ ছায়া তোমার হাতের মায়াভরা চাদর আজও আষ্টেপৃষ্ঠে ঘিরে ...
error: বিষয়বস্তু সুরক্ষিত !!