Shadow

তৃতীয় বর্ষপূর্তি

অসময়ে – চিন্ময় চক্রবর্তী

অসময়ে – চিন্ময় চক্রবর্তী

তৃতীয় বর্ষপূর্তি
      অসময়ে       চিন্ময় চক্রবর্তী  তুমি অসময়ে এসো। সময়ের যূপকাষ্ঠে নিহত হোয়ো না। যখন সময় শেষ, পৃথিবী ঘুমিয়ে গেছে, সুমেরু পর্বত একা জেগে আছে শুধু, তুমি সে সময়ে এসো। বন্ধ হয়ে গেছে যদি দরজার তালা, শেষ বাঁশি বেজে গেছে, শেষ সব খেলা, পূজারী সেরেছে পুজো, বেজে গেছে শঙ্খধ্বনি তার, তারপর তুমি এসো। আমার কাছেতে। বারবার। তুমি অসময়ে এসো। ঘুমাবো না আমি। অদৃশ্য হবো না কোনো গভীর জঙ্গলে। হারিয়ে যাব না কোনো ভীড়ে। তুমি অসময়ে এসো। খুব ধীরে ধীরে। আমার তো তাড়া নেই। আজকাল অখন্ড অবকাশ। দু'কানের পাশ দিয়ে শীতল বাতাস বয়। এখন শুনতে পাই।পাখি ডাকে, দূরে কোনো মেয়ে, কোথাও তাকিয়ে আছে অপলকে চেয়ে, পরিষ্কার দেখি আমি। কোনো বাধা নেই। ঝিম ঝিম ভাব নেই,  দ্বেষ নেই। অকারণে রাগ নেই। ঘৃণা নেই কোনো। সান্ধ্য ঘন্টা বাজছে গো! কান পেতে শোনো। কিছু শত্রু আজও আছে গুপ্তঘাতকের মত। তবু তারা আজ সব মাথা নীচু করে ব...
অন্বয় – সুজয় কুমার দাশ

অন্বয় – সুজয় কুমার দাশ

তৃতীয় বর্ষপূর্তি
অন্বয়  সুজয় কুমার দাশ সূর্যাস্ত থেকে সূর্যোদয় --- খানিকটা ঋণাত্মক মুহূর্ত । তাই বলে তুমি চুপচাপ হাত-পা গুটিয়ে বসে নেই । তুমি স্বপ্ন দেখতে জানো ধ্বনাত্মকভাবে । আর তা জানো বলেই ভোর হয়ে ওঠে নিয়মমাফিক । তাই এমনি করেই চেয়ে দেখো, আর সব অন্ধকারে । কালো খাঁচার রন্ধ্র বেয়ে আলো আসতেও পারে ।। ************************* সুজয় কুমার দাশ  ...
গুসকরার ঐতিহ্যমন্ডিত চোংদার পরিবারের মা কালী এবং দুর্গাপূজার মহিমা – জয়িতা সরকার

গুসকরার ঐতিহ্যমন্ডিত চোংদার পরিবারের মা কালী এবং দুর্গাপূজার মহিমা – জয়িতা সরকার

তৃতীয় বর্ষপূর্তি
গুসকরার ঐতিহ্যমন্ডিত চোংদার পরিবারের মা কালী এবং দুর্গাপূজার মহিমা   জয়িতা সরকার কালীপুজোর দিন আমার চোংদার পরিবারের কালীর কথা মনে পড়ে। ফোনের গ্যালারি থেকে ছবি বের করে দেখি সাধারণ ক্যামেরায় তোলা মায়ের সান্ধ্য আলো-আঁধারি রূপ। কৃষ্ণবর্ণ মাতৃমূর্তি। তা হয়ে গেল বেশ কয়েক বছর। তখন ওখানে গিয়ে কিছু বিষয় জানতে পারি।সেসব আমার গুরুত্বপূর্ণ ও আকর্ষণীয় বলে মনে হয়েছে বেশ। দু-চারজন মানুষের সঙ্গে দেখা বা কথা হবার পরেও কিছু বিষয় জানতে জানতে যে লেখার সৃষ্টি,সেটিই এখানে উপস্থাপিত করছি।              বর্ধমান জেলার পূর্বে গুসকরা শহরের একদিকে দামোদর নদ, অন্যদিকে অজয়ের শাখা। প্রাণবন্ত এই ক্ষুদ্র শহর নিজস্ব সংস্কৃতি নিয়ে টিকে আছে। এখানে রয়েছে মানুষের প্রিয় রটন্তী কালী মন্দির, নিজস্ব নানা মেলা, লোকাচার,চর্চা, পাশের গ্রামে রয়েছে ডোকরা শিল্পের চর্চা, নিকটে রয়েছে সুবিখ্যাত বোলপুর শান্তিনিকেতন ...
মধুরেণ – চন্দ্রকান্তি দত্ত

মধুরেণ – চন্দ্রকান্তি দত্ত

তৃতীয় বর্ষপূর্তি
মধুরেণ   চন্দ্রকান্তি দত্ত অনেকক্ষণ ধরে মেঘ জমছে। বৃষ্টিটা বেশ জাঁকিয়ে নামবে। আজকাল এই একটা সমস্যা হয়েছে। সারাদিন প্রবল গরম। তার সাথে আর্দ্রতা মিলে সে এক প্রাণান্তকর অবস্থা। তারপর বিকেল থেকে মেঘ জমে ঠিক বাড়ি ফেরার সময়টাতে আকাশভাঙা বৃষ্টি। সাথে হালকা বা ভারী ঝড়। বাস থেকে নেমে প্রায় প্রতিযোগীর মত হেঁটে বৃষ্টি নামার ঠিক আগের মুহূর্তে অমিত বাড়ির কাছাকাছি পৌঁছে গেল। তবু একটু দৌড়তে হল। কারণ বৃষ্টি এখনও না নামলেও ধূলোর ঝড় শুরু হয়েছে। গেট ঠেলে খোলা বারান্দায় উঠেই দেখল,পিছনে একজন অল্পবয়সী ভদ্রমহিলা। ঝড়-বৃষ্টির মধ্যে পড়ে অনন্যোপায় হয়ে এখানে উঠে এসেছেন। ভদ্রমহিলা অমিতকে চেনেন কিনা সেটা না জানলেও, অমিত কিন্তু ভদ্রমহিলাকে চেনে। অশোক কাননের বাসিন্দা প্রফেসর বেণীমাধব গাঙ্গুলীর মেয়ে মণিমালা। মণিমালাও নাকি সম্প্রতি কোন কলেজে শিক্ষকতায় ঢুকেছে। অমিত হাসিমুখে মণিমালাকে বলল,"এখানে দাঁড়ালে ঝড়-ব...
দারে আপা – পল্লব চট্টোপাধ্যায়

দারে আপা – পল্লব চট্টোপাধ্যায়

তৃতীয় বর্ষপূর্তি
দারে আপা পল্লব চট্টোপাধ্যায় (১) দুম করে চাকরিটা দিলাম ছেড়ে। আর ভাল লাগছিল না। তাস-পাশার নেশা ছিল না,তেমন কিছু সামাজিকও নই। তবে আর পরের চাকরি করার ইচ্ছে নেই। পয়সাকড়ি যা জমেছে দু’জনের দু’বেলা বাকি জীবনটা বসে খাওয়ার জন্যে যথেষ্ট। তাপসরা একটা এন-জি-ওর মত চালায় পুরুলিয়ার দিকে,ওকে ধরেছি সময় কাটানোর জন্যে কিছু কাজ-টাজ করব বলে। এমনি অবৈতনিক,মাঝে মাঝে টুকটাক গিয়ে ঘুরে আসার ইচ্ছে। তবে তাপস একটু টেড়িয়া মাল,বলে,'তার জন্যে লোক আছে,শখের সেবায় আমাদের কাজ নেই। পারলে কিছু চাঁদা দিস,কাজে লাগবে।' কি অপমানজনক দেখেছ! হঠাৎ মোবাইল বেজে উঠতেই দেখি নাম করতেই শয়তান হাজির। 'কাল সকাল সাড়ে আটটায় হাওড়া থেকে লালমাটি এক্সপ্রেস,প্ল্যাটফর্মের গেটের কাছে চলে আয়। টিকিট কেটে রাখছি।' এইটুকু বলেই ফোন কেটে দিল তাপস। যাঃ বাবা,এ যে মেঘ না চাইতেই জল। কিন্তু ব্যাপারটা আমার একটু অদ্ভুত লাগল-এই তাড়া কিসের? যাই হোক কৌতূহল বলে তো এক...
“রবীন্দ্রনাথের মর্ত্য-চেতনা” – মেরী খাতুন

“রবীন্দ্রনাথের মর্ত্য-চেতনা” – মেরী খাতুন

তৃতীয় বর্ষপূর্তি
"রবীন্দ্রনাথের মর্ত্য-চেতনা" মেরী খাতুন  সত্যম্ শিবম্ সুন্দরম্--এরই ভিত্তিতে গড়ে উঠেছে সত্য,শিব,সুন্দরের সাধক---কবি রবীন্দ্রনাথের আদর্শ মর্ত্য-প্রীতি। তাঁর এই  প্রীতি তথা সৌন্দর্যবোধই সাধারণের মধ্যে অসাধারনকে আর সীমার মধ্যে অসীমের স্থাপনায় ব্রতী হয়েছে। তাইতো,'সন্ধ্যারাগে ঝিলিমিলি ঝিলমের স্রোতখানি','পল্লীবধূর আঁকা-বাঁকা সর্পিল পথে জল আনার দৃশ্য','বিকশিত সর্ষে ফুলের গন্ধ 'তাঁর মনে নির্বিকল্প অনুভূতির সঞ্চার করে হৃদয়ে স্থান রচনা করেছে।তাঁর সাধনার দীর্ঘপথে বার বার একই সুর ধ্বনিত হয়েছে---'আমি ভালোবাসি,আমি ভালোবাসি এই জীব,এই জীবন,এই জীবলোক। রবীন্দ্রনাথ বহুমুখী প্রতিভার অধিকারী হলেও তাঁর সত্যকার পরিচয় নিহিত রয়েছে তাঁর সুগভীর মর্ত্য-প্রীতি তথা জীবনপ্রীতিতে। মানুষের কবি,ধুলার-ধরনীর কবি রবীন্দ্রনাথ তাই  অকপটে বলতে পেরেছিলেন---                     "মরিতে চাহিনা আমি সুন্দর ভুবনে                   ...
পরম্পরা – শম্পা চক্রবর্তী

পরম্পরা – শম্পা চক্রবর্তী

তৃতীয় বর্ষপূর্তি
পরম্পরা শম্পা চক্রবর্তী    মাস ছয়েক আগে দুয়ারসিনির ফরেস্ট ডিপার্টমেন্টে পোস্টিং পেয়ে সরকারী কোয়ার্টারে ঠাঁই নিয়েছি। জঙ্গল ও পাহাড়ঘেরা সবুজের দেশ যেন। অজগর সাপের মতো আঁকাবাঁকা মসৃণ পথের দুধারে প্রকৃতির সৌন্দর্যে মুগ্ধ না হয়ে উপায় কি!! বহুদিনের শখ ছিল চাকরি জীবনে অন্তত একবার এখানে বদলি হব আমার চেনা ছকের বাঁধন ছুঁড়ে গল্পে শোনা,স্বপ্নে দেখা দুয়ারসিনির সঙ্গে একাত্ম হতে। মাঝে মাঝে নিজেকে নির্জনতায় ডুবিয়ে দিতে সবারই বোধহয় ইচ্ছে হয়।          এখানে সরকারী কোয়ার্টার্স পেয়েছি। অফিসের জিপ এসে প্রতিদিন নিয়ে যায় আবার দিয়েও যায়। প্রায়ই খাবার কিনে আনি। মল্লু নামে একটা ছোকরা দোকানবাজার করে দেয় বটে কিন্তু পরিচারিকার অভাবে থাকা-খাওয়া মুশকিল হয়ে উঠছে। আমি ভালো রাঁধতে পারি না। অনেক খোঁজার পর অবশেষে সহকর্মীর চেষ্টায় একজন মধ্যবয়সী মহিলা পাওয়া গেল। নাম ফুলমতী। আমাকে স্নেহ করে খুব। কাজের অবসরে কত গল্প বল...
কবিতা – দীপন  মিত্র

কবিতা – দীপন  মিত্র

তৃতীয় বর্ষপূর্তি
কবিতা - দীপন  মিত্র লাইমলাইট সুরার গেলাসে ভাসা যে দেখেনি বরফ-রূপসী, হালকা মেঘের ফাঁকে যেন বা দিয়েছে উঁকি শশী। সিলিঙের থেকে ঝোলা নেশাগ্রস্ত ঝাড়লন্ঠনের লাইমলাইটে দোলা কোনোদিন দেখেনি যে জনে। যার পা পিচ্ছিল নয় পানশালার মেঝেতে কখনো, সাদা সার্ট গাঢ় প্যান্ট, কণ্ঠে টাই স্মার্ট সুদর্শনও। প্রদীপবাবুর হাত ঢালেনি তো যে সুরা ফরাসি, অথবা দেখেনি দীর্ঘা মেয়েটির নাক্ষত্রিক হাসি। কেন সে যে বেঁচে থাকে কেন দিন রাত হয়, ধ্যুস, চাই না ওদের যারা কোনোদিনও হয়না বেহুঁশ। —-------------------------------------------------------- এসো ও আনন্দ, আজ এসো ও আনন্দ, আজ - তোমার যেমন খুশি বেশে। গাছে গাছে ক্রিসমাস, লাল নীল টুনি থোক-থোক টেবিলে টেবিলে মেঘ, বিদ্যুৎচমক যেন কেশে। আলোর চিৎকারে খোলে সরু দরজা, পেন্টিঙের স্ট্রোক, তোমার একশো নাম লিখি আমি কাগজ-রুমালে ভাঁজ খুলতেই সাদা কপোতেরা ডানা মেলে ধরে লোত্রেক...
বুলাদির বিড়ম্বনা – অজন্তা প্রবাহিতা   

বুলাদির বিড়ম্বনা – অজন্তা প্রবাহিতা   

তৃতীয় বর্ষপূর্তি
বুলাদির বিড়ম্বনা  অজন্তা প্রবাহিতা    বুলাদি আমাদের পাড়ায় দুটো বাড়ি পরে থাকতো। বাবা মায়ের একমাত্র মেয়ে। ঠাম্মাকে নিয়ে বুলাদির পরিবারে মোট চারজন সদস্য। এদিকে আমাদের পরিবারে তিনজন। ঠাম্মা আর দিদা মাঝে মাঝে আসে যায়। তখন আমাদের বাড়িতে সদস্য সংখ্যা বেড়ে যায়। বুলাদি যখন ক্লাস টেন, আমি ফাইভে পড়ি। স্কুল ছাড়াও বাইরে কোথাও গেলে বুলাদি শাড়ী পরতো আর বাড়িতে নাইটি। পাটপাট করে গুছিয়ে শাড়ী পরে  লম্বা চুলের  সুন্দর করে বিনুনি করে,ছোট্ট টিপ্ পরে, ডাইরিটা হাতের ভাঁজে বুকে চেপে ধরে বুলাদি যখন গানের ক্লাসে  যেত,আমি জুলজুল চোখে  তাকিয়ে থাকতাম,মনে মনে ভাবতাম,আমিও কবে অমন শাড়ী পরে সাপের মতো বিনুনি দুলিয়ে স্টাইল করবো। চুল পাতলা বলে মা সবসময় বাটি ছাট দিয়ে রাখতো,বলতো,চুলের গোছ থাকলে লম্বা চুল ভালো লাগে,বুলার মতো লম্বা চুল কি আর তোর হবে? অনেক ভাগ্য করলে অমন রূপ আর অমন চুল পাওয়া যায়। রূপ বৃদ্ধি কি করে হয়,জানিনা। ত...
দূরত্ব – দেবলীনা দে

দূরত্ব – দেবলীনা দে

তৃতীয় বর্ষপূর্তি
দূরত্ব দেবলীনা দে চোখে আধো আধো ঘুম নিয়ে তনিমা যখন তার পড়ার বইটা বন্ধ করলো,ঘড়িতে তখন রাত প্রায় একটা। বইয়ের লেখা বইয়েই রইল আর তার মন তখন অন্য দিকে। মনে বারেবারে একটাই প্রশ্ন উদয় হচ্ছে,প্রিয়সী কি সত্যিই তাকে চিনতে পারলো না! তার চোখের সামনে বারবার ভেসে আসছে ছোটবেলার সেই স্মৃতি। কত মধুর ছিল সে সব দিন। আজ থেকে প্রায় ১২ বছর আগের কথা। একটা কাজের সন্ধানে তনিমার বাবা পাড়ি দিয়েছিল নিজের গ্রাম ছেড়ে অন্য গ্রামে। তনিমা তখন অনেক ছোটো। কিন্তু কিছু স্মৃতির বদঅভ্যাস থাকে যে তারা কোনোদিন মন থেকে মোছে না। প্রণবেশ বাবু ছিলেন গ্রামের মস্ত বড়ো জমিদার। প্রিয়সী তাঁরই মেয়ে। প্রণবেশ বাবুর মস্ত বড়ো বাগানে একসময় মালি ছিলেন তনিমার বাবা। নিজের গ্রাম, কাছের মানুষ ছেড়ে অন্য দেশে পড়ে থাকার যন্ত্রণা তনিমার তখন বোঝার বয়স হয়নি। ওই মেয়েবেলা শুধু একটা সঙ্গীর খোঁজ করতো,যার সাথে সে বেশ অনেকক্ষণ ধরে,প...
error: বিষয়বস্তু সুরক্ষিত !!