Shadow

গল্প

গল্প

বাজি – ব ন্দ না  মি ত্র

বাজি – ব ন্দ না মি ত্র

গল্প, প্রথম বর্ষপূর্তি
বাজি ব ন্দ না  মি ত্র সমুদ্রের তীর থেকে একটু ভেতরে সরু জেলে ডিঙিটা ঢেউএর তালে ব্যালান্স করছিল বলাই,শক্ত তামাটে পেশিবদ্ধ দুই হাতে বৈঠা ফেলছিল স্রোতের ওঠা পড়া বুঝে। গা চিট চিট করছে নোনা ঘামে,সুয্যি মাথায় উঠেছে দু প্রহর হল, এখনও তেমন মাছ পড়ে নি আজ। এই সময় অন্যদিন ঝাঁক বেঁধে রূপচাঁদা,লইট্যা,ম্যাকারেল,সার্ডিন,করাতি,চিংড়ি, এমনকি ইলিশও জালে উঠে পড়ে,আজ পূর্ণিমা,জোয়ারের হেতু জল বেড়েছে-মাছ মোটেই আসছে না ধারে কাছে। এমন চললে ও আজ নিজেই বা কি  নেবে আর ওর সাকরেদ শম্ভুকেই বা কি দেবে! সেই সকাল থেকে ওর সঙ্গে রয়েছে ছেলেটা, খাই খরচ বলেও তো দশ বিশ টাকার মাছ হাতে তুলে দিতে হবে! মেজাজ ভাল নেই বলাইএর। কোমর হাতড়ে বিড়ির প্যাকেটটা বের করল - যাঃ শালা, মাত্র একটা বিড়ি পড়ে আছে! সামনে একটা সাদা পাল খাটানো বড় নৌকা ভাসছে, পালের ডগায় একটা মাছরাঙা। বলাই হাঁক দেয়," শম্ভু, বল তো পাখিটা কোন দিকে বাঁক নেবে? বলতে পারলে শেষ বি...
বোধন – শ্রুতি দত্ত  রায়

বোধন – শ্রুতি দত্ত  রায়

গল্প, প্রথম বর্ষপূর্তি
"বোধন" শ্রুতি দত্ত  রায় ডাইনিং টেবিলে ব্রেকফাস্ট সাজাতে সাজাতে ভাবছিল মৌলি। আজ কথাটা অগ্নিকে বলতেই হবে। তিনদিন আগে ফোনটা আসার পর থেকে বলবো-বলবো করে বলাই হচ্ছে না। উপযুক্ত সময় সুযোগ কোনটাই জুটছে না। তাছাড়া কথাটা শুনে অগ্নি কিভাবে রিয়্যাক্ট করবে সেটাও ঠিক বুঝতে পারছে না মৌলি। অবশ্য গতকাল অফিস ফেরার পর থেকে এখনও পর্যন্ত অগ্নির মুড ভাল আছে বলেই তো মনে হচ্ছে। আজ বোধহয় প্রমোশন অর্ডারটা হাতে পাবে। কদিন ধরে ওর অফিসের আবহাওয়া মনে হয় অনুকূলেই আছে। অবশ্য সেটা অনুকূলে আনতে অগ্নিকে কম পরিশ্রম করতে হয়নি। নিজেকে কোম্পানীর হাতে পুরোপুরি সঁপে দিয়েছে তো বটেই,তার সঙ্গে কর্তৃপক্ষকে বাগে আনতে অনেক কাঠখড় পুড়িয়েছে। আর তাই উন্নতির সিঁড়িগুলো টপকাতে পেরেছে সহজেই। এখন বাকি একটি মাত্র ধাপ। ওটা পেরোতে পারলেই কেল্লা ফতে করবে মৌলির সুদর্শন,স্মার্ট,উচ্চাকাঙ্খী স্বামী অগ্নিমিত্র সেন,যিনি বিখ্যাত রায় এন্ড রা...
মাতৃত্বের চতুষ্কোণ – রেশমি দত্ত

মাতৃত্বের চতুষ্কোণ – রেশমি দত্ত

গল্প, প্রথম বর্ষপূর্তি
মাতৃত্বের চতুষ্কোণ রেশমি দত্ত কাল সারা রাত দু চোখের পাতা এক করতে পারেনি অনুরাধা | সকাল হতেই একটা উবের ডেকে কোলকাতা এয়ারপোর্টের দিকে রওনা দিল ,আজ পাঁচ বছর পর তার একমাত্র মেয়ে রুমি দেশে ফিরবে | প্রিন্সটন ইউনিভার্সিটি তে পড়ার সুযোগ পেয়ে রুমি পাড়ি দিয়েছিল আমেরিকা | তারপর রোজ মায়ের সঙ্গে অনলাইনে কথা হতো,একদিনও মেয়ের ভুল হয়নি | অনেকক্ষণ কথা বললেও যখন বলতো,"মা! আজ রাখি তাহলে?" তখনই অনুরাধার মনে হতো,"আরো একটু কথা বল না মা |" এই ভাবেই কেটেছে পাঁচটি বছর | ফ্লাইট এসে পৌঁছোবে দশটায়,কিন্তু পাছে রাস্তায় জ্যাম হয় এই ভেবে অনুরাধা সকাল সাতটায় বেরিয়ে পড়ল বাড়ি থেকে | এক্সট্রিম সাউথ থেকে যাবে সে | ট্যাক্সিতে যেতে-যেতে অনুরাধার মনে পড়ছিল অনেক কিছু,সেই কোন ছোটবেলায়-তার বাবা-মায়ের কথা | অনুরাধার বাবা-মা "অনু" নামেই তাকে ডাকত | তখন কতই বা বয়স হবে? এই বছর পাঁচ কি ছয়,প্রতি রবিবার মা-বাব...
জীবনধারা – শুভজিৎ বসু

জীবনধারা – শুভজিৎ বসু

গল্প, প্রথম বর্ষপূর্তি
জীবনধারা   শুভজিৎ বসু পু‌ত্র হরেকৃষ্ণকে নিয়ে ওর মা পঞ্চাশ সালে সীমান্ত পেরিয়ে পশ্চিম দিনাজপুরের হিলি থেকে পঁচিশ কিলোমিটার দূরের এক অখ্যাত গ্রামে বসবাস শুরু করেন। দেশভাগের আগে থেকেই ওদের বেশিরভাগ জমি এদিকে ছিল। যার ফলে বসতবাড়ি ও সামান্য জমি ত্যাগ করে ওদের এখানে আসতে হয়,সব হারিয়ে নয়। মাটির দেওয়ালের দুটি ঘর,মাথায় টিন। বাবা এই মর্মান্তিক দেশভাগের অনেক আগেই মারা যান। এখানে মোট পাঁচ বিঘে জমিই হল ওদের উদরপূর্তির উৎস। মার পক্ষে সব গৃহস্থালি কাজ  করা খুব কষ্টকর হওয়ায় বাড়িতে বৌ আনার কথা ভাবনাতে আসে। খুঁজে পেতে হরেকৃষ্ণকে পাশের পাড়ার মেয়ে সবিতার সঙ্গে মা বিয়ে দেন। দুজনের কেউই পড়াশুনা বেশিদূর করে নি। সবিতার কোন ব্যাপারেই রা নেই। বাড়ির যত কাজই থাক না কেন সবিতা নিজের হাতে আনন্দের সাথেই তা করে । দুঃখ কষ্ট নিত্যসঙ্গী হলেও তারা তিনজনে মানিয়ে নিয়ে দিনাতিপাত করে। ওদের এক কন্যা হয় আটান্ন সালে। সবাই বলত না...
অপরাজিতা – নাজির হোসেন বিশ্বাস

অপরাজিতা – নাজির হোসেন বিশ্বাস

গল্প, প্রথম বর্ষপূর্তি
অপরাজিতা নাজির হোসেন বিশ্বাস "ও রুনাদি তোমার মেয়ের তো খুব সুনাম শুনছি গো! এতদিন পাড়ার লোকে কত গালমন্দ করতো,যেই দেখেছে মেয়েটা একটু নাম কিনেছে,সবাই কেমন পাল্টি খেয়ে গেল। মানুষ হলো গিয়ে সব বেইমানের জাত।" "সাত সকালে তুই কি নিয়ে পড়লি রাধা,লোকে কত কি বলবে সব শুনতে গেলে চলবে? তুই নিজের কাজ কর দেখি,না হলে যে মেয়েটা খেয়ে যেতে পারবে না।" "না দিদি তুমি যাই বলো না কেন,তোমাকে তো কম কথা শুনতে হয়নি? সারা জীবন ধরে কষ্ট করে খেয়ে না খেয়ে,বলতে গেলে যুদ্ধ করে টিকে আছো,কেউ না জানুক আমিতো জানি।" "ঠিক  আছে,তুই বাসনগুলো ধুয়ে,ঝাঁটটা দিয়ে দে আগে,আমি রান্না বসাবো।" বলেই রুনা দূরের নীল আকাশের দিকে চেয়ে রইলো! সেখানে কত ভাঙাগড়া চলছে,ঠিক তার জীবনের মত।  "রুনা,সামনে বার তোকে কিন্তু আরও ভালো রেজাল্ট করতে হবে। তুই কোনো পড়া বুঝতে না পারলে আমাকে বলবি,দেখিয়ে দেব।"  ঘাড় নাড়ে রুনা,"আচ্ছা স্যার" বলেই হাসিহাসি মুখ নিয়ে স্...
হারানো দিনের গল্প – চন্দ্রকান্তি দত্ত

হারানো দিনের গল্প – চন্দ্রকান্তি দত্ত

গল্প, প্রথম বর্ষপূর্তি
হারানো দিনের গল্প চন্দ্রকান্তি দত্ত হারানো দিনের একটা গল্প বলি। গল্পের সময়কাল গত শতকের ছয় ও সাতের দশক। গল্পটা বুঝতে হলে আমাদের ফিরে যেতে হবে সেই সময়টাতে। বীরভূমের আহমেদপুর থেকে বর্ধমানের কাটোয়া পর্যন্ত বিস্তৃত ন্যারোগেজ বা ছোট লাইনের একটা রেলপথ। মাত্র বাহান্ন কিলোমিটার দীর্ঘ এই রেলপথটা চালু হয়েছিল বিংশ শতাব্দীর প্রথম দিকে ১৯১৭ সালে। বৃটিশ শাসনাধীন ভারতে লন্ডনের ম্যাকলিয়ড রাসেল এন্ড কোম্পানি সেসময় বাংলায় মোট চারটে ছোট ছোট রেলপথ বানিয়েছিল। এই আহমেদপুর-কাটোয়া রেলপথ তারই মধ্যে একটা। ছোট লাইন,ছোট গাড়ি। গতিও তার তেমনই। মাত্র ১২ কিলোমিটার তার সর্বোচ্চ গতি। তবে ট্রেন কখনও তার সর্বোচ্চ গতিতে  ছুটেছে,একথা অতিবড় নিন্দুকেও বলতে পারবে না। এ সম্পর্কে একটা মজার গল্প আছে। বছর দশ-বারোর একটা ছেলে ট্রেনে চৌহাট্টা থেকে গোপালপুরে তার স্কুলে যাচ্ছে। জানালা দিয়ে দেখে,পাশের রাস্তা ধরে একজন বয়স্কা মহিলা সবজি...
পর-ব্রহ্মাস্ত্র – মধুমিতা মিত্র

পর-ব্রহ্মাস্ত্র – মধুমিতা মিত্র

গল্প, প্রথম বর্ষপূর্তি
পর-ব্রহ্মাস্ত্র মধুমিতা মিত্র স্বর্গ সভায় আজ মহা কোলাহল। স্বয়ং বিষ্ণু ভয়ঙ্কর রকমের  চিন্তিত। খুব উদ্বিগ্ন হয়ে তিনি সুখনিদ্রা ছেড়ে দৌড়েছেন মহেশ্বর সকাশে এবং ব্রহ্মার কাছেও।এই তিন শক্তি এক হয়েও তাঁরা একটি সিদ্ধান্তে পৌঁছুতে পারছেন না,অত‌এব তিনজনে মিলেই এঁরা স্থির করলেন প্রথমে দেবরাজ ইন্দ্রকেই ডাকা যাক্ বৈকুণ্ঠে, তারপর তার সংগে শলাপরামর্শ করে না হয় পরবর্তী পদক্ষেপ নেওয়া যাবে। তলব গেল দেবরাজের কাছে,তলব পেয়েই তিনি হাজির প্রভু ব্রহ্মা বিষ্ণু মহেশ্বরের সভা মধ্যে। এঁরা তিনজনাই নিজ নিজ কর্মে খুবই ব্যস্ত থাকেন। তাঁদেরকে একত্রে পাওয়াই বড়ো দুষ্কর। জরুরী অবস্থা ছাড়া এঁরা এক জোট হন কবে? তিনজনাকে একসাথে দেখেই ইন্দ্র বুঝতে পারেন নিশ্চয়ই কোনও গভীর সমস্যা উপস্থিত। ব্রহ্মা মহেশ্বর দু’জনাই মুখে কুলুপ এঁটেছেন। অগত্যা শ্রীবিষ্ণুই মুখ খোলেন।আজ সৃষ্টির সঙ্গীন অবস্থা, ব্রহ্মা-বিষ্ণু-মহেশ্বর অনেক সা...
একটি ভালোবাসার গল্প – ব্রতী ঘোষ 

একটি ভালোবাসার গল্প – ব্রতী ঘোষ 

গল্প, প্রথম বর্ষপূর্তি
একটি ভালোবাসার গল্প ব্রতী  ঘোষ  নিউ আলিপুর পেট্রোল পাম্পের পাশের রেস্তোরাঁর সামনে দাঁড়িয়ে আছে অর্ণব,তা বেশ কিছুক্ষণ হলো ৷ ওর ঘনঘন ঘড়ি দেখা দেখেই বুঝতে পারছিল তৃষা যে ও খুব রেগে গেছে,এতক্ষণ দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে ৷ দূর ছাই !! রাস্তাটাও পার হতে পারছি না-নিজের মনে বকে যাচ্ছে তৃষা ৷ আর এই এক চাকরি হয়েছে,এত দেরি হয়ে গেল অফিস থেকে বেরোতে আজ ৷ কোনরকমে রাস্তা পেরিয়ে হাঁফাতে হাঁফাতে অর্ণবের সামনে এসে দাঁড়ালো ও ৷ ওর রাগী রাগী মুখটার দিকে তাকালে তৃষার বেশ মজা লাগে,এক অদ্ভুত মায়া আছে অর্ণবের চোখ দুটোতে-তৃষা ভাবে ৷ খুব রেগে গেলে অর্ণব কথা বলে না ৷ রাস্তা ধরে হাঁটতে শুরু করল অর্ণব ৷ তৃষা দৌড়ে গিয়ে ওর বাঁহাতের কড়ে আঙুল টা জড়িয়ে ধরে ওর নিজের কড়ে আঙ্গুল দিয়ে,তারপর আস্তে আস্তে পাঁচ আঙুলের আদরের স্পর্শে অর্ণবের রাগকে গলিয়ে দিতে থাকে একটু একটু করে ৷ এতক্ষণ পর মুখে হাসি ফোটে অর্ণবের,একটুও না তাকিয়...
অমূর্ত – কল্যানী  মিত্র  ঘোষ

অমূর্ত – কল্যানী মিত্র ঘোষ

গল্প, প্রথম বর্ষপূর্তি
অমূর্ত কল্যানী  মিত্র  ঘোষ পূর্ণিমা রাত,যে সে পূর্ণিমা নয় এটা হল স্ট্রবেরী ফুল মুন,২০২১ এর শেষ সুপার মুন, ২৪ শে জুন। আমেরিকার স্যান বার্নার্ডিনো শহর, লস এঞ্জেলেসের পূর্ব প্রান্তে অবস্থিত। সেখানেই একটা ফার্মের কাছাকাছি ছোট্ট মিষ্টি বাড়ি কিনেছে আহেলি। বাড়িটা ম্যানুফ্যাকচার্ড হোম। ভারি মজার হয় এগুলো, দামেও সস্তা। গোটা বাড়ির কাঠামোটা তৈরী ই থাকে, গাড়ি করে এনে বসিয়ে দেওয়া হয়। ও একা থাকে তাই দু কামরা আর দেড় খানা বাথরুমই প্রাসাদ মনে হয়। কিচেন এর লাগোয়া ডাইনিং এর সামনেই এক চিলতে লিভিং। খুব সুন্দর করে মড্যুলার কিচেন বানিয়ে নিয়েছে আহেলি। খুব সুখে আছে সে। আহেলি বিকেল থেকে তক্কে তক্কে ছিল চাঁদ উঠলেই টপ করে ক্যামেরা বন্দী করে ফেলবে। ওর বাড়িটা একটু উঁচু টিলার ওপরে, বাড়ির পেছন দিকে মাঝারি মাপের বাগান আর তার পাশেই প্রতিবেশীদের ইউক্যালিপ্টাস গাছের জঙ্গল,খুব উঁচু। প্রতি রাতে ওই গাছ গুলো...
error: বিষয়বস্তু সুরক্ষিত !!