Shadow

বিহানবেলায় ৩

বিহানবেলায়-৩

সম্পাদকীয় ‘বিহানবেলায়’ তৃতীয় বার্ষিকী

বিহানবেলায় ৩
সম্পাদকীয় 'বিহানবেলায়' তৃতীয় বার্ষিকী বছর তিন আগে মেদিনী ভেদ করে মাথা তুলে দাঁড়ানো সুগন্ধময় শিশু পর্ণখন্ডটি এখন পল্লবিত এবং পুষ্প শোভিত। ডালপালা ছড়িয়ে যেন বহু বিস্তৃত এক পুষ্পবন। বাঙলার ঋতুচক্রের আবর্তন সঞ্চালিত হয় নিয়মিত। গ্রীষ্মের শুষ্ক তপ্ত দিনগুলির শেষে,বাদল ছোঁওয়া লেগে নবপত্র শোভিত সবুজ মেঘে ঢেকে সে তখন যেন নতুন জীবনের বার্তা বয়ে আনে। এরপরেই ঝলমলে রূপোলী কাশবনের হাসিতে মুখর এক শ্বেতলীনা! আলো ছড়িয়ে দেয় দিক থেকে দিগন্তরে। শিউলি দিন শেষ হলে,পাতা খসানোর পালা সারা হলে,পার্বণে মেতে ওঠে। আর? দীর্ঘ বর্ষ শেষে,আবাহন করে নূতনকে,নব সূর্যরশ্মি মাখা কুসুম কুসুম বিহান বেলায়। কুলায় ফেরা'র নববর্ষ সংখ্যা 'বিহান বেলায়' র প্রথম সংখ্যা প্রকাশিত হয় বাংলা ১৪২৭ সনে। পর পর প্রকাশিত হতে থাকে নির্ধারিত সংখ্যাগুলি। এর মধ্যে বিভিন্ন রকমের সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান উপস্থাপিত হয় 'ফেসবুক লাইভে'। উল্লেখ্য বিষয়,ভার্চু...
টাকুয়ামেনন – সুজয় দত্ত 

টাকুয়ামেনন – সুজয় দত্ত 

বিহানবেলায় ৩
টাকুয়ামেনন  সুজয় দত্ত  ছোট্ট একটা নাম-না-জানা হলুদ রঙের পাখী সামনের জুনিপার গাছটার ডালে বসে শিস দিচ্ছে মাঝে মাঝে। ব্যস,এছাড়া আর একটাই শব্দ। জলের। অনেক দূর থেকে শোনা যায়। পাহাড়ের ঢাল বেয়ে প্রচন্ড বেগে গড়িয়ে আসা এই বাঁধন-না-মানা,দুরন্ত,সফেন জলরাশি অনেকটা নীচে পাথরের ওপর আছড়ে পড়ছে যেখানে,সেখানটা ধোঁয়াধোঁয়া অস্পষ্ট। জলের ছোট ছোট ঘূর্ণি ইতস্ততঃ জেগে থাকা ডুবো-পাথরের মাথাগুলোকে  ঘিরে। আর তারপর আঁকাবাঁকা নদী কুলকুল করে বয়ে চলে গেছে ঘন গাছগাছালিতে ঘেরা রহস্যময় বনপথে। সন্ধ্যা নেমে এল প্রায়। ধারেকাছে কোথাও কেউ নেই। একা আমি রেলিং ধরে দাঁড়িয়ে ডুবে রয়েছি সেই জলতরঙ্গের মূর্ছনায়। এপ্রিলে এখানে বসন্ত ঠিক নয়, বসন্তের প্রস্তুতিপর্বের শুরু। দমকা,জোলো হাওয়ায় এখনো সদ্য-বিদায়-নেওয়া শীতের বরফগলা স্পর্শ। সেই হিমশীতলতা আমার মুখে,মাথায়,শরীরের অন্যত্র ছুঁয়ে যাচ্ছে,কিন্তু আমি অনুভব করছি না। ভেতর থেকে এক গভীর ভাললাগ...
স্বপ্ননীড় – ব্রতী ঘোষ

স্বপ্ননীড় – ব্রতী ঘোষ

বিহানবেলায় ৩
স্বপ্ননীড় ব্রতী ঘোষ  " শরত আলোর কমল বনে বাহির হয়ে বিহার করে,যে ছিল মোর মনে মনে !" - গুনগুন করে গানটা গাইতে গাইতে প্রজ্ঞা ঘরে ঢোকে ৷ -' উহ্! মা! কি হচ্ছে! সবে দশটা বাজে ৷  প্লিজ ! বিন্নি পাশ  ফিরে চাদরটা টেনে নেয় ৷ প্রজ্ঞা চুপ করে যায় ৷ এখনকার ছেলেমেয়েদের এই বেলা করে বিছানায় শুয়ে থাকাটা একেবারে অসহ্য লাগে প্রজ্ঞার ৷ আজকে ছুটির দিনে যে গলা ছেড়ে একটু গান করবে-তার উপায় আছে ? ও ঘরে প্রবাল আর এ ঘরে বিন্নি ৷ দুজনেই শুয়়ে আছে ৷ আজ রবিবার - প্রবালকে ডাকা চলবে না ৷ প্রজ্ঞার স্কুলে এ সপ্তাহটা ছুটি ছিল ৷ তাই রবিবারটা একটু হাত পা ছড়িয়ে কাটাচ্ছে ৷ সকাল সকাল ঘুম থেকে ওঠা প্রজ্ঞার বরাবরের অভ্যাস | তাড়াতাড়ি রান্নাঘরের কাজ সেরে ও একটু নিজের মতো করে সময় কাটাতে ভালোবাসে বরাবরই ৷ কখনো একটু আধটু লেখা,কখনো বা গান-কখনো বা কোন বই পড়া-এই নিয়ে ওর সময়টা দিব্যি কাটে ৷ একটা সময় ছিল বিন্নির স্কুল,নিজের স...
সংস্কার – সোনালী গুহ

সংস্কার – সোনালী গুহ

বিহানবেলায় ৩
।। সংস্কার ।।     সোনালী গুহ             আজ সকাল থেকেই মুখুজ্জে বাড়িতে দারুণ হইচই। ঊষা মুহূর্তে দেহ রেখেছেন বাড়ির অশীতিপর গিন্নি। মৌশল গ্রামের একদা জমিদার ছিলেন রাধারমণ মুখুজ্জে। এই গ্রামে তাঁদের প্রায় দশ পুরুষের বাস। অনেক জায়গা,ধানি জমি,পুকুর নিয়ে তাঁদের সাম্রাজ্য। বাড়িতে নিষ্ঠা ভরে পালা,পার্বণ সবই হয়। বড় করে হয় শ্রাবণ মাসের সংক্রান্তিতে মনসা পূজা। মন্দির আছে স্বতন্ত্র। এছাড়া দুর্গা দালানেই সব পূজা অনুষ্ঠিত হয়। সারা গ্রাম ভেঙে পড়ে। একটাই দুর্গাপূজা গ্রামে। পুরো গ্রামের মানুষ নিজেদেরই পূজা জ্ঞানে সব কাজকর্মে হাত লাগায়। আগে পিছে প্রায় একমাস এই বাড়িতেই সকলের পাত পরে দুইবেলা। সে এক এলাহী ব্যবস্থা। আলাদা সব বাঁধানো জায়গা আছে,রান্না,খাওয়ার। সকলে হাতে হাতে কাজ করে। সেও এক আনন্দ। কর্তা মশাই দেহ রাখার পর রাধারমণ বাবু বাড়ির কর্তা। গিন্নিমা শয্যাশায়ী ছিলেন বেশ কয়েক বছর ধরেই। আ...
জলকন্যার উপাখ্যান – সাথী সেনগুপ্ত 

জলকন্যার উপাখ্যান – সাথী সেনগুপ্ত 

বিহানবেলায় ৩
জলকন্যার উপাখ্যান সাথী সেনগুপ্ত  বাঘাদার সঙ্গে বাঘের কোন সম্পর্ক নেই,বাঘাদার ভাল নাম  কি ছিল,তাও আমাদের  জানা নেই। তবে আট থেকে আশি সকলেই তাকে বাঘাদা নামে ডাকে। পাড়ার মোড়ের ছোট খাট  চায়ের দোকানটা বাঘাদার দোকান নামেই সকলের কাছে খ্যাত। জায়গাটা ঠিক শহর নয় বরং বলা যায় মফ:স্বল। ফলে এখানে পাড়া আছে,এর ওর ব্যাপারে নাক গলানো আছে,চায়ের দোকানের আড্ডাও আছে। আমি,তপা,দেবা আর বিশু চায়ের দোকানের নিত্য খদ্দের কাম আড্ডাবাজ। তবে দিন রাত আড্ডা দেবার মত শৌখিনতা কজন আর করতে পারে। ফলে আমরাও দিনরাত আড্ডা দেবার সময় পাইনা। আমি বছর দুয়েক আগে পাসকোর্সে একটা বিএসসি পাশ করেছিলাম। তারপর কম্পিউটার ক্লাসে দিনকয়েক যাতায়াত করেছিলাম,কোন ঠিক ঠাক চাকরি বাকরি না জোটায় বেশ কখানা টিউশনি করে বেড়াই। তপা মাধ্যমিক টা কোন রকমে পাশ করেছে,তারপর আর পড়াশোনা এগোয়নি। ওর দাদার গুঁতোগুঁতিতে ড্রাইভিং টা শিখেছিল। এখন মাঝে মধ্যে অন্য...
‘একুশ মানে মাথা নত না করা’ – অরুণ শীল

‘একুশ মানে মাথা নত না করা’ – অরুণ শীল

বিহানবেলায় ৩
'একুশ মানে মাথা নত না করা' অরুণ শীল বাঙালি জাতির অন্যতম প্রেরণা ও চেতনার নাম 'একুশে ফেব্রুয়ারি'। একটি রাজনৈতিক ও জাতিগত বিপ্লবের নাম একুশে ফেব্রুয়ারি। এটি  আমাদের চির প্রেরণা ও অবিস্মরণীয় একটি দিন। এটি শুধু বাংলাদেশ ও পশ্চিমবঙ্গ,ত্রিপুরা ও আসামে নয়,এখন এটি সারা বিশ্বে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস হিসেবে পালিত হচ্ছে। ১৯৫২ সালের ২১-এ ফেব্রুয়ারি মাতৃভাষার মর্যাদা রক্ষার্থে বাঙালির জীবনােৎসর্গের ঘটনা গড়েছে এক অনন্য ইতিহাস। বাঙালি জাতিকে স্বতন্ত্র মর্যাদায় প্রতিষ্ঠিত করার জন্য অমর একুশের রয়েছে সীমাহীন অবদান। একুশের চেতনা বাংলাদেশের জাতীয় ইতিহাসের এক অনন্য চেতনাদীপ্ত অধ্যায়। ভাষা আন্দোলন ও একুশের চেতনার তাৎপর্য বহুমুখী। মহান একুশ আমাদের দিয়েছে জিতে যাওয়ার শক্তি সাহস ও অসীম প্রেরণা। সে সাহসে বলীয়ান হয়ে আন্দোলনের ধাপে ধাপে এগিয়ে গিয়ে ১৯৭১ এ মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে পেয়েছি স্বাধীনতা। তাই আমা...
মন-দর্পণ – পল্লব চট্টোপাধ্যায় 

মন-দর্পণ – পল্লব চট্টোপাধ্যায় 

বিহানবেলায় ৩
মন-দর্পণ পল্লব চট্টোপাধ্যায়  ভবতোষবাবুর কী হয়েছে আজকাল, ছেলেদের কাউকে যেন ঠিক সহ্য করতে পারছেন না। ব্যবসায়ী বড় ছেলে মহীতোষ ওরফে মহী তাঁকে শ্রদ্ধাভক্তি ভালই করে,এমনকি তিনি অবসর নেওয়ার পরেও এখন বাড়তি বোঝা বলে মনে করে না। বউমাও যেটুকু মনে হয় আড়ালে-আবডালেও কোন কটাক্ষ করেন না। ছোট ছেলে আশুতোষ একটা ছোটখাটো চাকরি করে,বিয়ে করেনি এখনও। প্রেম-টেম করে,তিনি জেনেও তেমন পাত্তা দেন না। কিন্তু ছেলেদের বা বউমাকে অসহ্য মনে হবার কারণ কিছু বুঝতে পারছেন না তিনি। স্ত্রী-বিয়োগ হবার পরও এমন অবস্থা ছিল না, এটা যেন শুরু হয়েছে মাসখানেক কি মাস দুই থেকে। তবে কি তাঁর স্কিজোফ্রেনিয়া হল? উনি শুনেছেন যে এ রোগে নাকি দুনিয়ার সবাইকে শত্রু বলে মনে হয়। কাউকে মনের কথা খুলে বলতে না পারলে শান্তি হচ্ছে না। হ্যাঁ,একমাত্র নন্দদুলালই ভরসা। কই,নন্দকে দেখে তো তাঁর এমন বিরূপ প্রতিক্রিয়া হয় না! তাহলে নিশ্চয়ই এটা স্কিজোফ্রেনিয়া নয়। চিন...
ফিরে দেখা – রাজু সেনগুপ্ত

ফিরে দেখা – রাজু সেনগুপ্ত

বিহানবেলায় ৩
ফিরে দেখা রাজু সেনগুপ্ত ঠিক হলো, ঠিক সকাল ৯টায় গোলপার্ক এল নাইন বাস স্টপে আমরা তিন জনে মিট করবো। সেখান থেকে দীঘা যাবার বাসে দীঘা। তিনজনে এর আগে আমি অনেকবার গেছি,পয়সা কম দিতাম বলে সবসময় রিক্সায় আমায় কারো কোলে,অথবা রাতে ঘুমনোর সময় দু জনের মাঝখানে শুতে হতো। এইবার আমি পুরো নিজের পয়সায় যাচ্ছি,তাই আগে থেকে বলে রেখেছি বন্ধুদের দরকারে দুটো রিক্সা বা দুটো ঘর নিতে হবে,আমি আর কিছুতেই কারোর কোলে বসবো না বা দুজনের মাঝে শোবো না। বাসব চুপ করে ছিলো এতক্ষণ। সারাক্ষণ ঘুরে বেড়ায় নিজের খেয়ালে,যতোসব নাম না জানা উদ্ভট জায়গায়। কিন্তু আমাদের সাথে কোথাও যেতে বল্লেই নানান অজুহাত দেখায়। বলে ওঠে, -  তোরা দীপুদা ছাড়া কোথাও যাবার কথা ভাবিস না কেন? - নিলু বলে, দীপুদা গেলে আমি যাবোনা। আমিও নিলুর সাথে।আমাদের চার জন করার জন্য দীপুদাকে দলে নেবার কোনো প্রয়োজন নেই। - বাসব বলে "ওরে আমি দীপুদা বলতে দীঘা,পুরী,দার্জিলিং...
প্রোফাইল ফটো – শম্পা চক্রবর্তী

প্রোফাইল ফটো – শম্পা চক্রবর্তী

বিহানবেলায় ৩
প্রোফাইল ফটো শম্পা চক্রবর্তী শুরু থেকেই শুরু করা যাক। হেডস্যার বললেন দুবছর পর অফলাইনে স্বাধীনতা দিবস পালন করা হবে। স্বাধীনতা ৭৫।সবকিছু যেন ঠিকঠাক হয়। দক্ষিণ কলকাতার এই বেসরকারি ইংরেজি মাধ্যম স্কুলটির সি বি এস সি বোর্ড। মহামারীর সময়ের অনলাইন বিভীষিকা কাটিয়ে এবার সশরীরে উৎসব পালন করা হবে। সবাই যেন কোমর বেঁধে কাজে নামে। কোভিডের আগেই ড্রামা  ক্লাব্  তৈরী হয়েছে। সুকান্ত স্যার উত্তর বাংলার একটি মিশনারি স্কুলের ড্রামা টিচারের পদ থেকে অবসর নেওয়ার পর এই স্কুলের সঙ্গে যুক্ত হয়েছেন। গত দুবছর সব অনুষ্ঠান অন লাইন হয়েছে। এবার এই দিনটিতে যেন পুষিয়ে নেওয়া যায়। সুকান্ত স্যারের উৎসাহ,উত্তেজনা,দায়িত্ব-সব কটি জিনিস অন্যান্যদের চেয়ে একটু বেশি। সদাহাস্যময় মানুষটির শিশু- কিশোরদের দিয়ে নাটক করানোর দক্ষতা ও অভিজ্ঞতার নিদর্শন পাওয়া যাবে এবার। ইন্টারনেটের কল্যাণে বিদ্যালয়ের ছাত্ররা বিশ্বকে চিনতে ...
কোমল ধৈবত – মণি ফকির

কোমল ধৈবত – মণি ফকির

বিহানবেলায় ৩
  কোমল ধৈবত মণি ফকির ।। পূর্বরাগ।। শহরের এই অংশে ভিড় অপেক্ষাকৃত কম। প্রতিটি বাড়ি সবুজ ছায়ায় আদরে সযত্নে লালিত। তার মধ্যে একফালি একটি বাড়ি,অস্তগামী সূর্যের কোমল আলোর মত রঙ তার। পুরনো ধাঁচের কাঠের দরজার বাইরে বড় করে সাদা অক্ষরে লেখা "পুরিয়া ধানেশ্রী"। বাড়িটি থেকে ভেসে আসছে এক মিহি কণ্ঠে রেওয়াজ এর সুর। ছয় বছর বয়সী তিতাস আকুল হয়ে গাইছে বেলা শেষের রাগ। তানপুরা ধরে বসে আছেন তার গুরু মা। মুগ্ধ হয়ে তিনি তাঁর ছোট্ট শিষ্যার গান শুনছেন। ছাদের এই ঘরটিতে পড়ন্ত বিকেলের আলো এসে এক মায়াবি পরিবেশ সৃষ্টি করেছে। আশে পাশের বাড়ির সবাই এই অলৌকিক পরিবেশের শরিক। অনতি দূরে কেউ নিজের অঙ্কের খাতার এক কোণে রাখলো লিখে "তিতাস একটি নদীর নাম।"     ---------X-------- ।। উত্তরাঙ্গ ।। - শুনছেন? - হ্যাঁ বলুন। - আপনি তো মঞ্জরী। - না। আপনার কোথাও ভুল হচ্ছে। আমি মঞ্জরী নই। - ওহ্। কিন্তু.... ...
error: বিষয়বস্তু সুরক্ষিত !!