Shadow

বিহান বেলায় ২

আপনজন – বিশ্বজিৎ দে

আপনজন – বিশ্বজিৎ দে

বিহান বেলায় ২
আপনজন বিশ্বজিৎ দে বাগবাজারের এক সাবেক বাড়ির দারোয়ানের পাশের ঘরে পারুলদি থাকেন। আছেন প্রায় বছর সাতেকের বেশি। ওই বাড়ির মেজকত্তার একমাত্র ছেলের একমাত্র কন্যা মিঠুর দেখাশোনা করেন। ওই যেদিন মেজকত্তার গিন্নি নাতনি হওয়াতে আটকৌরের দিন কুলো বাজিয়ে আর খই ছড়িয়ে নাতনির জন্য লাড্ডু বিতরণ করলো, তার ঠিক দুদিনের মাথায় পারুলদি এলো ওই বাড়িতে। দারোয়ান রাম সিংহের দূর সম্পর্কের কে যেন একটা হয়! সে যাইহোক এখন পারুলদি আর নাতনি মিঠুর এই এতগুলো বছরে সম্পর্ক তৈরি হয়েছে ভারী মিঠে। শীতের রোদে লুডো খেলার সঙ্গী হোক বা পড়ার পরে কার্টুন দেখার বন্ধু। মিঠুর সব আবদারের একমাত্র দাবিদার পারুলদি। স্নানের শেষে ভিজে মাথা মোছানো, যখন তখন নুডলস খাবার বায়না মেটানো, বারান্দায় রান্নাবাটি খেলার সঙ্গী কিংবা ঘুমের সময় গল্প বলা, সবই পারুলদি দক্ষ ভাবে সামলান। মিঠুর মা স্কুল শিক্ষিকা এবং বাবা একটি বেসরকারি ব্যাংকে কাজ করেন। দুজনের কাজের ...
উতলা উলূপী – পরাগ ভূষণ ঘোষ

উতলা উলূপী – পরাগ ভূষণ ঘোষ

বিহান বেলায় ২
উতলা উলূপী পরাগ ভূষণ ঘোষ নাগরাজ কৌরব্যের রাজত্বে প্রজারা সর্বদাই খুশীতে থাকেন। কৌরব্য শুধু রাজাই নন, সকলের সর্ব বিষয়ে দৃষ্টি রাখেন। অনার্য কৌরব্যের সুনাম, খ্যাতি, যশ চতুর্দিকে থাকা সত্বেও মনের ঈশান কোণে একটি কালো মেঘ জমে থাকে। আর্যরা তাদের বিপরীত মেরুতে অবস্থান করে। ওরা যুদ্ধবিদ্যায় ও গুপ্ত আক্রমণে পারদর্শী। এদিকে তার বৈমাত্রেয় শত্রু শিবিরও ওত পেতে থাকে সর্বক্ষণ। একটু অসতর্কতা ডেকে আনতে পারে চরম বিপর্যয়। এ কারণেই তার একমাত্র কন্যাকে পিতা কৌরব্যের উৎসাহকে সম্মান জানিয়ে যুদ্ধবিদ্যা করায়ত্ত করতে হয়েছে।যথাসময়ে কন্যার বিবাহ দেন বেশ জাঁকজমকপূর্ণভাবে। অসামান্য সুন্দরী ছিলেন সেই রাজকন্যা। পদ্মফুলের মতো মুখমন্ডলে বুদ্ধিদীপ্ততার ছাপ স্পষ্ট। সরোবরের ন্যায় চক্ষুদুটির মনোহরী দৃষ্টিতে স্নিগ্ধতা। একঢাল দীর্ঘ কৃষ্ণকুন্তলদাম রাজকন্যার পৃষ্ঠদেশ অতিক্রম করে কটিদেশ ছাড়িয়ে নিম্নাঙ্গে প্রবাহিত। দেহসৌষ্ঠব ঈর্ষ...
ইচ্ছে এবং বছর সতের পরে – শ্রুতি দত্ত রায়

ইচ্ছে এবং বছর সতের পরে – শ্রুতি দত্ত রায়

বিহান বেলায় ২
                          " ইচ্ছে "                        শ্রুতি দত্ত রায় ইচ্ছে করে তোমাকে পাশে নিয়ে চলে যাই বহুদূর _ ঠিক যেখানে তিস্তার ধূসর সীমাহীন চরের কেবলমাত্র শুরু, সেখানে রাতের বেলা যখন গোটা পৃথিবী নিঝুম, তোমার কালো চুল ও নীল শাড়ির আঁচলে যাব হারিয়ে। নিজেকে কিভাবে হারাতে হয় সে শিক্ষা দেবে আমাদের চাঁদ আর আকাশের তারাগুলো। আর নদীর চুমকি বসানো জল শেখাবে আমাদের ভালবাসতে। এভাবেই নিজেদের একে অন্যের মাঝে হারিয়ে ফেলতে ফেলতে খোলা আকাশের নীচে বালিময় জমির উপর দাঁড়িয়ে আমরা দুজনে পাঠ নেব ভালবাসাকে কিভাবে নিবিড়ভাবে ভালবাসতে হয়। ************************************************************************       " বছর সতের পরে "       শ্রুতি দত্ত রায় আজ থেকে বছর সতের পরে আবার ,  হঠাৎ যদি দেখা হয় তোমার আমার – আকাশের মত উদার চোখ দুটি তুলে দৃষ্টি দানে সিক্ত করবে না কি...

ঋতুর অভিযোজন – প্রতিভা পালসেন  

বিহান বেলায় ২
ঋতুর অভিযোজন প্রতিভা পালসেন   বসন্ত শেষে বর্ষবরণ, পরবর্তী ঋণের এক পরিবর্তিত সাল! নতুন ঋতু তবু একই নাম, একই আবহাওয়ায় সময় বহমান ! চৈতী হাওয়া কখন যেন গ্রীষ্মের স্পর্শে ক্রমশ জমাট, অচেনা কোনও কালবৈশাখীর রূপ! বর্ষা-মেঘের জলনূপুর কখনও বা খর দুপুরের রোদে হঠাৎ প্লাবন! শরতের আর্দ্র-শিশির, ভোরের শিউলি-বাসর- শীতের কুয়াশা-চাদরে কী সুন্দর, কী অম্লান! বসন্ত শেষে প্রতিবার নববর্ষের শপথ, রঙ চেনায়! থমকে থাকা স্রোত ইচ্ছেনদী হয়, পলির বাধা সরিয়ে বেগে, বৈঠা বেয়ে জীবন গায় ভাটিয়ালি গান, অভিযোজনের নতুন আশ্লেষে.... ************************** প্রতিভা পাল সেন পরিচিতিঃ পশ্চিমবঙ্গের জলপাইগুড়ি নিবাসী। কম্পিউটার-বিষয়ে স্নাতক ও স্নাতকোত্তর। পেশায় শিক্ষক। সাহিত্যের প্রতি ভালোবাসা থেকে ছোট থেকে লেখালিখির সঙ্গে যুক্ত। মূলতঃ কবিতা, গদ্য ও ছোটগল্পে লেখার প্রয়াস সীমাবদ্ধ। এছাড়া সংগীত চর্চা, ছবি আঁকা, রান্না...
শ্রুতি – ডাঃ সুচন্দ্রা মিত্র চৌধুরী

শ্রুতি – ডাঃ সুচন্দ্রা মিত্র চৌধুরী

বিহান বেলায় ২
শ্রুতি ডাঃ সুচন্দ্রা মিত্র চৌধুরী সুশোভন বসু ভয়ানক পাংচুয়াল । আর হবেনই বা না কেন? ছোটবেলায় পড়াশোনা করেছেন দুন স্কুলে। যখন বয়স মাত্র ছয়, তখন এক দুরারোগ্য ব্যাধিতে আক্রান্ত হয়ে মা মারা যান। মাকে ঠিক করে মনেই করতে পারে না। কলকাতার একটা ইংরেজী মিডিয়াম স্কুলে ক্লাস ফোর পর্যন্ত পড়াশোনার পর,দুন স্কুলে ক্লাস ফাইভে ভর্তি হয়। সেখানে থেকেই  টুয়েলভ পাশ করে সেন্ট জেভিয়ার্স থেকে ইংলিশ অনার্স পাশ করে চলে যান বিদেশে, সেখানে এম বি এ পাশ করে দেশে ফিরে একটি এম এন সি তে যোগ দেন । এখন সেই অর্গানাইজেশনেরই সি ই ও। জেভিয়ার্সে পড়ার সময়, শ্রীতমার সাথে আলাপ এবং সম্পর্ক। শ্রীতমার,সুশোভন এর বাড়িতেও যাতায়াত ছিল।বাবা শ্রী পঙ্কজ বসু, সব সময় ছেলেকে সাপোর্ট দিয়ে গেছেন। উনি বুঝতে পারতেন, ওর একটা দিক সবসময়ই কম, মা নেই। কিন্তু সুশোভন কিছুই কাউকে বুঝতে দেয় না। ওর খুব আবছা মনে পরে, বাবা ছোটবেলায় বকলে ও যখন কাঁদতে কাঁদতে মায়ে...
একইসঙ্গে স্নেহময়ী রক্ষাকর্ত্রী এবং রণরঙ্গিনী মা নিস্তারিণী – জয়িতা সরকার

একইসঙ্গে স্নেহময়ী রক্ষাকর্ত্রী এবং রণরঙ্গিনী মা নিস্তারিণী – জয়িতা সরকার

বিহান বেলায় ২
।। একইসঙ্গে স্নেহময়ী রক্ষাকর্ত্রী এবং রণরঙ্গিনী মা নিস্তারিণী ।।  জয়িতা সরকার                                              ।। একটি প্রতিবেদন ।।   কত রকমের ভাঙ্গা- গড়া, সাফল্য- ব্যর্থতা, লাভ- লোকসান পার করে আবার চলে গেল একটা বছর ,এল নতুন বাংলা বছর ।আরো নানা রকমের বিশেষ তিথির মতন এই বিশেষ দিনে শেওড়াফুলি নিস্তারিণী মায়ের মন্দিরে বিভিন্ন মানুষ বিভিন্ন প্রার্থনা নিয়ে উপস্থিত হবেন। পুণ্যার্থীদের হাতে হাতে ফুলমালা- লাল খাতা- ধূপ -দীপ- মিষ্টান্নে ভরে যাবে মন্দির চত্বর। এই ভরসার আশ্রয় তো আসলে একদিনের নয়।বাংলার দিকে দিকে বনে- জঙ্গলে- পাহাড়ে- মণ্ডপে-মন্দিরে-বাড়িতে- শ্মশানে মা কালীর পূজার প্রচলন প্রাচীনকাল থেকেই রয়েছে । আহ্লাদী  মনের কোণায় কোণায় মাতৃ আশ্রয়ের জন্য অপরিসীম আকাঙ্ক্ষা। সেই চাহিদা গিয়ে মিশেছে পুরাণে উল্লিখিত দেবীরূপের সঙ্গে।কালের নিয়ন্ত্রণকারিণী কালী নানা রূপে  নানাস্তরের...
কু উ…  – দেবাশিস দণ্ড

কু উ… – দেবাশিস দণ্ড

বিহান বেলায় ২
কু উ... দেবাশিস দণ্ড ভাড়া বাসায় সবটুকুই ভাড়ার ভাড়া করা জানালায় ভাড়া করা আকাশ। আকাশের গায়ে যত নকশা--সব ভাড়া করা। সুখি আজ জানালার পর্দাটা সরিয়ে দিতেই ফাগুন আলোয় সারা ঘর তছনছ। বুড়ো জামরুল গাছটায় আজও এসে বসেছে পাজি কোকিলটা। রাজার ব্যাটা সুখিকে দেখামাত্রই ডেকে উঠল-কু উ... সুখি বলতে গেল,যাহ! বলা আর হল না,সুরে এমন ঝিমধরা মৌতাত। কোকিলটা কালও এসেছিল। পরশুও। সুখি জানালা খুলতেই ডেকে উঠেছিল - কু উ... সুখি ভাবে,পাখিটা রোজ রোজ কু গায় কেন? পাখিটা বড্ড অলক্ষুনে। দু-একটা উড়নচণ্ডী মেঘ টলতে টলতে যাচ্ছে শিমুলদুয়ার থেকে পলাশদুয়ার। মোদো মাতাল বাতাস মুখ থুবড়ে পড়ে আছে শালগাছের গুঁড়িতে। সারা গায়ে লাল মোরাম মাখামাখি। রাজার ব্যাটা সুখির দিকে গ্রীবা ঘুরিয়ে তাকাল ফিক করে হেসে উঠল-কু উ... খসে গেল আঁচল খসে গেল হাজার হাজার হলুদপাতা। থৈ থৈ সুরে রোদ্দুরে ভেসে গেল পৃথিবীর সব পাড়া। সমস্ত...
ছোটোবেলার সাইকেল – বিদ্যুৎ পাল

ছোটোবেলার সাইকেল – বিদ্যুৎ পাল

বিহান বেলায় ২
ছোটোবেলার সাইকেল বিদ্যুৎ পাল ১ মেয়েদের শেষ দলটি চলে যাওয়ার পরেও অপরিচ্ছন্ন বাস্কেটবল কোর্টে কলেজ বাড়িটার ছায়া পড়তে দেরী থাকে। ছায়া শুধু আরেকটু গাঢ় হয় পোর্টিকোর কাছে–প্রিন্সিপাল আর দু’চারজন টিচার,বিদায় নেবার আগে কাজের দিনের শেষ বাক্যালাপটুকু সারতে থাকেন। এতক্ষণে ডিপার্টমেন্টে তালা ঝুলিয়ে তার ও বাড়ির পথে রওনা দেওয়ার কথা কিন্তু আজ ...! সাত বছরে প্রথমবার এ ব্যাপারে এত নিশ্চিত হয়েছে সে,যে লোকটা আসবেই। সে তো বলতে গেলে ওই একবারই দেখা,প্রথম আলাপ,শিপ্রা বৌদির বাড়িতে সন্ধ্যেবেলায়। তাও কোনো অঘটনে নয়,রীতিমত ব্যবস্থা করে। মনে হয়েছিল,লোকটি কথার দাম রাখা নিয়ে একটু বেশিই সচেতন। তবু,যদি না আসে?... হতে পারে না। হলে সে নিজের কাছে ছোটো হয়ে যাবে। কে ছোটো হয়ে যাবে? সে? নিজের কাছে? প্রিয় গোলাপী শাড়িটার আঁচল সে গাছকোমর করে নেয়,পনেরো বছর আগেকার দস্যিপনায়। অসম্ভব ! বলেছিল না প্রতিমাবৌদি ! “ছেড়ে দিবি ক...
নারীদিবস – সুজয় কুমার দাশ

নারীদিবস – সুজয় কুমার দাশ

বিহান বেলায় ২
নারীদিবস সুজয় কুমার দাশ সকালে উঠে দেখি মার্চ ৮ । সব মন মিলে ব্যস্তবাগীশ প্ল্যান-প্রোগ্রামে । এক মন ভাবে খসড়াটা লিখে ফেলি --- জনপ্রিয় সান্ধ্য চ্যানেল শো । অন্যজনা কথা সাজায় সোশ্যাল মিডিয়ায় । বাঁয়া তবলায় বোল ওঠে, রিনঝিন গীটারে । আদেখলাপনা সর্বত্র --- এঁদো গলি থেকে পদাধিকারীর জিভে । আমিও কিছু কম যাই না --- সারিবদ্ধ মিথ্যা শব্দ বুনছি দিনপঞ্জি দেখে, শুধু অন্তর্যামীর চোখে দূরবীক্ষণ --- কলিনারীর স্থান যে কোনখানে ? **********************  ...
দুটি অণুগল্প – রথীন পার্থ মণ্ডল

দুটি অণুগল্প – রথীন পার্থ মণ্ডল

বিহান বেলায় ২
  দুটি অণুগল্প রথীন পার্থ মণ্ডল ১. মহান বজ্রপাতে ছোটভাই হঠাৎ চলে গেল। বড়দা শিবনাথ শোকে আচ্ছন্ন, বাড়ির সকলেও। বৌমা-ভাইপো-ভাইঝির চোখের জল থামছে না। এদিকে বড় বৌ অঝোরে কেঁদেই চলেছে। দুই ছেলে বিছানা নিয়েছে শোকে।       আবার বিপদ--। বোন চন্দনা তার দুই মেয়েকে নিয়ে বিধবার বেশে হাজির। কান্না বিজড়িত স্বরে সে বলল-"তিন দিন আগে মোটর সাইকেল দুর্ঘটনায় তোমার জামাই বিদায় নিয়েছে। তোমাদের শোক চলছে তাই জানাইনি। এখন থেকে এখানেই আমরা থাকব। বল দাদা--কি করব? আজ তাকে ফুল-জল নিবেদন করে -এখানেই চলে এলাম- আর উপায় নেই!"       শিবনাথের চোখে জল-"হ্যাঁ, তোরা সবাই এখানেই থাক। ঈশ্বরের দয়ায় সকলে সুখে-দুঃখে একসাথে থাকব।" ২. সারমেয় কথা   আবার গেলাম রতনদের বাড়ি। দরজা পেরিয়ে উঠোনে ঢুকলাম। রতনের মা যেন দেখেও দেখল না। দূর দূর করে তাড়িয়েও দিল না। আর কেনই বা দেবে? তাড়িয়ে দিতে দিতে ক্লান্ত হয়ে গেছে। আমি...
error: বিষয়বস্তু সুরক্ষিত !!