Shadow

উত্তরণ

সম্পদ বন্দোপাধ্যায় স্মৃতি সাহিত্য প্রতিযোগিতায় সফল

আগন্তুক – নাজির হোসেন বিশ্বাস

আগন্তুক – নাজির হোসেন বিশ্বাস

উত্তরণ, কাশবন ২
  আগন্তুক নাজির হোসেন বিশ্বাস "কে বাবা তুমি, চোখ মুখ দেখে তো মনে হচ্ছে খুব কষ্টে রয়েছো?" কোন কথা না বলে শুধু একবার চেয়ে দেখলো আগন্তুককে। বাপের বয়সী’ই হবে। তিনি খেয়াল করলেন, ছেলেটির চোখ ছলছল করছে, এক টোকাতেই যেন বৃষ্টির ফোঁটা ঝরঝর করে ঝরে পড়বে। আগন্তুক পাশে বসে, পিঠে হাত রাখতেই গ্রীষ্মের শুকিয়ে যাওয়া লতায় বৃষ্টির ছোঁয়া পাওয়ার মতো যেন স্নেহের পরশ লাগলো, সেই স্নেহের ছোঁয়ায় হাউহাউ করে কেঁদে উঠলো চব্বিশ পঁচিশ বছরের তরতাজা যুবক। আগন্তুক ভদ্রলোক পিঠে থাবা দিয়ে বলতে থাকেন, কাঁদিস না বাবা, কি হয়েছে বল আমাকে। জানিস না,“বিপদে মোরে রক্ষা করো এ নহে মোর প্রার্থনা, বিপদে আমি না যেন করি ভয়।“ আগন্তুকের কথায় যেন ছেলেটি কোন আপনজনের সান্নিধ্য পেল।  নিজেকে সংবরণ করে নিয়ে,"আব্বু এই হাসপাতালে ভর্তি রয়েছেন দু’সপ্তাহ থেকে। "ভদ্রলোক মুখে দুঃখসূচক শব্দ করে বলে উঠলেন,"তোমার নাম কি বাবা? বাড়ি কোথায়?" কাঁদ...
সেলফি – দেবাশিস দণ্ড

সেলফি – দেবাশিস দণ্ড

উত্তরণ, প্রথম বর্ষপূর্তি
সেলফি দেবাশিস দণ্ড না,শেষে চমক দেব না,শুরুতেই বলে রাখি আমি স্বপ্ন দেখছিলাম। স্বপ্নের বইমেলায় ঘুরছিলাম। বই কিনছিলাম না,কারণ বাস্তবেও বই বিশেষ কিনি না। পড়লে চেয়েচিন্তে পড়ি। আদ্ধেক পড়েই ভালো মন্দ বলার অসম্ভব প্রতিভা আছে আমার। তাই পুরোটা পড়তেই হয় না। যেহেতু আদ্ধেক বই বিক্রি হয় না,পুরোটাই কিনতে হয়,তাই আমার কাছে বই কেনা ঠকা। রানুদিকে দেখতে পেলাম। আমার স্বপ্নের রানুদি। আহা কী কন্ঠ! এই কন্ঠই তো ছড়িয়ে পড়েছে রানাঘাট থেকে নানা ঘাটে। আমি সেলফি নেব। রানুদির পাশে দাঁড়ালাম। মোবাইলটা তেরচা করে উপরে তুললাম। রানুদি যথাসম্ভব মিষ্টি করে হাসল,কিন্তু ক্লিক করা হল না। আনন্দর কাউন্টারের পাশ থেকে রাধারমণ চেঁচিয়ে উঠল-শিগগির আয়,শ্রীজাতদা...শ্রীজাতদা... রানুদিকে পরেও পাব,পহলে শ্রীজাত। জাতকবি বলতে আমি শ্রীজাতই বুঝি। আমার স্বপ্নের শ্রীজাতদার সঙ্গে ছবি তুলব। সোশ্যাল মিডিয়ায় ঢেউ তুলব। লহরীর পর লহরী তুলিয়া আঘাতের পর আ...
রহস্যময় সেই রাতে – সুতপা বন্দ্যোপাধ্যায়

রহস্যময় সেই রাতে – সুতপা বন্দ্যোপাধ্যায়

উত্তরণ, বিহানবেলায়
রহস্যময় সেই রাতে               সুতপা বন্দ্যোপাধ্যায়                                         ‘বাজনা শুনতে পাচ্ছিস?’ – আমার মুখের ওপর ঝুঁকে পড়ে ফিসফিসিয়ে জিজ্ঞেস করল অনুরাধা। একে ঘুম চোখ। তায় ঘরে নিশ্ছিদ্র অন্ধকার। ওর মুখ ঠাহর করতে পারলাম না। কন্ঠস্বরে আতঙ্কের ছাপ অনুভব করায় উঠে বসলাম। ও আমাকে জড়িয়ে ধরল। ওর সিঁটিয়ে যাওয়া শরীর, ঘর্মাক্ত হাতের তালুর স্পর্শে আঁতকে উঠলাম। ঘরের এক কোণে রাখা তেলের কুপি কিছুক্ষণ আগেও জ্বলছিল। খোলা জানলাগুলো দিয়ে একটা মৃদু আলো আসছিল। তবু তো আসছিল। অচেনা-অজানা জায়গায় বৃষ্টিমুখর লোডশেডিংয়ের রাতে ওই সামান্য আলোটুকুই ছিল ভরসা। কুপিটা কোনো কারণে নিভেছে। জানলাগুলো আমরা বন্ধ করেছি। একটা জানলার বাইরে অদূরে ঝাউবন ও সমুদ্র। ঝোড়ো হাওয়ায় সেই জানলার ভাঙা পাল্লার ধাক্কা লেগে বহু পুরোনো কাঠের আলমারিতে শব্দ হচ্ছিল – খট খট খট। শব্দের চোটে এর আগে একবার আমাদের ঘুম ভেঙেছে। প্রথমে শ...
প্রিন্স – সুস্মিতা কর্মকার

প্রিন্স – সুস্মিতা কর্মকার

উত্তরণ, বিহানবেলায়
প্রিন্স সুস্মিতা কর্মকার চারিদিকে সাদা। একহাত দূরেও পরিস্কার কিছু  দেখা যাচ্ছেনা। তুষার ঝড়ের মধ্যে বীথিমা দিগবিদিক জ্ঞানশূন্য হয়ে ছুটছে। হাতে ধরা সেই পোর্সিলেনের পুরুষ পুতুলটা। আমি চিৎকার করে বলছি বীথিমা কোথায় যাচ্ছো? বীথিমাআআ...কিন্তু আমার গলার আওয়াজ কেউ শুনতে পাচ্ছেনা। বীথিমা কে আর খুঁজে পাচ্ছিনা! শুধু বরফের উপর পড়ে আছে পুতুলটা। হঠাৎ বিপবিপ আওয়াজে ধড়মড় করে উঠে বসলাম। এলার্মটা অফ করে পর্দা সরিয়ে দেখলাম আজকেও বরফ পড়েছে। একেই সকালে অফিস যাওয়ার তাড়া। তার মধ্যে আবার বরফ পরিস্কার করো! একরাশ ব্যস্ততার মধ্যে একহাতে কফি আরেকহাতে বাবলিনের স্কুলের ব্যাগটা নিয়ে বেরোবার সময় একবার হাচের কাচের দরজার পিছনে পুতুলটার দিকে তাকালাম। হ্যা আজকেও পুরুষ পুতুলটা ডানদিকে ঘুরে গেছে। হাতে ভায়োলিন, হাসিমুখে তাকিয়ে আছে নৃত্যরতা নারী পুতুলটির দিকে। *** গাড়ি চালাতে চালাতে শুধু বীথিমা আর সেনদাজেঠুর কথা মনে পড়ছিল। নি...
হোয়াইট হাউসে রক্তের দাগ – দেবপ্রিয়া সরকার

হোয়াইট হাউসে রক্তের দাগ – দেবপ্রিয়া সরকার

উত্তরণ, বিহানবেলায়
হোয়াইট হাউসে রক্তের দাগ দেবপ্রিয়া সরকার কুয়াশা ঢাকা আকাশের গায়ে লেপ্টে আছে কমলা রঙের চাঁদ। বিকেলের পর থেকেই শিরশিরে উত্তুরে হাওয়া কাঁপন ধরাচ্ছে। আজ ডিসেম্বরের চব্বিশ। রাত পোহালেই বড়দিন। চারদিকে উৎসবের আবহ। আলোর মালায় সেজেছে চার্চ,দোকানপাট;হোয়াইট হাউসও। অ্যালবার্ট ডিসুজা নামজাদা মানুষ। বংশপরম্পরায় ধনী। তাঁর পূর্বপুরুষরা ইংরেজ আমলে কাঠের ব্যবসা করতে এসেছিলেন ডুয়ার্সে। তারপর এখানেই রয়ে গেলেন পাকাপাকিভাবে। ব্যবসার পাশাপাশি রাজনীতিতেও অ্যালবার্ট হাত পাকিয়েছেন ভালরকম। খুব বড়সড় গণ্ডগোল না হলে এবছর তাঁর বিধানসভায় টিকিট পাওয়া কেউ আটকাতে পারবে না। ডিসুজাদের  বাড়িটা ছিল অনেক পুরনো। অ্যালবার্ট তাকে ভেঙে তৈরি করেছেন হাল ফ্যাশানের দালান। দামী মার্বেল পাথর বসানো বাড়ির বাইরের রঙ ধবধবে সাদা। স্থানীয় মানুষরা বলে হোয়াইট হাউস।  হোয়াইট হাউসে আজ চলছে খ্রিস্টমাস ইভ সেলিব্রেশন। আত্মীয়-বন্ধু,পার্টির নেতা-কর্ম...
error: বিষয়বস্তু সুরক্ষিত !!