Shadow

গল্প

গল্প

অচেনা একজন – রিমিতা কর 

অচেনা একজন – রিমিতা কর 

গল্প, বিহানবেলায়
অচেনা একজন  রিমিতা কর  আজ সারাদিন রাহীর সাথে একবারও কথা বলার সময় পায়নি অত্রি। হাতের কব্জি উল্টে সে দেখল সন্ধ্যে ছটা। রাহীর লাস্ট মিসড কলটা বোধহয় বিকেল তিনটেতে এসেছিল। একবার নয় পরপর তিনবার। অত্রি  তখন মিস্টার তলাপাত্রর কাছ থেকে আগামী সাতদিনের অ্যাসাইনমেন্টটা বুঝে নিচ্ছিল। মিস্টার তলাপাত্র অত্রির বস এবং এই রিজিয়নের জোনাল ম্যানেজার। বয়স মধ্য চল্লিশ। লম্বা ফর্সা ফ্রেঞ্চ কাট দাড়ির সাথে দামী গোল্ডেন ফ্রেমের চশমা। যেমন স্মার্ট তেমন খুঁতখুঁতে আর ডিসিপ্লিনড। আরও একটা আশ্চর্য  গুন ওনার আছে। লোকটা চোখ দেখে মন পড়তে পারে। এই একটা কারনে অত্রি রীতিমতো তলাপাত্র কে ভয় পেয়ে চলে। সত্যিই আশ্চর্য ক্ষমতা বলতে হবে। এই যেমন  কিছুক্ষণ  আগে তলাপাত্র  নতুন প্রোডাক্ট নিয়ে অত্রিকে বোঝাচ্ছিল। সামান্য বিষয় নিয়ে লোকটা এত ডিটেলে বলে যে অত্রির ঘুম পেয়ে যাচ্ছিল। টিফিনের পর ঠান্ডা ঘরে বসে এত বকবকানি শুনলে কার না ঘুম পাবে। ...
রাঙিয়ে দিয়ে যাও – স্মৃতিকণা রায়

রাঙিয়ে দিয়ে যাও – স্মৃতিকণা রায়

গল্প, বিহানবেলায়
রাঙিয়ে দিয়ে যাও স্মৃতিকণা রায় প্রায় কুড়ি মিনিট ইউনিয়ন রুমে বসে আছে। শঙ্খদার সঙ্গে দেখা করবে। শেষ দুটো অনার্সের ক্লাস হয়নি। আড্ডা না মেরে ক্যারাম খেলছিল। শঙ্খদা সাধারণত বিকেলের দিকে আসে। তাই একটা গেম শেষ করেই চলে এসেছে। আজ দেখা করতেই হবে। প্রায় ৩৫ মিনিট হয়ে গেল। একটা ছেলে প্রথম থেকেই ইউনিয়ন রুমে রয়েছে। আপাতত ইউনিয়ন রুমে আর কেউ নেই। তারা দু’জন। এখনও পর্যন্ত তারা কেউ কারও সঙ্গে কথা বলেনি। সে উঠে বইয়ের আলমারির কাছে দাঁড়াল। সব কবিতার বই। রবীন্দ্রনাথ, নজরুল, সুভাষ মুখোপাধ্যায়, শক্তি, সুনীল। সুভাষ মুখোপাধ্যায় এখনও পড়া হয়নি। তার চোখটা আটকে রয়েছে বইটার দিকে। যদি পাওয়া যেত—! কিন্তু আলমারিতে তালা। বাইরে থেকে দু’বার হাত বোলাল বইটার ওপর। —‘‘পড়বে?’’ —‘‘চাবি দেওয়া তো!’’ —‘‘নেবে কিনা বলো?’’ —‘‘দিন।’’ —‘‘আপনি–আজ্ঞে করলে দেব না।’’ একটু হেসে বলল, ‘‘দাও।’’ —‘‘গুড গার্ল।’’ বইটা পেয়ে সে একটা চেয়ারে বস...
মোমরঙের সংসার – ব্রততী চক্রবর্ত্তী

মোমরঙের সংসার – ব্রততী চক্রবর্ত্তী

গল্প, বিহানবেলায়
মোমরঙের সংসার  ব্রততী চক্রবর্ত্তী   -- ও ঠাম্মা পয়সা দিবা? কাঠি আসকিরিম খাবো এট্টা। নারকোলের আচায় এক খাবলা ছাইমাটি মিশিয়ে ছোবড়া আনতে গেছিল বিন্দে। সকড়ি বাসনগুলো কলপাড়ে পড়ে রয়েছে সকাল থেকে। হাজারটা কাজ সেরে তবে তো ফুরসত। তারমধ্যে এই এক নাতি তার ঘাড়ে। কলতলায় থেবড়ে বসে নাতিকে ধমকাল বিন্দে, -- পয়সা কি গাছ থেকে টপকায় নাকি রে? এই তো সকালেই এক পেট পান্তা গিললি! আবার এখন খাবার পয়সা চাস তুই? -- ও তো পান্তা! আমি কাঠি আসকিরিম খাবো। হারুরা সব  খেয়েছে। জিভে কী সুন্দর রঙ হয়ে যায়,জানো? আমিও খাবো, দাওনা পয়সা। ও ঠাম্মা… -- এমন রাক্ষস তো আমি জম্মে দেখিনি ঠাকুর! বলি বাপের কি জমিদারি আছে যে আসকিরিম কিনে খাবি? পয়সা নেই আমার কাছে। যা এখান থেকে। আট বছরের নুরু মাটিতে শুয়ে হাত-পা ছুঁড়ে কান্না জোড়ে এবার। বিন্দে কোনো ভ্রূক্ষেপ না করে বাসনগুলো রগড়াতে থাকে। কিছুক্ষণ বাদে আর সহ্য করতে না পেরে ছাইমাটি মাখা...
রাতের মেলট্রেন – ব্রততী সেন দাস

রাতের মেলট্রেন – ব্রততী সেন দাস

গল্প, বিহানবেলায়
রাতের মেলট্রেন ব্রততী সেন দাস নিশুত রাত,কামরা ঘুমে অচেতন।তেপান্তরের মাঠের ওপর দিয়ে মেল ট্রেন ছুটে চলেছে দিকশূন্যপুরের দিকে। নিশছিদ্র বগি থালার মত মস্ত কষ্টিপাথরের রঙা আকাশ উপুড় হয়ে আছে আর সেখানে ছিট ছিট কুচি কুচি নক্ষত্র ছড়িয়ে আছে আদিগন্ত।অমাবস্যার রাত,এক কিশোরী কন্যা মাঝ রাতে ঘুম ভাঙা চোখ মেলে চেয়ে আছে বাইরে।জানলার শার্সি তোলা,মন্দ মেদুর বাতাসে কপালের ওপর চুল এলোমেলো হয়ে যাচ্ছে ।লোহার ঠান্ডা রডে গাল চেপে এক অবাক বিস্ময়ে দেখছে রাতের প্রকৃতিকে।ট্রেনের গতির সঙ্গে পাল্লা দিয়ে দৃষ্টি সরে সরে যাচ্ছে আবছা মাঠ,ঘাট,পুকুর, খেত,খামার, ঘর- বাড়ি পেরিয়ে দূরের দিকে।  যেখানে ঘুমন্ত মাতঙ্গসম পাহাড় আর টিলা নিশ্চুপে আছে পশ্চিমদিকে।তার উঁচু নিচু রূপরেখার বাইরে কালো কালির কাঁচের বোয়ামের মত ঝকঝকে আসমান আর উড়ো উড়ো মেঘ সরে সরে যাচ্ছে। কিশোরী কামরার দিকে মুখ ফিরিয়ে দেখল অন্ধকার চারদিক,প্যাসেজের শেষে একটা টিমটি...
ফুটো – দীপাঞ্জন মাইতি

ফুটো – দীপাঞ্জন মাইতি

গল্প, বিহানবেলায়
ফুটো দীপাঞ্জন মাইতি মাকে ফুটোর মনে পড়ে না। আট বছর হলো-জন্ম ইস্তক্ ভোলাকেই চিনেছে বাপ বলে। ভোলার সাথে ফুটোর কোনো মিল নেই। আমিনা চাচী বলে,ফুটোর নাকি মায়ের সাথে খুব মিল তবে আয়নায় ফুটো দেখেছে ওর চোখের কটা রংটা ঠিক রকির মত। রেলগেট থেকে স্কুল মোড় এলাকার সত্তরটা ট্রাফিক মোড়ের সর্বেসর্বা রকি।  রকি হল ফুটোর ফেভরিট,ফুটো বড় হয়ে রকির মত হতে চায় কারণ আর লোকে বলে ফুটো নাকি জন্মের আগে থেকেই রকির ফেভরিট। তখন কত হবে বয়স মাস ঘুরেছে হবে বড় জোর...প্রথম দেখাতেই রকির জহুরী নজরে পড়েছিল ফুটো। তখন ফুটোর সে কি ফুটেজ...। তবে সে সব কিছুই ফুটোর মনে নেই সবই আমিনা চাচীর কাছে শোনা। চাচীই নাকি সব থেকে বেশী কাটে,বেশীদিন কোলে পাততো ফুটোকে...শ টাকায় ৪০ রকির,৩৫ চাচীর আর ২৫ ফুটোর। এতদিন কোলে পেতেছে,চাচীর গায়ের গন্ধটাই তাই বোধহয় ফুটোর সবচে চেনা। বেশী জড়িয়ে পড়লে ধান্ধা চৌপাট হয়ে যাবে তাই রোজ রাতে রকির অর্ডারে ভোলার এক হাতে নোট...
বাসাবাড়ি – ডঃ গৌতম সরকার

বাসাবাড়ি – ডঃ গৌতম সরকার

গল্প, বিহানবেলায়
বাসাবাড়ি ডঃ গৌতম সরকার দরজা দিয়ে ঢুকেই অপ্রশস্ত শ্যাওলা পড়া উঠোন। বাঁদিকে কুয়ো,কুয়োর পাশেই তিন ধাপ সিঁড়ি উঠে এজমালি পায়খানা। একটু এগিয়ে ঢাকা বারান্দা,যার এদিক থেকে ঢুকে বাঁদিকে ঠাকুরের রান্নাঘর পেরিয়ে সোজা ছাদে ওঠার সিঁড়ি। ছাদে একটা ছোট্ট ঘর। ঢাকা বারান্দার বাইরে ডানদিকে পাশাপাশি তিনটে ঘর। মাঝের লাল টুকটুকে মেঝের ঘরটি আমার বাবার বাসা। জায়গাটা আধাশহর হলেও, আমার চোখে এটাই দিল্লী-বোম্বাই-কলকাতা সব। এখানে ঘরের পাশেই পিচ রাস্তা,মুহুর্মুহু বাস-ট্রাক-ট্যাক্সি ছুটছে। আরেকটু দূরের রেলস্টেশন থেকে আসা ট্রেনের আওয়াজ বাসায় বসেই শুনতে পাওয়া যায়। আমাদের গ্রামে এসব কল্পনাও করা যায়না। বাড়ি থেকে বাস রাস্তার দূরত্ব প্রায় দু-কিলোমিটার। হেঁটে,নয় সাইকেলে যেতে হয়। সারা গ্রামে দোকান বলতে দুটো মুদিখানা দোকান। আর এখানে ঘর থেকে বেরোলেই ঝাঁ চকচকে দোকান শত সম্ভার সাজিয়ে বসে আছে। আমি এখানে থাকিনা। এটা আমার বাবার বাসা...
error: বিষয়বস্তু সুরক্ষিত !!