Shadow

বিহানবেলায়

বিহানবেলায়

ডাক্তার – সাথী সেনগুপ্ত

ডাক্তার – সাথী সেনগুপ্ত

গল্প, বসন্ত সংখ্যা
ডাক্তার সাথী সেনগুপ্ত  কথায় বলে ‘পহলে দর্শনধারী,পিছলে গুণ বিচারী’। কথাটা যে কতটা সত্যি সে কথা হাড়ে হাড়ে জানে প্রীতম। অবিশ্যি হাড়ে হাড়ে জানা ছাড়া উপায়ই বা কি? কারণ প্রীতমের দেহে হাড় ছাড়া কিছুই নেই। হাড় আর চামড়া। মাংস কিংবা চর্বি জাতীয় পদার্থ একেবারেই বাদের খাতায়। নাক,চোখ,দাঁতের সেটিং প্রীতমের মন্দ নয়। মাথায় চুলও আছে এক গোছা। গায়ের রঙ ফর্সা না হোক, গায়ে গতরে লাগলে ওতেই বেশ চেকনাই দিত। তাতে টিং টিঙে লম্বা। সব মিলিয়ে কেমন একটা ‘তালগাছ এক পায়ে দাঁড়িয়ে’ ভাব। ওতেও ক্ষতি ছিলনা। প্রীতম যদি বাংলায় এম এ পড়ে,গায়ে কারুকার্য করা ঢলঢলে পাঞ্জাবী গলিয়ে,কাঁধে ঝোলা ব্যাগ ঝুলিয়ে কাব্যি চর্চা করত,কিংবা সাইকেল চালিয়ে এবাড়ি ওবাড়ি গিয়ে করত গানের টিউশনি। কিন্তু মুশকিলটা যে অন্যত্র। আসলে প্রীতমের পেশার সঙ্গে এই কেষ্ট ঠাকুর মার্কা রূপটা একেবারেই খোলতাই হয় না। প্রীতম কয়েক বছর হল কলকাতা মেডিক্যাল কলেজ থেকে ডাক্তারি...
সেই নারী – অনুপ দত্ত

সেই নারী – অনুপ দত্ত

কবিতা, বসন্ত সংখ্যা
          সেই নারী ডঃ অনুপ দত্ত সেই এক পুরুষ যে ঈশ্বর মানে না, সে কাঁদে অন্তরে বয়ঃসন্ধি কালে উষ্ণ রঙ মাখানো কোনও এক বিকেলে সেই পুরুষ সবে’তে রঙ চড়ায়, দ্যাখে সব সাঁঝ-লাগা বিকেলে৷ ৹ সেই এক পুরুষ যে ঈশ্বর মানে না,সে কাঁদে অন্তরে করতালি দিয়ে কেন হেসে ওঠে জটা-খোপা বোষ্টমী হরিদাসী গানে, ঢলে পড়লে হেঁটে যায় আঁশজলে উলঙ্গ কাপড়ে যেন অশুচি নিষ্ফলা সব,রেখেছে মানত্ অনন্ত সব পাথর ও পাথরে৷ ৹ সেই এক পুরুষ যে ঈশ্বর মানে না,সে কাঁদে অন্তরে হে পুরুষ,তুমি পালাও তবে পালাবার আগে বলে দিয়ে যাও কেন তুমি ঈশ্বর মানো না শয়তান’ও মানে জানি… কারণ শয়তান ও তোমাদের মাঝে যে ঈশ্বর সে বড় কঠিন,এবং তিনি সেই নারী! ***************************************** ডঃ অনুপ দত্ত পরিচিতি: কবি অনুপ দত্ত-র জন্ম কালীতলা হাট, বগুড়া শহর, বাংলাদেশ৷ ওপার বাংলায় ইশকুল শেষে বিশ্ববিদ্য...
গন্ধমালতী – ডাক্তার (ক্যাপ্টেন) দিলীপ কুমার সিংহ

গন্ধমালতী – ডাক্তার (ক্যাপ্টেন) দিলীপ কুমার সিংহ

গল্প, বসন্ত সংখ্যা
গন্ধমালতী ডাক্তার (ক্যাপ্টেন) দিলীপ কুমার সিংহ রাধিকা দেবী পাশ ফিরে শুলেন। কিছুক্ষণ আগে নার্স এসে চান করিয়ে,কাপড় পরিয়ে চুল আঁচড়ে দিয়ে গেছে। যাবার আগে রাধিকা দেবীর পছন্দ মত স্প্রে ছড়িয়ে দিয়েছে। রাধিকা দেবী একটু বেশি সেনসিটিভ গন্ধ নিয়ে | সব গন্ধ সহ্য করতে পারেন না। হয় তিনি নিজের পছন্দ মত পারফিউম ব্যবহার করবেন নাহলে গন্ধহীন থাকবেন। ‘গন্ধহীন’ শব্দটা মনে আসতেই ঠোঁটের কোণে একটু হাসির ছোঁয়া দেখা গেল। পুজোর সময়ে মা নতুন  কাপড়ে অগুরু লাগিয়ে দিতেন। পুজোর কদিন সেই মিষ্টি গন্ধ লেগে থাকত | এছাড়া বিয়ের আগে গন্ধের বিষয়ে কোন জ্ঞান ছিলনা । তবে বিয়ের দিন কনে সাজবার পরে চন্দনের সুগন্ধে সারা মন ভরে গিয়েছিল। সেই প্রথম তাঁর মন একটা গন্ধকে আলাদা করে চিনে ছিল । ফুলশয্যার দিন তাঁর স্বামী অলক বাবু কিছুক্ষণ নিজের কথা বলার পর হঠাৎ তাঁকে জিজ্ঞেস করেন,'একি তুমি গন্ধহীন কেন?' তারপর নিজেই বুঝিয়ে দিলেন যে তাঁর মতে প্রত...
পূর্ণবাবুর জন্মদিন – চন্দ্রকান্তি দত্ত

পূর্ণবাবুর জন্মদিন – চন্দ্রকান্তি দত্ত

গল্প, বসন্ত সংখ্যা
পূর্ণবাবুর জন্মদিন চন্দ্রকান্তি দত্ত পূর্ণবাবুর মন ভাল নেই। ছেলে-বৌমা তাঁর জন্মদিন পালন করবে এই খবরটা পাওয়া অবধি তিনি কিছুটা মুষড়ে পড়েছেন। পূর্ণবাবু তিনদিন পরে,মানে আগামী ২১শে জ্যৈষ্ঠ পঁচাত্তর পেরিয়ে ছিয়াত্তরে পড়বেন। এই বিশেষ দিনটাকে স্মরণীয় করে রাখতে ছেলে-বৌমা মিলে কিছু অনুষ্ঠানের আয়োজন করেছে। কয়েকজন আত্মীয়-স্বজন, বন্ধু-বান্ধব নিমন্ত্রিত হবেন,কেক কাটা হবে,গান-বাজনা,খাওয়া-দাওয়াও হবে। সেখানেই পূর্ণবাবুর আপত্তি। যদিও তিনি ওদের সে আপত্তির কথা জানান নি। পূর্ণবাবু মনে-প্রাণে নিপাট বাঙালি। ছেলেবেলা থেকে দেখে এসেছেন,বাড়িতে ঘটা করে জন্মদিন পালনের কোন রেওয়াজ ছিল না। জন্মদিনে কোন উপহারও আসত না। মা গোবিন্দভোগ চালের পায়েস রান্না করতেন। যার জন্মদিন সে আগে পায়েস মুখে দিলে অন্যেরা পায়েস পেত। এভাবেই পালিত হত সবার জন্মদিন। পূর্ণবাবু সেই পরিমন্ডলে বড় হয়েছেন। সেই সংস্কৃতিকেই জীবনের চলার পথে আঁকড়ে...
উত্তরাধিকার – অদিতি ঘটক

উত্তরাধিকার – অদিতি ঘটক

গল্প, বসন্ত সংখ্যা
উত্তরাধিকার অদিতি ঘটক ---"নাম-- নাম কি?" লোকটা ফোলা মুখ নিয়ে ব্যান্ডেজ বাঁধা মাথায় দীপ্তেশ এর  দিকে খানিকক্ষণ চেয়ে থাকে। কি বলছে কিছুই যেন মাথায় ঢুকছে না। আবার দীপ্তেশ বলে,"নাম, নাম কি?" এবার তার সুর একটু কড়া। লোকটা এবার ব্যান্ডেজ বাঁধা মাথায় হাত দিয়ে তার উসকোখুশকো চুলটা চুলকোয়। বোকা বোকা হেসে অতীতের পাতা ঘেঁটে স্মৃতির অতলে তলিয়ে যাওয়া কোনো কিছুকে হাতড়ায়। তারপর হাতড়ে, হাতড়ে যেন বহুদিন আগে ডুবে যাওয়া, শ্যাওলা পড়ে হড়হড়ে হয়ে যাওয়া কোনো কিছুকে তুলে আনে। বলে,"নগেন, ছার, নগেন বেরা।" তার ভাঙাচোরা, ফোলা মুখে একটা আত্ম প্রসাদের হাসি। লাজুক মুখে বলে,"ও নামে তো এখানে কেউ ডাকেনি ছার। তাই মনে ছিলনি" হাবিলদার বিনয় মুখ বেঁকিয়ে ব্যাঙ্গ করে বলে,"তোমায় তাহলে কি নামে ডাকব চাঁদু? মানে এফ. আই. আর. এ কি নাম থাকবে ? নামের পাশে ব্রাকেটে অন্য নাম গুলো লিখতে হয় তো।" লোকটা ব্যাঙ্গটা ঠিক ধরতে পারলো না বা পাশ ক...
নীরব কোলাহলে – সুলগ্না চক্রবর্তী (সুধীর কুমার দত্ত স্মৃতি সাহিত্য প্রতিযোগিতায় তৃতীয় পুরস্কার প্রাপ্ত গল্প)

নীরব কোলাহলে – সুলগ্না চক্রবর্তী (সুধীর কুমার দত্ত স্মৃতি সাহিত্য প্রতিযোগিতায় তৃতীয় পুরস্কার প্রাপ্ত গল্প)

গল্প, বসন্ত সংখ্যা
নীরব কোলাহলে  সুলগ্না চক্রবর্তী গভীর রাত। গোটা শহর ঘুমের অতলে তলিয়ে গেছে। শুধু তঁলেরু বসে আছে সদ্য তৈরী করা প্রাসাদের মতো বাড়ীর বারান্দার চেয়ারে। চরাচর ভেসে যাচ্ছে পূর্ণিমার আলোতে, সামনে বয়ে চলা গঙ্গাতে ভেসে যাচ্ছে চাঁদ খণ্ড খণ্ড হয়ে,আর তঁলেরুর দুই চোখ ভেসে যাচ্ছে জলে। ফ্রান্স থেকে যে চিঠি দুটো এসেছে সেগুলো পাশের ছোট্ট টেবিলটাতে রাখা। তঁলেরুর বাবা জানিয়েছে তার মতো ছেলের বাবা হওয়ার জন্য সে লজ্জিত। প্রেমিকা সিলভিয়া জানিয়েছে এই তাঁর শেষ চিঠি তঁলেরুকে। সে,ফ্রান্সের ব্রিটন অঞ্চলের লজ্জা নয়, গোটা ফরাসী সাম্রাজ্যের লজ্জা। তার জন্যই ব্রিটিশদের কাছে সাঁদেরনগর হারাতে হলো তাদের। কি এমন হয়েছিলো যে তঁলেরু আজ শেষ হয়ে গেলো? সাঁদেরনগর মানে চন্দননগর দখল করা প্রায় দুষ্কর ছিলো রবার্ট ক্লাইভের পক্ষে। অথচ চন্দননগর দখল না করলে কোম্পানীর বাংলার নবাব সিরাজ-উদ-দৌলাকে হারানো প্রায় অসম্ভব ছিলো। নবাবে...
যমালয়ে জীবন্ত মানুষ – পরাগ ভূষণ ঘোষ

যমালয়ে জীবন্ত মানুষ – পরাগ ভূষণ ঘোষ

গল্প, বসন্ত সংখ্যা
যমালয়ে জীবন্ত মানুষ  পরাগ ভূষণ ঘোষ যুদ্ধ না বলে মহাযুদ্ধ বলাই সঠিক। ছত্রিশ বছর হলো এই মহাযুদ্ধ অতিক্রান্ত। আত্মীয় পরিজন,বন্ধুবান্ধব অনেকেই আজ আর নেই। সমরক্ষেত্রেই প্রাণ গিয়েছে। যুদ্ধ প্রারম্ভে যারা ছিলেন যুবক তাঁরা আজ বৃদ্ধ হয়েছেন। শিশুরা হয়েছে যুবক। দুপক্ষের মৃত্যু মিছিলে সাম্রাজ্য আজ প্রায় জনশূন্য। হস্তিনাপুরের সিংহাসন যুধিষ্ঠির প্রায় প্রৌঢ়ত্বে এসে লাভ করেছিলেন। এখন তার ভ্রাতারা ও দ্রৌপদীও বার্ধক্যে পদার্পণ করেছেন। ইতিমধ্যে যদুবংশ ধ্বংস হয়েছে মুসল নামক এক অভিশাপের কারণে। এ প্রসঙ্গে  দুটি প্রাসঙ্গিক কথা উল্লেখ করতে হচ্ছে। কুরুক্ষেত্র যুদ্ধের পরে দ্বারকায় যাদব বংশীয়দের মধ্যে চরম অরাজকতা সৃষ্টি হয়। দুর্নীতি,বিদ্বেষ চারদিকে ঘিরে ধরে। এই সময়ে কৃষ্ণ বলরামের গৃহে কিছু মুনি ঋষির আগমন ঘটে। অরাজকতা কাটিয়ে শান্তি,সততার বীজ প্রতিষ্ঠা করার মূল লক্ষ্য নিয়ে। বলরামের পুত্র সারণ ও আরও কয়েকজন সমবয়সী যা...
মিঠে রোদ – বনানী ভট্টাচার্য 

মিঠে রোদ – বনানী ভট্টাচার্য 

কবিতা, বসন্ত সংখ্যা
মিঠে রোদ   বনানী ভট্টাচার্য  আকাশকুসুম ভাবনা থেকে রোদের জন্ম হোক মিঠে ছোঁয়ায় সকালবিকেল সুখী দুটি চোখ বর্ণহীন এক দিগন্তে সে টানুক রঙের তুলি আমলকী বাগানেও তখন রোদের কোলাকুলি বিচ্ছেদ না, তবুও কোথাও মনের দরজা বন্ধ তারপরেও গোলকধাঁধা, হৃদয়পোড়া গন্ধ! আরও আছে, অভিমানের রঙিন গুঞ্জরণ অপেক্ষা, আর অপেক্ষারই ব্যথার সাতকাহন নীলের সাথে সবুজ মেশার ইশারা আকাশময় ভালো না লাগা ভুলে যদি রোদের জন্ম হয়।। *****************************************    ...
চরৈবেতি – কঙ্কণা সেন

চরৈবেতি – কঙ্কণা সেন

কবিতা, বসন্ত সংখ্যা
চরৈবেতি কঙ্কণা সেন জীবন চলে গড়গড়িয়ে কখনো ডানে কখনো বাঁয়ে কখনো রোদে কখনো ছায়ে কখনো নদীর কলতানে কখনো দ্রুত ছন্দেলয়ে আবার হঠাৎ বিলম্বিতে। জীবন চলে হনহনিয়ে বৃষ্টিফোঁটায় জীবন বাঁচে জলে-ঝড়ে মানুষ কাঁদে জীবন-নদী কভু না থামে মেঘমল্লার মন্দ্রস্বরে বেজেই চলে। ভোরের আজান,মন্ত্রপাঠে উজ্জীবিত হওয়ার সাথে এগিয়ে চলি ভৈরবীতে ভীমপলশ্রী ডাকছে কাছে ইমন বুঝি অপেক্ষাতে--- পূরবীর করুণসুরে গোধূলি বুঝি বিরহ মলিন জীবন-বীণা ওই যে বাজে----- সূর্য দ্যাখো অস্তগামী চলার পথে একলা আমি "কে বলে তুই সঙ্গীহীন! জানিস না রবি অস্তহীন"? রবির আলো মাখব গায়ে মনের কালো করব দূর আর ভয় নাই-------মাভৈঃ মাভৈঃ ডাক পেয়েছি মনের মাঝে একলা চলার ডাক যে ভাই।। ************************************ কঙ্কনা সেন পরিচিতি রবীন্দ্র ভারতী বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বাংলা সাহিত্যে এম এ। ছোট থেকেই কবিতার প্রতি ভালোবাসা।...
অন্ধকারের যাত্রী -অনুপম মাহাতো

অন্ধকারের যাত্রী -অনুপম মাহাতো

কবিতা, বসন্ত সংখ্যা
অন্ধকারের যাত্রী অনুপম মাহাতো অন্ধকারের যাত্রী.... ক্লান্ত হওয়া পথের বাঁকে তোমার বাড়ি, অনন্ত পথের রসদ আমার স্বপ্ন দেখা নিঝুম রাত্রি; তোমায় আড়ি! চোখ ভারি হওয়ার ব্যামো, পিছুটানের বদভ্যাস এবেলা ছাড়ি; অগোছালো গল্পগুলো জড়িয়ে হঠাৎ কোনোদিন স্বপ্ন হয়ে নেমো; থামবে ঘড়ি; খালি পায়ে কাঁকর চোবানো শব্দে বন্ধ চোখে আলতো হেসে সুখের যত দুখের সাথে আড়ি। আবার কোনো শীতের শেষের রাত্রি, আসি বন্ধু,.... অন্ধকারের যাত্রী.... **************************************  ...
error: বিষয়বস্তু সুরক্ষিত !!