Shadow

গল্প

সুরের বাঁধনে – ব্রতী ঘোষ

সুরের বাঁধনে – ব্রতী ঘোষ

গল্প
সুরের বাঁধনে ব্রতী ঘোষ রাতে খাওয়া দাওয়ার পর মোবাইল টা নিয়ে আলো নিভিয়ে শুয়ে পড়লো বীথি। এখন শুয়ে শুয়ে একটা আ্যপে গান শোনাটা একটা নেশা হয়ে গেছে। নিজের গান নিজে শোনা আর সবাই ঐ গানটাই কিভাবে গাইছে শুনতে ওর বেশ লাগে। এই একটা মাসে এটাই ওর অভ্যাস হয়ে গেছে। ভাগ্যিস এবার পুণা যাবার আগে তিতাস, ওর মেয়ে জোর করে মোবাইলে আ্যপটা ডাউনলোড করে দিয়েছিল। অতিমারীর দৌলতে জীবনের ছন্দটাই পুরোপুরি বদলে গেছে। সকাল থেকে সময়ের সঙ্গে ছুটে চলা, অফিস, হাজিরা, কাজের মাঝে কলিগদের সাথে আড্ডা-এগুলো সব কি গত জন্মের ঘটনা? এক এক সময় তাই মনে হয় ওর। "কি গো ঘুমালে?"-সমীর জানতে চায়। "কিগো?" আবার প্রশ্ন করে সমীর, বীথির স্বামী। বীথির কানে ঢোকে না, ইয়ারফোন গোঁজা যে। এবার হাত দিয়ে ঠেলা দিতেই বীথির হুঁশ ফেরে। "অ্যাঁ~কিছু বলছো?" বীথি কান থেকে ইয়ারফোন খুলে বলে। "না, কিছু না" সমীর আবার পাশ ফিরে শুয়ে পড়ে। আবার কা...
উজানস্রোত – ব্রততী সেন দাস

উজানস্রোত – ব্রততী সেন দাস

গল্প
উজানস্রোত ব্রততী সেন দাস দেবপ্রিয় বলল- আমি যেখানে থাকি তিয়াসা তোমার ভাল লাগবে না, তুমি থাকতে পারবে না। বরং আমি ফিরে আসি.... - কেন? - খুব নির্জন জায়গা গো, একা তোমার ভয় করবে। -তুমি তো আছো। - আরে: আমি সেই সকালে বেরোব, ফিরব সন্ধে বেলা। মস্ত একটা দিন তুমি কী করে কাটাবে? - সে আমি জানি না, কিন্তু তুমি যদি আমায় ফেলে চলে যাও ফিরে এসে আমায় আর নাও পেতে পারো। মা আর মামা আমার বিয়ে ঠিক করে ফেলেছে, আমি জানি। যেদিন আমায় জানাবে ধরে নাও সেদিন থেকে আমি বাধ্য এই বিয়ে করতে। আমার মায়ের বিরুদ্ধে যাওয়ার ক্ষমতা আমার নেই। মামাও তো মায়ের দিকে। আমি তো এখানেই বরং একা দেব। - হুম, চিন্তায় ফেললে! তোমায় নিয়ে যে কী করি। তিয়াসা চোখের জল মুছে মুচকি হেসে বলল-চল, বিয়ে করে নিই। পুরনো আমলের পরিত্যক্ত বাড়ি, সার দিয়ে কাচের জানলা। মেঝে সিমেন্টের, দেওয়াল কাঠের। কোথাও ফেটে গেছে, কোথাও চলটা উঠে গেছে। উঠোনের এক পাশে কয়েকটা পা...
মান – জলি চক্রবর্তী শীল

মান – জলি চক্রবর্তী শীল

গল্প
মান জলি চক্রবর্তী শীল আল্লাহ মেহেরবান!! মনে মনে আল্লাহকে অসংখ্য ধন্যবাদ জানায় ফরিদা| এবারটায় তার ছেলে হয়েছে| ওয়াকিব হালদারের বংশে প্রদীপ এসেছে। সাত মেয়ের কোলে ছেলে। ফরিদার মনেও আহ্লাদ। কাল হাসপাতাল থেকে ছুটি পাবে সে। তারপর সে‚ওয়কিব হালদারের গর্বিত বউ ছেলে কোলে বাড়ি ফিরবে সেই পাড়া দিয়ে যে পাড়ায় সবাই বলত তাকে অপয়া। এই বউয়ের কোল থেকে কোনদিনই ছেলে জন্মাবে না। শুধু কি পাড়া প্রতিবেশী‚ ওয়াকিবের মা কি কম তানা দিয়েছে। আর ওয়াকিব‚ সেও তো ছেড়ে কথা বলেনি। আল্লাহর দোরে মান্নত মেনেছে ফরিদা কত বার। মাদুরের মত নিজেকে বিছিয়ে দিয়েছে ওয়াকিবের শরীরের তলায়  একটা ছেলের আশায়। অবশেষে আল্লাহ দয়া করেছেন। ফরিদার চোখ দিয়ে জল চুঁইয়ে নামে। এটা ফরিদার দ্বিতীয় বিয়ে। প্রথম বিয়ে মাত্র এগারো বছর বয়সে। বিয়ে কি তা জানার আগেই ফরিদার বিয়ে হয়ে যায় সুলতান আহমেদের সাথে। ফরিদা তখন সবে গ্রামের স্কুলে পড়াশোনা করছে। একদিন লেখাপড়া ...
আঠাশে সেপ্টেম্বর – প্রসেনজিৎ বন্দ্যোপাধ্যায়

আঠাশে সেপ্টেম্বর – প্রসেনজিৎ বন্দ্যোপাধ্যায়

গল্প
আঠাশে সেপ্টেম্বর প্রসেনজিৎ বন্দ্যোপাধ্যায় শুভ যখন স্টেশনে পৌঁছলো, তখন আটটা তিরিশের ট্রেনটা ঢুকছে। এই ট্রেনটা ধরলে মেদিনীপুরে সাড়ে নটার মধ্যে নেমে যাওয়া যায়। নটা চল্লিশের বাসটা ধরতে সুবিধে হয়। অফিসে পৌঁছতে খুব বেশী দেরী হলেও দশটা কুড়ি। কিন্তু পরের ট্রেনে গেলেই সাহেবের সুমধুর বাণী শুনে তবেই টেবিলে বসতে পাবে। ট্রেনটা বেরিয়ে যেতে দেখে শুভ-র মুখটা ভার হয়ে গেল। আজ আবার সাহেবের সুরেলা বচন হজম করতে হবে। কিন্তু আজ সে নিরুপায় হয়েই ট্রেনটা ছেড়ে দিলো। মান্থলিটা কালই দেহ রেখেছে। টিকিট চেকার প্রতিটি নিত্যযাত্রীকে বিলক্ষণ চেনেন। তিনি টিকিট দেখতে চাইবেনও না। তবু, নিজের কাছে ছোটো হওয়ার পক্ষপাতী নয় শুভ। চোরের মতো বিনাটিকিটের যাত্রী হয়ে ট্রেনে যাওয়া তার পক্ষে সম্ভব নয়। পরের ট্রেন দশমিনিটের মধ্যেই। এদিকে লাইনে এখনো জনা দশেক দাঁড়িয়ে। পেছন থেকে একজন চেঁচিয়ে উঠলো, “ও টিকিট দাদা, আপনার একটা সেলফি দেবেন প্লীজ।...
ঘুষ – মধুমিতা ভট্টাচার্য্য

ঘুষ – মধুমিতা ভট্টাচার্য্য

গল্প
ঘুষ  মধুমিতা ভট্টাচার্য্য মই মেধোলাল মাহাতো। জন্ম হইছিল একুনকার ঝাড়খন্ডে মানে তকুনকার বিহারে পেরায় দুকুড়ি-পাঁচ বচর আগে। দু-বচরের হতিই ঠাকুদ্দা তেনার পরিবার নে কলকেতায় চলি আসেছেল। পত্থমে হাওড়া-ইস্টেশনের পেলাটফরম, পরে ইদিক-সিদিক কত্তি কত্তি এখেনে। বড় হতিই বেবাক কাজকামের ধান্দায় নানান ঘাটের জল খেইয়ে মুর মুখের ভাষাটুকও জগাখেচুড়ি হই গিচে। আপাতক ঠিকনা খাস কলকেতায় না হলিও কলকেতাতেই বলতি পার। হুই-ই সোনারপুরের উদিকটায়। সেখেনেই ইস্টেশনের হাতায় আমার ছ’ট্ট চা-দ’কান। সক্কালে গেই তোলা উলুনটো ধরাই, ছচপ্যান-টচপ্যান ধোই চায়ের জল চাপাই। তার পিছে দুধ, চিনি ঢেলি চা বেনাই। দ’কানের সম্পত্তি বলতি কয়টা লড়বড়া বেঞ্চি আর এট্টা টুল, ব্যস। ভাঙ্গা কাঁচের পাল্লাওলা ছোটোমোটো লজঝড়ে বাস্কটোতে লেড়ো বিস্‌কুট, সস্তা চানাচুরের পাকিট আর গোটাকয় বিড়ির বাণ্ডিল রাকি। দ’কানের এক কোণে ঝুলাই দি আগুন মাথাওলা রসি। লোকজন সিটুর থিকে বিড়...
ফ্লুরিজ – বিজিত কুমার রায়

ফ্লুরিজ – বিজিত কুমার রায়

গল্প
ফ্লুরিজ - সম্পূর্ণ ভিন্ন স্বাদের একটি লেখা বিজিত কুমার রায় ফ্লুরিজ। বাইরে থেকে কাচের দরজা ঠেলে সোজা ভেতরে টেবিলে এসে বসুন। অনেকেই বসেছেন আপনার মতো কফি নিয়ে। ফ্লুরিজ আসলে ছোটহাজরি জীবন যাপনের তরিকার একটা অংশ। কী রকম? জলখাবার খায় সকলেই। তবে যাঁরা ফ্লুরিজে সেরে বেরোন, তাঁরাই ঢাক ঢোল পিটিয়ে সে কথা আত্মীয় বন্ধুদের জানান। সে বড় সাহেবি আয়োজন। বরাবরই কলকাত্তাইয়া সাহেবিয়ানার যে ক’টি খাস প্রতিষ্ঠান, ফ্লুরিজ তার অন্যতম। একটু ওপরতলার সঙ্গেই তার গা মাখামাখি, ওতপ্রোত সম্পর্কই বলা যায়। খেয়াল করলে দেখতে অসুবিধে হওয়ার কথা নয় যে ছাদ থেকে মেঝে অবধি স্বচ্ছ কাচের জানালা থাকা সত্ত্বেও ভেতরে যাঁরা বসেন, তাঁরা বাইরের কলরোলের পানে তাকিয়ে, পরিচিতদের মুখ খোঁজার চেষ্টার ফাঁকে আলগোছে মুচমুচে সেঁকা পাঁউরুটির ওপর মাখনের পুরু আস্তরণে গোলমরিচের গুঁড়ো ছড়ান না। রাস্তা দিয়ে হেঁটে যান যাঁরা, তাঁদের মাঝে ফ্লুরিজে জলখাবার খা...
স্বাধীনতা দিবস আর রূপান্তীর গপ্পো – শ্রুতি দত্ত রায়

স্বাধীনতা দিবস আর রূপান্তীর গপ্পো – শ্রুতি দত্ত রায়

গল্প
স্বাধীনতা দিবস আর রূপান্তীর গপ্পো শ্রুতি দত্ত রায় (১) সকাল থেকেই আজ বাড়িতে ব্যস্ততার শেষ নেই। সেই কোন কাকভোরে উঠে কাকিমণি স্নান-টান সেরে পুজো দিয়ে রান্নাঘরে ঢুকেছে।আর কাকিমণির সাথে রূপান্তীকেও ঘুম ঘুম চোখে বিছানা ছাড়তে হয়েছে। ওকে ছাড়া কাকিমণির এক সেকেন্ডও চলে না যে। "রূপান্তী শিগগির বাসি ঘর ঝাড়ু দে"... "বাথরুমে গিজার অন কর"..."কাকুর জুতো জোড়া পালিশ করলি?"..."ময়দাটা তাড়াতাড়ি মেখে, লুচি কটা একটু বেলে দে তো"....সকাল থেকে একটার পর  একটা ফরমায়েশ চলছে তো চলছেই, দম ফেলার সময় নেই আজ। আর হবে নাই বা কেন? কাকু, কাকিমণি আর তিতলিকে যে সকাল আটটার মধ্যেই তৈরী হয়ে বেরিয়ে পড়তে হবে। তার আগে কাকিমণির বাড়তি কাজ হলো তিতলিকে সাজিয়ে গুজিয়ে নাচের অনুষ্ঠানের জন্য তৈরী করা। আজ "ইনডিপিনডিন"..না কি যেন একটা বিশেষ দিন। কদিন ধরেই আলোচনা চলছে এ বাড়িতে। তিতলিসোনা নাচবে ঐদিন একটা বড়ো অনুষ্ঠানে। খুব ত...
গন্ধপুরাণ – হিমাশিস ভট্টাচার্য্য

গন্ধপুরাণ – হিমাশিস ভট্টাচার্য্য

গল্প
                                                                                                        গন্ধপুরাণ                                                                                                    হিমাশিস ভট্টাচার্য্য শেষ সময়ে বাবা মাঝে মাঝে অদ্ভুত আচরণ করতেন। শরীর খুব খারাপ হয়ে গিয়েছিল। থাকতেন আধো ঘুমে, আধো চেতনে। কখনো অতি সক্রিয় হয়ে বলতে শুরু করতেন – ঘরের সোফা চেয়ার গুলো খালি করে দাও। দেখছ না কারা এসেছেন? তাঁদের বসতে দাও। বাবার কথা শুনে মা আশেপাশে তাকিয়ে দেখতেন কেউ তো নেই। বাবা রেগে যেতেন। বলতেন - বাবা, মা, কাকা, ঠাকুরদা, জ্যাঠামশাই সবাই এসেছেন একসঙ্গে। তাঁদের বসতে দাও। মা হয়তো ধোওয়া কাপড়গুলো ছাদ থেকে এনে সোফায় রেখেছেন, পরে গুছিয়ে রাখবেন। বাবার কথা শুনে তাড়াতাড়ি সব সরিয়ে ফেলতেন। তখন বাবা ঠাণ্ডা হয়ে একা একা যেন কার সঙ্গে কথা বলতেন। মা ভয় পেয়ে আমাদের সবাইকে ডেকে নিয়ে আসত...
আলোকের এই ঝর্ণাধারায় – অনসূয়া সরকার বিশ্বাস

আলোকের এই ঝর্ণাধারায় – অনসূয়া সরকার বিশ্বাস

গল্প
                                    আলোকের এই ঝর্ণাধারায়                                                                                    অনসূয়া সরকার বিশ্বাস                                                                                       (১) সকাল থেকেই মাথাটা ভার হয়ে আছে শ্রীলেখার। কেমন যেন একটা গুমোট লাগছে। জানালার পর্দা সরিয়ে কিছুক্ষণ একদৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকে, বাগানে গন্ধরাজ গাছটার দিকে। ফুলে ফুলে ভরে গেছে গাছটা। সন্ধ্যে হলেই সুন্দর গন্ধে চারদিকটা ভরে যায়। এই গাছটা টিডো আর শ্রীলেখা একসঙ্গে লাগিয়েছিল। মাঝে মাঝে বড্ড নিঃসঙ্গ মনে হয়। কে আছে তার টিডো ছাড়া? দেবাশীষ চলে যাবার পর ওই তো তার শিবরাত্রির সলতে। অদ্ভুত শীতল সম্পর্ক তাদের মা ছেলের। অথচ ছোটবেলায় কি ন্যাওটাই না ছিল  টিডো ! আর আজ ! হাজার চেষ্টা করেও দশ বছর ধরে এই দুর্লঙ্ঘ্য্ সীমারেখা অতিক্রম করতে পারেনি শ্রীলেখা। ক্লাস...
দাশু তোর সঙ্গে – ইন্দ্রাণী ঘোষ

দাশু তোর সঙ্গে – ইন্দ্রাণী ঘোষ

গল্প
দাশু তোর সঙ্গে ইন্দ্রাণী ঘোষ দাশু সেদিন দুপুরবেলা পাড়ার মোড়ে বসে সেই মার্কামারা হিনডেলিয়ামের টিফিন কৌটো খুলে কি যেন খাচ্ছিল। আমারও চনচন করে  ক্ষিদে পেয়েছে, ইশকুল থেকে ফিরছি। একটু উঁকি মারতে গেছি, ব্যাটা বলে 'বাড়ী গিয়ে খা না, হ্যাংলামি এ বয়েসেও গেল না। আমি বললাম, 'তোরই বা খাবার জায়গা এরম কেন? খেটেখুটে ফিরছি  ক্ষিদে পেয়েছে, আর গাছতলায় বসে তুই লুচি, তরকারি খাচ্ছিস। চাইওনি, শুধু তাকিয়েছি, তাতেই এত কথা।' বলে হাঁটা লাগিয়েছিলাম। দাশু বললে 'খেয়ে কি করবি, রক্ত দিতে তো পারবি না, তোর তো লো প্রেসার। ইশকুলে রক্তদান শিবির আছে।' রোববার সকাল থেকেই মনটা কেমন ইশকুলের দিকে টানছিল। ভাবছিলাম দাশু যা চ্যাটাং, চ্যাটাং কথা বলল সেদিন ভরদুপুরে, ব্যাটাকে জবাব না দিলেই নয়। রক্ত দেব না তো কি হল। দাশুর বন্ধুদের পাশে তো থাকতে পারি। সত্যিই দাশুদের বন্ধুরা যে একসাথে হয়, হৈচৈ করে, বন্যা  দুর্গতদের জন্য কোন প্রত্যন্ত ...
error: বিষয়বস্তু সুরক্ষিত !!