Shadow

শ্লোক থেকে ব্লগ

সাহিত্য বিভাগ, প্রবন্ধ গল্প ও কবিতা

স্মৃতিরা ফুরিয়ে এলে – শাশ্বতী হোসেন

স্মৃতিরা ফুরিয়ে এলে – শাশ্বতী হোসেন

কবিতা
স্মৃতিরা ফুরিয়ে এলে শাশ্বতী হোসেন প্রথম কবিতা কবে লিখেছিলাম? যেদিন শালকুঁড়ির ফাঁকে ফাঁকে রোদ আল্পনা এঁকেছিল? ঝরনা পাথরের আমোদি পথে তুই যেদিন প্রথম সিগারেট খেয়েছিলি? মনে পড়ছে না। ননীবালা গার্লস স্কুলের প্রেয়ার লাইনে তাপ্তী হঠাৎ সেই গানটি গেয়ে উঠেছিল-- "তখন তোমার একুশ বছর বোধ হয় / আমি তখন অষ্টাদশীর ছোঁয়ায়--" হেড বড়দি তাপ্তীকে শাস্তি দিয়েছিলেন। নাকি যেদিন চশমা পরা অনামিকাকে দেখে অমিত বলেছিল, "আজি বিশ্বময় ব্যপ্ত গেছো প্রিয়ে / তোমারে দেখিতে পাই সর্বত্র চাহিয়ে..." নাহ, কিছুতেই মনে পড়ছে না। অঙ্কের খাতায় নাকি ভূগোলের মানচিত্রে ভাঁজে.... কোথায় যেন লিখেছিলাম! তারাফেনীর নদীর বিকেলে সুর্য যখন ডুবছিল, আকাশ থেকে আবির ঝরে পড়ছিল। চারপাশ বসন্তবর্ণ ঝিরঝিরে বাতাসের কোরাস-- কোকিলের ডানার ঝাপটানি। তুই পাথরের ওপর দু-হাত মেলে গলা খুলে বলেছিলি, দাও খুলে দাও, খুলে দাও, খুলে দাও সুর, মেলে দাও গ...
মুক্তির আকাশ – অপূর্ব চট্টোপাধ্যায়

মুক্তির আকাশ – অপূর্ব চট্টোপাধ্যায়

গল্প
মুক্তির আকাশ অপূর্ব চট্টোপাধ্যায় দিব্য ঝকঝকে এক সোনালী সকাল। তবে এখানে রোদের তেজটা একটু যেন বেশীই। আর সেটাই তো হওয়া স্বাভাবিক। কারণ রাজ্যটা হল মহারাষ্ট্রের একটা শহর পুনে। তবে আমার কিন্তু এখন তেমন গরম লাগছেনা। ঘামও হচ্ছে না। খুব ভোরেই আজ হঠাৎ ঘুমটা ভেঙে গেল। আর তখন থেকেই নিজেকে বড় হালকা ফুরফুরে মনে হচ্ছে। সেই বহুদিন আগে হলং বেড়াতে গিয়ে ভোরবেলায় পাগলা হাওয়ার বুকে নিজেকে সমর্পণ করা শিমুল তুলোর উদ্দেশ্যবিহীন ওড়াউড়ি দেখেছিলাম। এখন নিজেকে ঠিক সেই নরম, তুলতুলে শিমুল তুলোর মতোই লাগছে। আমি এখন বেশ জমিয়ে সোফার মাথায় চেপে দুই বন্ধুর বিচিত্র ঝগড়া উপভোগ করছি। দিনকয়েক আগে আমি বেড়াতে এসেছি পুনেতে, আমার বড়মেয়ের কাছে। দুই বন্ধু একটা ফ্ল্যাট ভাড়া নিয়ে বেশ সুন্দর মিলেমিশে থাকে। তবে লড়াইটা হয় মূলতঃ খাওয়া নিয়ে। ক্রিসেন্ট দক্ষিণী খাবার পছন্দ করে, আর আমার মেয়ে অবশ্যই বাঙালি খাবার। গত পাঁচদিন ধরে ত...
সুরের বাঁধনে – ব্রতী ঘোষ

সুরের বাঁধনে – ব্রতী ঘোষ

গল্প
সুরের বাঁধনে ব্রতী ঘোষ রাতে খাওয়া দাওয়ার পর মোবাইল টা নিয়ে আলো নিভিয়ে শুয়ে পড়লো বীথি। এখন শুয়ে শুয়ে একটা আ্যপে গান শোনাটা একটা নেশা হয়ে গেছে। নিজের গান নিজে শোনা আর সবাই ঐ গানটাই কিভাবে গাইছে শুনতে ওর বেশ লাগে। এই একটা মাসে এটাই ওর অভ্যাস হয়ে গেছে। ভাগ্যিস এবার পুণা যাবার আগে তিতাস, ওর মেয়ে জোর করে মোবাইলে আ্যপটা ডাউনলোড করে দিয়েছিল। অতিমারীর দৌলতে জীবনের ছন্দটাই পুরোপুরি বদলে গেছে। সকাল থেকে সময়ের সঙ্গে ছুটে চলা, অফিস, হাজিরা, কাজের মাঝে কলিগদের সাথে আড্ডা-এগুলো সব কি গত জন্মের ঘটনা? এক এক সময় তাই মনে হয় ওর। "কি গো ঘুমালে?"-সমীর জানতে চায়। "কিগো?" আবার প্রশ্ন করে সমীর, বীথির স্বামী। বীথির কানে ঢোকে না, ইয়ারফোন গোঁজা যে। এবার হাত দিয়ে ঠেলা দিতেই বীথির হুঁশ ফেরে। "অ্যাঁ~কিছু বলছো?" বীথি কান থেকে ইয়ারফোন খুলে বলে। "না, কিছু না" সমীর আবার পাশ ফিরে শুয়ে পড়ে। আবার কা...
একান্ত কথারা – লাবন্য নন্দী

একান্ত কথারা – লাবন্য নন্দী

কবিতা
একান্ত কথারা লাবন্য নন্দী ভীষণ ভীড় চার পাশে, সবাই মত্ত নিজের কাজে। প্রচুর সমস্যা ওদের চলো এই ফাঁকে, দু চারটে কথা বলি। শুধু নিজেদের নিয়ে ভাবি, সময় যে  বড় অল্প, রয়েছে কত গল্প, শেষ করবো কখন? আর দুটো স্টেশন নামতে হবে যখন ছাড়াছাড়ি আবার দুদিনের তখন। ******************************************* লাবন্য নন্দী পরিচিতি লাবণ্য নন্দী বর্ধমানের বাসিন্দা। প্রথাগত শিক্ষা Bsc(fishery), M.A.(Mass communication) । অতীতে বর্তমান পত্রিকাতে বেশ কয়েক বছরের অভিজ্ঞতা। প্রায় 400 প্রতিবেদন প্রকাশিত এবং পশ্চিম বঙ্গ সরকারের মৎস্য দপ্তর (মীন ভবনে) জল ও মৃত্তিকা বিশ্লেষক এর কাজে নিযুক্ত  ছিলেন। বর্তমানে বিভিন্ন ম্যাগাজিনে লেখালেখি করেন। এছাড়া গান ও ফটোগ্রাফি তে বিশেষ আগ্রহ আছে এবং স্বীকৃতিও রয়েছে।...
উজানস্রোত – ব্রততী সেন দাস

উজানস্রোত – ব্রততী সেন দাস

গল্প
উজানস্রোত ব্রততী সেন দাস দেবপ্রিয় বলল- আমি যেখানে থাকি তিয়াসা তোমার ভাল লাগবে না, তুমি থাকতে পারবে না। বরং আমি ফিরে আসি.... - কেন? - খুব নির্জন জায়গা গো, একা তোমার ভয় করবে। -তুমি তো আছো। - আরে: আমি সেই সকালে বেরোব, ফিরব সন্ধে বেলা। মস্ত একটা দিন তুমি কী করে কাটাবে? - সে আমি জানি না, কিন্তু তুমি যদি আমায় ফেলে চলে যাও ফিরে এসে আমায় আর নাও পেতে পারো। মা আর মামা আমার বিয়ে ঠিক করে ফেলেছে, আমি জানি। যেদিন আমায় জানাবে ধরে নাও সেদিন থেকে আমি বাধ্য এই বিয়ে করতে। আমার মায়ের বিরুদ্ধে যাওয়ার ক্ষমতা আমার নেই। মামাও তো মায়ের দিকে। আমি তো এখানেই বরং একা দেব। - হুম, চিন্তায় ফেললে! তোমায় নিয়ে যে কী করি। তিয়াসা চোখের জল মুছে মুচকি হেসে বলল-চল, বিয়ে করে নিই। পুরনো আমলের পরিত্যক্ত বাড়ি, সার দিয়ে কাচের জানলা। মেঝে সিমেন্টের, দেওয়াল কাঠের। কোথাও ফেটে গেছে, কোথাও চলটা উঠে গেছে। উঠোনের এক পাশে কয়েকটা পা...
লক ডাউন – সুকন্যা দাসগুপ্ত

লক ডাউন – সুকন্যা দাসগুপ্ত

কবিতা
লক ডাউন সুকন্যা দাসগুপ্ত লক ডাউন সময়ে সময় কি লক ডাউন হয়? জীবন কি থেমে যায়? হয় কি জীবন স্পৃহার ক্ষয়? জীবনের খুঁটিনাটির  চরৈবেতি কই, যায় না তো থেমে? ক্লান্ত কাঁধের বোঝা----চাওয়া পাওয়া যায় কি নেমে? পরিযায়ী শ্রমিকের মতো আনাগোনা দিন নামচার ডালি দেখি না তো পড়ে থাকে কভু---একা একা নিষ্ফলা খালি। মৃত্যুর খতিয়ান ঘেরা অস্থির সময়ের ত্রাস বিবর্ণ সমাজের ওঠা পড়া নিত্য করে গ্রাস। সুখী রাতঘুমেরা বাষ্প হয়ে পোড়ায় দুচোখ ত্রস্ত মন চায় ধস্ত সময় অবসান হোক ভোরের মিঠে আলো ভুলেছে সঞ্জীবনী পরশ তাড়া করে, পিছু ধায়, হতাশার হারানোর তরস বয়ে চলে লক ডাউন, বয়ে চলে ভয় তিরতির আশাহীন দিগন্তে তবু আশা, কাটবেই এ তিমির।। ************************************************ সুকন্যা দাসগুপ্ত পরিচিতি বর্ধমান বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ইংরাজি সাহিত্যে স্নাতকোত্তর। সাহিত্য কে সঙ্গী করে বিদ্যালয়ে শিক্ষকতা শুরু...
দাম্পত্য – নবনীতা সাঁতরা দে

দাম্পত্য – নবনীতা সাঁতরা দে

কবিতা
দাম্পত্য নবনীতা সাঁতরা দে আলমারির দরজায় দুজনকে পাশাপাশি দেখা যেত না। একজনকে দেখা গেলে অন্যজন চলে যেত আড়ালে, যেমনটা হয়ে থাকে দাম্পত্য জীবনে। আমি চোখে কাজল লেপতে এলে তোমার চুলের সিঁথি সোজা হতো না, মুখে কপট বিরক্তি নিয়ে সরে জেতে দাম্পত্যের রোজনামচায়। রোজ সকালে বাসি বিছানা গোছানোর সময়, সাহায্যের হাত না বাড়ানোর অকর্মণ্যতা বোঝাতে গিয়ে যখন রাগে নীতিবাক্য আউরেছি, তুমি তখন না শুনেই সরে গেছো অকাজের অছিলায়। তবু জীবন তৃপ্ত থাকে বিছানা গোছানোয়। দাম্পত্য বেঁচেছে এভাবেই। তোমার অফিস মোজা আর আমার মুখ মোছা রুমাল, একসাথে কেচে ধুয়ে রোদে শুকিয়েছে, তারপর আবার জলেও ভিজেছে অনেকগুলো বছর। যেভাবে পাশাপাশি থেকে যায় দাম্পত্যের আলোছায়া। একসাথে পথে বেরিয়ে হেঁটেছ একগজ আগে নয়তো একগজ পিছে। মনে হয়েছে এর চেয়ে একলা চলাই ছিল ভালো। তবু খানিক পথ পেরিয়ে দাঁড়িয়েছ অপেক্ষায়, যেভাবে বহু পথ অতিক্রম করা যায় কোন এক স...
শেষ পৃষ্ঠায় দেখুন – মধুপর্নি  চট্টোপাধ্যায়

শেষ পৃষ্ঠায় দেখুন – মধুপর্নি চট্টোপাধ্যায়

কবিতা
শেষ পৃষ্ঠায় দেখুন মধুপর্নি  চট্টোপাধ্যায় রোজ সকাল হলে দেখি দৌড়ে দৌড়ে ওরা যায়  - ওদের দৌড়োনো দেখে জানলা দিয়ে উঁকি দেয় বুড়ো শালিকেরা চিৎকার করে বলে - "লক্ষ্য তো স্থির - এবার এগোও" কচি ঘাস অনাবৃত একটা শুকনো মাঠে দৌড়োয় ছোট - বড়ো - মেজো রা আমি গেলে ওরা ভয় পায় ওদের চোখে কখনো বা ভাসে তীব্র বিরক্তি আমার শরীরে নেই দৌড় - চাঞ্চল্য ছাপ পড়ে না শৈশব, কৈশোর কিংবা যৌবনের, আমাদের মতো বুড়ো বট গাছের সাথে তাই ওদের ঠিক জমে না চাঞ্চল্য-হীন জীবনে হিসেব রাখি আকাশলীন লেনদেনের আর ওরা হিসেব ধরে - কোনো গন্ধযুক্ত অঙ্কের ।। ********************************************** মধুপর্নি চট্টোপাধ্যায় পরিচিতি বাংলা সাম্মানিক প্রথম বর্ষের ছাত্রী। কবি, আবৃত্তিকার ও বাচিক শিল্পী। বাংলা সাহিত্য এবং সুস্থ সংস্কৃতির অনুরাগী।      ...
মান – জলি চক্রবর্তী শীল

মান – জলি চক্রবর্তী শীল

গল্প
মান জলি চক্রবর্তী শীল আল্লাহ মেহেরবান!! মনে মনে আল্লাহকে অসংখ্য ধন্যবাদ জানায় ফরিদা| এবারটায় তার ছেলে হয়েছে| ওয়াকিব হালদারের বংশে প্রদীপ এসেছে। সাত মেয়ের কোলে ছেলে। ফরিদার মনেও আহ্লাদ। কাল হাসপাতাল থেকে ছুটি পাবে সে। তারপর সে‚ওয়কিব হালদারের গর্বিত বউ ছেলে কোলে বাড়ি ফিরবে সেই পাড়া দিয়ে যে পাড়ায় সবাই বলত তাকে অপয়া। এই বউয়ের কোল থেকে কোনদিনই ছেলে জন্মাবে না। শুধু কি পাড়া প্রতিবেশী‚ ওয়াকিবের মা কি কম তানা দিয়েছে। আর ওয়াকিব‚ সেও তো ছেড়ে কথা বলেনি। আল্লাহর দোরে মান্নত মেনেছে ফরিদা কত বার। মাদুরের মত নিজেকে বিছিয়ে দিয়েছে ওয়াকিবের শরীরের তলায়  একটা ছেলের আশায়। অবশেষে আল্লাহ দয়া করেছেন। ফরিদার চোখ দিয়ে জল চুঁইয়ে নামে। এটা ফরিদার দ্বিতীয় বিয়ে। প্রথম বিয়ে মাত্র এগারো বছর বয়সে। বিয়ে কি তা জানার আগেই ফরিদার বিয়ে হয়ে যায় সুলতান আহমেদের সাথে। ফরিদা তখন সবে গ্রামের স্কুলে পড়াশোনা করছে। একদিন লেখাপড়া ...
আঠাশে সেপ্টেম্বর – প্রসেনজিৎ বন্দ্যোপাধ্যায়

আঠাশে সেপ্টেম্বর – প্রসেনজিৎ বন্দ্যোপাধ্যায়

গল্প
আঠাশে সেপ্টেম্বর প্রসেনজিৎ বন্দ্যোপাধ্যায় শুভ যখন স্টেশনে পৌঁছলো, তখন আটটা তিরিশের ট্রেনটা ঢুকছে। এই ট্রেনটা ধরলে মেদিনীপুরে সাড়ে নটার মধ্যে নেমে যাওয়া যায়। নটা চল্লিশের বাসটা ধরতে সুবিধে হয়। অফিসে পৌঁছতে খুব বেশী দেরী হলেও দশটা কুড়ি। কিন্তু পরের ট্রেনে গেলেই সাহেবের সুমধুর বাণী শুনে তবেই টেবিলে বসতে পাবে। ট্রেনটা বেরিয়ে যেতে দেখে শুভ-র মুখটা ভার হয়ে গেল। আজ আবার সাহেবের সুরেলা বচন হজম করতে হবে। কিন্তু আজ সে নিরুপায় হয়েই ট্রেনটা ছেড়ে দিলো। মান্থলিটা কালই দেহ রেখেছে। টিকিট চেকার প্রতিটি নিত্যযাত্রীকে বিলক্ষণ চেনেন। তিনি টিকিট দেখতে চাইবেনও না। তবু, নিজের কাছে ছোটো হওয়ার পক্ষপাতী নয় শুভ। চোরের মতো বিনাটিকিটের যাত্রী হয়ে ট্রেনে যাওয়া তার পক্ষে সম্ভব নয়। পরের ট্রেন দশমিনিটের মধ্যেই। এদিকে লাইনে এখনো জনা দশেক দাঁড়িয়ে। পেছন থেকে একজন চেঁচিয়ে উঠলো, “ও টিকিট দাদা, আপনার একটা সেলফি দেবেন প্লীজ।...
error: বিষয়বস্তু সুরক্ষিত !!