Shadow

Author: Kulayefera

পরম্পরা – শম্পা চক্রবর্তী

পরম্পরা – শম্পা চক্রবর্তী

তৃতীয় বর্ষপূর্তি
পরম্পরা শম্পা চক্রবর্তী    মাস ছয়েক আগে দুয়ারসিনির ফরেস্ট ডিপার্টমেন্টে পোস্টিং পেয়ে সরকারী কোয়ার্টারে ঠাঁই নিয়েছি। জঙ্গল ও পাহাড়ঘেরা সবুজের দেশ যেন। অজগর সাপের মতো আঁকাবাঁকা মসৃণ পথের দুধারে প্রকৃতির সৌন্দর্যে মুগ্ধ না হয়ে উপায় কি!! বহুদিনের শখ ছিল চাকরি জীবনে অন্তত একবার এখানে বদলি হব আমার চেনা ছকের বাঁধন ছুঁড়ে গল্পে শোনা,স্বপ্নে দেখা দুয়ারসিনির সঙ্গে একাত্ম হতে। মাঝে মাঝে নিজেকে নির্জনতায় ডুবিয়ে দিতে সবারই বোধহয় ইচ্ছে হয়।          এখানে সরকারী কোয়ার্টার্স পেয়েছি। অফিসের জিপ এসে প্রতিদিন নিয়ে যায় আবার দিয়েও যায়। প্রায়ই খাবার কিনে আনি। মল্লু নামে একটা ছোকরা দোকানবাজার করে দেয় বটে কিন্তু পরিচারিকার অভাবে থাকা-খাওয়া মুশকিল হয়ে উঠছে। আমি ভালো রাঁধতে পারি না। অনেক খোঁজার পর অবশেষে সহকর্মীর চেষ্টায় একজন মধ্যবয়সী মহিলা পাওয়া গেল। নাম ফুলমতী। আমাকে স্নেহ করে খুব। কাজের অবসরে কত গল্প বল...
কবিতা – দীপন  মিত্র

কবিতা – দীপন  মিত্র

তৃতীয় বর্ষপূর্তি
কবিতা - দীপন  মিত্র লাইমলাইট সুরার গেলাসে ভাসা যে দেখেনি বরফ-রূপসী, হালকা মেঘের ফাঁকে যেন বা দিয়েছে উঁকি শশী। সিলিঙের থেকে ঝোলা নেশাগ্রস্ত ঝাড়লন্ঠনের লাইমলাইটে দোলা কোনোদিন দেখেনি যে জনে। যার পা পিচ্ছিল নয় পানশালার মেঝেতে কখনো, সাদা সার্ট গাঢ় প্যান্ট, কণ্ঠে টাই স্মার্ট সুদর্শনও। প্রদীপবাবুর হাত ঢালেনি তো যে সুরা ফরাসি, অথবা দেখেনি দীর্ঘা মেয়েটির নাক্ষত্রিক হাসি। কেন সে যে বেঁচে থাকে কেন দিন রাত হয়, ধ্যুস, চাই না ওদের যারা কোনোদিনও হয়না বেহুঁশ। —-------------------------------------------------------- এসো ও আনন্দ, আজ এসো ও আনন্দ, আজ - তোমার যেমন খুশি বেশে। গাছে গাছে ক্রিসমাস, লাল নীল টুনি থোক-থোক টেবিলে টেবিলে মেঘ, বিদ্যুৎচমক যেন কেশে। আলোর চিৎকারে খোলে সরু দরজা, পেন্টিঙের স্ট্রোক, তোমার একশো নাম লিখি আমি কাগজ-রুমালে ভাঁজ খুলতেই সাদা কপোতেরা ডানা মেলে ধরে লোত্রেক...
বুলাদির বিড়ম্বনা – অজন্তা প্রবাহিতা   

বুলাদির বিড়ম্বনা – অজন্তা প্রবাহিতা   

তৃতীয় বর্ষপূর্তি
বুলাদির বিড়ম্বনা  অজন্তা প্রবাহিতা    বুলাদি আমাদের পাড়ায় দুটো বাড়ি পরে থাকতো। বাবা মায়ের একমাত্র মেয়ে। ঠাম্মাকে নিয়ে বুলাদির পরিবারে মোট চারজন সদস্য। এদিকে আমাদের পরিবারে তিনজন। ঠাম্মা আর দিদা মাঝে মাঝে আসে যায়। তখন আমাদের বাড়িতে সদস্য সংখ্যা বেড়ে যায়। বুলাদি যখন ক্লাস টেন, আমি ফাইভে পড়ি। স্কুল ছাড়াও বাইরে কোথাও গেলে বুলাদি শাড়ী পরতো আর বাড়িতে নাইটি। পাটপাট করে গুছিয়ে শাড়ী পরে  লম্বা চুলের  সুন্দর করে বিনুনি করে,ছোট্ট টিপ্ পরে, ডাইরিটা হাতের ভাঁজে বুকে চেপে ধরে বুলাদি যখন গানের ক্লাসে  যেত,আমি জুলজুল চোখে  তাকিয়ে থাকতাম,মনে মনে ভাবতাম,আমিও কবে অমন শাড়ী পরে সাপের মতো বিনুনি দুলিয়ে স্টাইল করবো। চুল পাতলা বলে মা সবসময় বাটি ছাট দিয়ে রাখতো,বলতো,চুলের গোছ থাকলে লম্বা চুল ভালো লাগে,বুলার মতো লম্বা চুল কি আর তোর হবে? অনেক ভাগ্য করলে অমন রূপ আর অমন চুল পাওয়া যায়। রূপ বৃদ্ধি কি করে হয়,জানিনা। ত...
দূরত্ব – দেবলীনা দে

দূরত্ব – দেবলীনা দে

তৃতীয় বর্ষপূর্তি
দূরত্ব দেবলীনা দে চোখে আধো আধো ঘুম নিয়ে তনিমা যখন তার পড়ার বইটা বন্ধ করলো,ঘড়িতে তখন রাত প্রায় একটা। বইয়ের লেখা বইয়েই রইল আর তার মন তখন অন্য দিকে। মনে বারেবারে একটাই প্রশ্ন উদয় হচ্ছে,প্রিয়সী কি সত্যিই তাকে চিনতে পারলো না! তার চোখের সামনে বারবার ভেসে আসছে ছোটবেলার সেই স্মৃতি। কত মধুর ছিল সে সব দিন। আজ থেকে প্রায় ১২ বছর আগের কথা। একটা কাজের সন্ধানে তনিমার বাবা পাড়ি দিয়েছিল নিজের গ্রাম ছেড়ে অন্য গ্রামে। তনিমা তখন অনেক ছোটো। কিন্তু কিছু স্মৃতির বদঅভ্যাস থাকে যে তারা কোনোদিন মন থেকে মোছে না। প্রণবেশ বাবু ছিলেন গ্রামের মস্ত বড়ো জমিদার। প্রিয়সী তাঁরই মেয়ে। প্রণবেশ বাবুর মস্ত বড়ো বাগানে একসময় মালি ছিলেন তনিমার বাবা। নিজের গ্রাম, কাছের মানুষ ছেড়ে অন্য দেশে পড়ে থাকার যন্ত্রণা তনিমার তখন বোঝার বয়স হয়নি। ওই মেয়েবেলা শুধু একটা সঙ্গীর খোঁজ করতো,যার সাথে সে বেশ অনেকক্ষণ ধরে,প...
মধ্য যান – মণি ফকির

মধ্য যান – মণি ফকির

তৃতীয় বর্ষপূর্তি
মধ্য যান মণি ফকির এই নদীর নাম কি? বাউল মতী। অদ্ভুত নাম তো। আপনার নাম কি? বদরুদ্দীন হোসেন। লোকে বলে ভাদো মিঞা। আচ্ছা এই নদীর দুই পাড়ে দুটো অনেক পুরনো রাজবাড়ি আছে না? আছে তো জঙ্গলের মধ্যে। সে এক লম্বা ইতিহাস বোজলেন। এপারে রহমত খাঁ এর আলিশান মকান,ওপাড়ে নরসিং উপাধ্যায়দের দালান। দুই পক্ষের ছিল রেষারেষি। কেউ অবশ্য নদী পেরতো না। এদের ঈদের জশন এ মজলিস বসত তো ওদের কালী পূজোয় আতসবাজি। লাভ ছিল গাঁ এর মানুষ দের। পেট পুরে ভাল মন্দ জুটত। শুধু একটি বার.... রাগেশ্রীর আর্তনাদে কথা থামাতে হল। এক লোল চর্ম বৃদ্ধা লাঠি হাতে রাগেশ্রীর সামনে দাঁড়িয়ে। উৎসুক চোখে তাকিয়ে রইল। তার পর বিড় বিড় করে অস্ফুটে পিয়ারী পিয়ারী বলতে বলতে চলে গেল। গাইড অশোক বলল: ভয় পাবেন না। বুড়ি কারোর ক্ষতি করেনা। ওকে সবাই চাঁদ পাগলী বলে। চাঁদ পাগলী, চাঁদ, চন্দ্রা.…..রাগেশ্রীর খুব চেনা চেনা লাগছে। অস্ফুটে বলে উঠল: "চা...
পরিযায়ী – প্রত্যুষ  সেনগুপ্ত

পরিযায়ী – প্রত্যুষ  সেনগুপ্ত

তৃতীয় বর্ষপূর্তি
    পরিযায়ী    প্রত্যুষ  সেনগুপ্ত এইখানে সেই সাগরের নোনা বাতাস কিন্তু নেই। এখানে দগ্ধ দুপুরে গরম ধুলোর উড়ান কই? এখানে কিন্তু সাগর কখনো ধোয়না গিরির চরণ এইখানে আছে গরান সুঁদরী হেতাল গাছের বন! এখানে নদীর মিঠে জল;তীরে গাং চিল দেয় ডাক, জলকেলি করে রূপোলী মাছের ঝাঁক!! এই অঘ্রানে আম,হিজলের পাতা  কাঁপে শিরশির, কুয়াশায় মেখে ভেজে শালিখের নীড়।। দখিনা দোয়েল,চেয়ে দেখ ওই  জাফরানি রঙ হাসে, হেমন্ত বনে সবুজ মুকুটে,শিমুলে ও  পলাশে।। ঘাসফুল ফোটে হলুদ রোদের ওমে, থাকো না এখানে? করুণা অথবা  ভ্রমে? অধরাই আছো,কাছে পিঠে নেই; আছো দৃষ্টিরও দূরে! তবু ভেসে আসা শ্বাসের শব্দ, শুনি যেন বেলা জুড়ে।। এই মাটিতেই স্খলিত চরণে ছায়া এঁকে আসা যাওয়া। ছুঁয়ে ফেলি ছায়া,শুধু ছুঁয়ে যাই, এটাই  কী কম পাওয়া? চলে যাবে কেন পরিযায়ী পাখি,কেন যাবে আর ফিরে? এখানেই থাকো,থেকে যাও উত্তরে।। **********************************...
তারুণ্যের দেশ – বিদ্যুৎ পাল

তারুণ্যের দেশ – বিদ্যুৎ পাল

তৃতীয় বর্ষপূর্তি
তারুণ্যের দেশ      বিদ্যুৎ পাল সাতসকালে সতেরোখানা বাইক, অন্তঃস্রাবে অ্যাড্রিনালিন, রোববার,বন্ধ দোকানপাট –মাঝচত্বরে দাঁড়িয়ে বৈঠক, “হামলার অ্যাটিচুড চাই,তবে পুরো হবে টার্গেট। প্রত্যেক বাড়ি তোমাদের বাজার; আজ কোনদিকে,অবধেশ? রবীন?” এখন সে এম.আর.এর দিন নেই,ইয়েজ্‌দি হাঁকিয়ে মিঠাপুর গুমটি পেরিয়ে...বীমা এজেন্টেরও কি আছে? সব সেল্‌স-ভীড়, ঘাম, ছাঁটাইয়ের হুমকি,গলায় জিপিএস ট্র্যাকার–“শোহেব,তোমার সিগন্যালে কাটনি,চা খাচ্ছো স্টেশনে;সাতনা যথেষ্ট দূর!” এবং সবটাই তো বাজার–আলাদা আলাদা-চুল,খুলি,কান চোখ,কপাল,নাক,গলা,চামড়া,নখ,অঙ্গপ্রত্যঙ্গ দেহের... মেডিক্যাল,কস্মেটিক,জিমের আসবাব,হেল্‌থড্রিঙ্ক,গার্মেন্ট্‌স; ঘরে কড়া নাড়ে শীর্ণ কালো মেয়ে,“ধুপকাঠি নেবেন? সাবান?” অদৃশ্য চাবুকে বিষোচ্ছে তারুণ্যের দেশ,জীবন তবু ঢেউ; “আমরা ফ্রেঞ্চাইজি মশাই,চাকরি গেছে,যান মুম্বই, দিউ!” ----------------------------------...
সম্পর্কের মূল্যায়ন – জলি চক্রবর্তী শীল

সম্পর্কের মূল্যায়ন – জলি চক্রবর্তী শীল

তৃতীয় বর্ষপূর্তি
সম্পর্কের মূল্যায়ন জলি চক্রবর্তী শীল হাতদুটো প্রায় ছিঁড়ে যাবার জোগাড় |  অফিসফেরতা একটু বাজারে ঢুকেছিল বিতস্তা | বাজারে আগুন দাম‚ সেই সঙ্গে সব্জির অপ্রতুলতা | এমনিতে সংসারে সপ্তাহে একদিনই বাজার আসে কিন্তু এবারে সেই সাপ্তাহিক বাজার বাড়ন্ত | অগত্যা বাজারে ঢুকতেই হল তাকে | মা বলতেন‚'ঢেঁকি স্বর্গে গেলে ধান ভানে আর তুই বাজারে ঢুকলে পুরো বেহিসেবীর মত বাজার করিস' |  একটা সময়ে মায়ের সংসারে জুতোসেলাই থেকে চন্ডীপাঠ সবই তাকেই করতে হত |  মা আর নেই ইহজগতে‚কিন্তু অভ্যাসটা রয়ে গেছে | দুহাতে ছোট ছোট বেশ কয়েকটা  ব্যাগে আনাজপত্র নিয়ে বেশ বিপাকে সে | এর মধ্যেই থেকে থেকেই নিয়মিত বিরতিতে কাঁধের ব্যাগের ভিতর থেকে মোবাইলটা  বেজে উঠছে |  যেই কল করুক না কেন এই মুহূর্তে বিতস্তা কিছুতেই কলটা নিতে পারবে না | রিং বেজে বেজে থেমে যায় | বাড়ি ফিরে না হয় কল করে নেবে | আবার বেজে ওঠে মোবাইলটা | বাজুক‚যত ইচ্ছে বাজুক | এই...
ভরা থাক স্মৃতি সুধায় – সুরজিত সরখেল

ভরা থাক স্মৃতি সুধায় – সুরজিত সরখেল

তৃতীয় বর্ষপূর্তি
"ভরা থাক,স্মৃতি সুধায়" সুরজিত সরখেল "আগে মত যাও দিদি,গ্লেসিয়ার গিরনে কা আওয়াজ শুনাই নাহি দে রাহা হ্যায় কেয়া!" সুখনলালের স্নেহ মিশ্রিত ঈষৎ ধমকের সুরে বলা কথাগুলো জয়ন্তী যেন শুনতেই পেলনা! ততক্ষণে ওর মন চলে গেছে সুদূর অতীতে!      প্রায় বছর কুড়ি আগে স্বরূপ আর  তার বন্ধুদের সাথে এসেছিল এই পিন্ডারি গ্লেসিয়ার ট্রেকিং করতে।সেটাই ছিল জয়ন্তীর জীবনের প্রথম ট্রেকিংয়ের অভিজ্ঞতা।ইউনিয়ন ব্যাংকের কর্মচারি স্বরূপের প্রচন্ড নেশা ছিল পাহাড় আরোহণ বা মাউন্টেনিয়ারিং। ভীষণ ঝুঁকিবহুল ও বিপদসংকুল এই নেশার জন্যই জয়ন্তীর মা,বাবা প্রথমে এই বিয়েতে রাজি হচ্ছিলেন না। তাদের একমাত্র আদরের মেয়ের সাংসারিক জীবনে কোন অভিশাপ নেমে আসুক,তারা মনে প্রাণে চাইতেন না। এটাই স্বাভাবিক! কিন্তু জীবনের প্রথম প্রেমের মানুষটাকে কিছুতেই হাতছাড়া করতে রাজি ছিল না জয়ন্তী | গড়িয়াহাটের বাসন্তী দেবী কলেজের ফাইনাল ইয়ারের ...
জানিনে কে সে – মানবী ঘোষাল দাস

জানিনে কে সে – মানবী ঘোষাল দাস

তৃতীয় বর্ষপূর্তি
জানিনে কে সে মানবী ঘোষাল দাস  জানিনা আমার জীবনের উপর দিয়ে গেল চলে কে যেন এক জন ! অনুভূতি বলল, সে বুঝি ফাগুন-চৈত্রের সমীরণ। যাত্রাপথে,নত মাথে দিল আমায় পরশ, কানন মাঝে ফুটিয়ে কুসুম আনল মনে হরষ । আমায় অবগত না করেই নিল যে সে বিদায়, একেবারেই গেল চলে জানিনে আমি কোথায় ! যাত্রাপথে আপনমনেই মেলেছিল সে তাঁর নয়ন, জানিনে আমি গেয়েছিলাম কি জানে শুধুই তাঁর মন । স্মৃতিটুকুই অবলম্বন করে আছি বেঁচে ধরণীতে, মনই এখন বন্ধু আমার হয়েছে সাথী কাননেতে । তার যাওয়ার ধরণ এমনই যেন সাগরের বক্ষ মাঝে তরঙ্গের বন্যা, হাসির রাশি ছড়ায়ে সে,শশধরের আলোর দেশে নয়ন কোণে ইশারা রেখে হয়েছে চাঁদের কন্যা । একাকী অন্তর তাই,করছে চিন্তা কেবলই আমি যেতে পারি কোন গন্তব্যে, ভাবনা আমায় করে আকুল তবুও আমি চলি ভেবে । সুধাংশুর নয়ন মাঝে আনল তো সেই তন্দ্রাচ্ছন্নতা, অন্তর মাঝে দিল দোলা দিয়ে ফুলের স্নিগ্ধতা । পুষ্পব...
error: বিষয়বস্তু সুরক্ষিত !!