Author: Kulayefera
জীবনদর্পণ ও বাস্তবতা – সুরজিত সরখেল
জীবনদর্পণ ও বাস্তবতা
সুরজিত সরখেল
" যতদিন বেঁচে আছি আকাশ চলিয়া
গেছে কোথায় আকাশে
অপরাজিতার মত নীল হয়ে আরো নীল হয়ে
আমি যে দেখিতে চাই;_সে আকাশ
পাখনায় নিঙরায়ে লয়ে
কোথায় ভোরের বক মাছরাঙা
উড়ে যায় আশ্বিনের মাসে
আমি যে দেখিতে চাই_আমি যে বসিতে
চাই বাংলার ঘাসে
পৃথিবীর পথে ঘুরে বহুদিন অনেক বেদনা প্রাণে সয়ে
ধানসিড়িটির সাথে বাংলার শ্মশানের দিকে যাব বয়ে
যেইখানে এলোচুলে রামপ্রসাদের সেই শ্যামা আজো আসে
যেইখানে কল্কাপেড়ে শাড়ী পরে কোনো এক সুন্দরীর শব
চন্দন চিতায় চড়ে_ আমের শাখায় শুক ভুলে যায় কথা
যেইখানে সবচেয়ে বেশী রূপ_ সবচেয়ে গাঢ় বিষণ্নতা
যেখানে শুকায় পদ্ম_ বহুদিন বিশালাক্ষী যেখানে নীরব
যেইখানে একদিন শঙ্খমালা চন্দ্রমালা মানিকমালার
কাঁকন বাজিত,আহা,কোনোদিন বাজিবে কি আর!"
আমার ভীষণ প্রিয় কবি জীবনানন্দ দাশের এই বিখ্যাত কবিতাটা পড়ার সঙ্গে সঙ...
মনে পড়ে – সুপ্রিয়া মুখার্জ্জী
মনে পড়ে
সুপ্রিয়া মুখার্জ্জী
তুমি চলে যাবার পর
রক্তিম পলাশগুলো সব ঝরে গেল।
অস্তগামী সূর্যের শেষ কিরণের মত
তুমি চলে গেলে।
আঁধার গাঢ় থেকে গাঢ়তর হল
রাত্রির নিস্তব্ধতা,নীরব গভীরতা
এক অন্য কথা বলে গেল
চুপিচুপি কানে কানে।
তুমি আছো,ভীষণভাবে বেঁচে আছো
আমার মনে,মননে।
বসন্ত আজও আসে,ফুল ফোটে আজও
মনে পড়ে তোমার কথা।
রোজ তুমি কেন স্বপ্নে আসো?
আমি তো কষ্ট পাই,যন্ত্রণায় দীর্ণ হই!
বন্ধনে বাঁধা পড়া হল না,
স্বর্গের পারিজাতের গন্ধে তুমি আছো
ভীষণভাবে আছ ।।
*********************************
সুপ্রিয়া মুখার্জী চন্দননগরের বাসিন্দা। কবিতার সঙ্গে পথ চলা শুরু বেশ বড় বয়সেই। কবিতা লিখতে ও পড়তে ভালোবাসেন।
...
রোষাগ্নি – শর্মিষ্ঠা দাস (মিষ্টি)
রোষাগ্নি
শর্মিষ্ঠা দাস (মিষ্টি)
পুতুল খেলা আর নয় মা,
চোখের কোণে আগুন জ্বাল।
শরীরের ঐ প্রতি খাঁজে,
সংহার রূপী সাহস আন।
গতরের ভাঁজে কাঁটা পুঁতে,
ত্রিশুলটাকে আজ শান দে,
হয়েছে সময় রুখে দাঁড়ানোর,
নারীদের যোগ্য মান দে।
জ্বলছে ঐ চিতার আগুন,
আগুন তো নয়; চোখের জল।
চিৎকার করে বলছে যেন—
বাড়াও তোমার মনোবল।
মেয়েটা যে আজ নিথর দেহ,
কারা যেন ওকে খুবলে খেলো।
এবার সময় বুঝিয়ে দেবার,
'দানবদলনী মা' যে এলো।
প্রতি ঘরে হোক্ তোর বন্দনা,
মায়ের কোল যেন না হয় শূন্য।
বুক জুড়ে আজ সাইজ নয়,
সদর্পে বলুক,আমি নই পণ্য।
চোখের কোণে জল নয় আর,
রক্তচক্ষু দৃষ্টি দে।
নৃশংস ঐ পশুদের,
পরাণে একটু ভয় দে।
নয় আর কোনো নির্ভয়া,বাল্মকী—
হোক্ নারীজাতির জয়,
সম্মান আর শ্রদ্ধায় বলো,
জয় 'দেবী দুর্গা'র জয়'।
প্রতি ঘরে হোক্ তোর আগমন,
লক্ষীরূপে বিরাজ কর।
*************************
...
কেন এমন? – অর্চনা মহান্তি
কেন এমন?
অর্চনা মহান্তি
আন্তরিক আলাপচারিতায় প্রায় প্রতিটি মানুষের গোপন হৃদয় থেকে ঝরে পড়ে মনখারাপের হলুদ পাতা
জটিল জীবন-গণিতের না মেলা কঠিন সব পাটিগণিত ।
শুধু মেলে ধরুন নিজের "কানু গোয়ালার গলির" জীবন বৃত্তান্ত, অকপট স্বীকার উক্তিতে
দেখুন অপরপক্ষের "ফুল্লরার বারোমাস্যা" ছিল ঝরারই অপেক্ষায়, ক্ষোভ উদগীরণের মুহূর্তে
শুধু প্রয়োজন ছিল একটু সমবেদনার কড়া নাড়ার।
কেউ এখন অন্তর থেকে ভালো আছি বলে না বা বলতে পারেনা
একের পর এক তুলে ধরে সঠিকভাবে ভালো না থাকার অসংখ্য ধূসর বৃত্তান্ত
সে দেহে বা মনে
এককের বা পরিবারের।
সহজ কথায় আমরা কেউ আজ সত্যিই ভালো নেই
শুধু ভালো থাকার বিস্তর লড়াইয়ের ভেতর কোন ক্রমে টিকে আছি আপাদ-মস্তক।।
**********************************
অর্চনা মহান্তি পরিচিতি: বাঁকুড়া জেলার হিড়বাঁধ গ্রামে জন্ম। বাবা শ্রী ফণীভূষণ মহান্তি,মা শ্রীমতী সরোজিনী মহান্তি। পারিবারিক ভাবে সাহিত্য...
উৎসের শেষ শিকড় টুকু – সুরভী চট্টোপাধ্যায়
উৎসের শেষ শিকড় টুকু
সুরভী চট্টোপাধ্যায়
পাহাড়ের মাথা থেকে একটি হাইরাইজ পালক আমাকে ছুঁয়েছিল
আর দিন-সপ্তাহ পর আমি
ডুবে গিয়েছিলাম সার্বিক বাস্তবতার বোধে
যেন শীতের আবেশ মাখা
একটি ফ্লুয়ে আচ্ছন্ন আগামীকাল…
রক্ত এবং কুয়াশার কয়েকটি ডানা
আর আমি স্বর্গীয় মধু ভরে ছুঁয়ে দেখেছিলাম সাম্রাজ্যবাদের ঝুঁটিগুলো…
নিভু নিভু মোমের আঁচে প্রয়াত মানবতা
আর দুঃখী রগগুলোর ভেতর দিয়ে হেঁটে চলেছে
মাদকের সুরম্য ঐতিহ্যখানি…
সবুজ হয়ে আছে অহং এর মতো
চিরহরিৎ খেতগুলো…
আর আমরা পৃথিবী হয়ে উঠে চিবিয়ে খাচ্ছি
বহু উৎসের শেষ শিকড়টুকু…
*************************************
কবি পরিচিতি - সুরভী লেখালেখির চেষ্টা করতে ভালোবাসে। এর মধ্যে বেশ কিছু পত্রপত্রিকায় তাঁর লেখা বেরিয়েছে,নিজের লেখাকে সকল পাঠকের মধ্যে পৌঁছে দেওয়াই তাঁর স্বপ্ন।
...
সংস্থান – জয়িতা সরকার
সংস্থান
জয়িতা সরকার
আবার একটা নতুন দিন।
মেঘে আর বৃষ্টিতে বুঝতে পারছিনা
দুপুর- বিকাল -সন্ধ্যা -সকাল...
আবার যুদ্ধের প্রস্তুতি অকাল-আকাল-অসময়। আধুনিক পুরুষের চোখ দুটো অস্বস্তিকর লাল।
ললনা তার প্রেমিকের রক্তে লিপস্টিক লাগাচ্ছে।
এমনকি বালকেরা নীল বৃষ্টিতে কামার্ত!
নিজের মাথা নিজেই কেটে নৈবেদ্য সাজিয়েছে সুন্দর বাহুবলী যুবক।
সিদ্ধাচার্য মন্ত্ররহিত
অস্ত্র আর ফুল সবকিছু একদম মিলে মিশে আছে কাছাকাছি।
কেউ কেউ এখন নিকুম্ভিলা যজ্ঞাগারে ।
পুজোর ফুলের জন্য অপেক্ষায় রয়েছে অনন্ত অসীম,
আসছে না কিছুতেই এখনো তা।
বাটা চন্দন শুকনো হয়ে গেল।
আর কেউ বসে রুদ্ধদ্বার বৈঠকে
বিভীষণের সঙ্গে ফিসফিস ষড়যন্ত্রে শান দেবার জন্য।
কোথাও যুদ্ধ,আর কোথাও যাত্রাপালায় নকল নকল যুদ্ধ।
চুমার বিপরীতে মুখোমুখি তৈরি ধারালো নখ আর দাঁত,
সবাই শুনছে না সেইসব শব্দ,জানছে না সেইসব কথা। বুঝেও দেখছে না কেউ কেউ।
বৃষ্টি...
লড়াইয়ের নাম দুর্গা – শাশ্বতী হোসেন
লড়াইয়ের নাম দুর্গা
শাশ্বতী হোসেন
স্বাধীনতা মানে বুঝিস বাউরির পো?
পাখির পারহা উড়হা আর উড়হা -
ড্যানা খুল্যে নীল আকাশে পতপতায়ঁ উড়হে চরহা
অ্যতদিন আমার জইন্যে বসে আছিস
আর একটঅ বছর...
আইসছে বছর শারহুল ফোটার আগুতেই
আমদের বিহা।
দেশ্যে যুদ্ধ চইলছে
মহিলা রেজিমেন্ট ক্যাম্পে ট্রেনিং পুরোদমহে চইলছে।
ট্রেনিং শেষ হল্যে যুদ্ধে যাবঅ
শত্রুদের ষড়যন্ত্রের টিলহাগুলা ধুলার পারহা উড়াইন দিবঅ
একটঅ খুশির খবর শুন,মহিলা শাখার এলিট কমান্ডোর পোস্ট পায়েঁছি।
কত স্যালুট পাই জানিস?
কেনে পাবঅ নাই বল?
হামি যে সে মিয়া নকি? আমার নাম দুর্গা শবর
বাপের নাম জগনা শবর।
ছুটবেলা থাক্যে আমার রাজমিস্তিরি বাপ
হামার ভিত্রে খাদানের গাড়হার পারহা
সাম করায়ঁ দিছে--তুই বড় হয়্যে সৈনিক হবি।
দেশের লাগ্যে লড়াই করবি।
তার জইন্য ইখন থাক্যে হাঁড়ি-পাতিল খেলা বন্ধ কইরতে হবেক।
আমার দুনিয়াটঅ দমহে ছুটঅ রে দুগ্গা
তকে লিয়ে একটঅ স্...
সম্পাদকীয় – কাশবন ৩
সম্পাদকীয়
এখন প্রয়োজন উত্তরণের।কালো থেকে আলোয় অতিক্রমণের।
প্রতি বছরই যে কোনও শারদীয় সংখ্যার এই কলমটিতে লেখা হয়ে থাকে এই কথাটা যে চতুর্দিকের সঙ্কটময় আবহে শুভাগমন ঘটছে আনন্দময়ী মায়ের।এবছরও তার কিছু ব্যতিক্রম তো নেইই বরং মনুষ্যসৃষ্ট আরও গভীর এবং বিপদজনক অসততার সঙ্কট যুক্ত হয়েছে জীবনে।তাই, এই সময়,উত্তরণের সময়।অবক্ষয় থেকে মুক্ত,পরিপূর্ণ, সুস্থ এক সমাজে উত্তরণের ।তমিস্রা থেকে জ্যোতিতে।মৃত্যু থেকে অমৃতে উত্তরণের।এত প্রতিকূলতার মধ্যেও এবারে আন্তর্জালিক এবং আন্তর্জাতিক পত্রিকা কু লা য় ফে রা তাঁর সীমিত শক্তি নিয়ে নিয়োজিত এই গরলকর্দমে পুষ্কর ফোটাতে।
সমাজ এখন বিষপূর্ণ এক উধরি যেন।তার বিষবাষ্পে চতুর্দিক আচ্ছন্ন।প্রাকৃতিক, সামাজিক, রাজনৈতিক প্রতিটি ক্ষেত্র ছেয়ে গেছে এক অন্তহীন অবনমনে।যেন পৃথিবীর গভীরতর অসুখ এখন।বিগতদিনের অতিমারীর প্রভাবে এখনও জনজীবন আচ্ছন্ন।বেঁচে থাকার ন্যূনতম চাহিদার যোগানও অপ্রতু...