স্বাভিমান
চন্দ্রকান্তি দত্ত
"রজতাভ বাড়ি আছো?" উমাপ্রসন্নবাবুর কাঁপা কাঁপা গলা ভেসে এল রজতাভর বাড়ির ঠিক বাইরে থেকে। রজতাভ বাড়িতেই ছিল। কিন্তু সাড়া দিল না। উল্টে সুদীপাকে ফিস্ ফিস্ করে বলল, "ওহ্। আবার বোধহয় টাকার দরকার। বলে দাও, আমি বাড়ি নেই। কোন্নগর গেছি। কালকে ফিরব।"
সুদীপার খারাপ লাগল। সামান্য কটা টাকা ধার দেওয়ার ভয়ে কতকগুলো মিথ্যা কথা বলতে হবে। তাও আবার শ্রদ্ধেয় মাস্টারমশাইকে। বলল, "কি দরকার বাপু। হাজার দুয়েক টাকা তো। দিয়ে দাও না। উনি তো শোধ করে দেন।"
-"না না। এখন হাতে টাকা নেই। তোমাকে যা বললাম করতো।"
সুদীপা অন্তর থেকে জ্বলে-পুড়ে খাক্ হয়ে যাচ্ছিল। তবু স্বামীর মান রাখতে মিথ্যা কথাগুলো বলতে বাধ্য হল। মাস্টারমশাই দাঁড়িয়েছিলেন বারান্দার নীচে জমিতে। বারান্দায় ওঠেন নি। সামান্য দুটো সিঁড়ি ভাঙ্গতেও সাহস হয় না। শরীরটা নড়বড়ে হয়ে গেছে। পড়ে যাবার ভয় থাকে।
সুদীপার কথা শুনে বললেন, ...
কাপুরুষ
ডাঃ দিলীপ কুমার সিংহ
আমার মেডিকেল কলেজ পাশ করার দু বছর পরে বাংলা দেশের যুদ্ধ শুরু হয়। যুদ্ধ শুরু হবার এক বছর আগে থেকেই আর্মি মেডিকেল কোর, নানান মেডিকেল কলেজে ডাক্তারদের রিক্রুটমেন্ট শুরু করে দিয়েছিল। আমি মেডিকেল কলেজে চার বছর এন.সি.সি করে তারপরে ফাইনাল ইয়ারে, আর্মি এটাচমেন্ট ক্যাম্প করায়, আর্মি লাইফের প্রতি তীব্র আকর্ষণ অনুভব করতাম। এবারে মেডিকেল কলেজে থেকেই আর্মিতে ডাক্তার হিসাবে যোগ দেবার ও যুদ্ধ দেখার সুযোগ পেয়ে, আর নিজেকে সামলে রাখতে পারিনি। লাইনে দাঁড়িয়ে গিয়েছিলাম।
রাঁচির পাশেই নামকুম মিলিটারি হাসপাতালে প্রথম পোস্টিং। দিনের বেলায় মিলিটারী হাসপাতালে রুগী দেখে আর রাতের বেলায় যুদ্ধের বিষয়ে ফার্স্ট হ্যান্ড কিছু জ্ঞান অর্জন করে নিয়ে, দুমাসের মাথায়, হাতে কাগজ পেলাম যে পোস্টেড টু কমান্ড হসপিটাল, ক্যালকাটা। সেখান আরো কিছু বিশেষ প্রশিক্ষণ দিয়ে একদিন রাত্রিবেলা, তিরিশটা থ্রী টন, কুড়ি...
https://youtu.be/KpHMW1zZJSY
সুরজিৎ সরখেল পরিচিতিঃ
১৯৫৭ সালে কলকাতায় জন্ম। ২০১৮ সালে ভারতীয় জীবন বীমা নিগম থেকে অবসর নিয়েছেন। সঙ্গীতে একটা পারিবারিক ঐতিহ্য ছিল। সেজমাসী এবং মেজমামা প্রখ্যাত সুরকার স্বর্গীয় হৃদয় রঞ্জন কুশারীর তত্ত্বাবধানে সঙ্গীত চর্চা শুরু হয়। কলেজ জীবন শুরু হবার পর সঙ্গীতে আকৃষ্ট হন। অফিসে কর্মজীবনের ফাঁকেই শুরু হয় সাহিত্য চর্চা। কিছু প্রকাশিত হয়েছে বিভিন্ন সাময়িক পত্র পত্রিকায়। এছাড়াও বাগানে বিভিন্ন রকমের গাছপালা নিয়ে সময় কাটাতে ভালোবাসেন।
...
আগন্তুক
নাজির হোসেন বিশ্বাস
"কে বাবা তুমি, চোখ মুখ দেখে তো মনে হচ্ছে খুব কষ্টে রয়েছো?" কোন কথা না বলে শুধু একবার চেয়ে দেখলো আগন্তুককে। বাপের বয়সী’ই হবে। তিনি খেয়াল করলেন, ছেলেটির চোখ ছলছল করছে, এক টোকাতেই যেন বৃষ্টির ফোঁটা ঝরঝর করে ঝরে পড়বে। আগন্তুক পাশে বসে, পিঠে হাত রাখতেই গ্রীষ্মের শুকিয়ে যাওয়া লতায় বৃষ্টির ছোঁয়া পাওয়ার মতো যেন স্নেহের পরশ লাগলো, সেই স্নেহের ছোঁয়ায় হাউহাউ করে কেঁদে উঠলো চব্বিশ পঁচিশ বছরের তরতাজা যুবক। আগন্তুক ভদ্রলোক পিঠে থাবা দিয়ে বলতে থাকেন, কাঁদিস না বাবা, কি হয়েছে বল আমাকে। জানিস না,“বিপদে মোরে রক্ষা করো এ নহে মোর প্রার্থনা, বিপদে আমি না যেন করি ভয়।“ আগন্তুকের কথায় যেন ছেলেটি কোন আপনজনের সান্নিধ্য পেল। নিজেকে সংবরণ করে নিয়ে,"আব্বু এই হাসপাতালে ভর্তি রয়েছেন দু’সপ্তাহ থেকে। "ভদ্রলোক মুখে দুঃখসূচক শব্দ করে বলে উঠলেন,"তোমার নাম কি বাবা? বাড়ি কোথায়?"
কাঁদ...
ভুলো
দেবাশিস চক্রবর্তী
আমরা তখন অনেক ছোট। ক্লাস সিক্স/সেভেন এ পড়ছি। থাকতাম কলকাতার সি.আই.টি বিল্ডিং পদ্মপুকুরে ৷ ১৯৬৯ -৭০ এর কথা।
স্কুল থেকে ফিরেই একটু খেয়ে দেয়ে ছুটতাম সামনের মাঠে খেলতে। ফুটবল আমাদের নেশার মতন ছিল। রেল লাইন সংলগ্ন একটা বক্রাকার মাঠে আমাদের ফুটবল খেলা চলতো। শীত/ গ্রীষ্ম/ বর্ষা কিছুই আমাদের দমিয়ে রাখতে পারতো না।
দেশভাগের পর বহু রিফিউজি যারা নির্মীয়মান কিছু সি.আই.টি. এর দখল নিয়েছিল, তারাও ছিল আমাদের খেলার সঙ্গী। এদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য ছিল বিকাশ, সুনীল, সদা, ব্যাঙ্গা, কুটি, এবং আরও অনেকে। আমরা যারা সি.আই.টির বোনাফাইড বাসিন্দা, মধ্যবিত্ত হলেও আর্থিক ভাবে ওদের তুলনাতে একটু স্বচ্ছল ছিলাম। যদিও আধখানা ডিম আমরাও খেয়েছি, চাঁদা মাছ, তেলাপিয়া তেই খুশি ছিলাম। ইস্ট বেঙ্গল - মোহন বাগান লীগ এর ফাইনাল খেলার টিকিট পাওয়াটা লটারি টিকিট পাবার মতন ছিল সে সময়ে। কিন্তু সবার ওপরে ছিল আমাদ...
ক্যালেন্ডারের হেমন্ত
দেবলীনা সরকার
দুব্বোঘাসে হীরের কুচি
ঝরছে শিশির ভোর বেলা
হিমঋতু ওই শরৎ শেষে
তাই বিধাতার এই খেলা।
আজ ইস্তক এমন কথাই
শুনছে দিদার কোল ঘেঁষে
ছোট্ট তোজো ভাবছে শুধুই
হাতটি গালে, আঁক কষে!
শপিং মলের শো কেসে সে
হীরের কুচি দেখতে পায়
কি করে তা আসতে পারে
দুব্বো ঘাসের গায়, মাথায়?
ঠাম্মা দিদা বলতে থাকে
কতোই কথা তাল বেতাল
মেলে না তার অঙ্ক গুলো
যোগবিয়োগে নাজেহাল।
দাদাই এসে বল্লে হেসে
চল দাদুভাই মাইল আট?
হাঁটতে গিয়ে গার্ডেনেতে
পাবোই দেখতে হীরের ঠাট!
আটটি মাইল হাঁটবে!ভেবে-
ভ্যাঁ করে সে দেয় কেঁদে
ওরা যেন ফিকির করেই
ফেলছে তাকে জাল ফেঁদে
তবু দাদাই বলছে যখন
যেতেই হবে একটিবার,
দুব্বো ঘাসের মাথায় হীরে-
কচু পাতায় মোতির হার!
হাঁটতে থাকে দুইটি প্রদীপ
গার্ডেনেরই ধার ঘেঁসে
কোথায় হীরে? মোতিই কোথায়?
আছে কোথায়? কোন বেশে?
কে যে সঠিক, কে-ই বা বেঠিক
ভরতে থাকে চোখে...
অরোরার সন্ধানে
ভাস্বতী সাধুখাঁ (বসু)
বছর তিনেক আগে এপ্রিল মাসের এক রবিবার। স্টকহোমের কাজ সেরে চলেছি নরওয়ের দিকে। নরওয়ে মানে আমার কাছে এক অদৃশ্য হাতছানি-নিশীথ সূর্যের দেশ আর অরোরা বোরিয়ালিস। এর আগে একবার সপরিবারে নরওয়ের রাজধানী অসলো ঘুরে এলেও অন্যান্য ছোট শহরে যাওয়া হয়ে ওঠেনি। এসব ভাবতে ভাবতে 'অসলো' স্টেশন থেকে ছোট একটি ট্রেনে চড়ে বসলাম লিলেহ্যামারের উদ্দেশ্যে। শহর ছাড়িয়ে দু'পাশে নৈসর্গিক দৃশ্য, বরফে ঢাকা উপত্যকা, তার মধ্যে দিয়ে দ্রুতগতিতে পোলার এক্সপ্রেস এর মত ছুটে চলেছে আমাদের ট্রেন। এদেশের সবচেয়ে বড় লেক 'যসা'(Mjosa), যা সম্পূর্ণ বরফে ঢাকা। প্রায় ঘন্টা দুয়েক পর তুমুল বৃষ্টির মধ্যে একটি ফাঁকা স্টেশনে ট্রেন আমাকে একা নামিয়ে দিয়ে চলে গেল। হোটেল বেশ কাছে, কিন্তু এত বৃষ্টিতে পাহাড়ি রাস্তায় হাঁটা সম্ভব নয়, তাই বৃষ্টি থামতে বাইরে বেরিয়ে ট্যাক্সি ডেকে পৌঁছে গেলাম হোটেলে। হ...