Shadow

Author: Kulayefera

মন-দর্পণ – পল্লব চট্টোপাধ্যায় 

মন-দর্পণ – পল্লব চট্টোপাধ্যায় 

বিহানবেলায় ৩
মন-দর্পণ পল্লব চট্টোপাধ্যায়  ভবতোষবাবুর কী হয়েছে আজকাল, ছেলেদের কাউকে যেন ঠিক সহ্য করতে পারছেন না। ব্যবসায়ী বড় ছেলে মহীতোষ ওরফে মহী তাঁকে শ্রদ্ধাভক্তি ভালই করে,এমনকি তিনি অবসর নেওয়ার পরেও এখন বাড়তি বোঝা বলে মনে করে না। বউমাও যেটুকু মনে হয় আড়ালে-আবডালেও কোন কটাক্ষ করেন না। ছোট ছেলে আশুতোষ একটা ছোটখাটো চাকরি করে,বিয়ে করেনি এখনও। প্রেম-টেম করে,তিনি জেনেও তেমন পাত্তা দেন না। কিন্তু ছেলেদের বা বউমাকে অসহ্য মনে হবার কারণ কিছু বুঝতে পারছেন না তিনি। স্ত্রী-বিয়োগ হবার পরও এমন অবস্থা ছিল না, এটা যেন শুরু হয়েছে মাসখানেক কি মাস দুই থেকে। তবে কি তাঁর স্কিজোফ্রেনিয়া হল? উনি শুনেছেন যে এ রোগে নাকি দুনিয়ার সবাইকে শত্রু বলে মনে হয়। কাউকে মনের কথা খুলে বলতে না পারলে শান্তি হচ্ছে না। হ্যাঁ,একমাত্র নন্দদুলালই ভরসা। কই,নন্দকে দেখে তো তাঁর এমন বিরূপ প্রতিক্রিয়া হয় না! তাহলে নিশ্চয়ই এটা স্কিজোফ্রেনিয়া নয়। চিন...
ফিরে দেখা – রাজু সেনগুপ্ত

ফিরে দেখা – রাজু সেনগুপ্ত

বিহানবেলায় ৩
ফিরে দেখা রাজু সেনগুপ্ত ঠিক হলো, ঠিক সকাল ৯টায় গোলপার্ক এল নাইন বাস স্টপে আমরা তিন জনে মিট করবো। সেখান থেকে দীঘা যাবার বাসে দীঘা। তিনজনে এর আগে আমি অনেকবার গেছি,পয়সা কম দিতাম বলে সবসময় রিক্সায় আমায় কারো কোলে,অথবা রাতে ঘুমনোর সময় দু জনের মাঝখানে শুতে হতো। এইবার আমি পুরো নিজের পয়সায় যাচ্ছি,তাই আগে থেকে বলে রেখেছি বন্ধুদের দরকারে দুটো রিক্সা বা দুটো ঘর নিতে হবে,আমি আর কিছুতেই কারোর কোলে বসবো না বা দুজনের মাঝে শোবো না। বাসব চুপ করে ছিলো এতক্ষণ। সারাক্ষণ ঘুরে বেড়ায় নিজের খেয়ালে,যতোসব নাম না জানা উদ্ভট জায়গায়। কিন্তু আমাদের সাথে কোথাও যেতে বল্লেই নানান অজুহাত দেখায়। বলে ওঠে, -  তোরা দীপুদা ছাড়া কোথাও যাবার কথা ভাবিস না কেন? - নিলু বলে, দীপুদা গেলে আমি যাবোনা। আমিও নিলুর সাথে।আমাদের চার জন করার জন্য দীপুদাকে দলে নেবার কোনো প্রয়োজন নেই। - বাসব বলে "ওরে আমি দীপুদা বলতে দীঘা,পুরী,দার্জিলিং...
প্রোফাইল ফটো – শম্পা চক্রবর্তী

প্রোফাইল ফটো – শম্পা চক্রবর্তী

বিহানবেলায় ৩
প্রোফাইল ফটো শম্পা চক্রবর্তী শুরু থেকেই শুরু করা যাক। হেডস্যার বললেন দুবছর পর অফলাইনে স্বাধীনতা দিবস পালন করা হবে। স্বাধীনতা ৭৫।সবকিছু যেন ঠিকঠাক হয়। দক্ষিণ কলকাতার এই বেসরকারি ইংরেজি মাধ্যম স্কুলটির সি বি এস সি বোর্ড। মহামারীর সময়ের অনলাইন বিভীষিকা কাটিয়ে এবার সশরীরে উৎসব পালন করা হবে। সবাই যেন কোমর বেঁধে কাজে নামে। কোভিডের আগেই ড্রামা  ক্লাব্  তৈরী হয়েছে। সুকান্ত স্যার উত্তর বাংলার একটি মিশনারি স্কুলের ড্রামা টিচারের পদ থেকে অবসর নেওয়ার পর এই স্কুলের সঙ্গে যুক্ত হয়েছেন। গত দুবছর সব অনুষ্ঠান অন লাইন হয়েছে। এবার এই দিনটিতে যেন পুষিয়ে নেওয়া যায়। সুকান্ত স্যারের উৎসাহ,উত্তেজনা,দায়িত্ব-সব কটি জিনিস অন্যান্যদের চেয়ে একটু বেশি। সদাহাস্যময় মানুষটির শিশু- কিশোরদের দিয়ে নাটক করানোর দক্ষতা ও অভিজ্ঞতার নিদর্শন পাওয়া যাবে এবার। ইন্টারনেটের কল্যাণে বিদ্যালয়ের ছাত্ররা বিশ্বকে চিনতে ...
কোমল ধৈবত – মণি ফকির

কোমল ধৈবত – মণি ফকির

বিহানবেলায় ৩
  কোমল ধৈবত মণি ফকির ।। পূর্বরাগ।। শহরের এই অংশে ভিড় অপেক্ষাকৃত কম। প্রতিটি বাড়ি সবুজ ছায়ায় আদরে সযত্নে লালিত। তার মধ্যে একফালি একটি বাড়ি,অস্তগামী সূর্যের কোমল আলোর মত রঙ তার। পুরনো ধাঁচের কাঠের দরজার বাইরে বড় করে সাদা অক্ষরে লেখা "পুরিয়া ধানেশ্রী"। বাড়িটি থেকে ভেসে আসছে এক মিহি কণ্ঠে রেওয়াজ এর সুর। ছয় বছর বয়সী তিতাস আকুল হয়ে গাইছে বেলা শেষের রাগ। তানপুরা ধরে বসে আছেন তার গুরু মা। মুগ্ধ হয়ে তিনি তাঁর ছোট্ট শিষ্যার গান শুনছেন। ছাদের এই ঘরটিতে পড়ন্ত বিকেলের আলো এসে এক মায়াবি পরিবেশ সৃষ্টি করেছে। আশে পাশের বাড়ির সবাই এই অলৌকিক পরিবেশের শরিক। অনতি দূরে কেউ নিজের অঙ্কের খাতার এক কোণে রাখলো লিখে "তিতাস একটি নদীর নাম।"     ---------X-------- ।। উত্তরাঙ্গ ।। - শুনছেন? - হ্যাঁ বলুন। - আপনি তো মঞ্জরী। - না। আপনার কোথাও ভুল হচ্ছে। আমি মঞ্জরী নই। - ওহ্। কিন্তু.... ...
হাফ-সোলের কথা – তাপস দে

হাফ-সোলের কথা – তাপস দে

বিহানবেলায় ৩
হাফ-সোলের কথা  তাপস দে হাফসোল কথার প্রথমভাগটা নিয়ে একটু নাড়াচাড়া করলে দেখা যাবে অনেক রকম হাফ রয়েছে আমাদের অস্তিত্ব জুড়ে। ছোটবলায় আমরা পরেছি হাফ-প‍্যান্ট। সাইকেল চালিয়েছি হাফ-প‍্যাডেল করে। রেশন নিয়েছি হাফ-কার্ডে। হাফ-ইয়ারলি পরীক্ষায় বসেছি। এঁকেছি হাফ-সারকেল। তারপর খেয়েছি হাফ-চা, হাফ-চাওমিন বা হাফ-সিগারেট। কখনো হাফ-টিকিটে সফর করেছি রেলে। হাফ-টাইমে স্ট্র‍্যাটেজি ছকেছি। হাফ-জরিমানা মুকুবের আবেদন করেছি। হাফ-ছুটি নিয়েছি। অর্থাৎ একপ্রকার হাফাতে হাফাতে বড় হয়ে উঠেছি। এইসব হাফ বারে বারে আমাদের অপূর্ণতার দ‍্যোতনা দিয়েছে। আর ক্রমশঃ ছুটিয়ে চলেছে। এবার সোলের কথায়।জুতোর সোলের কথা জানি। হেঁটে হেঁটে সেই সোল ক্ষয়ে অর্ধেক হয়ার কথাও। তাই হাফ-সোল মানে জীবনযুদ্ধে হয়রান হয়ে ঠেকে শেখার প্রথম পাঠের কথা মনে হয়েছিল। আবার যেহেতু হাফ ইংরেজি শব্দ তাই তার পিঠোপিঠি সোল (soul/sole) হল নিজের স্বত্তা বা অনন‍্যতা। তাই হা...
গোপালচরিত – অনির্বাণ সাহা  

গোপালচরিত – অনির্বাণ সাহা  

বিহানবেলায় ৩
গোপালচরিত  অনির্বাণ সাহা   গুপ্তিপাড়া হল ভারতবর্ষের পশ্চিমবঙ্গ রাজ্যের হুগলি জেলার অন্তর্গত অতি প্রাচীন একটি জনপদ। অতি প্রাচীন কাল থেকেই গুপ্তিপাড়া রথের জন্য ভারতবর্ষের মধ্যে একটি বিশেষ নাম। এই অঞ্চলে অতি প্রাচীনকাল থেকেই হিন্দু,মুসলিম এবং বৈষ্ণব ধর্মাবলম্বী মানুষের বসবাস দেখতে পাওয়া যেত। আবার শাক্ত ধর্মাবলম্বী মানুষদেরও এখানে দেখতে পাওয়া যেত। এহেন গুপ্তিপাড়ার অস্তিত্বের প্রমাণ পাওয়া যায় বেশকয়েকটি প্রাচীন গ্রন্থে এবং সত্যনারায়ণ কথনে। সেগুলি হল নিম্নরূপঃ ১৬০০ সালে কবিকঙ্কণ মুকুন্দরাম লেখেন: ‘বাহ বাহ বল্যা ঘন পড়ে গেল সাড়া বামভাগে শান্তিপুর,ডাইনে গুপ্তিপাড়া’। ১৭০০ শতকে বিজয়রাম সেন কর্তৃক লিখিত "তীর্থমঙ্গল" কাব্যগ্রন্থে তৎকালীন গুপ্তিপাড়া অঞ্চলের বিস্তারিত বিবরণ পাওয়া যায় । আবার দুর্গাদাস মুখোপাধ্যায়ের ‘গঙ্গাভক্তি তরঙ্গিনী’ গ্রন্থে বর্ণিত হয়েছে : ‘অম্বিকা পশ্চিম পাড়ে,...
কবিতা – দীপন মিত্র 

কবিতা – দীপন মিত্র 

বিহানবেলায় ৩
কবিতা - দীপন মিত্র  এছাড়া হয় না লেখা শখে  সময় অল্পই বাঁচে,মেরেকেটে কতোটুকু পাই, দিনরাত ছেঁচে পড়ে চুয়ানো মদের অনুরূপ মকরধ্বজের সঙ্গে মধু অনুপান-টুপটুপ অনেক গভীর রাতে বুকে ঝরে,তখন মেশাই রাতের নির্যাস সেই অন্ধকারে,আলো খুবই কম কিন্তু গাঢ় সান্দ্র,যেন দূর থেকে দেখা বন্দরের তারাগুলো মিশে যায় ট্রাকেদের ভিড়ে বি.এন.আর গাল কাটা,নাক ভাঙা নায়কেরা ঘোরে হরদম ভাঁটি ঘেঁটে লাল চক্ষু নেশাগ্রস্ত এই যে যাপন যে কোন সময়ে হত্যা হয়ে যেতে পারে বিলক্ষণ মেয়ে নিয়ে শুয়ে থাকে সস্তার হোটেলে,বেশ্যাগৃহে বেপরোয়া,বেখেয়াল কবি যেন-নিজেকেই নিয়ে ব্যস্ত, অন্যেকে কে কী বলে? সময় কোথায় ওই মস্তকে? সে থাকে দারুণ বেঁচে,এছাড়া  হয় না লেখা শখে ৷। ****************************************** এসেছে কমনীয়তা আজ ঘরে  এসেছে কমনীয়তা আজ ঘরে-বসাবো কোথায়? অভিশপ্ত এক ফালি ঘেরা এই বারান্দা আমার! এখানেই খাই,শুই,মরি বেশি,...
কবিতা – সুবীর গুহ

কবিতা – সুবীর গুহ

বিহানবেলায় ৩
কবিতা - সুবীর গুহ            চরিষ্ণু মন আমি আজও আলোক সন্ধানী--- বিষাদ প্রদাহ নিয়ে নিষ্প্রদীপ রাতে, উদ্ভাসিত হতে চাই রাখি হাত নতুন প্রভাতে। আজও আমি ফিরে ফিরে চাই, অশক্ত মন নিয়ে যেদিকে তাকাই বুকের যন্ত্রণা,শোক,ছিন্ন করে হৃদয় যখন-- অন্ধকারে দীপোৎসব,নিবিড় বন্ধন। অকস্মাৎ মাঝরাতে চরিষ্ণু মন নিজের মুদ্রাদোষে করে বিচরণ-- উন্মুক্ত-উদাসীন চোখের পল্লবে আবার হয়তো খুঁজে পাবে-- সমুদ্রের জলোচ্ছ্বাসে ভেসে যাবে মন, হাতের আঙুলে বাজে নিদ্রাহীন রাতের ক্রন্দন। নতুন নতুন সুরে লীন হয়ে বাজুক এ বাঁশি, নিহিত অন্তর জুড়ে নও পরবাসী। ------------------------------------------------  ঝরা পালকের কান্না জোছনায় সম্পৃক্ত হয়ে হলুদ আভায় ---- মেলে ধরো নিজেকে আবার, হলদে পাখির সেই পালকের মত, একটা পালক যদি খসে যায়, ছুটে যেতে ইচ্ছে করে তোমার সাধের আঙিনায়। আমি তো দেখিনি সেই নরম পালক, দেখিনি তো কোন...
অনন্যা – দেবলীনা দে

অনন্যা – দেবলীনা দে

বিহানবেলায় ৩
অনন্যা দেবলীনা দে আমি অভিলাষা,মডার্ন যুগের ইন্ডিপেন্ডেন্ট উওমেন। জীবনে কোনোদিনই কোনো কিছুর অভাব ছিলনা। কিন্তু অভিযোগ ছিল প্রচুর। চিরকাল আমার সব দাবিদাওয়া মা বাবা এককথায় মিটিয়ে এসেছে তাই নিজের বাইরে কাউকে নিয়ে খুব একটা ভাবার দরকার বোধ হয়নি কোনদিন। খুব সদ্যই চাকরি পেয়েছি। আমার কাছে এখন সিচুয়েশন অনেকটা হাতের কাছে চাঁদ পাওয়ার মত। এই আনন্দের মাঝে বাধ সেজেছিল কোভিড-নাইন্টিন। সব বন্ধ,আমার আউটিং বন্ধ,উইকেন্ড পার্টি করা বন্ধ,এমনকি পার্লারও বন্ধ। জীবনটা একটা ওয়ান বিএইচ কের এসি ঘরের মধ্যে শুরু আর শেষ হচ্ছিলো।                    মহামারীর কবলে যখন গোটা দেশ উথাল পাতাল,তখন পৃথিবীর কোনো এক ছোট্ট কোণে এক বারো বছর বয়সী মেয়ে আকাশের দিকে তাকিয়ে কি ভাবতে পারে তা আমার চিন্তার অতীত। এসি ঘরের বাইরেও যে একটা বড়ো পৃথিবী আছে তা হয়তো সেই শেখাতে পারতো আমায়। মেয়েটির বাবা মা পরিযায়ী। আমরা যেমন সারাজীব...
সীমানায় মেয়েবেলা – সহেলী মুখার্জি

সীমানায় মেয়েবেলা – সহেলী মুখার্জি

বিহানবেলায় ৩
সীমানায় মেয়েবেলা        সহেলী মুখার্জি মুখ ভার করা মেঘলা বারান্দার বিষাদের আঙিনায়, রত্নগর্ভা দাঁড়িয়ে অকিঞ্চন কন্যা জন্ম দায়। পায়ে পায়ে পার পাঁচটা বছর পর সবাই আপন ঘর লক্ষ্মণ রেখা মোটের উপর পুরু পারিবারিক ভর। আদ্যন্ত নিয়ম কফিন ভার বয়ে চলা বৈভব শিকলে আঁচলে সীমানার বলিরেখা যৌবন শৈশব। 'না' এর মোড়কে হাঁসফাঁস আবহাওয়া চাইলে দখিন হাওয়া, সমুখে সবল নারী সত্তার ফাঁস প্রকট প্রৌঢ় ছায়া। বাঁধনের বাধা ছিন্ন কঠিন রশি একরোখা উল্লাসী। উত্তাল পথ এলোমেলো সীমানা খন্ডনে ওঠে অসি। কবজের দড়ি উন্মুখ বিহ্বল সুপ্ত অবিচল মুক্তির ঘ্রাণ নারীর বর্ম খসি যাপনে চঞ্চল। । ************************************ সহেলী মুখার্জি পরিচিতিঃ স্কুল শিক্ষিকা,নিবাস-ব্যান্ডেল/হুগলি,শখ-লেখা এবং গান করা...
error: বিষয়বস্তু সুরক্ষিত !!