Shadow

Author: Kulayefera

সমস্যা – সুজয় দত্ত

সমস্যা – সুজয় দত্ত

চতুর্থ বর্ষপূর্তি
সমস্যা  সুজয় দত্ত নাঃ,থালায় ভাত ফেলে উঠে যাওয়ার জো নেই। একজনের শ্যেনদৃষ্টি আমার পাতের ওপর। পেটে জায়গা থাক আর না থাক,বাকি ডালমাখা ভাত আর তরকারিগুলো শেষ করে তবে নিষ্কৃতি। নাহলেই বকুনি। ওদিকে খাবার ঘরের জানলা দিয়ে দেখতে পাচ্ছি পাশের ফ্ল্যাট থেকে চিঁড়ে আর দই ডাকছে হাত নেড়ে। এখুনি ফ্ল্যাটবাড়ির সামনের একচিলতে মাঠটায় দুপুরের বল খেলা শুরু হবে আমাদের,চলবে যতক্ষণ না বিকেলে বড়রা ইস্কুল থেকে ফিরে মাঠের দখল নেয় ততক্ষণ। চিঁড়ে আর দই হল আমার দুই প্রাণের বন্ধু,মুখার্জিবাড়ীর সেজো আর ছোট ছেলে। আসল নাম চিরন্তন আর দ্বৈপায়ন,আমরা পাড়ার ছেলেরা ঐ বলে ডাকি। দুজনেই দারুণ তুখোড় খেলাধুলোয়। আর আমি? দিনের পর দিন পেট ঠেসে ভাত গিলে গিলে নাদুসনুদুস চেহারা হচ্ছে,বন্ধুরা আড়ালে মোটা বলে,মাঠে গোলকীপার হয়ে স্রেফ দাঁড়িয়ে থাকতেই রীতিমতো হাঁসফাঁস অবস্থা। এই সব কিছুর জন্য দায়ী ওই একজনই। শুরুতে যার কথা বলছিলাম। সেই একই ব্যক্তি ...
রাজপথে – চিন্ময় চক্রবর্তী

রাজপথে – চিন্ময় চক্রবর্তী

চতুর্থ বর্ষপূর্তি
রাজপথে চিন্ময় চক্রবর্তী এক পা দু পা করে এগিয়ে চলেছি। কাঁধে আমার ঝোলা। ফিরি করার ঝোলা। ঝোলায় বিক্রির সামগ্রীগুলো পাল্টে পাল্টে গেছে। পাল্টে গেছে ক্রেতার দল। এখন যা বেচি তা কেনার লোক বড় কম। তবে যারা কেনে,তারাও সাধারণ নয়। তারা আলাদা। আর আমিও কি পাল্টে যাচ্ছি? একদম নয়। আমি যা ছিলাম তাই আছি। আসলে বাজারের প্রয়োজনে বেচার সামগ্রী পাল্টে পাল্টে যায়। আর আমি নতুন নতুন রসদ সংগ্রহ করে চলি। সামনের অসংখ্য আঁকিবুকি কাটা রাস্তা এতদিন আমায় গুলিয়ে দিয়েছে। কোন রাস্তা ধরবো বুঝতে পারতাম না। শুধু খুঁজতাম আর খুঁজতাম। ঝোলায় ছিল বিচিত্র সামগ্রী। ক্রেতাও প্রচুর। কত ঠকেছি আর জিতেছি আর ঠকেছি। বেশী ঠকেছি না বেশী জিতেছি হিসেব করিনি কক্ষণো। তবে ঠকাইনি যে,সে ব্যাপারে নিশ্চিত। তবে এবার রাস্তার গুলিয়ে যাবার ব্যাপারটা কমে আসছে। গলিপথগুলো ধীরে ধীরে মিশে যাচ্ছে একটা রাজপথে। রাজপথ একটাই। গন্তব্য একটাই। আগে ছিলো শুধু গুলিয়...
শিকড়ের খোঁজে – সাথী সেনগুপ্ত

শিকড়ের খোঁজে – সাথী সেনগুপ্ত

চতুর্থ বর্ষপূর্তি
শিকড়ের খোঁজে সাথী সেনগুপ্ত 'কোথায় যাইবেন?'- ড্রাইভার জিজ্ঞাসা করে। 'কিশোর গঞ্জ।' 'কিশোর গঞ্জের কোথায়?' 'একটা গ্রামে। গ্রামটার নাম চারপাড়া।' ড্রাইভার জিভ দিয়ে একটা চিড়িক করে শব্দ করে,'কতই তো গ্রাম আছে।' হ্যাঁ,তাইতো। স্মৃতির পাতা হাতড়ে বেড়াই। ঠাকুমার মুখে শোনা অজস্র নাম। জেলা ময়মনসিংহ,মহকুমা কিশোর গঞ্জ। আর, আর হ্যাঁ থানা কইট্যাদি (কটিহাদি),গ্রাম-চারপাড়া। আর হ্যাঁ,আরো মনে পড়ে,আশে পাশের গ্রামের নাম 'আচমিতা' আর 'মসুয়া'। মসুয়া হল সত্যজিৎ রায়ের দেশের বাড়ি। এবার ড্রাইভার বলে 'বেশ,চলেন। কিশোর গঞ্জের দিকে যাই। তারপর জিগাইয়া লমু।' চলতে শুরু করি। মাথার মধ্যে বিজ বিজ করে অসংখ্য ছেঁড়া ছেঁড়া কথা। ঠাকুমার মুখে শোনা কত ঘটনা, কত মানুষের নাম,কত স্থানের নাম। ইস্ তিনি যদি আজ বেঁচে থাকতেন। অথচ গত হয়েছেন তাও বাইশ বছর হয়ে গেল। আমারই তো কত বয়স হয়ে গেল। যেসব কথাগুলো এই  বয়সে পড়ি পড়ি করেও মনে পড়ছেনা সেগুলো...
সন্ধ্যা – জলি চক্রবর্তী শীল

সন্ধ্যা – জলি চক্রবর্তী শীল

চতুর্থ বর্ষপূর্তি
সন্ধ্যা জলি চক্রবর্তী শীল ঠিক এই বয়সেই সন্ধ্যার বিয়েটা হয়ে গিয়েছিল | এখন যে বয়স তার মেয়েটার | চোরা চোখে চেয়ে চেয়ে দেখে সে | বাপের মত মুখখানি পেয়েছে‚রঙখানিও| মাস আটেকের ছেলেটার শরীরে তেল ডলতে ডলতে মুগ্ধচোখে তাকিয়ে থাকে সন্ধ্যা | মাথার চুলখানি একদম তার মত | মোটা‚কালো‚ একঢাল চুল‚খোঁপা করে রাখলে যেন মুখখানির পিছনে একখানা গোল কালো চালচিত্ত মনে হয়| স্বভাবটিও মধুর | এতগুলি ছেলেমেয়ের মধ্যে এই মাইয়াটার মনে বড় মায়া | ভাইবোনগুলোকে বড় ভালোবাসে | কাঁথাকানি পালটে দেওয়া‚তেল মাখানো‚খাইয়ে দেওয়া | সন্ধ্যার পাশে পাশে সারাক্ষণ ঘুরঘুর করে |  'কি কাম করতে হবে কও না মা‚আমি কইরে দি' | এ মেয়ের সংসারে মন | এমন সংসারে মন তারও ছিল | পিছোতে থাকে সন্ধ্যা | সাল‚ তারিখ ওসব মনে রাখার চল তাদের নেই | সেই যে যেবার মায়ের খুব অসুখ হল‚সংসারে মানুষ বলে তো সন্ধ্যা আর তার মা বৃন্দা | সেবার সেই অসুখের সময়ই হল ভারী বন্যা | ঘর-দ...
রাঙা ঘোড়ার খোঁজে রাঙা মাটির দেশে – সুতপা বন্দ্যোপাধ্যায়

রাঙা ঘোড়ার খোঁজে রাঙা মাটির দেশে – সুতপা বন্দ্যোপাধ্যায়

চতুর্থ বর্ষপূর্তি
রাঙা ঘোড়ার খোঁজে রাঙা মাটির দেশে                    সুতপা বন্দ্যোপাধ্যায় শৈশবে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের 'বীরপুরুষ' কবিতাটি ছিল আমার ভারি পছন্দের। মা 'সঞ্চয়িতা' থেকে প্রায়ই পাঠ করে শোনাতেন বলে পুরো কবিতাটিই আমার ঠোঁটস্থ ছিল। আধো আধো উচ্চারণে আবৃত্তি করতাম-                                               'মনে করো যেন বিদেশ ঘুরে                                               মাকে নিয়ে যাচ্ছি অনেক দূরে।                                               তুমি যাচ্ছ পালকিতে মা চড়ে                                               দরজা দুটো একটুকু ফাঁক করে,                                               আমি যাচ্ছি রাঙা ঘোড়ার 'পরে                                               টগ্‌বগিয়ে তোমার পাশে পাশে।' এটুকু বলেই খানিক থামতাম। মনে প্রশ্ন জাগত যে! রাঙা ঘোড়া কেমন দেখতে? কোথায় দেখা মেলে সেই ঘোড়ার? বাস্তবে তখ...
মুহূর্তে বাঁচে প্রেম,মুহূর্তরাই বাঁচে – আশিস দাস

মুহূর্তে বাঁচে প্রেম,মুহূর্তরাই বাঁচে – আশিস দাস

চতুর্থ বর্ষপূর্তি
*"মুহূর্তে বাঁচে প্রেম,মুহূর্তরাই বাঁচে"*   আশিস দাস "প্রতীক্ষা তাই প্রহরবিহীন আজীবন ও সর্বজনীন, সরোবর তো সবার বুকেই পদ্ম কেবল পর্দানশীন"... কলেজ ফাংশানে পূর্ণেন্দু পত্রীর এই কবিতা আবৃত্তি করে যেই স্টেজ থেকে নেমে এলাম তখন নুপূর বলেছিল,"ওরে অনি, তোকে আমার ওখানেই জড়িয়ে ধরতে ইচ্ছে করছিল রে...মাইকে তোর কি রোম্যান্টিক ভয়েস..ওহ !!" সেই নুপূরকে একদিন বলেছিলাম "সিনেমা দেখতে যাবি?" ও কিছুক্ষণ আমার দিকে তাকিয়ে থেকে,আমাকে মোহিনী মায়ায় আচ্ছন্ন করে বলেছিল,"জানিস অনি,তোর সাথে আমি জাহান্নামে যেতেও রাজী |” সেদিন আমরা সিনেমা দেখতে গিয়েছিলাম ঠিকই,কিন্তু ওর কথা মতো জাহান্নামে যাওয়া আমাদের হয়নি | অনেক কিছুই স্মৃতি থেকে মুছে গেছে,নুপূরও আজ নেই,কিন্তু ওর সেদিনের সেই কথাটা একটুও ঝাপসা হয়নি,অমলিন থেকে গেছে | কয়েকটা মুহূর্ত:সেইসব মুহূর্তের মধ্যেই বেঁচে আছে প্রেম;আসলে প্রেম হয়তো মুহূর্তের মধ্যেই ...
পেতে চাই তোমাকে – রথীন পার্থ মণ্ডল

পেতে চাই তোমাকে – রথীন পার্থ মণ্ডল

চতুর্থ বর্ষপূর্তি
পেতে চাই তোমাকে রথীন পার্থ মণ্ডল গড ঈশ্বর আল্লাহ সব তো একই সমুদ্র পাহাড় পৃথিবী এসবের সৃষ্টিকর্তা তো তিনিই আমিও বাদ যাই না এসবের থেকে এভাবে জন্মাতে জন্মাতে জন্মান্তরবাদ হয়ে প্রতিটি জন্মেই পিতারূপে তোমাকে পেতে চাই, বাবা।। *********************************** দীর্ঘ ছায়ার মায়াভরা আঁচল রথীন পার্থ মণ্ডল আজও আজানের শব্দে ঘুম ভাঙে আমার ঘুম ভাঙতেই খুঁজতে থাকি তোমার দীর্ঘ ছায়াটাকে যে ছায়ার হাত ধরে পথ চলা শুরু পথের মাঝে হারিয়ে যাওয়াও শুরু এমনকি পথকে চিনতে শেখাও শুরু চিনতে শেখা শুরু নিজেকেও আসলে গাছ,আলো,ছায়া, অন্ধকার,ঘাম,দাঁত এসব কিছুর গুরুত্ব যেমন সহজে বুঝতে পারি না আমরা তেমনই বুঝতে পারিনি তোমার গুরুত্বও এই গুরুত্ব বোঝা না বোঝার খেলায় মাঝে মাঝে হারিয়ে ফেলি নিজেকে,নিজের অস্তিত্বকে আসলে তোমার দীর্ঘ ছায়া তোমার হাতের মায়াভরা চাদর আজও আষ্টেপৃষ্ঠে ঘিরে ...
গুপ্তিপাড়ার রথ – অনির্বাণ সাহা

গুপ্তিপাড়ার রথ – অনির্বাণ সাহা

চতুর্থ বর্ষপূর্তি
গুপ্তিপাড়ার রথ  অনির্বাণ সাহা রথের কথা এলেই সর্বপ্রথমে আমাদের মাথায় আসে পুরীর রথের কথা। যে রথটি ভারতের মধ্যে সর্বোচ্চ রথ। পুরীর রথের পরে যে রথটি উচ্চতার দিক থেকে দ্বিতীয় স্থানে রয়েছে,সেটি হল আমাদের বাংলার অতি প্রাচীন জনপদ গুপ্তিপাড়া এলাকার রথ। এটি ভারতের দ্বিতীয় এবং পশ্চিমবঙ্গের দীর্ঘতম দূরত্ব (প্রায় ২ কিলোমিটার) অতিক্রম করে জগন্নাথ দেবের মাসির বাড়ি পৌঁছানোর জন্য। শুধু তাই নয় প্রাচীনত্বের দিক থেকেও এটি ভারতের চতুর্থ প্রাচীনতম রথ হিসাবে বিবেচিত হয়। আবার গুপ্তিপাড়ার রথ বাংলার সর্ববৃহৎ কাঠের রথ। এরূপ ঐতিহ্যবাহী ও গুরুত্বপূর্ণ রথযাত্রা সম্পর্কে আমরা অনেকেই হয়তো বিশেষভাবে অবগত নই। তবে আজ যে রথটিকে আমরা দেখি সেটা প্রাচীন রথটি নয়। "পথের আলাপ" ওয়েবপেজে ১১শে ডিসেম্বর,২০১৯ তারিখে প্রকাশিত "গুপ্তিপাড়ার রথের মেলা" শীর্ষক প্রতিবেদন থেকে জানা যায় যে,১৭৪৫ সালে (মতান্তরে ১৭৪০ সাল) আলীবর্দ...
কালিদাস – দেবাশিস দণ্ড

কালিদাস – দেবাশিস দণ্ড

চতুর্থ বর্ষপূর্তি
কালিদাস দেবাশিস দণ্ড অভিজ্ঞান শকুন্তলম পড়িনি মেঘদূত না,কুমার সম্ভবও না। সেই গল্পটা পড়েছি যেটা আমার পিতা পড়েছিল আমার পিতামহও। আমরা বংশপরম্পরায় তীব্র হাসাহাসি করেছি। কালিদাস এখনও আমার কাছে মাথামোটা আইকন। কালিদাসের গল্প মানে এক নির্বোধের রূপকথা। আমি কিছুতেই ভাবতে পারি না গাছের ডালে বসে, সেই ডালেই কোপ মারার মতো মূর্খ মানুষ হয় কেমন করে? সাধের প্রাণটা বেঘোরে যেত না? আমরা কিন্তু কেউ কালিদাস নই আমরা কিন্তু দারুণ বুদ্ধি ধরি আমরা জানি প্রাণের মূল্য কত। তাই,যে ডালে বসি সে ডাল কদাপি কাটি না। শানিত বুদ্ধি দিয়ে একেবারে গোড়া থেকে মেশিন চালিয়ে দিই।। ******************************* দেবাশিস দণ্ড পরিচিতি: জন্ম ২০ আগস্ট ১৯৬৭,পেশা শিক্ষকতা। ১৩ বছর বয়সে বাবার দেখাদেখি কলম ধরা। এপারওপার দুই বাংলার বহু বাণিজ্যিক ও অবাণিজ্যিক পত্রিকায় কবিতা প্রকাশিত। আঞ্চলিক উপভাষায় লেখা অসংখ...
গুড মর্নিং – সাথী সেনগুপ্ত

গুড মর্নিং – সাথী সেনগুপ্ত

বিহানবেলায় ৪
PC: vito technology গুড মর্নিং সাথী সেনগুপ্ত এ বাড়িতে এক চিলতে আলো ঢোকে না। সারা দিনে কোন সময়েই না। এর চারপাশে উঁচু উঁচু ফ্ল্যাট বাড়ি । তারই মধ্যে কি জানি, কিভাবে ওই একতলা পুরনো বাড়িটা রয়ে গেছে। ছোট দু কামরার বারান্দা ওয়ালা বাড়ি। সামনে চৌকো মত উঠোন। উঠোনের কোণে পুরনো ঝাঁকড়া আমগাছ। কোণায় একটুখানি কুয়োতলা। সবটাই স্যাঁত স্যাঁত করছে। এই খোপ থেকে বেরোবার রাস্তা সামনের দুটো ফ্ল্যাট বাড়ির মধ্যবর্তী দুহাত চওড়া গলিটুকু। এই ফ্ল্যাটের জঙ্গলে কি করে যে ওই একতলা বাড়িটা রয়ে গেছে সেটাই আশ্চর্য। হয়ত এ অঞ্চলটা এক সময়ে উদ্বাস্তু কলোনি ছিল। পরে আইন টাইন হয়ে সকলেই সত্বাধিকার পায়। নিজস্ব দলিল পায়। তারপর প্রমোটার রাজের দৌলতে খুপরি খুপরি ফ্ল্যাট তৈরি হয়েছে। এ বাড়িটাই শুধু বাদ রয়ে গেছে।এ বাড়িতে থাকে একটা বুড়ো। একাই থাকে। বয়স সাতাত্তর আটাত্তর হবে। নিয়ম অনুযায়ী বুড়োরও বুড়ি ছিল। সে বুড়ি গত হয়ে...
error: বিষয়বস্তু সুরক্ষিত !!