Shadow

Author: Kulayefera

উড়ান – সুজয় দত্ত

উড়ান – সুজয় দত্ত

কাশবন ৫
উড়ান সুজয় দত্ত (ক্লীভল্যান্ড, ওহায়ো, যুক্তরাষ্ট্র) টার্মিনালের এদিকটা এতক্ষণ বেশ নিরিবিলি ছিল। ডিপার্চার গেটগুলো ফাঁকা,সামনে পাতা সারি সারি চেয়ারেও অল্প দুচারজন,আশপাশের খাবারের দোকান আর স্যুভেনির শপে সকালের সেই লম্বা লাইন আর ভীড়ভাট্টা অদৃশ্য। কিন্তু আর বেশীক্ষণ নয়। একটু পরেই শুরু হবে দুপুরের ব্যস্ততা। পাশাপাশি অনেকগুলো গেটে এসে দাঁড়াবে একের পর এক বিমান--দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে যাত্রী নিয়ে। আর তারই প্রস্তুতিতে টার্মিনালের বিমানকর্মীদের মধ্যে দেখা যাবে তৎপরতা,ঘন ঘন নির্দেশ আসবে ওয়াকিটকিতে,মানুষের পদশব্দে আর ক্যারিঅন লাগেজের  চাকার শব্দে জমজমাট হয়ে উঠবে চারিদিক। ডাক পড়বে লায়লারও। অমুক গেটে তমুক জায়গা থেকে আসা ফ্লাইটে একটা হুইলচেয়ার লাগবে সাড়ে বারোটায়,তারপরেই উল্টোদিকের গেটে অপেক্ষমান প্লেনটায় যাত্রী ওঠার ঠিক আগে আরও একটা,সেটা মিটতে না মিটতেই হয়তো  ছুটতে হবে একটু দূরে অন্য কোনো গেটে। বেশ ...
স্মৃতি – অঙ্কন দন্ড 

স্মৃতি – অঙ্কন দন্ড 

কাশবন ৫
"স্মৃতি " - অঙ্কন দন্ড  তোমার দুর্বল স্মৃতি  সহজেই ভুলে যেতে পারো -  ইতিহাসের সাল,অঙ্কের সূত্র এবং আমাকে।  আমার তুখোর স্মৃতিশক্তি। এক নিঃশ্বাসে দিয়ে দিতে পারি - তারিখ,সময়,তোমার সাথে কাটানো  প্রতি মুহূর্ত ও কথোপকথনের  পূর্ণাঙ্গ বিবরণ।  স্মৃতির পাতা জুড়ে একরাশ মিথ্যে লেখা।  মুখস্ত বলে দিতে পারি সেই সব মিথ্যে।  তবে আজ সে সব ভুলে যেতে চাই! তুমি শিখিয়ে দেবে কীভাবে ভোলা যায়? কারণ দায়িত্ব বাড়ছে, সত্যিই চাঁদ আর আগের মতো সুন্দর লাগে না। **************************** অঙ্কন দণ্ডঃ জন্ম ২০০৩ সালের ২৪শে ফেব্রুয়ারী। বাসস্থান পুরুলিয়া জেলার আদ্রায়। অঙ্কনের লেখালেখির পথ চলা কবিতা দিয়ে। আনন্দবাজার পত্রিকার জেলার পাতা "ছোটদের পাতা" শীর্ষক-এ তার স্বরচিত কবিতা নিয়মিত প্রকাশিত হত। স্থানীয় পত্রিকা "ঊষশী" তেও স্থান পেয়েছে তার কবিতা। এছাড়া নানা...
লোকাল ট্রেন – দীপন মিত্র

লোকাল ট্রেন – দীপন মিত্র

কাশবন ৫
লোকাল ট্রেন     দীপন মিত্র   লোকাল ট্রেনের কামরা শরীরের স্পর্শ-তাপে ভরা লজেন্স,দিলখুশ,মোওয়া-নখ-কাটা-যন্ত্র বেচা দেবতারা গান গাওয়া জন্মান্ধ ভিখিরি,সঙ্গে বউ সিটে চেপে-চুপে বসা মফস্‌সলি মানুষেরা সকলেই  নেমে যায় নীচু আকাশের খেতে মাঠে,অসীম স্টেশনে কখনও উঠেছি ভুলে চটজলদি ভেন্ডরের কামরায় মৎসবীজ ভরা হাঁড়ি,সবজি বিক্রি করা গাঁয়ের বউরা অথবা কাপড়ে বাঁধা মিঠে-পচা-গন্ধী ছানা,মর্গগামী লাশ গমগমে আওয়াজ তুলে সবজান্তা লোকাল ট্রেন চলে মিষ্টি মিষ্টি নামওলা হাবড়া,হৃদয়পুর,গুমা,কিংবা বনগাঁ-স্টেশন নদ-নদী-খাল-বিল,জঙ্গল-বেষ্টিত এক প্রাচীন বঙাল নিগৃটো, ককেসিয়, আর্য-অনার্যের রক্তে বলীয়ান বাঙালি লোকাল ট্রেন ছুটে যায় আহা সবুজ মায়ায়!   লোকাল ট্রেনের কামরা শরীরের স্পর্শ-তাপে ভরা লজেন্স,দিলখুশ,মোওয়া-নখ-কাটা-যন্ত্র,পেন বেচা দেবতারা;গান গাওয়া জন্মান্ধ ভিখিরি,সঙ্গ...
তুমি রবে নীরবে, নিভৃতে সংগোপনে – তীর্থঙ্কর সান্যাল

তুমি রবে নীরবে, নিভৃতে সংগোপনে – তীর্থঙ্কর সান্যাল

কাশবন ৫
তুমি রবে নীরবে, নিভৃতে সংগোপনে তীর্থঙ্কর সান্যাল নীরা নেই, তবু আমার জীবনের সাথে ওতপ্রোত হয়ে মিশে আছে, ধরা ছোঁয়ার  বাহিরে, নীরবে নিশ্চিন্তে সংগোপনে, রোজ দেখা হয় মনের অলিন্দ গলিতে। অভিজ্ঞতায় বুঝেছি নীরবতা কথা বলে, চিত্য বিকলিত হয়ে, আনন্দধারার প্লাবনে, শোনা যেত পূর্ণতা, নীরবতার মাঝে।  নীরবতায় অপরূপ নির্জনতা, সংগোপনে জেগে ওঠে শিল্পী সত্তা, আঁধারে জীবনবোধের শিক্ষা, নিভৃত যতনে উৎযাপন,শান্তির নীড় গড়া।  নীরবতা যখন কথা বলে শব্দ নিজের থেকে চুপ হয়ে যায়, হয়তো পারস্পরিক বোঝাপড়ার জন্ম হয়, সংগোপনে জ্ঞানের আরাধনা দীপ্ত হয়, মুক্তধারা নিভৃতে যতনে পথ চলায়। তোমার বিচ্ছেদ ব্যথা আমার সংগোপনের ইতিহাস, হৃদয় নন্দন বনে অবসাদ,                                                                                                                                              নীরবতা ...
খেলা – বিদ্যুৎ পাল

খেলা – বিদ্যুৎ পাল

কাশবন ৫
খেলা  বিদ্যুৎ পাল তোমাকে তোমার খেলা ঠিক মত খেলে যেতে হবে। দেখবে নিয়মে জাল,কাদায় জুতোর ভাঙা নাল খুবলে ধরবে হাঁটু,রেফারির বাঁশি হবে ঝুঠো, যতক্ষণ খেলা,পুরো মাঠ ধরে রাখতেই হবে। কথাটা পুরোনো,বহু শিক্ষকেরা বলেছেন,শীতে পাড়ার কুয়াশা ঢাকা মাঠের বেড়ার কাছে ফিরে, বলেছেন মাঝেমধ্যে চিনে নিবি গিয়ে স্টেডিয়াম, এমাঠে খেলার জোর সেই মত বাড়াবি পেশিতে।        স্টেডিয়ামে প্রথম তো,এখনো জানিনা ঠিক,দূরে দাগগুলো ঠিক কিনা;ওদেরই আঁকন,সবকিছু মুঠোয় ওদের,এই খেলাটাও খেলাচ্ছে ওরাই। জিতব ওদের ভূল ধরে নয়,নিজেদের সুরে। গড়ছি উদ্ভিন্ন সুর,মাঠ ভরা ছন্দে এগোবার – ছড়াতে পারব গান,ওদের ফাটলে বেঁধে তার? ************************** বিদ্যুৎ পাল পরিচিতি জন্মতারিখ ২৪শে জুলাই ১৯৫২। জন্মস্থান পাটনা (বিহার)। পড়াশুনো সবটাই পাটনায়। চাকরি  ব্যাঙ্কে,বর্তমানে অবসরপ্রাপ্ত। সারাদিনের ব্যস্ততায় শামিল নিজের লেখালিখি,পড়াশু...
আগমনী – তিতিলা মুখার্জি

আগমনী – তিতিলা মুখার্জি

কাশবন ৫
আগমনী   তিতিলা মুখার্জি               কাল মহালয়া l রমলা আর সমর বসে টিভি দেখছিল l রমলা তাড়া দিল l সেই কোন ছোটবেলার অভ্যেস রেডিও তে  বীরেন্দ্রকৃষ্ণ ভদ্রের মহিষাসুরমর্দিনী পাঠ না শুনলে ওর  চলবেই না l রমলা  যৌথ পরিবারে বড় হয়েছে l সবাই মিলে দাদুর ঘরে বসে একসঙ্গে শোনা হতো  l যদিও রমলা একটু পরেই ঢুলতে শুরু করতো,তবুও ওখানেই বসে থাকতো l ঘুম কেটে গেলে,‘রূপং দেহি জয়ং দেহি' শুনতে পেত l কি করে যে প্রত্যেকবার এক সময়েই ঘুম ভাঙত সেটা ও ভেবে পেতো না  l সেই এখনো এক ব্যাপার রয়ে গেছে,কি করে কে জানে !!  রমলা  সমরকে আবার তাড়া দিলো,-"এই চলো চলো ! খেয়ে নাও কাল তো সকালে উঠতে হবে l" সমর হাসলো-"কি শুনবে ? একটু পরেই তো ঘুমোবে l খালি আমাকেও উঠিয়ে দাও l" -"তা হোক তবুও ভোরেই শুনতে হবে l এমনিতে আজকাল তো ইউটিউবে সারা বছর শোনা যায় l কিন্তু ভোরে উঠে শোনার আনন্দই আলাদা l"               সমর সব জানে তাও মজা কর...
হারায়ে খুঁজি – কল্যানী মিত্র ঘোষ

হারায়ে খুঁজি – কল্যানী মিত্র ঘোষ

কাশবন ৫
হারায়ে খুঁজি রম্য রচনা কল্যানী মিত্র ঘোষ বহু বছর প্রবাসে বসবাস করার ফলে স্বভাবটা কেমন যেন "কাছা খোলা" টাইপের হয়ে গেছে। প্রবাস অর্থাৎ আমেরিকা বলেই এই বদভ্যাস,ইউরোপের কয়েকটা দেশে অবশ্য একটু অসাবধান হয়েছ কী মাল গায়েব! আমেরিকায় এসে পড়েছি প্রায় চব্বিশ বছর আগে। তার আগে কলকাতায় জীবনের একটা বড় সময় কাটিয়েছি আর নানা ভাবে বিভিন্ন প্রিয় বস্তু হারিয়ে (পড়ুন চুরি হয়ে) বিষণ্ন হয়েছি। বাসে উঠলে পকেটমারী না হওয়াটাই আশ্চর্যের,কলেজের ছাত্র ছাত্রীদের ব্যাগে কত ই বা টাকা পয়সা থাকে,তবু তাতেও নির্দয় কাঁচি চালিয়ে  চামড়ার ওপর বাটিকের কাজ করা প্রিয় ব্যাগকে ফর্দা ফাঁই করে দিয়েছে। টাকার শোকের চেয়েও বোকা বনে যাওয়ায় খুব অপমানিত মনে হয়েছে নিজেকে। কলেজ জীবন শেষে চাকরিতে ঢুকি। এক বান্ধবীর বিয়ে স্থির হয়। তার বাবা অত্যন্ত বিত্তশালী,বেক বাগানের একটি বিশাল বাড়িতে তার বিয়ে অনুষ্ঠিত হয়। আমি ...
মন ভালো নেই – বাদল বসু

মন ভালো নেই – বাদল বসু

কাশবন ৫
মন ভালো নেই বাদল বসু শীতের সকালে হালকা মিষ্টি রোদে ধূমায়িত চায়ের পেয়ালা হাতে নিয়ে খবরের কাগজ পড়া আমার বহুদিনের অভ্যাস। প্রতিদিনের মতো সেদিনও সকালের মিষ্টি রোদে গা এলিয়ে কাগজে চোখ রেখে চায়ের কাপে চুমুক দিতেই লক্ষ্য করলাম একটা ছোট্ট পাখি জানালার কাছে এসে বসলো। তারপর একটু একটু করে পাশে থাকা ডিশের দিকে খুব সন্তর্পণে এগিয়ে আসতে লাগলো | বুঝতে অসুবিধা হলো না যে ডিশে রাখা বিস্কুটের লোভেই ওর এই গুটিগুটি পদচারণ। এরপর ইচ্ছে করেই চোখটাকে খবরের কাগজের দিকে মনোনিবেশ করলাম | কয়েক সেকেন্ড পরেই চোখ ঘোরাতেই দেখলাম ডিশের উপর রাখা বিস্কুট দুটো নেই। কোথায় গেল বিস্কুট ? আর পাখিটাকেও তো দেখতে পাচ্ছি না ! তবে  জানলার কাছে দাঁড়িয়ে বাইরে তাকাতেই দেখলাম রাস্তার ওপারের বাড়ির জানালার উপর সানসেটে বসে পাখিটা মহা আনন্দে ব্রেকফাস্ট সারছে | মা কাপ ডিশ নিতে এসে দেখলেন আমি জানালার কাছে দাঁড়িয়ে বাইরে তাকিয়ে...
ভালোবাসার রং – রেশমি দত্ত

ভালোবাসার রং – রেশমি দত্ত

কাশবন ৫
ভালোবাসার রং রেশমি দত্ত আজ ২৫ বছর পর মিত্র বাড়িতে সানাই বাজছে,পাড়া-প্রতিবেশী,আত্মীয়-স্বজন,বন্ধুবান্ধব সবাই নিমন্ত্রিত। অরিন্দম ও শর্মিলা দুজনে মিলে সবার বাড়িতে গিয়ে নিমন্ত্রণ করে এসেছে। প্রথমে সবাই দুজনের একত্রে এসে নিমন্ত্রণ পত্র বার করাতে ভেবেছিল বোধ হয় ওদের একমাত্র মেয়ে  তিন্নির বিয়ে,কিন্তু পরে বুঝতে পারা গেল যে এটা অরিন্দম ও শর্মিলার বিবাহ বার্ষিকীর নিমন্ত্রণ। হ্যাঁ,এবার ওদের পঁচিশ বছর পূর্ণ হল,সব আয়োজন করা হয়েছে একেবারে পঁচিশ বছর আগের মতন,শুধু পুরোহিতের মন্ত্রপাঠটাই হবে না,বাকি সব রেডি। বিয়ে বাড়ির গেট,ক্যাটারিং,ফুলের মালা,বেনারসি,বিউটিশিয়ান,ফটোগ্রাফার,বরের পাঞ্জাবি,টোপর,মুকুট,জুতো,নতুন খাট তা ও ফুল দিয়ে সাজানো,নতুন ড্রেসিং টেবিল অর্থাৎ পঁচিশ বছর আগের সবকিছুই পাল্টে ফেলতে চেয়েছে শর্মিলা। অরিন্দমের জন্য বানিয়েছে সোনার চেন,আংটি,ঘড়ি। এত খরচা করার পক্ষে অরিন্দমের বিশেষ স...
টংকাবতির পাহাড়ে – মোতাজিদ খুররম

টংকাবতির পাহাড়ে – মোতাজিদ খুররম

কাশবন ৫
টংকাবতির পাহাড়ে মোতাজিদ খুররম নদী-পাহাড়-অরণ্য মানুষকে টানে,পিন্টুকে টানে একটু বেশি। আমরা যাচ্ছি পিন্টুর রবার বাগান দেখতে। বাগানটা জঙ্গলের গভীরে। জীপ গন্তব্যে পৌঁছে গেল।  জায়গাটার নাম টংকাবতি। নামটা সুন্দর। নামের পিছনে একটা কিংবদন্তি আছে,সেটা আরও সুন্দর। সম্রাট শাহজাহানকে বন্দি করার পর তার ছেলে আওরঙ্গজেব ভাইদের হত্যা করতে শুরু করে একে একে। প্রাণের ভয়ে মেজো ভাই সুজা রওনা দেন আরাকানের দিকে। পথে পড়ে এই ঘন অরণ্যের রাজ্য। এখানে তিনি কিছুদিন আত্মগোপন করে ছিলেন। সেই সময় এক সুন্দরী মারমা নারীর প্রেমে পড়েন সুজা। আরাকানে চলে যাওয়ার আগে সেই নারীকে তিনি উপহার দিয়ে যান বাদশাহি মোহর আর মূল্যবান অলঙ্কারে ভরা এক সিন্দুক। অলঙ্কারগুলো সেই নারী ব্যবহার করেছেন নিজের কাজে আর মোহর ভরা সিন্দুকটি পুঁতে রেখেছেন এই অরণ্যভূমির কোনো এক পাহাড়ে। 'কোন্ পাহাড়ে আছে সেই সিন্দুক-কেউ জানে না’ পিন্টু মজা করে বললো,‘সে...
error: বিষয়বস্তু সুরক্ষিত !!